গতকাল দিনটা খুবই খারাপ ছিল।
মানে, আর কারো জন্য না হলেও, অন্তত আমার জন্য ছিল খুব খারাপ।
নতুন বছরের প্রথম দিনেই, আমাদের বাড়িটা নিমজ্জিত হয়েছিল বিষাদের অতল সাগরে।
মা যখন স্যুটকেসটা খুলে তার ভেতরে নিজের জামাকাপড় ঢোকাতে শুরু করেছিল, এক মুহূর্তের জন্য আমার মনে হচ্ছিল যেন একটা বিশাল কবর মুখ হাঁ করে আমার সমস্ত অস্তিত্বকে গ্রাস করে নিতে চাইছে।
আমার তখন ইচ্ছা করছিল, সমস্ত মন-প্রাণ এক করে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠি, ‘আল্লাহর দোহাই মা, তুমি চলে যেয়ো না!’
কিন্তু তখন আমার গলায় যেন দলা পাকিয়ে উঠেছিল কষ্টের নোনা জল। তাই মুখ দিয়ে একটা শব্দও আমি বের করতে পারিনি।
বেচারা আমির, নাদের আর জোহরা! কী কান্নাটাই না কাঁদল ওরা! জোহরা তো গতকাল মা চলে যাওয়ার পর থেকেই অঝোর ধারায় অশ্রুবর্ষণ করে চলেছে। বারবার বলছে, ‘আমিও তো নতুন কাপড় কিনেছি মায়ের সঙ্গে মামার বাড়ি যাব বলে।’
আমির আর নাদের আপাতত চাচার বাড়ি গেছে।
এই মুহূর্তে আমার সঙ্গী শুধুই এই পোড়োবাড়ি। চারদিকের দেয়াল আর দরজা-জানালাগুলো যেন উন্মুখ হয়ে রয়েছে আমাকে গিলে খাবে বলে।
আমাদের মা খুবই বিচক্ষণ মহিলা। আমি কখনো ভাবতেই পারিনি যে সে এভাবে একদিন চলে যেতে বাধ্য হবে আমাদেরকে ছেড়ে। বিশেষ করে গত মাসে তো সে টুঁ-শব্দও করেনি, পাছে আমাদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাটা খারাপ হয়!
আমাদের মা খুবই বিচক্ষণ মহিলা। আমি কখনো ভাবতেই পারিনি যে সে এভাবে একদিন চলে যেতে বাধ্য হবে আমাদেরকে ছেড়ে। বিশেষ করে গত মাসে তো সে টুঁ-শব্দও করেনি, পাছে আমাদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাটা খারাপ হয়!
চলে যাওয়ার আগে সে তার সোনার আংটিটা শেলফের উপর রেখে, নিঃশ্বাস চেপে আমাকে বলেছে, ‘যদি আকাজান এটা না নেয়, তাহলে তুমি নিজের কাছে রেখো।’
আমার চোখ যখন আংটিটার উপর পড়ল, মনে হলো যেন কেউ এক হাঁড়ি ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিয়েছে আমার মাথায়।
সোনার আংটিটা এখনো আমার চোখে ভাসছে।
এই আংটিটাই ছিল মায়ের একমাত্র অলঙ্কার। বিয়ের দিন আকাজান এটা তার আঙ্গুলে পরিয়ে দিয়েছিল। অবশ্য পরিয়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আঙ্গুল গলে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল আংটিটা। কারণ আংটিটা ছিল মায়ের ছোট ছোট আঙ্গুলের তুলনায় অনেক বেশি চওড়া। তাই এমনকী মধ্যাঙ্গুলিতেও আটকে রাখা যায়নি ওটাকে।
মায়ের মুখ থেকেই শুনেছি, মাহমুদ ভাইকে জন্ম দেয়ার পর নাকি প্রথমবার আংটিটা তার আঙ্গুলে ফিট হয়েছে!
জোহরা গতকাল থেকে কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করেই চলেছে। জিজ্ঞেস করছে, কেন আমি তাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি না। আমি জানি না এই প্রশ্নের কী উত্তর দেব। কয়েকবার আমি তাকে থামানোর চেষ্টা করেছি বটে, কিন্তু মেয়েটা একদম নাছোড়বান্দা!
যদি মা আমাদেরকে সঙ্গে করে নিয়েও যেত, কোথায় নিয়ে যেত? এখন তো তার জায়গা হয়েছে মামার বাড়ির সেলারে। গোটা একটা জীবন সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার পর, এখন তাকে মাথানত করতে হবে মামির কাছে।
আকাজান যখন দিনমজুরির কাজ করত, তখন মা করত সেলাইয়ের কাজ। আর তার অধীনে কাজ করত অল্পবয়সি মামি।
মেয়েটাকে বেশ মনে ধরেছিল মায়ের। তাই সে-ই মামা-মামির বিয়ের ঘটকালিটা করেছিল। মামাকে মামির কথা বলতেই রাজি হয়ে গিয়েছিল মামা।
অথচ এখন… মাকে কিনা সেই মামির কাছেই…
কিন্তু জোহরা তো আর এসব বুঝবে না। তাই আমি ওকে ঠান্ডা করতে বললাম, ‘পরে যখন মা নিজে একটা বাড়ি কিনবে, তখন আমাদেরকে তার কাছে নিয়ে যাবে।’
তৎক্ষণাৎ পালটা জবাব দিয়ে দিল মেয়েটা। ‘মায়ের কাছে তো কোনো টাকাই নেই! একদমই কোনো টাকা নেই। আমি তার পার্সের ভেতর দেখেছিলাম। পুরোই খালি। এই দেখো!’
আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, মায়ের ফেলে যাওয়া পার্সটা জোহরা হাতে ধরে আছে।
জোহরার কাছে ধরা পড়ে গেল আমার মিথ্যেটা।
ঠিকই বলেছে সে। মা যখন এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেল, তখন সে ছিল কপর্দকশূন্য।
আমিরের কাছ থেকে একটা বাসের টিকিট নিয়ে, আংটির পাশে কয়েকটা খুচরো পয়সা রেখেছে সে। তারপর বলেছে, ‘একদিন শূন্য হাতে এসেছিলাম এই বাড়িতে। এখন শূন্য হাতেই বিদায় নিচ্ছি।’
এ কথায়ও বিন্দুমাত্র ভুল নেই।
আকাজানের সঙ্গে যখন বিয়ে হয়, মায়ের বয়স মাত্র ১৩।
সবে যখন ক্লাস সিক্সের গণ্ডি পেরিয়েছে মা, ঠিক সেই সময়ই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে আকাজান। প্রতিবেশী ছিল তারা, একই মহল্লায় থাকত। আকাজানের ভাষ্যমতে, মায়ের সুন্দর চোখ দুটোর প্রেমে পড়ে গিয়েছিল সে।
প্রথমে এই বিয়েতে কিন্তু কারোই মত ছিল না। কারণ, একে তো মায়ের সঙ্গে আকাজানের বয়সের ব্যবধান পুরো বিশ বছরের, তার উপর আবার আকাজানের হাতও ছিল একদম খালি।
কিন্তু আকাজান তখন হুমকি দিয়ে বসে, মাকে যদি সে না পায়, তাহলে যেকোনো মূল্যে মা আর মায়ের ভবিষ্যৎ স্বামীকে খুন করবে সে।
তার এই হুমকিতে ভয় ধরে গিয়েছিল নানাজানের মনে। এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল যে শেষ পর্যন্ত আকাজানের হাতেই তুলে দিয়েছিল নিজের মেয়েকে।
বিয়ের অনুষ্ঠানের আগে যে হেয়ারড্রেসার মায়ের চুলে খোঁপা করে দিচ্ছিল, সে মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তোমার জন্য এই বরটা কে জোটালো?’
মা চুপ করে ছিল। কিন্তু তার দুচোখ ভরে গিয়েছিল জলে। তাকে কাঁদতে দেখে ওই হেয়ারড্রেসারও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। মাকে কাঁদতে নিষেধ করেছিল সে। কাঁদলে যে মায়ের মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে!
মা চুপ করে ছিল। কিন্তু তার দুচোখ ভরে গিয়েছিল জলে। তাকে কাঁদতে দেখে ওই হেয়ারড্রেসারও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। মাকে কাঁদতে নিষেধ করেছিল সে। কাঁদলে যে মায়ের মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে!
পরে অবশ্য আকাজানের ব্যবসায় উন্নতি হয়। একসময় সে ফ্যাক্টরি মালিকের পার্টনারও বনে যায়।
মাহমুদ ভাই, যে এই মুহূর্তে দেশের বাইরে, সবসময়ই বলত, ‘মা পাশে না থাকলে আকাজান কখনোই জীবনে এতটা আগে বাড়তে পারত না।’
এদিকে নানিজান বরাবরই মাকে সাবধান করে দিত, ‘দেখো মা, এই লোকটাকে বড়লোক বানানোর জন্য তুমি নিজের উপর এত চাপ নিও না। আমি লোকটাকে যতদূর চিনি, তাতে একবার একটু উপরে উঠতে পারলে সে তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না।’
নানিজানের এসব কথার অর্থ আমি আগে বুঝিনি। কিন্তু গতকাল যখন মা চলে গেল, তারপর থেকে নানিজানের কথাগুলোই যেন আমার মাথায় সজোরে আঘাত করছে।
আমার বারবারই মনে হচ্ছে, এসব সাবধানবাণী শোনার পরও কেন মা অমন ভূতের বেগার খাটতে গেল?
কিন্তু কেনই বা এসব ভাবছি আমি! মাকে কি আমি চিনি না?
এই তো গত মাসে, চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও, মা আকাজানের কাছে অনুনয় করে বলেছিল, ‘দেখো, আমি আর এই বাড়িতে থাকতে পারছি না। কিন্তু বাচ্চাদেরকে পরীক্ষাটা অন্তত শেষ করতে দাও। তারপর না-হয় আমাকে ডিভোর্স দিও।’
কিন্তু তবু, আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়, মায়ের দোষটা আসলে কী ছিল?
কখনো কোনো অভিযোগ-অনুযোগ ছাড়াই তো সে সারাটা জীবন পরিশ্রম করে গেছে। আকাজানের কাছে সে জামাকাপড় বা এ জাতীয় কিছুও চায়নি।
কেউ যদি কখনো উপহার হিসেবে তাকে কিছু দিত, সেগুলো পরেই সে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিত। আকাজানও মাঝেমধ্যে বাইরের ট্রিপ থেকে আসার সময় তার জন্য টুকটাক জামাকাপড় কিনে আনত।
কিন্তু এছাড়া কখনোই আমি মাকে দেখিনি নিজে থেকে আকাজানের কাছে কোনো চাহিদার কথা পেশ করতে।
আমির বলে, ‘যদিও মায়ের বয়স হচ্ছে, তবু সে এখনো ওই মহিলার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী।’
‘ওই মহিলা’ মানে হলো আকাজানের বউ, নতুন বউ।
হয়তো সে বাড়িতে থাকলে কিছু একটা ঘটতে পারে জেনেই, আকাজান সকাল সকাল চাচার বাড়ি চলে গেছে।
আমাকেও বলা হয়েছিল জোহরাকে সাজিয়ে-গুছিয়ে তাদের সঙ্গে যেতে। কিন্তু আমি বলেছি, আমার খুব মাথা ধরেছে। আমি বাড়িতেই থাকব।
সত্যি বলতে কী, এখন ওখানে গিয়ে চাচির হাসিমুখ দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব।
হাসিমুখ, হ্যাঁ হাসিমুখই বটে। মাকে চাচি সবসময়ই হিংসা করে এসেছে। সুতরাং, আজ তো তার আনন্দেরই দিন।
বেরোনোর আগে আকাজান আমার দিকে ভ্রূকুটি করে বলেছে, ‘রাতে কিন্তু অতিথি আসবে। রাঁধতে পারো তো তুমি, নাকি?’
এই প্রথমবার আকাজান আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলল।
আমি জানি, ‘অতিথি’ বলতে সে কার কথা বুঝিয়েছে। অতিথি হলো তার বউ, নতুন বউ।
কয়েকদিন আগে চাচার বাড়ি একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে আকাজান তার নতুন বউকে নিয়ে এসেছিল।
অবশ্য সেখানে আকাজান তার নতুন বউয়ের পরিচয় দিয়েছিল তার বন্ধুর বউ হিসেবে। আর বউয়ের স্বামী বানানো হয়েছিল বউয়ের ভাইকে!
মা অবশ্য ওই পার্টিতে যায়নি। বাড়িতেই ছিল সে। দেখভাল করছিল জ্বরাক্রান্ত জোহরার।
চাচির মুখে শুনেছি, বাবা ওই পার্টিতে তার নতুন বউকে নিয়ে এসেছিল যাতে সে আমাদের সবাইকে দেখতে পারে।
কথাটা বলার সময় চাচির ঠোঁটের কোণের ক্রূর হাসিটা আমার নজর এড়ানি। সে যখন এসব কথা বলছিল, আমার মনে হচ্ছিল যেন একটা জগদ্দল পাথর চেপে বসেছে আমার বুকের উপর।
আকাজানের নতুন বউ বসেছিল ঘরের অন্য কোণে। উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল তার ধবধবে সাদা পা দুটো। লাল আলতা পরেছিল সে পায়ের আঙ্গুলে।
আমির তার দিকে আগুনে চাহনি হানতেই পা দুটোকে শাড়ি দিয়ে ঢেকে ফেলেছিল সে।
আমার ইচ্ছা করছিল আকাজানকে বলি, ‘মা-ও যদি এভাবে রাস্তায় বের হতো, তাহলে হয়তো এখনো সে তোমার নয়নের মণি হয়েই থাকত।’
কিন্তু পরমুহূর্তেই আমার মনে পড়ে যায় মায়ের বলা কিছু কথা।
মায়ের বয়স যখন অনেক অল্প, তখন নাকি আকাজান তাকে পেটাত এমনকী সানগ্লাস দিয়ে চোখ না ঢেকে বাইরে বেরোলেও।
এখন আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, আকাজান কীভাবে এত উদার হয়ে গেল, নতুন বউকে সবার সামনে এভাবে প্রদর্শন করতে পারল।
মা গতকাল চলে যাওয়ার পর আমির বলেছে, ‘মায়ের একমাত্র দোষ হলো সে অনেক সহজ সরল। তুমি যখন বড় হয়ে বিয়ে করবে, খেয়াল রেখো যেন আবার মায়ের মতো হয়ে না বসো! এই নতুন বউকে দেখে কিছু শেখো।’
এ কথা শোনার পর আমার খুবই লজ্জা করছিল জবাব দিতে যে মাহমুদ ভাই বলেছে…
তবে আমার মুখের অভিব্যক্তি দেখেই বোধহয় আমির বুঝে ফেলেছে আমি কী বলতে চাচ্ছি। তাই সে তাড়াতাড়ি বলেছে, ‘আমি স্রেফ মজা করছিলাম। আমি জানি একজন মহিলার সম্মান এসবের চেয়েও অনেক উঁচুতে।’
তারপর সে আরো বলেছে, ‘কী জানো, মরিয়ম, তুমি একদমই মায়ের আদলে গড়া। এই একটা ব্যাপারই আমাকে সাহস জোগায়। নইলে যা সব ঘটে চলেছে, তাতে আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকতে পারতাম না।’
এখন দুপুর একটা।
আমার মাথা ঘুরাচ্ছে, আর থরথর করে কাঁপছে হাত দুটো।
ইতোমধ্যেই বার কয়েক আমি রান্নাঘরে গিয়েছি। কিন্তু যেই না চুলোয় রান্না চাপিয়েছি, ঝিমঝিম করে উঠেছে আমার মাথা। মনে হয়েছে, এই অবস্থায় রান্না করা আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই আমি কয়েকটা রুটি আর এক টুকরো পনির নিয়ে ঘরে চলে এসেছি।
জানি না, জোহরা কেন এমন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ওকে বেশ কয়েকবার ডাকলাম আমি দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে। কিন্তু কোনো সাড়াই দিল না।
শুধু একবার চোখ মেলে বলল, ‘মা, আমার মা, তুমি এসেছ আমাদের কাছে! হ্যাঁ, তুমি তো চলে এসেছ আমাদের কাছে!’
কিন্তু তারপরই আবার চোখ বুজে ফেলল।
এখন আমারও একদমই খেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি বরং জোহরার পাশেই চুপ করে বসে থাকব ওরা না আসা অবধি। ওরা নিশ্চয়ই আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফিরে আসবে।
আমি মনস্থির করে ফেলেছি। বিকেলে আমি বাচ্চাদের সবাইকে নিয়ে মায়ের কাছে যাব। তাকে বলব, আমরা আর এই বাড়িতে থাকতে পারছি না।
আমি মনস্থির করে ফেলেছি। বিকেলে আমি বাচ্চাদের সবাইকে নিয়ে মায়ের কাছে যাব। তাকে বলব, আমরা আর এই বাড়িতে থাকতে পারছি না।
তবে চিন্তা নেই কোনো। আমিও সেলাই জানি। মায়ের পাশাপাশি আমিও কাজ করব। আর রাতে বসব বই নিয়ে।
একটু হয়তো কষ্ট হবে, কিন্তু আমি আর বাচ্চারা মায়ের কাছাকাছি তো থাকতে পারব!
আকাজান যেহেতু এখন আমাদের থেকে এতটাই দূরে সরে গেছে, তাই মায়ের মতো আমাদেরও এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
আমি নিশ্চিত, আমির আর নাদের আমার সঙ্গে একমত হবে। আর জোহরা? জোহরার তো কিছু বলার নেই!
আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে চলে যাব। মামার ওই ছোট্ট বাড়িটাতেই থাকব। আমি নিশ্চিত, ওই বাড়ির সেলারে মায়ের পাশাপাশি আমাদেরও জায়গা হবে।
সেলারটা যত ছোটই হোক, তবু ওটাই হবে আমাদের জন্য পৃথিবীর সমান বড়!
(মনসুরা শরিফজাদের জন্ম ১৯৫৩ সালে। তিনি একজন ইরানি লেখক ও অনুবাদক। তার উল্লেখযোগ্য কাজ : ‘দ্য সিক্সথ অফস্প্রিং’ ও ‘দ্য এনামেল্ড মাসকারা কেস’। তার এই গল্পটি (ইংরেজিতে ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার’) নেয়া হয়েছে ‘আফসানা : শর্ট স্টোরিজ বাই ইরানিয়ান উইমেন (২০০৫)’ গল্পগ্রন্থ হতে। গল্পগ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদক ও সম্পাদক কাবেহ বাসমেনজি। ইরানি নারী লেখকদের রচিত সর্বমোট ২০টি ছোটগল্প রয়েছে এখানে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকেও এ ধরনের সংকলন প্রকাশিত হয়েছে, যথাক্রমে ‘গল্প’ ও ‘কাহানি’ শিরোনামে।)
জন্ম বাগেরহাটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত। লিখতে ভালো লাগে।