শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২১

রূপকথা ফুরিয়ে আসে : সুকান্ত হৃদয়

0

জবাফুল


যেহেতু সবই রাজনৈতিক, আমি শুধু প্রেমের কবিতাই লিখব আর সারা রাত্রি জুড়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব কত না স্নেহে মলিন হয়ে যায় একটি জবা ফুল; পাহাড়ে ও শ্মশানে ঘুরে বেড়াব একা একা, যেন, এ-ই প্রায়শ্চিত্ত, যেন এইভাবেই ডাকাতেরা আগুন জ্বালায়। গ্রীষ্মে লাল-কাকড়ার দ্বীপে শুয়ে থাকব, বসন্তে ভাসমান বেশ্যাদের সাথে চুড়ির দোকানে গিয়ে বলব: যত খুশি নাও। ভালোবাসা পাইনি বলে— আমি শুধু প্রেমের কবিতাই লিখব আর ছন্নছাড়াদের দেশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখব কত না স্নেহে মলিন হয়ে যায় জবাফুল;


রূপকথা ফুরিয়ে আসে


এখন বুঝতে পারি কত অকারণ বিবাদে লিপ্ত হয়ে গেছে আমার দিনরাত্রি। কত বিকৃত ভাষা লুকিয়ে আছে রক্তকণিকায়। মাঝেমাঝে জিভ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে লকলকে সাপ— সাপের ছোবল। সবকিছু শেষ হয়ে গেলে শুধু আত্মদগ্ধ গাছটিকে দেখি। তার একদিকে যেমন বজ্রমণি আগুন, অন্যদিকে মাটিতে লোটানো আগুনের কাঁপা কাঁপা ছায়া। যত খুশি নিক্ষেপ করো অগ্নিপাথর— আমার আর বাকসংযম নাই, আত্মসমর্পণ নাই। তোমার কাছে আমিও এক লুম্পেনসুন্দর!


মাল্যবান


ভোরবেলা সবকিছু এতো শান্ত থাকে— মনে হয় ভূতের বাড়িও ঘুরে আসা যাবে অনায়াসে। ভ্রমণ হয় না তবু, মনে হয় ক্লান্ত মহিষের পিঠে ঋতু বদলে যায়, আসে মিথ্যা তুষারের দিন, তখন তোমার মুখ নির্জনতার মতো রাঙা—

স্বয়ংবর সভা শেষে কতদূর পৌঁছায় পাখিদের বৃক্ষবন্দনা? বজ্রাসনে যিনি বসে আছেন ঋষিভঙ্গিমায়, তার গলার স্বর, এতো শান্ত— যেন নদীর ধারের এক জাপানি ইমেজ। ভ্রমণ হয় না আর— কাকস্নান সেরে যখনই লিপ্ত হই রোমাঞ্চকর পথে, প্রতিটি শরের ডগায় দেখি মাল্যবান ঘুম।


হাড়ের ভেতরে জ্বর


তোমার গয়না হারানোর রাতে কে খুঁজে পায় পতঙ্গ-চমক? পাশার শেষ দানে হেরে খুইয়েছ ভ্রমণের অর্থ, গোটা আড়াইশো বিনা কি করে পোঁছুবে বন্ধুমহলে? ভ্রমণই উদ্দেশ্য তার, প্রেম নাই, যৌনতা নাই, দূর থেকে শোনে রাক্ষুসীর হাসি আর পাতার আড়াল দিয়ে যখনই চাঁদের আলো পড়ে জঙ্গলশরীরে, সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে একটা গোলাপি কাঠের পিঁড়ি হাওয়ায় ভাসমান।

যতই না না করো, তোমাকে একদিন নিয়ে যাবে এই উড়ন্ত পিঁড়ি, হয়তো তোমারও ইচ্ছে হবে, আর তো কিছু নাই, শুধু কঙ্কাল আর অস্থিঝংকার, একটু চড়ে বসি;


জলে ভাসা সাবান


কী হবে প্রেতসাধনা করে? এখানে দেখার কিছু নেই তবু একদিন এসো— আকাশের পুরাতন আলো আর হিমশীতল বাতাস ভেদ করে যখন আমরা হেঁটে যাব বস্তুতলার মাঠে, প্রতিটি ঝরে পড়া পাতার গায়ে তখন ব্রহ্ম-ঘ্রাণ। যত জোরেই গাও তোমার গান শুনবে না আর কেউ! যদি পারো জলে ভাসা সাবান মেখে স্নান করে এসো। তারপর যখন রিপু-সর্বস্ব মন নিয়ে আমরা হেঁটে যাব কুয়াশার আরেকটু ভেতরে— খুঁজে পাবো স্মৃতি বর্ণনার মধুমাখা আপেল অথবা একখণ্ড অধিদৈবিক হারমোনিয়ামের ভাষা।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালে ঢাকার রামপুরায়। শৈশবের একাংশ এবং শৈশব পরবর্তী গ্রামেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা ইংরেজি সাহিত্যে। কবিতা ও গদ্য লেখার পাশাপাশি গান নিয়ে কাজ করেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।