নীল ভাঁটফুল
উপেক্ষা-মিনারে ফোটে
নীল ভাঁটফুল
হলুদ সন্ধ্যার পাশে
তোমাকে দেখেছি বহুদিন হলো,
তুমুল বৃষ্টির ছাঁটে খোঁপা খুলে গেলে
হাতে রেখে দিয়ো একটা বকুল
একটি জলের রেখা ধরে দেখো
নেমে যাবে আয়ু
চক্রব্যূহ
যতোটা পাহাড় থেকে দূরে সরে যাই ততো বহুবছরের জমে থাকা বরফের শীর্ষে মমতা-পাথর নড়ে ওঠে। দুর্গাসাগরের মতো আমার নিজস্ব কোনো দীঘি নাই তথাপি কখনো পাতা পতনের শব্দে চমকিত হতে ভালো লাগে—
মনে মনে আমি এক অভিমন্যু অশোকের ছায়া
দুঃস্বপ্নে দুর্গের যতো কাছে আসি
শুনি ভেতরে অসংখ্য শঙ্খ-ধ্বনি, রণবাদ্য—
আসঙ্গের-হ্রেষা পিছে ফেলে চলে যেতে থাকি
কোথায় মৃগয়া
চক্রব্যূহ ছিন্ন করে ছুটে যায় তৃষ্ণার্ত যুদ্ধের ঘোড়া
রঙধনু
আমর্ম বিষাদের দিন ফুটে থাকে
ঘাসফুলে
শেষবার ছায়া দেয়া সেই নিমগাছটাকে মনে রেখো
মনে রেখো
হাওয়ার উড়ালে ক্ষয়ে যাওয়া একছত্র বিকালের স্রোতে
বিশালাক্ষ তুমি সেই নগরের হ্রদ
তবু কোথাও বৃষ্টি হয় মেঘ জমে পরশপিপুল ফুটে যেতে যেতে মনে হয় এইখানে একদা কখনো তুষারপাত হয়েছিলো। আজ সেই হিম-লগ্ন মানবীর দেখা নেই, তথাপি বৃষ্টি থামে রোদ উঠে—
মেঘের ফাঁক গলে সব আকাশে রঙধনু হয় না প্রিয়
শুধু ঘাসফুল জানে
চোখের ভিতর বরফ-বাঁধা শীত, তুমি তাকে বলো বাকুরার পথে যেতে— তুমি আসবা কি আসবা না ভেবে পানসি দেখো নিভে যায় জলে
কেউ নদী লিখতে গিয়ে ভুল করে একেঁ ফেলে ঘাসফুল
মৃদু টঙকারে ছলকে পড়ে আখিঁ, কেউ একজন দূরে থাকুক মমতায়— বুঝে নিক অথবা না বুঝুক
শুধু ঘাসফুল জানে কে ভালোবাসে
কে তারে ভলোবাসে না…
তামসিক
বৃষ্টি হোক জমকালো,
পাথরে ঘর্ষণে কোথাও বিদ্যুৎ চমকালো।
সাদা মেঘ সরে যায়
হরিণনাভির থেকে ফিরে আসে ঘ্রাণ।
ছিলে ময়ুরের বেশে ছদ্ম পাখিদের পরিত্রাণ
মৃন্ময়ী এ কোন বৃক্ষের সন্তান।
তামসিক
ঝরে পড়া পাতার অধিক
এই হিমনিশি। পাখিদের গ্রামে
কতিপয় মেঘ কিংবা পাহাড়ের নামে
দেখো ফুল ফুটলো থরে থরে
ধূসর রাত্রির অগোচরে…
জন্ম ৩০ এপ্রিল ১৯৬৩, ঝালকাঠী। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক এবং নিপসম থেকে পরিবেশ-স্বাস্থ্যে স্নাতকোত্তর। শিশুস্বাস্থ্যে DCH। পেশায় চিকিৎসক। প্রকাশিত বই : ‘হরিণনিদ্রার নাচ’ [কবিতা, ২০১১, কবিতাসংক্রান্তি], ‘অন্তরীক্ষে রোদের বাগান’ [কবিতা, ২০১৩, অগ্রদূত], ‘কাচঘরে বিষাদজোনাকি’ [কবিতা, ২০১৩,], ‘একলিমার গাথা’ [কবিতা, ২০২২, বুনন]। সম্পাদনা : ‘কবিতাপত্র’ ও ‘দূরের সাইকেল’ [ছোটোকাগজ] ও ওয়েবজিন।