মোবাইলের বিপবিপ শব্দে ঘুম ভাঙ্গে পন্টির। ওহ, মাইগড! বেলা ১০টা বেজে গেছে! আমার তো কোচিংয়ে যেতে হবে। ইশ! কেউ যদি একটু আগে জাগিয়ে দিত! যাক, এসব ভেবে আর কী হবে? লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়ে পন্টি। ফ্রেশ হয়ে সোজা খাবার টেবিলে। উফ্, এতো খাবার ব্রেকফাস্টে! টেবিল ভরা পাউরুটি, জ্যাম, জেলি, সেদ্ধ ডিম, পোচ ডিম, কর্নফ্লেক্স, ওটস, দুধ, দু রকমের সবজি পরোটা, খাসির মাংস ভুনা, মিষ্টি ও বেশ কয়েক পদের জুস। পন্টি দ্বিধায় পড়ে যায় কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবে? পাউরুটিতে বাটার লাগিয়ে এক কামড় খায়। হঠাৎ মনে হয় আজ বাটার পাউরুটি না খেয়ে বরং খাসির মাংস দিয়ে পরোটা খাওয়া যাক। বেশ তো, মাংস রান্নাটা জোশই বলতে হয়। ঝালটা একেবারে পারফেক্ট। মাংস পরোটার সাথে জুসেও চুমুক দেয় সে। ঠান্ডা জুস, আহ! কী আরাম। পন্টি খায় আর ভাবে লাইফ ইজ বিউটিফুল। হঠাৎই বাড়ির কেয়ারটেকার এসে বলে ভাইয়া, আপনার না আজ দুটো কোচিং আছে? ড্রাইভার নিচে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। OMG! পন্টি ভাবে খাওয়ার টেবিলে বসে তো কোচিং ক্লাসের কথা সে ভুলেই গেছে। আর দেরি করা যাবে না। সামনে এ লেভেল পরীক্ষা। ছাত্রও সে মোটামুটি ভালো। একবারে সব পরীক্ষাগুলো দিতে পারলে বেশ হয়। না, আর কিছু ভাবার সময় নেই পন্টির।
দৌড়ে নিজের রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে আসে তারপর সোজা গাড়ির গ্যারেজের সামনে দাঁড়ায়। গ্যারেজের সামনের আসতেই তিন-চার জন ড্রাইভার তার দিকে এগিয়ে আসে। ড্রাইভাররা বলে, ভাইয়া কোন গাড়িতে যাবেন? পন্টির মাথা গুলানোর অবস্থা। তার বাবার নিত্য নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ির শখ। বাবার থেকে পন্টির মধ্যেও এই শখ দিনদিন সংক্রমিত হচ্ছে।
দৌড়ে নিজের রুম থেকে ব্যাগ নিয়ে আসে তারপর সোজা গাড়ির গ্যারেজের সামনে দাঁড়ায়। গ্যারেজের সামনের আসতেই তিন-চার জন ড্রাইভার তার দিকে এগিয়ে আসে। ড্রাইভাররা বলে, ভাইয়া কোন গাড়িতে যাবেন? পন্টির মাথা গুলানোর অবস্থা। তার বাবার নিত্য নতুন ব্র্যান্ডের গাড়ির শখ। বাবার থেকে পন্টির মধ্যেও এই শখ দিনদিন সংক্রমিত হচ্ছে। ভেবেচিন্তে অডি গাড়িতে আজ চড়ে পন্টি। উফ্! কী যে শান্তি এই গাড়িতে। রাস্তায় চলা অন্যান্য প্রাইভেট কারগুলো দেখে পন্টি নিজের মনে হাসে আর ভাবে কেমনে চড়ে ওইগুলোতে মানুষ? পথ চলতে ঝাকি লাগে না? এদেশের মানুষগুলোর ভালোমন্দের সেন্স নাই কোনো। গাড়ি মসৃনভাবে চলতে থাকে।
যেতে যেতে কোচিংয়ে স্যারের কাছে আজ কী কী বিষয়ে জানতে চাইবে— তাই ভাবে। বায়োলজিতে একটু ভালো মার্কস পাওয়ার জন্য খাটাখাটনি করা দরকার। ভালো মার্কস মানেই ভালো ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাওয়া। অবশ্য আজকাল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে চিন্তার তেমন কিছু নেই। ব্যাঙের ছাতার মতো কত ইউনিভার্সিটি হয়েছে। যেটায় মন চাইবে, সেটাতেই ভর্তি হওয়া যাবে আশা রাখি। কথা হলো— দেশে থাকব কি না? মাম্মি, ড্যাডি তো মনে হয় দেশে পড়াবে না? তারা আমাকে বিদেশে পড়াতেই বেশি ইন্টারেস্টেড, যদিও আমি একটু হোমসিক। দেখা যাক কী হয়!
এসব চিন্তা করতে করতেই কোচিং সেন্টারে পৌঁছে সে। পন্টির বাবা দেশের প্রচণ্ড ধনী ব্যক্তি। কোচিং সেন্টারের মালিকের তা অজানা নয়। তাই পন্টির পড়াশোনার দিকে নজরও তিনি একটু বেশি রাখেন। কোচিং সেন্টারের টিচারদের মালিক কড়া নির্দেশ দিয়েছেন— পন্টি যতক্ষণ পড়তে চাইবে ততক্ষণই তাকে পড়াতে হবে। প্রয়োজনে পন্টির বাসায় তারা যাবে। পন্টির বাবার কারণে পন্টিকে অন্য সব স্টুডেন্টের চেয়ে বেশিই অগ্রাধিকার দিয়ে তারা পড়ায়। বিষয়টা বেশ লাগে পন্টির। তার কথামতো শিক্ষকেরা চলছে— এই ভেবে নিজেই মনে মনে তার বাপজানকে একটা স্যালুট দেয়। মনে মনে বলে— ড্যাডি, Earn more money so that I can get more privilege.
আকাশে উড়তে ইচ্ছে হয় পন্টির।
কোচিং থেকে বাসায় ফিরে পন্টি বড়ো স্ক্রিনের টিভিটা চালিয়ে দেয়। ইন্ডিয়ান চ্যানেলে সিনেমায় দুর্ধর্ষ মারামারি চলছে। মারামারির শেষে সৎ ও ন্যায়বান ব্যক্তির জয় হয়।
কোচিং থেকে বাসায় ফিরে পন্টি বড়ো স্ক্রিনের টিভিটা চালিয়ে দেয়। ইন্ডিয়ান চ্যানেলে সিনেমায় দুর্ধর্ষ মারামারি চলছে। মারামারির শেষে সৎ ও ন্যায়বান ব্যক্তির জয় হয়। তুড়ি মেরে তর্জনী দেখিয়ে সৎ ব্যক্তি চোরাকারবারীদের এসব ছেড়ে দিয়ে ভালো লাইনে আসতে বলে। চোরাকারবারীদের মাথা লজ্জায় ধুলায় লুটিয়ে যায় যেন। সিনেমা দেখে মৃদুমৃদু হাসতে থাকে পন্টি। সৎ, ন্যায়বানরা বাস্তবে আদৌ কি তা দেখিয়ে দিতে পারে? তাদের হাতে কি কোনো ক্ষমতা থাকে? এসব সিনেমাতেই সম্ভব— পন্টি জানে।
পন্টির মা ডুপ্লেক্স বাড়ির দোতলার সিড়ি থেকে নেমে পন্টির পাশের সোফায় বসে। পন্টির চোখ টিভিতে হলেও, কান খাড়াই আছে।
পন্টি বোঝে তার মা তাদের পারিবারিক টেইলার্সের সাথে কথা বলছে। ওহ্ হো, সামনেই তো মা-বাবার এনিভার্সারি। মা এজন্য তার ড্রেস তৈরির জন্য টেইলারের সাথে কথা বলছে। মা দুর্দান্ত সৌখিন। পার্টির থিমের সাথে মিলিয়ে ড্রেস তৈরি করেন এবং সে ড্রেস একবারই পরেন। পন্টি শোনে মা টেইলারের সাথে বেশ কয়েকদফা বোঝাপড়ার পর ড্রেসের দাম পাঁচ লাখে ফিক্সড করেন। পন্টির ভালো লাগে এই ভেবে যে তার বাবার অফুরন্ত অর্থের জন্যই সে—তার মা—তার বোন luxerious জীবনযাপন করতে পারছে। তাদের কোনো কিছু পাওয়ার জন্য প্রতীক্ষা করতে হয় না। মুখ ফুটে বলা মাত্রই তা হাজির।
উৎসব এলে বাবা তার শপিং সেন্টারের সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন। এমন সব কাপড়চোপড় আর সামগ্রীর দাম বাড়ান— পন্টির মনে হয় অন্যদেশ হলে বাবাকে লোকজন তাড়া করত। এখানে অবশ্য তা হয় না। সবাই চুপচাপ। পাঁচ টাকার জিনিস ১০ টাকা দিয়ে সবাই কিনে খায়। আর পন্টির বাবার ব্যাংকে জমতে থাকে কাড়ি কাড়ি টাকা।
বাবার কথা আজ বড্ড বেশি মনে পড়ে পন্টির। কী ভীষণ ভালো মানুষ। দেশের বেশির ভাগ বাবা-মা-ই যেখানে সন্তানদের জন্য সামান্য একটা মাথা গোঁজার ঠাই করে দিতে পারে না, সেখানে তার বাবা তাদের সবকিছু দিয়ে ভরিয়ে রেখেছেন। তার বাবা ইন্ডাসট্রিয়ালিস্ট। কত রকমের ব্যবসা যে আছে বাবার—সব ব্যবসার নামই তো পন্টির জানা নেই। অনেকে বলে— পন্টি, তুমি তো ছেলে, তোমার বাবার ব্যাবসাপাতির খোঁজ তো তোমাকেই রাখতে হবে? পন্টি এতে তেমন কান দেয় না। পন্টি বোঝে— বাবার এসব করতে কম কষ্ট করতে হয়নি। রীতিমত যুদ্ধই করেছে এতসব প্রোপার্টি করতে। এ যুদ্ধ তো শারিরীক নয় বড্ড মাথা খাটাতে হয়েছে। আর সেই সাথে কত লোকজনকে যে ম্যানেজ করে চলতে হয়। কিভাবে যে বাবা সবাইকে এতো ম্যানেজ করেন? কখনো বিরক্ত হন না, হাসি মুখেই সব করেন তিনি। বিজনেসের কত রকম যে পলিসি। উৎসব এলে বাবা তার শপিং সেন্টারের সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন। এমন সব কাপড়চোপড় আর সামগ্রীর দাম বাড়ান— পন্টির মনে হয় অন্যদেশ হলে বাবাকে লোকজন তাড়া করত। এখানে অবশ্য তা হয় না। সবাই চুপচাপ। পাঁচ টাকার জিনিস ১০ টাকা দিয়ে সবাই কিনে খায়। আর পন্টির বাবার ব্যাংকে জমতে থাকে কাড়ি কাড়ি টাকা।
ওহ্ হো! বাবার তো ঔষুধেরও বিজনেস আছে। দুই একবার পেপারে এসেছিল সেই দোকানে ভেজাল বিদেশী ঔষধ রাখা হয়। তাতে কী হয়েছে? ওই যে, বাবা ম্যানেজ করতে জানেন। সবাইকে ম্যানেজ করে ঔষুধের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে বাবার গার্মেন্টসে আগুন লাগে। শ্রমিকরা পুড়ে ছাই হয়। বাবা তাতেও থাকেন নির্বিকার। হয়তো বড়ো বিজনেসম্যানদের এমনটাই হতে হয়। ঈদের সময় তো বাবার গার্মেন্টেসের তৈরি পোশাকগুলো লটে লটে বিদেশে যায়। সেসময় মাঝে মাঝে বাবা দরজা বন্ধ করে হিন্দী গানের সাথে নাচতে থাকেন। পন্টি বুঝতে পারে— ঈদের মওসুমে বাবার দারুণ ঝাকানাকা সময় যায়। ওই দিকে বেরসিক শ্রমিকগুলো বাবার নাচ ভঙ্গ করার জন্য রাস্তায় বসে বেতনের জন্য অনশন শুরু করে। এদের যদি একটু সেন্স থাকত! মানুষের আনন্দ-সুখের মুহূর্ত তারা বোঝে না। আর বুঝবে কী করে? তারা কী জীবনে এত আনন্দ পেয়েছে? শ্রমিকেরা বেরসিক হলেও বাবা মোটেও বেরসিক নন। তিনি কানে হেডফোন গুঁজে রেখে ড্যান্স করেন। শ্রমিকদের প্যানপ্যান ভ্যানভ্যান না শুনে ফ্লাইটে উঠে সোজা তার সেকেন্ড হোমে চলে যান। ওদের ছবি পত্রিকায় দেখে তখন হাসে পন্টি।
বাবার কথা ভাবতে ভাবতেই মা একগাল হাসি দিয়ে হাজির। পন্টির মা অবশ্য সবসময় হাসিমুখে থাকে, কান্নার মতো ঘটনা এ সোসাইটিতে বিরলই বটে। হাসির সাথে নাচের ভঙ্গিমাও করে তার মা।
পন্টি বলে, মা কী হলো? আর কয়টা ড্রেস বানাতে দিয়েছ?
মা বলে, ধূর ধূর। এসব ড্রেস তো সেখানে পরতে পারব না। পরতে হবে মিনিস্কার্ট বা ওভারকোট।
পন্টি বলে, কোথায় ঘুরতে যাচ্ছ, মা?
মা বলে, এখন থেকে বরফের দেশেই পার্মানেন্টলি থাকব। এখানে মাঝেমধ্যে। পন্টির মা পন্টিকে বলে, তোর বাবা সুইজারল্যান্ডে বাড়ি কিনেছে রে।
পন্টি বলে, মা, আমাদের না আরেক দেশে বাড়ি আছে?
মা বলে, তা তো থাকবেই। প্রতিটি দেশে আমাদের বাড়ি থাকবে। আমরা প্লেন কিনব। আমরা ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ডে শপিং করব। এত টাকা তোর বাবার হয়েছে, যে দেশে টাকা রাখার জায়গা নেই, বুঝেছিস? উফ্! পন্টি, উফ! তোর বাবার মতো মানুষ হয় না।
পন্টি বলে, তা আর বলতে হয়। we are proud of him.
মা-ছেলের সেই রাতে আনন্দে ঘুম আসতে এতটুকু সময় লাগে না।
সকালে ঘুম ভেঙেই গতরাতের কথা মনে পড়ায়, ভীষণ কুল লাগতে থাকে তার। প্রসন্নচিত্তে বাথরুমে গিয়ে কমোডে অনেকক্ষণ বসে থেকে সে চাপ মুক্ত হয়।
ধীরে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসে। বহুদিন পর তার টেবিলের উপর পত্রিকা দেখতে পায়। শেষ কবে যে প্রিন্টেড পত্রিকা সে পড়েছে, মনে পড়ে না। পত্রিকায় বড়ো বড়ো করে লেখা লাল হেডলাইন বলছে ‘আইন প্রয়োগের তেমন কঠোর দৃষ্টান্ত নেই বলেই হয়তো দেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকান যাচ্ছে না। অর্থ পাচার ক্যান্সারের চেয়েও ভয়াবহ।’
অর্থ পাচারের কথা পন্টি আগে শুনলেও এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি কখনও। কিন্তু অর্থ পাচারকে ক্যান্সারের সাথে তুলনা? পন্টির খবরের ভেতরের অংশটা পড়তে আগ্রহী হয়।
পত্রিকার রিপোর্ট বলছে— ‘অর্থ পাচারের ফলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, আরেক দিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। দেশের ব্যাবসা-বানিজ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। কর্মসংস্থান হচ্ছে না।
পত্রিকার রিপোর্ট বলছে— ‘অর্থ পাচারের ফলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, আরেক দিকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। দেশের ব্যাবসা-বানিজ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দেশে কর্মক্ষম জনগণ বেকার বসে আছে। উল্লেখ্য, অর্থ পাচারের বড়ো কারণ হলো দূর্নীতি অর্থ পাচারকারীরা বিদেশে অর্থ পাচার করে বিশাল অংকের ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেন, ফলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার সম্ভবনা। আরও উল্লেখ্য যে, অর্থ পাচার আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকারক হলেও অন্য দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ।’
অসম্ভব বিত্তশালী পরিবারের সন্তান পন্টি—জীবনে কোনো বিষয়েই খুব বেশি গভীরে গিয়ে চিন্তা করে না। কোনো কিছু গোড়া থেকে ভাবতে তার ইচ্ছে হয় না। এফেক্টস সাইড-এফেক্টস নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আজ হঠাৎ কী হলো? মাথাটা ঝিমঝিম করছে কেন? সকালের শুরুটা তো ভালোই হয়েছিল— তবে কী হলো তার এখন?
পত্রিকার রিপোর্টটা পড়ার পরই এমন বোধ হচ্ছে— মনে হলো পন্টির। কেন অর্থ পাচারের নিউজটা তার মাথাকে বারবার খুঁচিয়ে শেষ করছে। তার মাথায় কেন আজেবাজে চিন্তে আসছে? তবে কী তার বাবাও দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে অজস্র টাকা? দেশের সব ক্রিম এনজয় করে তবে কী তার পরিবার দেশকে নারকেলের ছোবড়ার মতন ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। তাতে তার কী অসুবিধে হচ্ছে? সে তো সুবিধাপ্রাপ্ত গোত্রের মানুষ। কী জানি, কী জানি!
সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায় পন্টির। মাথার শিরা গুলো দপদপ করে কাঁপতে থাকে। শরীরে গরম হাওয়া বয়ে যায়। কে যেন তাকে বলে— দেশকে লুট করে সুখে থাকা যায় না রে, পাগলা। ধর তাদের ধর। পন্টি, তাদের ধর। গায়েবি আওয়াজ শুনে পন্টি পাগলের মতো রুমের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটাছুটি করে। হঠাৎ দামী ভারী একটি জিনিসের সাথে ধাক্কা খেয়ে পন্টি মাথা ঘুরে পড়ে যায়। গলগল করে রক্ত পড়তে থাকে। পন্টি কাউকে ডাকার চেষ্টা করে না। সবকিছু কেমন ঝাপসা ঝাপসা দেখে সে। মনে হয়— সুইস ব্যাংকে থরেথরে তার বাবার রাখা অবৈধ অর্থগুলো তার এ অবস্থার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসছে।
ধুকপুক করে চলা পন্টির হৃৎপিন্ডটা কিছুক্ষণের মধ্যেই চিরকালের মতন থেমে যায়।
হুমায়ুন আজাদ কন্যা। উপপরিচালক : ইউজিসি।