সামুদ্রিক মিথ্যা
সমুদ্রের সবচেয়ে বড়ো মিথ্যা
একটি মারমেইড আর
একটি জাহাজ!
সমুদ্রের সত্যগুলো গড়িয়ে-গড়িয়ে চলে
ফুঁসে-ফুঁসে বড়ো হয়।
কিন্তু আবার মিলিয়ে গিয়ে মিথ্যা হয়ে যায়,
হয়ে যায় লবণাক্ত।
সামুদ্রিক মিথ্যাগুলো এখন পায়ের নিচে
শক্ত ভিতের মতো দাঁড়িয়ে,
আবার একটু পরেই ডুবিয়ে দেয়,
ছলনায়।
আকণ্ঠ পান করিয়েও
তৃষ্ণা মেটায় না
কেবল বাড়ায়।
একটি নদীর সত্য হারায় সমুদ্রে,
নিজেকে বিলিয়ে সব নদী
তবুও সমুদ্রগামী।
সত্য-মিথ্যায় কী আসে-যায় সমুদ্রের?
জলজ
একটি করে বুদবুদ উঠছে আর নামছে
দ্রবীভূত ছাদ, গলিত সূর্য, তরল প্রাচীর।
উদগ্রীব কৌতুহল ডুবসাঁতারুর চোখে ,
বিস্ময়। আমি শুড় নাড়ছি
স্মুদ সারপেন্টাইল কার্ভে।
ঈষদুষ্ণ মাধ্যম, ক্ষীণ কোরাল টিন্ট।
চারপাশ শান্ত, বাজারের থলে,
তিনটি টিয়া। হাতে তিনটি নুড়ি।
সকালে কাজ নেই। স্বাক্ষরের অপেক্ষায়
একটি ডিভোর্স পেপার আর একটি
কাবিননামা। শেরওয়ানির মাপ
নেয়া বাকী। বাকী কিছু বাড়ি ভাড়া।
একটি ঢিল বুক চিরে আসে। ছোটো থেকে
বড়ো ঘূর্ণিবলয়, একে অপরে প্রবিষ্ট।
মনে হয় যেন কত পুরাতন। পার্থিব নুড়ি
হাতে তুলে নেই। আঁশটে শরীরে রংধনুর ঝিলিক।
সাইরেন বাজিয়ে জাহাজ আসবে এখন।
তলদেশ ফেনিল, কাল পেইন্টেড।
সাঁতার
সাঁতার কাটবে? প্যাস্টেলে গা ডুবিয়ে?
নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে প্যাস্টেলের গন্ধ হবে,
সরীসৃপ-পিচ্ছিলতায় গড়িয়ে-গড়িয়ে
থকথকে ঘন নীল লাভা প্রবিষ্ট হবে রন্ধ্রে
রন্ধ্রে। চুলে-বিলি-কাটা অক্টোপাসের
ভিক্সেন চুম্বক, পুরু চামড়ায় গোলাপি
মাছের বাবুই, কিছু শিশু হাঙর হারাবে
অতলান্তিক গভীর গাঁদে, কিছু সূর্যকোরাল
লুকাবে পিককস্-টেইল-এর আড়ালে।
বিলি কেটে তুমিও প্রবেশ করতে পারো,
কিম্বা একটা গভীর ডাইভ, তাও পারো—
কয়েকশ আলোকবর্ষ টাইম পিরিয়ড।
ঠোঁটের একাংশে ফেনিল সফেদ বুদবুদ।
সিলিঙ ফ্যানের দিকে তাকিয়ে নিস্পন্দ
অস্থির আমি। বাম হাতে একটা কোমল
বালিশ, ডান হাতে বহুমুখী নীল ক্রিস্টাল।
পাশে শুয়ে পড়, কিম্বা মুখামুখি, নয়তো
আমাকে সামনে দাঁড়াতে দাও। এত ঠান্ডা
তোমার হাত! অপার্থিব শীতল তোমার বক্ষবন্ধন।
চার হাতে ক্রিস্টাল প্রবিষ্ট হোক,
নাভীগহ্বর থেকে নাভীগহ্বরে, শাড়ি বোতাম
খুলে ঠিকরে আসুক কিছু গলিত প্যাস্টেল।
উষ্ণ হোক চারজোড়া পাঁজর।
সাঁতার কাটবে? আমি নীল প্যাস্টেল।
তবুও তোমার
একটু না হয় ভিজলো তোমার শাড়ীর আঁচল,
বৃষ্টি না হয় ভুল করেছে তোমায় ছুঁয়ে।
তাই বলে কি কাঠগড়াতে দাঁড় করাবে?
বন্ধ গেটে প্রহর গোনা পাথর হয়ে!
একটু না হয় লেপ্টে গেছে চোখের কাজল,
টিপটাও নেই আগের মতো আগুনরাঙা
তাই বলে কি ক্ষিপ্তস্বরে ক্রুদ্ধ হয়ে,
চেঁচিয়ে দুপুর এক করে এই আকাশ ভাঙা?
একটু না হয় ভাঙলো তোমার হাতের চুড়ি
আলগা হলো খোপার বাঁধন, ফুলের মালা,
ভাঙলে কখন কয়টা হৃদয় খোঁজ রাখো কি?
মাখলে কখন গঞ্জনার এই তিক্ত জ্বালা?
রুপালি স্থাপত্য
আমি তখন অনেক ছোটো,
গোলাপি সজারুর চেয়েও কয়েক ইঞ্চি ছোটো
উঠানের কাল জবার গাছটাকে
পাইনের চেয়েও দীর্ঘ মনে হয়!
আমার যাতায়াত ক্যকটাসের বনেl
ওর ছায়ায় বসে মাতাল ফড়িংদের সাথে
ধুন্ধুমার আড্ডা;
ইশ কী যে মিষ্টি!
নিষিদ্ধ অ্যাপেলের চেয়েওl
ড্রাফটিং কিম্বা ড্রয়িং কোনোটাই হয় না আমারl
আমি রুক্ষ কন্ক্রীটঢালা ছাদে
ইট ঘষে হরিণ আঁকতে ভালোবাসিl
তাইতো আঁচড়ে-আঁচড়ে চামড়ায় রক্তাক্ত কামড়!
বুনো ঘাসের মতো টেক্সচারাল রাজহংসী হওয়ার
স্পর্ধাই নেই আমার!
যেখানে সাপদের সাথে রোজ হায়েনাদের মিটিং বসে,
আমার যেতে বড্ড ভয়!
পলাশীর পলাশ নয়
ফ্যাকাল্টির রুপালি দেয়ালের মতোই
ফ্যাকাশে আমিl
সকাল-বিকাল শুধু সূর্যই রাঙায় আমাকে;
জিরাফের সোনালি গ্রীবা নিয়ে ঐ দূর থেকে,
জিব্রা কাটা হরাইজনটাল শেড শ্যডো ফেলে,
নিরুদ্দেশী করিডোরের রুপালি সরু পথেl
মাঝে মাঝে মনে হয়
সুরমাই মরুভুমিতে হারিয়ে যাওয়া এলিস আমি!
গভীর থেকে গভীরে,
আরো গভীরে, আরো গভীরে
অতলস্পর্শী
ডুবতে ডুবতে ডুবতে… চায়ের কাপের টুংটাং
স্থাপত্যে কৌশল, আস্থার , স্থাপত্যে
কৌশলী প্রকৌশল, তুরুপের তাস
বড্ড ভারী মনে হয়l
তারচেয়ে বলি রুপালি ফ্যকাল্টির
রুপালি মেয়ে আমিl
একদিন এসো ক্যকটাসের ছায়ায়
অনেক গল্প সযত্নে পুষে রেখেছি,
শোনাব বলেl
কবি লায়লা ফারজানা পেশায় স্থপতি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন (আরবান ডিজাইন ও স্থাপত্যবিদ্যায়) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো থেকে। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটি স্কুল কনস্ট্রাকশন অথোরিটিতে স্থপতি হিসাবে কাজ করছেন। এর বাইরেও লায়লা ফারজানা একজন নাট্যশিল্পী এবং শিল্প ও সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখায় রয়েছে তার সাবলীল যাতায়াত। নিউইয়র্ক-এর ডিস্টুডিওডি আর্কিটেক্টস এবং ইঞ্জিনিয়ার্স (দ্য স্টুডিও অফ ডিজাইন) তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, যেখানে তিনি ‘সাসটেইনেবল-আর্কিটেকচার’ এর চর্চা করেন।