কাফকা কোন পোকার নাম কি না*
একটা কালো পোকা মেঝেতে উলটা হয়ে আমার ছাদের দিকেই তাকা’য়া ছিল। গুবরেপোকার মতই, সাইজে একটু বড়। পোকা-টাকে আমি ভাষার বয়ামে আটকায়’ ফেললাম। এইবার সে আর এই পৃথিবীর কেউ থাকলো না, এমন-ও না যে পরলৌকিক কোন পোকা হ’লো। বরং বলা যায়, একটা ঘটনা হ’লো সে।
যেমনঃ চিড়িয়াখানা রোডে লাস্ট শুকরোবার দিনে-দুপুরে একটা পেশোয়ারি ময়ূর দেখা গেসে, যে বৈশাখ উপলক্ষ্যে সামান্য বার্গার খাইতে চাইসিল। তার প্রেমিকা-রে গিফট করার জন্য নাকি বগলে একটা বাগেশ্বরী শিল্প নিয়ে ঘুরতেসিলো ঐ লোক। ঠাকুরের বিসর্জন ঘটসে, মহল্লার বাবুর্চি পোলাপান ওর চোখ কানা করে দিসে— এখন নিজের একটি আশ্রয় সে খুঁজে পাইতেসে না কোনভাবেই। এইগুলাই ঘটে, কেউ কেউ দেখলাম হাসতেসে শুনে।
কেউকেউ এমন-ই লোভী ও লালন প্রকৃতির, তথাপি লেজবিহীন। এ’টা স্বাভাবিক, কেননা— কেউকেউ কখনোই জীবনানন্দ না, সবাই হচ্ছে একপ্রকারের সজনীডাঁটা। সেই ডাঁটার উপরের বিভ্রান্ত পোকাটা বয়ামের ভিতর থেকে রাতভর আমাকে দেখবে। বাইরে বাতাসের শব্দ আছে।
*প্রতিটি কাফকাই পোকা নয়, কিন্তু অনেক পোকার মধ্যে তেমন বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে।
তন্দ্রা নিয়ে
ঘুম কেটে যাওয়ার একটা পর্যায়ে তন্দ্রার সবুজাভ পালক মাথার উপর ভাসতে থাকে। এটি দারুণ পাতলা, যেকোনো সময় বাতাসে উড়ে যেতে পারে এমন তোতাপাখির কাজিন। তাকে ধরে রাখতে বৃষ্টির দিনে স্বরবর্ণ পাঠের আসর করুন—
অ থেকে অজগর বের হয়ে আসা পর্যন্ত আমরা পিতলের অরণ্যে ঘুরলাম অনেক, পরস্পরের দিকে বেদনাবিধুর বাক্যবাণ ছুঁড়ে দিলাম। এইভাবে অনেক মদ জমা হলো অশ্রু ও অন্যান্য প্রসাধনী বাবদ। ঋ এর বন্ধুসুলভ কেউ হয়ত জড়িয়ে থাকে তোমার পুষ্প ও নিরাসক্ত পত্রমঞ্জরি; ও-র কাছে কী এত বসন্তভাব তব, ঐ ওমুক শামুকের কাছে?
—এইভাবে ভোর থেকে তন্দ্রার চাতালে বৃষ্টির শব্দ। এইদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়, বলেছেন কালিদাস খান; প্রিয়ার জঠরে তাই রোজনামচা প্রেরণ করি, সুধা ও কোমল মন্দাক্রান্তায়। অনূদিত মেঘদূত কেটে কেটে পার হবে দীর্ঘ জুনমাস, জুলেখার খুলে রাখা গাউনে দুপুর অন্ধকার।
আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে সে। তার ঘুমন্ত কানে ঠোকর মারে সবুজ তোতাপাখি।
যামিনীর জন্য
‘And now we are all scattered, and for many a long day loneliness will sit over our roofs with brooding wings.’ —Bram Stoker, Dracula
সাগরতলে চলে যাবো বিশ হাজার লীগ কিংবা তারও বেশি— অতলান্তিক নীলে যার শোভা দেখবার তরে।
আত্মাবিহীন দেহের ভিতরে রেখেছি একটি কালো মোটরবাইক, উত্তাপের আভা ও লোহিতবঙ্গের কাতর মদিরা। সেখানে নীলছবি আর পর্দার আড়াল; চোকার হ্যান্ডকাফ, আঁখির আলতামিরা— ইত্যাকার আপ্তবয়সী প্রেমের বিবিধ উপকরণ।
জহুরি মহল্লার আঁধারতম ড্রাগলর্ডের কন্যা— যামিনী, ব্যাপক জালালি কবুতর পালে মেঘের বন্দিশে।
বন্দি সে, ইলেকট্রা কমপ্লেক্সের ছায়ায় পারাবতের খোপ। চিঠি পাঠায় র্যাশনাল, পাখিদের পায়ে। মারিজুয়ানার খাতা ভরে রাখে হেমন্তের গানে। বকুল হেসে ফেলে এমন অলির মতো কথা জানে।
সে যে চলে গেল উঠান পার হয়ে, হায়, তিন লাফে! তন্দ্রার মতো লিরিক্যাল কিশোরী তার আলতাবিহীন পায়ে। হেমন্তের বহ্নিমুখে পাতাদের নির্লিপ্ত পোশাক গায়ে।
তারে খুঁজবো সকাল-সন্ধ্যা, শিল্পকলার বঙ্কিম সিঁড়িতে এবং ভাতঘুমের মধ্যে পাশ ফিরিতে। বেনামা এই শহর আফসোসে চুপ প্রতি লাল শুক্রবার— হাত কামড়ায়, তারে হারায়ে হেলায়।
অতলান্তিক রজনী তুষার দেখবার তরে, শোভা ও সজ্জার জ্বরে আর যাপনের নির্জন ভিতরে, জানি সে কেমন শান্তিতে নিদ্রা যায়!
দৃশ্য
ময়লা সূর্যের নিচে সবই ছায়া
ছায়া কেবল দীর্ঘ হয় জুনমাসের মতো
ট্রাইবাল মদের দোকানে
বাঘের পোশাক পরা হলুদ মানুষ—
আমি শিকারীর সবুজ জিপগাড়ি
জঙ্গলে বসে বৃষ্টি দেখছি,
ময়লা সূর্যের নিচে
এশিয়ার আকাশ অন্ধকার নীল
বুনোফুল মাথা দোলাচ্ছে কোলট্রেনে
সিল্যুয়েট থেকে
সময় আমাদের নষ্ট করে ফেলবে—
ভাবতে ভাবতে কিছু যামিনীগন্ধা
মারা যায় ভোরের আগে আগে,
তাদের মৃতদেহ থেকে
সাদা অংশ কেবল
ঠুকরে নিচ্ছে একটা গম্ভীর কাক
আমার চোখ থেকে
বিব্রত আয়ুরেখা যত
পড়ে আছে ধূলিতে ধূসর
ভেসে থাকবে কচুরিপানার মতো
সারাদিন, স্মৃতির পুকুরে
সাঁতরাও সাদা হাঁস,
তোমার পালক ভিজবে না যেহেতু
তোমার মাংস আছে শুধু।
জন্ম ১৯৯৭ সালে। ঢাকায় বসবাস করেন।