শ্রী-র সাথে পরিচয় গত বছর ফেব্রুয়ারিতে।
বিধান দা একদিন মেসেঞ্জারে নক দিয়ে বললেন, আলভী ভাই, আমরা একটা ওয়েবম্যাগ চালাই। আপনার লেখা গল্প পড়লাম ‘প্রথম আলো’-তে। আমাদের একটা গল্প দেন বা কোনো অনুবাদ।
তিনি ঠিক এই ভাষায় বলেননি। দীর্ঘ একটা মেসেজ ছিল। যথেষ্ট বিনয়ের সাথে গল্প চেয়েছেন। সাথে ওনাদের ওয়েবজিনের লিংক। আমি এখানে সারাংশটুকু কেবল বললাম।
আমি মেসেজের উত্তর দিলাম, নিশ্চয়ই ভাই। আমি চেষ্টা করব। এটা খুশির খবর যে আপনি আমার গল্প পড়েছেন। ভালো লেগেছে বলেই নিশ্চয়ই আমার কাছে গল্প চেয়েছেন। একটাই সমস্যা। আমি তো লেখক না। নিয়ম করে লিখতে হয় কী করে জানা নেই। আমি কিছু একটা দাঁড়া করাতে পারলে আপনাকে বলব।
সত্যি বলতে কী, আমি তখন গল্পকার হিসেবে একদম নতুন। দুটো গল্প লিখেছি। সে দুটো গল্প ছাপা হওয়ার পর তৃতীয় কোনো গল্প লিখতে হবে এমন পরিকল্পনা নেই। আমার গল্প ছাপতে শ্রী-র এই আগ্রহ কেন সেটাও বুঝতে পারলাম না। একটা পাজল মনে হলো। পাজল সলভ করতে লিংক থেকে ওদের ওয়েবসাইটে গেলাম। দেখলাম, ছিমছাম গেটাপের একটা ওয়েবজিন।
বাংলা ওয়েবিজন আমি নিয়মিত পড়ি। অনেক আগে থেকেই। কোনো কোনো ওয়েবজিনের একটা প্রধান সমস্যা মনে হয়েছে, পিসি বা ল্যাপটপ থেকে পড়া গেলেও সেগুলো মোবাইল থেকে পড়া কষ্টকর। খানিকটা পিডিএফ বইয়ের মতো। টেক্সট রিফ্লো অপশন না থাকায় প্রতি লাইনে শব্দ সংখ্যা একই থাকে।
ল্যাপটপের বড় স্ক্রিনে এক লাইনে ১২-টা শব্দ পড়া যায়। কিন্তু মোবাইল বা ট্যাবে সেই একই গল্প পড়তে গেলে এক লাইনে ১২-টা শব্দ পড়া যন্ত্রণার। জুম ইন, জুম আউট নানা কায়দা কসরত করতে হয়। এমনিতেই সাহিত্যের পাঠক নেই। তারপর আবার কষ্ট করে পড়তে হলে সেই গল্প কতজন পড়বে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
কিন্তু শ্রী-র সাইটে এই সমস্যা পেলাম না। যে কোনো ডিভাইসে আরাম করে পড়া যায়। টেক্সট রিফ্লো অপশন আছে। গেটাপ, ফন্ট সিলেকশন, ফরমেটিং স্টাইল সত্যিকার অর্থেই রিডার ফ্রেন্ডলি। আরও আবিষ্কার করলাম, পত্রিকাটা নতুন। যাত্রা শুরেছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে।
গল্পকার হিসেবে আমার বয়স আর শ্রী-র বয়স প্রায় কাছাকাছি। আমি দু-মাসের বড় হবো হয়তো। তো ঠিক করলাম, সমবয়সী বন্ধুর জন্য একটা গল্প লিখে ফেলি। সমস্যা হলো, চাইলেই তো লেখা যায় না। গল্প লিখতে হলে সেটা মাথায় আসা জরুরি। কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করলাম। হলো না। এর মধ্যে বিধান দা জানালেন, তিনি আমার প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘জীবন অপেরা’ নিয়ে একটা লেখা চান। তাঁর ওয়েবজিনে বই নিয়ে আলোচনার একটা বিভাগ আছে। সেখানে ছাপবেন।
গল্পকার হিসেবে আমার বয়স আর শ্রী-র বয়স প্রায় কাছাকাছি। আমি দু-মাসের বড় হবো হয়তো। তো ঠিক করলাম, সমবয়সী বন্ধুর জন্য একটা গল্প লিখে ফেলি। সমস্যা হলো, চাইলেই তো লেখা যায় না। গল্প লিখতে হলে সেটা মাথায় আসা জরুরি। কয়েকদিন ধরে চেষ্টা করলাম। হলো না। এর মধ্যে বিধান দা জানালেন, তিনি আমার প্রকাশিতব্য উপন্যাস ‘জীবন অপেরা’ নিয়ে একটা লেখা চান। তাঁর ওয়েবজিনে বই নিয়ে আলোচনার একটা বিভাগ আছে। সেখানে ছাপবেন।
এই কাজটা আমার জন্য তুলনামূলক সহজ। বইয়ের ফ্ল্যাপ এবং ভূমিকা লেখাই ছিল। সেটাই কপি পেস্ট করে সামান্য এদিক সেদিক করলাম। কিছু কানেকটিং লাইন জুড়ে দিলাম। লেখা দাঁড়িয়ে গেল। ছাপা হলো মার্চে। কিন্তু সেটাকে শ্রী-র সাথে আমার শুরু বলব না।
সত্যিকার অর্থে শ্রী-র সঙ্গে আমার পথচলা শুরু গত বছর পয়লা বৈশাখ মানে ১৪ এপ্রিল। ‘মাটিবর্তী’ নামে একটা গল্প লিখলাম বৈশাখ সংখ্যার জন্য।
এরপর শ্রী-র হাত ধরে আমি হেঁটেছি। এবং মাঝে মাঝে আমার সাহায্য নিয়ে শ্রী পথ চলতে চেয়েছে। সম্পর্কটা বন্ধুত্বের। আমার পরিচিত অনেক লেখক বন্ধু হয়তো আমাকে একটা গল্প পড়তে দিয়েছেন। আমি পড়ার পর বলেছি, এটা শ্রী-তে দাও। ওরা যত্ন নিয়ে ছাপবে।
মাঝে মাঝে দারুণ সব আয়োজন করেছে তারা। দুই ঈদ, বিশেষ দিন বা ‘শতবর্ষে সত্যজিৎ’-এর আয়োজন চমকে দেওয়ার মতো।
বড় বড় কবি, কথাসাহিত্যিকরা এখানে লিখেছেন। এসেছে ভালো অনুবাদ। নতুন বা আমার মতো প্রায় নতুন কবি, লেখকরাও লিখেছেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার প্রতি শুক্রবার তাঁরা একটা করে সংখ্যা বের করেছে। এর বাইরে ধারাবাহিক গদ্যও দেখেছি সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিন বের হয়। একটা দুটো শুক্রবার হয়তো বিশেষ কোনো কারণে মিস করে গেছে।
শ্রী-তে লেখা দেওয়ার একটা উপকার হলো, আমি জানি আমার লেখায় কোনো ভুল থাকলে সেটা আমাকে জানানো হবে। সম্পাদনার পর আপলোড হবে। প্রুফ রিড হবে।
উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপ লিখেছিলাম এক গল্পে। সেই সংলাপের আঞ্চলিক টোন নিয়ে শ্রী আলাদাভাবে কাজ করেছে। সমৃদ্ধ করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, লেখা ছাপা হওয়ার আগে সেটা ভালো একজন সম্পাদকের হাতে পড়া জরুরি। শ্রী আমাকে এই কমফোর্ট জোনটা দিয়েছে। এই জিনিসটা বাংলাদেশের অনেক বড় বড় পত্রিকাতেও করা হয় না।
উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপ লিখেছিলাম এক গল্পে। সেই সংলাপের আঞ্চলিক টোন নিয়ে শ্রী আলাদাভাবে কাজ করেছে। সমৃদ্ধ করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, লেখা ছাপা হওয়ার আগে সেটা ভালো একজন সম্পাদকের হাতে পড়া জরুরি। শ্রী আমাকে এই কমফোর্ট জোনটা দিয়েছে। এই জিনিসটা বাংলাদেশের অনেক বড় বড় পত্রিকাতেও করা হয় না।
এই পথ চলায় ২১ ফেব্রুয়ারি এক বছর পূর্ণ হবে শ্রী-র। অভিনন্দন। শুভ জন্মদিন।
হাঁটতে শিখে গেছে ছোট শিশু। হোচট এখনো খাবে। তবে কী করে উঠে দাঁড়াতে হয়, এতদিনে সেটাও শিখে গেছে।
শ্রী আরও সাবলম্বী হোক। সাবলম্বী বলতে আমি বুঝিয়েছি, তাঁরা বেশি বেশি বিজ্ঞাপন পাক। সেই বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়ে নিজেদের ব্যয় নির্বাহ করুক। ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়ানো—একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হতে পারে না।
আর একটা জিনিস আমার মনে হয়েছে। তা হলো, এখনো নির্দিষ্ট এক অভিজাত শ্রেণীর পাঠকই কেবল শ্রী পড়ে। আমজনতা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি। তবে পৌঁছানো দরকার। সাবলম্বী হতে গেলে বা বিজ্ঞাপন পেতে গেলে এ বিষয়টা জরুরি। সেজন্য যা করতে হয়, শ্রী সেই কাজ করুক।
অনেক শুভকামনা প্রিয় এই ওয়েবজিনের জন্য।
আলভী আহমেদের লেখার লিংকসমূহ
ছোটোগল্প : মাটিবর্তী
ছোটোগল্প : যেভাবে গল্প হয়
ছোটোগল্প : কুকরি
ছোটোগল্প : রোদ মেখো সূর্যমুখী
আমার বই : জীবন অপেরা : সমান্তরাল জগৎ, উইশফুল থিংকিং
আলভী আহমেদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ কৌশলে স্নাতক। পেশাগত জীবনে যন্ত্রপাতির খটমট বিষয়ে না গিয়ে বেছে নিয়েছেন অডিও ভিজুয়াল ফিকশন নির্মাণ। টেলিভিশন মিডিয়ার জন্য নাটক রচনা ও পরিচালনা করেন। সিনেমার বড় পর্দায়ও অভিষেক হয়েছে। লেখালেখি তার নেশা। নিজের নাটক, সিনেমার জন্য গল্প, চিত্রনাট্য লিখতে গিয়ে তার লেখার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। আলভী আহমেদ হারুকি মুরাকামির তিনটি উপন্যাস অনুবাদ করেছেন—’নরওয়েজিয়ান উড’, ‘হিয়ার দ্য উইন্ড সিং’ এবং ‘পিনবল, ১৯৭৩’। বইগুলো বাতিঘর থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তার অনুবাদে প্রকাশিত হয়েছে, মুরাকামির গল্প সংকলন, ‘কনফেশনস অব আ সিনেগাওয়া মাংকি’। প্যারালাল ইউনিভার্সের ওপর তার প্রথম মৌলিক উপন্যাস ‘জীবন অপেরা’ ২০২১-এ প্রকাশিত হয়েছে। ১১ জন নিঃসঙ্গ মানুষকে নিয়ে লেখা ‘ব্লাইন্ড স্পট’ তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। ইংরেজিতে লেখা তার পেপারব্যাক গল্পগ্রন্থ ‘ঢাকা ড্রিমস’ অ্যামাজনে ফিকশন বেস্ট সেলার ক্যাটাগরিতে শীর্ষে ছিল তিন সপ্তাহ।