নৈঃশব্দ্যের ব্রিজের দেশে
০১.
একটা শীতের ঘড়ি পাহারা দিতাছে তোমার জীবন
ওই পথে যাইয়ো ফুলেদের গ্রামে
তারচেয়ে সহজে হাঁটো ধুলোবালিছাই পাশ কাটায়ে
বাড়ি ফেরার পথে নিয়া আইসো কালা কাফন।
০২.
প্রতিটি ঋতু ফুরিয়ে যাওয়ার সাথে আমাদের যেন মৃত্যু হয়
বাতাসে ভাসতে থাকে মৃত্যুসংবাদ—
আর তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি
কবে ভাঙবে ঘুম?
এই নৈঃশব্দ্যের ব্রিজের দেশে আমি এক গোপন কুঠার
ভাঙতে এসেছি আমাদের ঋতুবতী গোপনীয়তা
ধুপধাপ ভেঙে পড়ছে স্মৃতির অক্ষর…
০৩.
একটা বিষণ্ন ঘুঘুর বাড়ি থেকে কাছাকাছি
কিছুটা জারুল ফুলের মতো তোমার ঘ্রাণ
যেন দূর থেকে ডাকে অমোঘ আহ্বানে
জানলার ডাক শুনে বাড়ি নেই বলেও তুমিই এগিয়ে যাও
দেখো, আলোর রশ্মির ঘুম ছড়িয়ে পড়েছে ট্রাফিক সিগন্যালের বাতিতে
ঘুমের জন্যেই হয়তো পৃথিবীরা বড় হয়, আর দীর্ঘ হতে থাকে তোমার অহংকার
পূর্বপুরুষের ব্রিজে দাঁড়ালেই দেখতে পাবে ঘুম নামের নদীটা ঘুমিয়ে পড়েছে
০৪.
জানালাটা খুলে দিয়েছি আজও— ভোর বেলায়
যেন বারুদ-গন্ধের বাতাস কিছুটা আমার গায়েও লাগে
বয়সের ঘ্রাণে আটকে থাকা সময়
তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যায়
আর ফিরে ফিরে আসে বারবার—
বলে— আগুন নিয়েই খেলবে বলে
আগুনের মতো বেড়ে উঠছো ধর্মাবতার;
মানুষের বাগানে তবুও এত ফুল, এত ঘ্রাণ
তোমার কাছে পৌঁছায় না!
অথচ তোমারে দেখি শীতের শহর হিসেবে
বারবার হারিয়ে যাওয়া রহস্যের ঘোড়া
০৫.
তোমারে দেখতে ইচ্ছে করছে, প্রিয় রাজহাঁস
স্নানের আগে তোমার অযুত নিযুত ডুবের গল্পে ভাসতে ইচ্ছে করে
যেন শীত জর্জর শহরে তুমিই একমাত্র বসন্তের আগমনী বার্তা
আর আমি নিঃসঙ্গ দীঘি
বাড়ির পাশে জমে থাকা হৃদয়ের ক্ষুদ্র জলাশয়
শহরময় ছড়িয়ে পড়লে মহামারী,
তোমার সুরের অপেক্ষায় থাকা বাসটার মতো
নিঃসঙ্গ সেইসব প্রেমের গল্প;
আমিই একটা হাঁসের ছানা—
রাস্তা পারাপারের সময় মরে যাই শখের মিথে চড়ে
০৬.
তুমি আমি এইপাড়ে
ওই পাড়ে গোপন বৃক্ষ— স্নানের অপেক্ষায়
ব্রিজ পেরুলেই আর একটা গোপন ভ্রমণ
যেন হাঁটছি বারো মাস
০৭.
ঘর গেরস্থালি আমার ততটাই ভালো লাগে, যতটা তার জন্য করা প্রয়োজন। সে আসলে রূপকথার প্রান্ত থেকে উঠে আসা একটা মানুষ। যে কী না প্রতিদিন পাবলিক বাসে চড়ে বা লকডাউনে করে হোম অফিস।
আমি তার ছোট্ট খোপায় তাকিয়ে থাকি। যেন মহিরুহের মতো একটা লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়া গাছ। তাতে ফুটে আছে অজস্র স্বপ্নের সন্ধ্যা। ওয়াড্রব ভরে তার মখমলের বাসনায়। যেন সবগুলো শাড়ি ছুঁয়ে গেছে তাঁতীদের সুদক্ষ হাত।
সে থাকলে আরও শাড়ি থাকতো গেরস্থালীর পরতে পরতে। থাকতো কিছুটা অভিমানের আচার।
সন্ধ্যাচূর্ণের দিকে হাঁটতে হাঁটতে আমরা আরও কিছু প্রেম ও বিরহের গল্প করতাম। ঘর গেরস্থালীর মতো।
শিমুলগাছ
প্লাটফর্মের কাছে শিমুলগাছ
হাজার বছরের ঘুম চোখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তোমার দিকে
যেন আর কোনো বস্তু-রহস্যের পৃথিবী তুমি
এ পথে আসোনি
শিকারীকান্দা
শীতের যোনির মধ্যে ঘুমিয়ে আছো
আরো দূর আত্মার মতো
শিকারীকান্দা
খনে খনে তাজা আঙুরের আয়ু ফুরাবে বলে
ভালোবাসিয়াছে তোমারে।
প্রাক্তন
ইতিহাস ঐতিহ্যের পাঠ নিতে
মাঝে মাঝে তোমাকে দেখতে যাই
জাদুঘর মনে হয়।
জন্ম ১৯৮৪; ময়মনসিংহ। শিক্ষা : স্নাতকোত্তর। পেশা : সাংবাদিকতা।