১
একান্ত শোকের পাশে রেখে যাও কার কালো বিড়াল?
সারাক্ষণ ঘরের পাশে মিউ মিউ করে
তার লোম থেকে ঘনিয়ে আসে তুষারাবৃত সন্ধ্যা!
কাঁটাবাছার দুপুর নেই
শুধু দু-জোড়া জ্বলজ্বলে চোখ রাতের দিকে চেয়ে থাকে!
২
বাড়িটিই বড়ো হল!
বড়ো বাড়ি উঠোনহীন হলে কি ভালো লাগে?
গাছপালা নেই, পশুপাখি নেই
শুধু দেওয়াল আর দেওয়াল… দেশভাগের মতো
কারো সিঁথি রাঙিয়ে দিয়েছে
কারো-বা বুকে বসিয়ে দিয়েছে একটা ভাঙা পোস্টঅফিস!
৩
ভালো না-ও বাসতে পারো
দোষারোপ করে কিনে দেব না রঙিন বেলুন
এত তারা আকাশে! কার দিকে তাকাব?
যে খসে যায় তাকেই মনে হয় প্রিয়… তাকেই মনে হয়
ফুঁ-হীন এক রঙিন বেলুন!
৪
তোমাকে বলিনি— ঘুমের সময় মাথায় হাত রাখো
তোমাকে বলিনি— হাত পায়ের নখ কেটে দাও
তুমি ঘোরতম সংসারী
দূরের হাওয়ায় যে কবি চলে যায়… তার কবিতা তুমি শুনো না
৫
আবার কোনোদিন ভোরবেলা উঠে কাঁদব
সঙ্গম ভেঙে ওঠা নিশ্চুপ গাছটিকে বলব— তোমার সঙ্গী কই?
সে লজ্জা পাবে, তার পাতায় চোখ রেখে বুঝে নেব
সঙ্গমের পর সে কতটা প্রেমিক!
৬
যে চলে যায়, সেই কি ফেলে রাখে চশমা?
ফুটে ওঠে দূরের গ্রাম, হাজার হাজার মানুষ…
কারো খিদে নেই
সবাই দুপুরের রোদে শোকাচ্ছে চুল
বাড়া-ভাতের কাছে শোক নিজেই যেন এক রংচটা ইশকুল!
৭
বয়স্ক রোদের কাছে রেখে তুমি চলে গেছ ইশকুল
ভেজা জামার কাছে অশ্রু লুকিয়ে সেজেছি কড়া মাস্টারমশাই
তুমি নেই! একটা বেলহীন ভাঙা সাইকেল ক্যান্টিনের পাশে
ভিজে যায়…
৮
অপেক্ষা করতে করতে একদিন তোমার চুলে পাক ধরবে
কুলের আচার শুকোতে গিয়ে তুমিও পড়ে নেবে রোদের ইশকুল
পাঠ চলবে
সিলেবাসে থেকে হারিয়ে যাবে তোমার নাকছাবি
একটা ফড়িং শুধু থেকে যাবে, হয়ত সে-ও কিছুটা উদাসীন!
৯
যে চিরুনির দাঁত ভেঙে যায় তার প্রতিবিম্ব কি ফুটে ওঠে আয়নায়?
বাঁকা বাঁকা আলো পড়ে
তোমার মুখ থেকে গড়িয়ে যাওয়া সন্ধ্যায়
একটি শিশু বারবার হারিয়ে ফেলে পথ!
১০
এ কোন থেমে যাওয়া চিৎকার
পাহাড় থেকে বরফ গলে!
হারিয়ে যাওয়া ধ্বনি থেকেও প্রতিধ্বনি আসে
আর ক্ষুধার্ত মাছেরা বরফ জলে পুষ্ট নদী থেকে
বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়!
কবি, সম্পাদক ও প্রকাশক
নদিয়ার চাপড়ায় থাকেন। লেখালেখির পাশাপাশি ‘তবুও প্রয়াস’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পছন্দের বিষয় লোকসংস্কৃতি। প্রকাশিত কবিতার বই তিনটি। মায়াজন্ম, লবণ খেতের জোনাকি এবং কাঁচা মাংসের বাড়ি। সম্পাদিত বই একটি। ছাদ পেটানোর গান । ইমেইল : salimmondal07@gmail.com