শুক্রবার, নভেম্বর ২২

মির্জা গালিব : প্রতিভার অশান্ত স্ফটিক : মোস্তাক শরীফ

0
মির্জা গালিব

মির্জা গালিব


হাজারো খোঁয়াইশে অ্যায়সি, কে হার খোঁয়াইশ পে দম নিকলে;
বাহোত নিকলে মেরে আরমাঁ, লেকিন ফির ভি কম নিকলে।

হাজারও আকাঙ্ক্ষা, প্রতিটি আকাঙ্ক্ষার জন্যই বরণ করা যায় মৃত্যুকে।
অনেক আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে, তবু মনে হয় বড্ড কম। (মির্জা গালিব)


Motif-01১৭৯৭। ভারতে মুঘল গৌরব রবি অস্তমিত প্রায়। আফগান, মারাঠা আর ব্রিটিশদের মধ্যে চলছে ভারতভাগ্যবিধাতা হওয়ার লড়াই। দিল্লির সিংহাসনে আসীন মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম, যদিও সম্রাট তিনি কেবল নামেই। মারাঠাদের পরাজিত করে ভারতের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়া দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইতিহাসের এমনই এক সন্ধিক্ষণে আগ্রায় জন্ম নিলেন মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব। তাঁর পূর্বপুরুষ জাতিতে তুর্কি, এসেছিলেন সমরখন্দ থেকে। আগ্রাতেই শৈশব কাটে গালিবের। দিল্লিতে তখনো ফারসিই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা হলেও আগ্রার প্রধান ভাষা উর্দু। ফলে শৈশব থেকেই উর্দু জবানকে সঙ্গী করে গালিবের বেড়ে ওঠা। এ ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মীর তকি মীর (১৭২৩-১৮১০) তখনো জীবিত। খুদা-ই-সুকান (কবিতার ঈশ্বর) নামে পরিচিত এ কবির প্রতি গালিবের ছিল গভীর শ্রদ্ধা। সুফি তাত্ত্বিক বেদিল দেহলভি ছাড়া এই একজন কবির শ্রেষ্ঠত্ব নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি।

লাতিন ভাষায় যেমন ভার্জিল আর ইতালীয় ভাষায় দান্তে, তেমনি উর্দু ভাষার মহত্তম কবি হিসেবে গালিবের নাম অনস্বীকার্য। তাঁর অসংখ্য উক্তি পরিণত হয়েছে প্রবাদে। তাঁর গদ্য, বিশেষত পত্রসাহিত্যের ভাষামাধুর্য অতুলনীয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের ওপর লেখা তাঁর বই সে সময়ের শ্রেষ্ঠতম ইতিহাসবিদদের কাতারেও অন্তর্ভুক্ত করেছে তাঁকে। ফলত, মীর তকি মীরের মতোই, গালিব কেবল উর্দু কবিতার একটি ইট নন, এর প্রধানতম ভিত্তিও।

গালিবের ব্যক্তিগত জীবন ছিল দুঃখে ভরা। একজন মাত্র মানুষের জীবনে দুঃখের এমন অন্তহীন প্রবাহ বিরল ঘটনা বটে। পাঁচ বছর বয়সে পিতাকে হারান, যে মামা তাঁর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁকে হারান ৯ বছর বয়সে। একে একে সাতটি সন্তান হয়েছিল তাঁর, প্রতিটি সন্তানের মৃত্যু হয় শৈশবে। সবচেয়ে দীর্ঘায়ু পাওয়া সন্তানটিও দেড় বছরের বেশি বাঁচেনি। আরিফ নামে এক বালককে দত্তক নিয়েছিলেন, তারও মৃত্যু হয় ৩১ বছর বয়সে, গালিবের জীবদ্দশায়। তাঁর ছোটো ভাই মির্জা ইউসুফের মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটেছিল, ১৮৫৭-র সিপাহি বিদ্রোহের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মদ আর জুয়া ছিল গালিবের নিত্যসঙ্গী। অবৈধ জুয়ার আসর বসানোর অপরাধে ছয় মাসের জেলও খেটেছিলেন। এত দুঃখ, এত মৃত্যু অতিক্রম করে জীবদ্দশাতেই খ্যাতি পেয়েছিলেন কিংবদন্তির। সমকালীন শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দিগদিগন্তে।

বিরহী প্রেমিকের দুঃখজর্জর প্রেমকথার কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গজলকে ব্যবহার করেছিলেন জীবনের গভীরতম দর্শনের স্বরূপ অনুসন্ধানে। কখনো খুব সহজেই বোঝা যায় গালিবের কবিতা, কখনো মনে হয় ভীষণ দুর্বোধ্য। রসালো আম নিয়ে হালকা মেজাজের কবিতা লিখেছেন, আবার মানব অস্তিত্বের গূঢ় রহস্য নিয়ে লিখেছেন গভীর ভাবের কবিতা। স্ববিরোধী সব বৈশিষ্ট্যের সমাহার ছিল গালিবের চরিত্রে।

গালিবের শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত : গজল (গীতিকবিতা), মসনবি (সুফিবাদী কবিতা) ও কাসিদা (প্রশস্তিগাথা)। গালিবের হাতে উর্দু গজল লাভ করেছিল অনন্য এক রূপ। বিরহী প্রেমিকের দুঃখজর্জর প্রেমকথার কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গজলকে ব্যবহার করেছিলেন জীবনের গভীরতম দর্শনের স্বরূপ অনুসন্ধানে। কখনো খুব সহজেই বোঝা যায় গালিবের কবিতা, কখনো মনে হয় ভীষণ দুর্বোধ্য। রসালো আম নিয়ে হালকা মেজাজের কবিতা লিখেছেন, আবার মানব অস্তিত্বের গূঢ় রহস্য নিয়ে লিখেছেন গভীর ভাবের কবিতা। স্ববিরোধী সব বৈশিষ্ট্যের সমাহার ছিল গালিবের চরিত্রে। আত্মসম্মানবোধ ছিল টনটনে, স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য বহু মানুষের সঙ্গে কলহে জড়িয়েছেন। আবার সেই একই মানুষটিই ছিলেন সহানুভূতিশীল, উদারহৃদয়, বিনয়ী। বন্ধুত্বকে উচ্চ মর্যাদা দিতেন, বন্ধুরও অভাব ছিল না। ওদিকে সমালোচকদের এক হাত নিতে কসুর করতেন না মোটেই। কেউ তাঁকে আঘাত করলে সহজে ক্ষমা করতেন না। ধার ধারতেন না ধর্মীয় বিধিবিধানের। সব ধরনের গোঁড়ামি আর অন্ধবিশ্বাস থেকে ছিলেন মুক্ত। নারী, মদ, দাবা, আম, বন্ধু-সংসর্গ-এসব ছিল বড্ড প্রিয়। অর্থশালী কোনো দিনই ছিলেন না, কিন্তু ঘৃণা করতেন গরিবি হালতে জীবনযাপনকে।

উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠতম কবি হলেও ফারসির প্রতি অন্য রকমের এক অনুরাগ ছিল গালিবের। ফারসি ভাষায় লিখেছেনও প্রচুর। সেসব কবিতা প্রসাদগুণে অনন্য হলেও গালিবের কবিখ্যাতি মূলত তাঁর উর্দু রচনার জন্যই। এ কারণেই মৃত্যুর দেড়শ বছর পরও উর্দু সাহিত্যের আকাশে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রটির নাম গালিব। উর্দু ভাষায় সর্বাধিক মুদ্রিত বইটির নাম ‘দিওয়ান-ই গালিব’। সম্ভবত এ ভাষার সর্বাধিক অনূদিত সাহিত্যিকও তিনিই। ইংরেজ কবিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘উদ্ধৃত’ কবি উইলিয়াম শেকসপিয়র। উর্দুতে এই কীর্তি গালিবের।

গালিবের কবিতার আপাত দুর্বোধ্যতা নিয়ে সমসাময়িকদের অনেকেই অনুযোগ করতেন। কঠিন শব্দ ব্যবহারের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বকে ইঙ্গিত করে কোনো কোনো সমালোচক বলতেন, ‘গালিব, সাউদা আর মীরের কবিতা আমরা বুঝি, কিন্তু তোমার কবিতা বোঝার ক্ষমতা আছে কেবল দু’জনের—তুমি আর খোদাতালা।’ শোনা যায়, শরাবের পেয়ালা পাশে নিয়ে রাত জেগে কবিতা লিখতেন তিনি। প্রতিটি শের রচনার পর কোমরবন্দে একটা করে গিট্টু দিতেন। পরদিন সকালে স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে লিখে ফেলতেন প্রতিটি শের। কেবল কোমরবন্দে ক’টা গিট্টু দিয়েছেন সেটি গুনলেই মনে পড়ে যেত সব!

মহান যেকোনো কাব্যকীর্তির মতোই গালিবের কবিতার আছে একাধিক অর্থ। প্রায়ই কবিতায় নিজের জীবনাভিজ্ঞতা আর ব্যক্তিগত ভাবনাচিন্তার প্রতিফলন ঘটাতেন, কিন্তু কবিতার পঙ্‌ক্তিগুলো ব্যক্তি গালিবকে ছাড়িয়ে সব মানুষের জীবনের সব রকম পরিস্থিতির সঙ্গেই মিলে যেত। গালিবের সময়কালে কবিতা সরাসরি মুদ্রিত রূপে প্রকাশিত হতো না। প্রথমে সাহিত্য আড্ডা বা মুশায়রায় আবৃত্তি করা হতো, এর মধ্যে যে কবিতাগুলো জনপ্রিয় হতো সেগুলোই প্রকাশের যোগ্য বলে বিবেচনা করা হতো। গালিবের বন্ধু হাজি মীরের একটি বইয়ের দোকান ছিল। এখানেই বইপত্র পড়ে দিনের বড়ো একটা সময় কাটাতেন গালিব। কবিতাও লিখতেন। অনেক কবিতা হাজি মীরের কাছে থেকে যেত। সেগুলো চেনাজানা প্রকাশকদের কাছে নিয়ে যেতেন হাজি মীর। প্রথম দিকে বহু চেষ্টা করেও গালিবের কোনো কবিতাই প্রকাশ করতে পারেননি তিনি। হতাশহৃদয় গালিবও বলতেন, কেবল মৃত্যুর পরই মূল্যায়িত হবে তাঁর কবিতা। গালিবের প্রথম দিওয়ান (কাব্য সংকলন) প্রকাশিত হয় ১৮৪১ সালে। ১৮৪৭ সালে প্রকাশিত হয় ফারসি দিওয়ান। সিপাহি বিদ্রোহের সময় হাজি মীরের দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গালিবের অপ্রকাশিত অনেক কবিতাও ভস্মীভূত হয় সে আগুনে।

কখনো কখনো গালিবের নতুন লেখা গজল চেয়ে তাঁর বাড়িতে লোক পাঠাতেন। গালিবের লেখা গজল তাঁকে গেয়ে শোনানোর জন্য নিজের বাড়িতেও নিমন্ত্রণও করেছিলেন। যদ্দূর জানা যায়, কখনো নওয়াব জানের অনুরোধ রাখেননি গালিব।

অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলেন গালিব। তাঁর ত্রয়োদশবর্ষীয়া স্ত্রী উমরাও জান ছিলেন ইলাহি বকশ মারুফ নামে এক কবির কন্যা। গালিবের পরিবারের তুলনায় তাঁর স্ত্রীর পরিবার তুলনামূলকভাবে সচ্ছল ছিল। শ্বশুরের আমন্ত্রণে আগ্রা ছেড়ে দিল্লি চলে যান গালিব। প্রবল ধর্মনিষ্ঠ উমরাও জানের সঙ্গে ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন গালিবের সংসার জীবন খুব যে অসুখী ছিল তা নয়। অভাব-অনটন আর গালিবের উড়নচণ্ডী স্বভাবের কারণে দুজনের মধ্যে প্রায়ই কলহ হলেও সহজে মিটেও যেত। নওয়াব জান নামে এক বারনারীর সঙ্গে গালিবের রোমান্সের কথা প্রচলিত আছে। হাজি মীরের দোকানের উলটোদিকেই নাকি ছিল তার হাভেলি। প্রায়ই হাজি মীরের দোকানে গিয়ে গালিবের কবিতা পড়তেন নওয়াব জান। কখনো কখনো গালিবের নতুন লেখা গজল চেয়ে তাঁর বাড়িতে লোক পাঠাতেন। গালিবের লেখা গজল তাঁকে গেয়ে শোনানোর জন্য নিজের বাড়িতেও নিমন্ত্রণও করেছিলেন। যদ্দূর জানা যায়, কখনো নওয়াব জানের অনুরোধ রাখেননি গালিব। একপেশে এ রোমান্সের সমাপ্তি ঘটেছিল নওয়াবজানের অকালমৃত্যুতে।

দিল্লির নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে প্রথমে সমস্যা হলেও পরে কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পর জীবনযাত্রা সহনীয় হয়ে আসে। মুঘল রাজদরবারেও নিয়মিতভাবে ডাক পড়তে থাকে তাঁর। স্থানীয় সাহিত্য আড্ডায় গালিব হয়ে ওঠেন প্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত এক মুখ। উদারহৃদয় গালিব নিজের পয়সা ও সময় দুটো খরচ করার ব্যাপারেই ছিলেন অকৃপণ। কেউ তাঁর কাছে মুখ ফুটে চাওয়ার আগেই দান করার অভ্যাস ছিল। এ ব্যাপারে গালিবের দর্শন ছিল: বে তলব দে তো মজা উস মে সিভা মিলতি হ্যায়; উয়ো জাদা জিস কো না হো খু-য়ে সাভাল আচ্ছা হ্যায়। কেউ চাওয়ার আগেই তাকে দেওয়ার মজাই আলাদা; যে ভিক্ষুকের ভিক্ষা চাইতে হয় না তাকে দেখার মতো সুন্দর দৃশ্য আর কী আছে! আয়ের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয় করতেন গালিব, ফলে বছরভর ভুগতে হতো অর্থকষ্টে। আয়-উপার্জন বাড়ানোর আশায় কলকাতায় বড়োলাট উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-এর দরবারেও ধরনা দিয়েছিলেন। সেখানে ব্রিটিশ আমলাদের সঙ্গে খাতির জমে উঠলেও খুব একটা অর্থযোগ হয়েছিল বলে জানা যায় না। কলকাতা থেকে খালি হাতে দিল্লি ফিরে এলেন, তত দিনে আয়ের তুলনায় ঋণের পরিমাণ ষাট গুণ বেশি!

দিল্লির ইংরেজদের কচুকাটা করে সেনা-জনতা বৃদ্ধ আহমদ শাহ জাফরকে সম্রাট ঘোষণা করে। গালিব এ সময় নিয়মিতই রাজসভায় হাজিরা দিতেন। সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনাবলি নিয়ে লিখেছিলেন অসাধারণ একটি ইতিহাসগ্রন্থও: দাস্তাম্বু (মুঠোভর্তি ফুল)। অবশ্য মাসচারেকের মধ্যেই দিল্লি পুনর্দখল করে ব্রিটিশরা। রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নেয় বিদ্রোহের। বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসিত করা হয় রেঙ্গুনে, সম্রাটের সন্তানসহ রাজপরিবারের সদস্যদের বিনা বিচারে হত্যা করা হয়।

১৮৩৭ সালে সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। মুঘল সাম্রাজ্য বলতে তত দিনে কিছুই আর নেই, তবু রাজ অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। এ জায়গাতেই একটু ভুল করেছিলেন গালিব। বাহাদুর শাহ জাফরের প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা সেলিমকে সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি। এ অপরাধে দশ বছর রাজসভায় নিষিদ্ধ ছিলেন, যদিও ক্রমে ফের সম্রাটের সুনজরে পড়তে সক্ষম হন। সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ ফখরুর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন, পান রাজকবির মর্যাদাও। এরই মধ্যে ঘটে যায় সিপাহি বিদ্রোহ। দিল্লির ইংরেজদের কচুকাটা করে সেনা-জনতা বৃদ্ধ আহমদ শাহ জাফরকে সম্রাট ঘোষণা করে। গালিব এ সময় নিয়মিতই রাজসভায় হাজিরা দিতেন। সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনাবলি নিয়ে লিখেছিলেন অসাধারণ একটি ইতিহাসগ্রন্থও: দাস্তাম্বু (মুঠোভর্তি ফুল)। অবশ্য মাসচারেকের মধ্যেই দিল্লি পুনর্দখল করে ব্রিটিশরা। রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নেয় বিদ্রোহের। বাহাদুর শাহ জাফরকে নির্বাসিত করা হয় রেঙ্গুনে, সম্রাটের সন্তানসহ রাজপরিবারের সদস্যদের বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনা গালিবকে ভীষণভাবে বিচলিত করে। গুলিবিদ্ধ ভাই ইউসুফ মির্জার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুও প্রবল শোকে নিমজ্জিত করে তাঁকে।

দুঃখ-দারিদ্র্য সত্ত্বেও জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে প্রতিভার স্বীকৃতি পান সর্বমহলে। তাঁর উর্দু ও ফারসি দিওয়ানের একের পর এক সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ‘উদ্-ই-হিন্দি’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় গালিবের পত্রসংকলনও।

১৮৬৯ সালের ১৫ জানুয়ারি দিল্লিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিব। দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার এলাকায় সমাহিত করা হয় তাঁকে। গালিব একবার লিখেছিলেন, ‘নাদান হো জো ক্যাহতে হো কিঁউ জিতে হো গালিব। মুঝকো তো হ্যায় মরনে কি তামান্না কোই দিন আওর।’ কেন বেঁচে আছ গালিব—এই প্রশ্ন অবুঝের। মৃত্যুর বাসনা নিয়ে আরও কিছু দিন বেঁচে থাকাই আমার নিয়তি।

ভুল বলেছিলেন গালিব। আরও কিছু দিন নয়, কবিতাপ্রেমীদের মনোভূমে শত সহস্র বছর বেঁচে থাকবেন তিনি। সাহিত্যস্রষ্টা হিসেবে তাঁর অবিনশ্বর প্রতিভাই বাঁচিয়ে রাখবে তাঁকে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ফেনীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বর্তমানে একই বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। লেখালেখির শুরু নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, পত্রপত্রিকায়। গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি ইতিহাস, তথ্যপ্রযুক্তি, ছোটোদের জন্য রূপকথা নানা বিষয়ে লিখেছেন। বিশেষ আগ্রহ অনুবাদে। সিলভিয়া প্লাথের ‘দি বেল জার’ ছাড়াও ইতিহাসভিত্তিক কয়েকটি বই অনুবাদ করেছেন। মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বাইশ।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।