শুক্রবার, নভেম্বর ২২

মোহন পুরুষের বাঁশি ও অন্যান্য কবিতা : অনুভব আহমেদ

0

ক্ষুধার্ত জলের রেখায়


আকাশ ভেঙে পড়লেও মানুষের মাটি থাকে
ঘুমিয়ে পড়তে চাইবার তেষ্টা থাকে

অস্ত যাওয়া মানুষের আকশ কেমন হয়?

খুলে দেখি মাংস মেদ হাড়
তফাৎ নেই কোনো—
মানুষের অন্দরে সারাদিন
বরষার নদী ফেঁপে ওঠে

ক্ষুধার্ত জলের রেখাগুলো—
প্রবেশ থামিয়ে একবার ফিরে তাকায়

মুহূর্তের—
ভাঙা ভাঙা রেকর্ডে
আকাশ ভেঙে পড়লেও মাটি থাকে
মানুষের থাকে না কিছু


জোছনামঙ্গল


চাঁদ গলে যায় মাঠের শেষে, চাঁদ গলে যায় বিলে
নদের পুত্র বাড়ি এসো তোমায় দেখবো খুলে
পোনার ঝাঁকে কাঁপছি দেখো তোমার ভেতর ধীরে
নদের পুত্র তোমার কামেরই শরীরে…

আমার এমন একলা বাড়ি বর্ষা এলে ভেজে
দেয়াল জুড়ে জলের শরীর ভীষণ জ্বরে পোড়ে
চিঠির শব্দে মেঘ জমে যায়, প্রেমের ধীবর ধীরে
ও ফুল—
বুকের ভেতর চির যে জন তারই জন্য ফোঁটো

সঘন দেহে কালকেতু আর
চুম্বনে করো গ্রাস
নদের পুত্র তোমার ঠোঁটে মিঠা জলের বাস।


মোহন পুরুষের বাঁশি


রুঢ়তার পালকে ঢাকা আশ্চর্য নগর
তোমাকে চেয়েছে
ধ্বনিত শব্দাবলীর স্পন্দন
শরীর কামড়ে ধরা কাম

উরু বেয়ে ওঠো ঝোঁপ
শরীর বেয়ে ওঠো কনকলতা
তোমাকে শোনাবো গল্প
পুরুষ দেহের মোহনঙ্গিমা

ফুটে থাকো অজস্র শালুকে
ফণীমনসার তল্লাটে
কার যেনো ফিসফাসে

তোমার সুঠামে ধানকলের শব্দ
পেশীতে বাজে স-মিলের কাঠ চেরাই

মিহি ঘ্রাণে আরও তীব্র করে তোলো নেশা
রুঢ়তার পালকে ঢাকা এক আশ্চর্য নগর পুরুষ…


প্রেমিকের জন্যে কবিতা


তুমি শুনছো?
……. দূরের বন পাতার মর্মরে তোমার শব্দবলির উদ্বেল ভাষা হয়ে বইছে
……. মানুষের অগুনতি ঢেউ তোমাকে আবৃত্তি করছে দিনযাপনের ভাষায়
হুড়মুড় করে বাতাসের প্রেমে পড়ে যাওয়া ঋতুগুলোর দৃশ্যপটে তোমার মুখাবয়ব আঁকা

তুমি শুনছো?
আমার প্রেম বলছে— এখানে তোমার আকাশ, তুমি ওড়ো

আমি নতজানু
……….. পত্র, পুষ্প, পল্লবে
আমি নতজানু
……….. হৃদয়ের সমস্ত দুয়ারে
তোমার বিস্তার
……….. মর্মের ছন্দে গহনে।

আমি মহাকালের ধুলোয় নশ্বর প্রাণ
অমরত্বের বীজে তোমাকে বুনে চলেছি
……. প্রেমে
…………. কামে
………………..দ্রোহে
……………………… দহনে
যেনো কোনও আয়তনের ভেতর বেড়ে ওঠা কামিনীঝাড়
আমি ফেনিত জলের টোপরে তোমার ছায়া দেখি
পদ্মদের দলে ভাসে তোমার দেহ ভঙ্গিমা

এই গহনে পাতার শরীর
………… ঝরার আগে স্পর্শ রাখো
এই সরোদে বেজে চলা
………… তুমিই আহির ভোরের বেলা

বোকা কবি আর কী পারে!
তোমায় নিয়েই কাব্য করে
শব্দজালের প্রদীপ দিয়ে
অন্ধকারে অর্ঘ্য ঢালে।

আর কী আছে তোমায় দেবার?
সে যে এক রিক্ত যোগী

অনেককালের তৃষ্ণা হয়ে তোমার কাছে থেকে যাবে।


ফুলের কাছে প্রার্থনা


ফুল, তোমাকে পাই, যেনো দাঁড়িয়ে থাকা স্টেশন
পারাপার শেষে যাত্রীর ফেলে যাওয়া
বিচ্ছেদ নিয়ে বসি, পাশের চেয়ার চোখ তুলে জানতে চায় কেমন আছো?

আমি কেমন আছি ফুল?

আমি বুঝি বাতাসের দোলে কাঁপতে থাকা পাতার সর সর
দুধ দোয়ানোর আত্মভঙ্গিমা

এই যে নিরুত্তর ঝোপ হয়ে ছেয়ে আছো
উড়ো হাওয়া ঘ্রাণ এসে লাগে
আত্মার দ্বৈরথ হাঁটু গেঢ়ে বসে থাকে

আমার কোনো মুক্তি নাই ফুল?

অনেক মেঘের পর রোদকে হাসতেই হয়
অচেনা হাত ছুঁয়ে ফেলার আগে
তুমি একবার ফোঁটো ফুল
তুমি একবার ফোঁটো।

 

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯৯৩ সালের ৫ই নভেম্বর। বেড়ে ওঠা সিলেটে। প্রকাশিত কবিতার বই ‘মৃৎফুলের নকশা’।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।