বন্ধুত্ব
আমি ঈশ্বরের বন্ধু না
কারণ অনেকদিন আগে
আমাদের ছয় সদস্যের পরিবার যখন
ছোট একট খুপরিতে গাদাগাদি করে থাকতাম
তখনও ঈশ্বরের অনেক বড় বাড়ি ছিল, আর
সেই বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন!
মৃত্যু
এক রাতে মা বললেন,
তিনি মৃত্যুকে দেখেছেন
মৃত্যুর নাকি অনেক বড় গোঁফ
আর চওড়া, সুঠাম কাঁধ
যেন অবিকল এক কুস্তিগির
সেই রাত থেকে আমি আমার
নিষ্পাপ মাকে সন্দেহ করি।
বন্দুক
ওরা যদি বন্দুক আবিষ্কার না করত
দূর থেকে কাউকে মেরে ফেলতে পারত না
খুন হওয়া মানুষগুলি পালিয়ে বেঁচে যেতে পারত
তখন কত কিছুই-না সহজ হয়ে যেত
কত সহজেই ওদের বোঝানো যেত
শ্রমিকের শক্তি কত
আমার বাবা
যদি সাহস করে বাবার সম্পর্কে কিছু বলি,
বিশ্বাস করুন,
জীবনে কোনো আনন্দ ছিল না তার
আমাদের জন্য উৎসর্গীত বাবা
পরিবারের দোষত্রুটি গোপন করবার জন্য
নিজের জীবনকে
কঠিন আর রুক্ষ করে তুলেছিলেন
আজ যখন আমার কবিতা ছাপা হয়
দুঃখ হয় এই ভেবে যে,
আমার বাবা পড়তে পারেন না
বিশ্বাস
আমার বাবা একজন শ্রমিক ছিলেন
বিশ্বাসে ভরপুর একজন মানুষ
তিনি যখনই নামাজ পড়তেন
ঈশ্বর তার হাতগুলি দেখে লজ্জা পেতেন
ঘর
সারা পৃথিবীকে,
পৃথিবীর সব দেশকে,
আকাশকে,
মহাবিশ্বের সব বস্তুকে—
আমি ঘর বলে ডাকতে পারি
কিন্তু তেহরানের এই জানলাবিহীন ভাড়া খুপরিকে
ঘর বলে ডাকতে বলো না আমাকে
আমি পারব না
রাজনীতি
কত সহজে তারা ঘটিয়ে ফেলে
কত বড় বড় পরিবর্তন
যে-শ্রমিকেরা কায়িক পরিশ্রম করে
তারাও হয়ে যায় রাজনৈতিক এ্যাক্টিভিস্ট
কত সহজ, তাই না?
ক্রেন সেই পরিবর্তন বহন করে
নিয়ে যায় ফাঁসির কাষ্ঠে।
মৃত্যুভয়
আমি তোমাকে বিশ্বাস করি
যে মিথ্যা বলা ভুল
কাউকে বিরক্ত করা ভুল
আমি মেনে নিয়েছি যে
মৃত্যুও জীবনের একটা অংশ।
তারপরও আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত
কারণ আমার ভয় হয়
অন্য পৃথিবীতেও যদি আমাকে শ্রমিক হতে হয়।
তুঁতফল
কখনো তুঁতফল দেখেছেন,
যেখানে পড়ে
সেই মাটি তার রসে ভিজে যায়।
পড়ে যাওয়ার মতো বেদনাদায়ক কিছু নাই।
কত শ্রমিক দেখেছি আমি
দালান থেকে পড়ে
হয়ে গেছে অবিকল তুঁতফল
আমি যখন মরব
আমার প্রিয় বইগুলি সাথে নিয়ে যাব
ভালোবাসার মানুষদের ছবি দিয়ে
পূর্ণ করে দেব আমার কবর
ভবিষ্যতের কোনো ভয় থাকবে না
আমার নতুন ঘরে।
আমি শুয়ে থাকব। সিগ্রেট টানব
এবং যেসব মহিলাদের আমি
আলিঙ্গন করতে চেয়েছিলাম
তাদের কথা মনে করে কাঁদব।
এই সমস্ত আনন্দের মাঝেও
একটা ভয় থেকে যাবে :
কোনো একদিন সকালে,
কেউ আমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবে—
‘হেই, উঠ্, সাবির, তোর কাজে যেতে হবে।’
সাবির হাকা
১৯৮৬ সালে ইরানের কারমানশায় জন্মগ্রহণ করেন। এখন নির্মাণ-শ্রমিক। থাকেন তেহরানে। দুটি কবিতার বই বেরিয়েছে। ২০১৩ সালে তিনি ইরানি শ্রমিকদের কবিতা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন।
সাবির বলেন, ‘আমি ক্লান্ত। আমি অত্যন্ত ক্লান্ত। জন্মের আগ থেকেই আমি ক্লান্ত। কারণ, জন্মের আগেও আমি শ্রমিক ছিলাম। কারণ, আমার মা আমাকে গর্ভে নিয়েই পরিশ্রম করতেন। আমি তার ক্লান্তি অনুভব করতাম। এখনো তার ক্লান্তি আমার শরীরে।
সাবির বলেন, তেহরানে তার ঘুমানোর কোনও জায়গা নাই। মাঝেমাঝে তিনি সারারাত হাঁটেন। ফলে গত বারো বছর ধরে তিনি তাঁর উপন্যাসটি নিয়ে কাজ করতে পারছেন না।
কবি ও অনুবাদক। জন্ম ৬ জানুয়ারি ১৯৭৮। কটারকোনো, মনু, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি ও লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ : কবিতা : অন্ধ পৃথিবীর জানলাগুলি, নদীমাতৃক পৃথিবী মেঘমাতৃক আকাশ, প্রেগন্যান্ট পাগলি ও অন্যান্য কবিতা। অনুবাদ : চূর্ণচিন্তন, দূরাগত স্বর, আর্থার শোপেন হাওয়ারের কথাগুলি প্রবন্ধ : আধুনিক কবিতা বিষাদবৃক্ষের ফুল ও অন্যান্য প্রবন্ধ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস : এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে। ই-মেইল : imdadmra@gmail.com