ব্রিটিশ ভারতে চিকিৎসকদের জন্য সবচেয়ে অভিজাত চাকরি ছিল ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস। এটি মূলত সেনাবিভাগের জন্য করা হয়। তারপর এরা বেসামরিক ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করে। রোনাল্ড রস, স্যার বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন এই সার্ভিসের সদস্য ছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এদের ভূমিকা দারুণ প্রশংসিত হয়। ভারতবর্ষে সংক্রমক ব্যধি রোধে এই সার্ভিসের কর্মকর্তারা উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ম্যালেরিয়া ও কালাজ¦রের জীবাণু ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিসের দুই উজ্জ্বল কর্মকর্তা প্রথম শনাক্ত করেন। ভারতে ব্রিটিশদের সাম্রাজ্য বিস্তারে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এরা কখনো কখনো ডাক্তারি ব্যাগ ছেড়ে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন, কখনো বা হয়েছেন দক্ষ প্রশাসক। এরাই ভারতবর্ষের প্রথম ‘সরকারি ডাক্তার’।
ভারতবর্ষে ব্যবসা করার উদ্দেশ্য লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে জাহাজ পাঠানোর সময় জাহাজের নাবিক ও যাত্রীদের জন্য চিকিৎসক নিয়োগ দেয়। প্রত্যেক জাহাজে দুজন ডাক্তার ও একজন নাপিত নিয়োগ পায়। ১৬০১ সালে প্রথম তিনটি জাহাজ ভারতের পথে যাত্রা করে। সেই জাহাজ যাত্রায় সার্কভি রোগের উপর গবেষণা চালানো হয়। যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
১৭৬৪ সালে মাদ্রাজ ও বোম্বেতে অনরূপ সার্ভিস চালু করা হয়। সামরিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় সামরিক ও বেসমারিক চিকিৎসা সেবাকে পৃথক করা হয়। প্রত্যেক নন-ন্যাটিভ রেজিমেন্টে একজন করে সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৮৫৪ সালে বেঙ্গল সার্ভিসে ৩৮২, মাদ্রাজ সার্ভিসে ২১৭ এবং বোম্বে সার্ভিসে ১৮১ জন সার্জন ছিলেন। তখন চিকিৎসকরা সহকারী সার্জন হিসেবে চাকরিতে ঢুকতেন।
এই ডাক্তাররা মূলত জাহাজের ডেকে চিকিৎসা দিতেন। দীর্ঘদিন স্থলভাগের জন্য কোন চিকিৎসক ছিল না। কলকাতার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৯১ সালে প্রথম চিকিৎসক নিয়োগ দেয়। তার নাম ডাচম্যান। প্রথম প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয় ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অক্টোবর বেঙ্গল মেডিকেল সার্ভিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তখন গ্রেড অনুসার বেতন এবং পদোন্নতি ও চাকরির নিয়ম স্থির করা হয়। ১৭৬৪ সালে মাদ্রাজ ও বোম্বেতে অনরূপ সার্ভিস চালু করা হয়। সামরিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় সামরিক ও বেসমারিক চিকিৎসা সেবাকে পৃথক করা হয়। প্রত্যেক নন-ন্যাটিভ রেজিমেন্টে একজন করে সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৮৫৪ সালে বেঙ্গল সার্ভিসে ৩৮২, মাদ্রাজ সার্ভিসে ২১৭ এবং বোম্বে সার্ভিসে ১৮১ জন সার্জন ছিলেন। তখন চিকিৎসকরা সহকারী সার্জন হিসেবে চাকরিতে ঢুকতেন। পদোন্নতি পেয়ে হয় সার্জন, নইলে ক্যাপ্টেন হতে পারতেন। ১৮৫৫ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে সূর্যকুমার গুডিভ চক্রবর্তী অভিজাতপূর্ণ ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিসে নিয়োগ পান। ১৮৫৭ সালে মেডিকেল সার্ভিসকে দুই স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। তিনটি প্রেসিডেন্সির জন্য তিনটি নিজস্ব সার্ভিস গঠন করা হয়। ১৭৬৪ সাল পর্যন্ত ডাক্তারদের মাত্র দুটো পদে ছিল। সার্জন ও হেড সার্জন। এরপর চার ধরনের পদ সৃজন করা হয়। পদগুলো হলো: সার্জন জেনারেল, হেড সার্জন, সার্জন ও সহকারী সার্জন।
১৭৮৮ সালের মেডিকেল অফিসাররা কমিশনড অফিসার হিসেবে পুনর্বিন্যস্ত হন।
• সার্জেন জেনারেল/ ফিজিশিয়ান জেনারেল/ চিফ সার্জন
• হেড সার্জন, যিনি কিনা মেজরের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• সার্জন, তিনি ক্যাপ্টেনের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• এসিস্টেন্ট সার্জন, তিনি ল্যাফটেনেন্টের সমমর্যাদায় বিবেচিত হতে
১৮০৭ সাল থেকে প্রত্যেক আর্মি ডিভিশনে একজন করে সুপারিনটেনডিং সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়। তার পদমর্যাদা ছিল হেড সার্জনের উপর। ১৮৪৩ সালে পদক্রমে ব্যাপক সংস্কার আনা হয়।
• সার্জেন জেনারেল/ ফিজিশিয়ান জেনারেল/ ইন্সপেক্টর জেনারেল, যার পদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের সমমর্যাদার
• সুপারিনটেনডিং সার্জন, যিনি কিনা লে. কর্নেল সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• সিনিয়র সার্জন, যিনি কিনা মেজরের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• সার্জন, তিনি ক্যাপ্টেনের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• এসিস্টেন্ট সার্জন, তিনি ল্যাফটেনেন্টের সমমর্যাদায় বিবেচিত হতে
১৮৫৮ সালে সরাসরি ব্রিটেনের রানির অধীনে চলে যাওয়ার পর তিনটি প্রেসিডেন্সির পৃথক মেডিকেল বোর্ড তুলে দেওয়া হয়। একটি ডাইরেক্টরিটের অধীনে মেডিকেল সার্ভিসকে নিয়ে নেওয়া হয়। পদক্রম হয়—
• ডাইরেক্টর জেনারেল/ ইন্সপেক্টর জেনারেল, যার পদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের সমমর্যাদার
• ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, যার পদ লে. কর্নেলের সমমর্যাদার
• সিনিয়র সার্জন, যিনি কিনা মেজরের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• সার্জন, তিনি ক্যাপ্টেনের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• এসিস্টেন্ট সার্জন, তিনি ল্যাফটেনেন্টের সমমর্যাদায় বিবেচিত হতে
১৮৭৩ সালে আবার নতুন পদক্রম কাঠামো তৈরি করা হয়।
• সার্জন জেনারেল, যার পদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের সমমর্যাদার
• ডেপুটি সার্জন জেনারেল, যার পদ লে. কর্নেলের সমমর্যাদার
• সার্জন মেজর, যিনি কিনা মেজরের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• সার্জন (৬ বছরের বেশি চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে), তিনি ক্যাপ্টেনের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• এসিস্টেন্ট সার্জন, তিনি ল্যাফটেনেন্টের সমমর্যাদায় বিবেচিত হতে
১৮৮০ সালে এন্ট্রি পদের মান-উন্নয়ন করে নতুন পদক্রম তৈরি করা হয়।
• সার্জন জেনারেল, যার পদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের সমমর্যাদার
• ডেপুটি সার্জন জেনারেল, যার পদ কর্নেলের সমমর্যাদার
• ব্রিগেড সার্জন, যার পদ লে. কর্নেলের সমমর্যাদার
• সার্জন মেজর, যিনি কিনা মেজরের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
• এসিস্টেন্ট সার্জন, তিনি ক্যাপ্টেনের সমমর্যাদার বিবেচিত হতেন
ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস বা আইএমএসের অফিসাররা মিলিটারি র্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার শুরু করেন ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে। সার্জন জেনারেল পদকে তখন মেজর জেনারেলের সম পর্যায় উত্তীর্ণ করা হয়।
১৮৫৩ সালে ভারতে রেললাইন বসানো শুরু হলে রেল কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় বেতন ও সুযোগ সুবিধায় চিকিৎসক নিয়োগ দিতে শুরু করে। পরবর্তীতে এসব চাকরিও দারুণ পদ-কাঠামোর মধ্যে চলে আসে। রেলওয়ের চিকিৎসা বিভাগের পদক্রম ছিল এমন—
• চিফ মেডিকেল অফিসার
• ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার
• সার্জন
• এ্যাসিটেন্ট সার্জন
এছাড়া নেটিভ ডিসেপেন্সারি ও হাসপাতালের জন্য সাব এসিসটেন্ট সার্জন পদে নেটিভ ডাক্তাররা নিয়োগ পেতেন। এসব নিয়োগ প্রেসিডেন্সিগুলো নিয়ন্ত্রণ করত।
এই সরকারি ডাক্তাররা ব্রিটিশদের জন্য অপরিসীম অবদান রেখেছিল। গেব্রিয়েল বৌটন নামের এক ডাক্তারের বদৌলতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় অবাধ বাণিজ্য করার অনুমতি পায়।
বৌটন সুরাট বন্দরে বসবাস করতেন। তাঁর চিকিৎসার সুখ্যাতি ছিল। বাদশাহ শাহজাহানের প্রিয়তমা কন্যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। কিছু কিছু স্থানে ঘা শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় ঘা পেকে ডাক দিয়েছে। শুকনো এবং পেকে যাওয়া দুটো জায়গাতেই অসহ্য যন্ত্রণা। শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় দিল্লির সম্রাট বৌটনকে ডেকে পাঠান। বৌটনের মাসখানেকের চিকিৎসায় জাহানারা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
বৌটন সুরাট বন্দরে বসবাস করতেন। তাঁর চিকিৎসার সুখ্যাতি ছিল। বাদশাহ শাহজাহানের প্রিয়তমা কন্যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। কিছু কিছু স্থানে ঘা শুকিয়ে আসতে শুরু করেছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় ঘা পেকে ডাক দিয়েছে। শুকনো এবং পেকে যাওয়া দুটো জায়গাতেই অসহ্য যন্ত্রণা। শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় দিল্লির সম্রাট বৌটনকে ডেকে পাঠান। বৌটনের মাসখানেকের চিকিৎসায় জাহানারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তখন বাংলার সুবেদার ছিলেন সম্রাটের পুত্র শাহ সুজা। তিনিও বোনকে দেখতে দিল্লি হাজির হয়েছিলেন। বৌটন সে সুযোগে বাংলায় বাণিজ্য করার অনুমতি চেয়ে বসেন। তুষ্ট নবাব ও তাঁর পুত্র মাত্র তিন হাজার টাকা নজরের বিনিময়ে ইংরেজদের বিনাশুল্কে বাংলায় ব্যবসা করার অনুমতি দেন। সোরার মতো স্পর্শকাতর দ্রব্যের পর্যন্ত ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়।
১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলী খাঁ বাংলার নবাব হওয়ার পর ইংরেজদের কাছ থেকে বিনাশুল্কে ব্যবসা করার ফরমান চেয়ে বসেন। কিন্তু যেকোন কারণই হোক ইংরেজরা বাদশাহ শাহজাহানের দেওয়া ফরমান হারিয়ে ফেলেছিল। এদিকে ততদিনে দিল্লির মসনদে পরিবর্তন আসে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিল্লির দরবারে এক প্রতিনিধি দল পাঠায়। তখন দিল্লির মসনদে তরুণ বাদশাহ ফরুখশিয়ার। ব্রিটিশরা তাঁকে ৩০ হাজার পাউন্ডের উপহার, ১০০১ টি সোনার মোহর, অনেক দামী ঘড়ি, দূরবীক্ষণ যন্ত্রসহ অনেক দামী সামগ্রী উপঢৌকন হিসেবে দেয়। বাদশাহ এসব গ্রহণ করেন ঠিকই, কিন্তু ফরমানের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। তখন তার সঙ্গে যোধপুরের রাজা অজিত সিংহের অপরূপা কন্যার বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু এরমধ্যে বাদশাহ কঠিন পীড়ায় পড়েন। তাঁর বিয়ে ভেস্তে যাওয়ার পথে। তখন কোম্পানির চিকিৎসক ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হেমিল্টন তাঁর চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন। তাঁর চিকিৎসায় বাদশাহ সুস্থ্য হলে কোম্পানি পেয়ে যায় বার্ষিক মাত্র ৩ হাজার টাকা শুল্কের বিনিময়ে বাংলায় অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা।
নবাব আলিবর্দি খান ইংরেজদের পছন্দ না করলেও তাকে চিকিৎসা সেবা দিতেন একজন ডাক্তার। নাম ফোর্থ। এই ফোর্থ গুপ্তচোরবৃত্তি ও সিরাজউদ্দৌল্লা বিরোধীদের সঙ্গে ইংরেজদের সেতুবন্ধনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।
ডাক্তাররা একসময় অতিরিক্ত মুনফার আকর্ষণে প্রশাসনিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা যখন ফোর্ট উইলিয়াম দখল করেন তখন কলকাতার কালেক্টর ছিলেন হলওয়েল নামে একজন সার্জন। পরবর্তীতে তিনি সিরাজের সৈন্যবাহিনীর হাতে বন্দি হোন। অন্ধকূপ হত্যা কাহিনি রচনার জন্য খুব বিখ্যাত হয়েছিলেন পরবর্তীতে। ১৭৬৩ সালে পাটনায় মীর কাশিমের সঙ্গে যুদ্ধে একমাত্র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি ছিলেন উইলিয়াম ফ্লুরটন। তিনি একজন ডাক্তার ছিলেন। পরবর্তীতে মীর কাশিমকে হারানোর পেছনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তাঁকে দুই জন অতিরিক্ত মহা পরিচালক সহায়তা প্রদান করেন। এ ছাড়া লাইন ডাইরেক্টর (বিষয়ভিত্তিক পরিচালক), পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, চিকিৎসাকর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ কর্মরত আছেন। সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ে পরিচালকগণ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমান বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তদারকির জন্য প্রধান সংস্থা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তল। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে এটি পরিদপ্তর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে অধিদপ্তরে উন্নীত হয়। মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উনি রাষ্ট্রের একজন প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তা। তাঁকে দুই জন অতিরিক্ত মহা পরিচালক সহায়তা প্রদান করেন। এ ছাড়া লাইন ডাইরেক্টর (বিষয়ভিত্তিক পরিচালক), পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, চিকিৎসাকর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ কর্মরত আছেন। সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য কার্যালয়ে পরিচালকগণ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। সব মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল সেই মেডিকেলের একাডেমিক কার্যসম্পাদন করেন। প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন এবং উপজেলাসমূহে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে এ অধিদপ্তরে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। ২০২০-এর ২৯ আগস্ট প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় এই ক্যাডারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩২ হাজার। তার মধ্যে ১৫ হাজারই এন্ট্রি পদে চাকরি করেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রধান নীতি নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান হলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের দুটো বিভাগ আছে। বিভাগগুলো হলো—
• স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ
• স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনের অধিদপ্তর সমূহ হলো—
• স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
• স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর
• ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
• ন্যাশনাল ইলেকট্রো- মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার
• নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর
• রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
• বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল
• জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল
• স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট
• ট্রান্সপোর্ট এন্ড ইকুইপমেন্ট মেইনটেনেন্স অর্গানাইজেশন
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীনের অধিপ্তর সমূহ—
• স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর
• জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট
• পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
পাকিস্তান সৃষ্টির পর স্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ডিপার্টমেন্ট একজন মন্ত্রী ও সচিবের অধীনে ছিল। পূর্ব বাংলা (পরে পূর্ব পাকিস্তান)-র প্রথম স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যিক হাবিবুল বাহার চৌধুরী। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ও জেল একই বিভাগের অধীনে আনা হয়। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় এই বিভাগের দায়িত্ব রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীকে দেওয়া হয়। ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ টি পরিদপ্তরকে এ ক্যাটাগরির পরিদপ্তরের মর্যাদা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সপ্তম ক্রমতে ছিল মেডিকেল ও পাবলিক হেলথ ডাইরেক্টরেট। ১৯৬২ সালে স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ একই বিভাগের অধীনে ছিল। ১৯৬৯ সালে স্বাস্থ্য স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কর্নেল মো. মাসুদুল হককে ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন।
সূত্র:
• এ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস (১৬০০-১৯১৩), লে. ক. ডি জে ক্রাফোড
• বাংলাদেশ সচিবালয় উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, কাবেদুল ইসলাম
• চিকিৎসাবিজ্ঞানের আদিকথা, এস এম মোস্তফা জামান ও জয়দীপ দে
• স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ।
জয়দীপ দে জন্ম ১৯৮০ সালে, চট্টগ্রামের রেলওয়ে হাসপাতালে। বাবা ছিলেন রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ার। সে সূত্রে রেলপাড়ায় বড়ো হওয়া। আদিভিটে সিলেটে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় ছিল চারুকলা। বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। বিচিত্র বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতে আনন্দবোধ করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৮ টি। গল্প গ্রন্থ: হারকিউলিসের পাখা। উপন্যাস: কাসিদ, নিষুপ্ত ও গহন পথে। ভ্রমণকাহিনি: মাদ্রাজের চিঠি। গবেষণা গ্রন্থ: রেলকে ঘিরে, বঙ্গবন্ধুর কলকাতা জয়। সংকলন: একাত্তরের কার্টুন।