বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

সৌমনা দাশগুপ্ত-র দশটি কবিতা

0

Start

.

.

.

.

চন্দ্রগজাল

তোতলা চাঁদের থেকে ছিটকে ছিটকে পড়ে ফেনা

এখানে তেমন বৃষ্টি কখনো নামেনি
জমা হয় ঋতুভার

জিরোবার অবসরে পান্তা সাবাড়

সানকিতে লেগে আছে মৃদু জল
তাকেও দু-হাতে ধরে চালিয়েছ জিভ

ডাঁশা পেঁয়াজে কামড়

ও তিমির, ও-হাতে ভাতের গন্ধ, টকজল
আমরা কি মুখোমুখি এরপরও
ও তিমির, আমরাও গান…

উপর-চালাক ধূমকেতু
ছুটে যায় ডিম্বাশয় ফাটিয়ে

শাদা রং
মোহমুদগর

পাঁকের ভেতর থেকে প্রাণ
খুঁটে খায় বক

যেন রজকিনী এবেলা-ওবেলা
কাপড় কাচার ছলে মেলে দ্যায় নীলাভ আকাশ

তাতল সৈকতজুড়ে বক শুধু বক
বেলাভূমি… বধ্যভূমি…

শিকারি এসেছে চুপেচাপে
বন্দুকে ভরেছে ছর্রা গুলি

চন্দ্রগজাল। রক্তে রক্ত ঢালা

চমকিত বিদ্যুৎ হোক
হোক হোক দারুণ অশনি

অপেক্ষা ডিঙিয়ে চলে গেল হেঁতালের লাঠি
হাঁ-মুখে থুতু ও প্রার্থনা ভরে আমরাও একদিন ও তিমির

পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া
কথা হোক, কাটাকুটি তুমুল তুমুল

আমাদের কান্নাকথাগুলি
আমাদের পাটখেতে সোনালি তন্তু উড়ে যায়

চুপস্নান

টেবিলের উপরে রাখা লম্ফটিও ভ্রু-কুঁচকে তোমাকেই দ্যাখে
ছাদ নেই, মাথার ওপরে কোনো ছাদ নেই

কী তুমুল শোরগোল
যেন জেলেপাড়া

আমিও সাগরে যাব ঠিক একদিন
এসবই বাখোয়াজি, মনে মনে চুপস্নান
ঝমঝম বাজছে শজারু

ইঁদারার শ্যাওলা-জগৎ থেকে বুজকুড়ি

রাতে তাকে লতা ডাকে
সে-ও হাঁ-এর দিকেই উজাগর

খোয়া বিঁধে আছে তার পায়ে
স্ট্র্যাপ ছেঁড়া হাওয়াই চপ্পল

দেয়ালে ঘোড়ার ছবি
হ্রেষা থেকে নুন থেকে
সরে যাচ্ছে ঘোড়া

সে শুধুই দেয়ালে টাঙানো

দেয়াল

আমিও রক্তের থেকে তুলে নিই জোঁক
অদেখা আমি-র সঙ্গে হাতাহাতি, গলাগলি
আড্ডা ধুন্ধুমার

কাল ফের দেখা হবে, এই কথা বলে
সে-ও চলে যায়

আমিও ফিরছি ঘরে

ছেঁড়া প্লাস্টিক, কফ ও থুতুর থেকে পা-বাঁচিয়ে

স্নানঘরে জলের কোলাজ
ঘষে ঘষে তুলি সব দাগছোপ
ছেঁটে দিই অনতিউজ্জ্বল সব ঘাস

চুন-বালি খসে পড়া একটি দেয়াল

আদিম-অক্ষর

দু-খানা চেয়ার বসে আছে মুখোমুখি

ধোঁয়ায় ভেতর থেকে ছবি
পাকিয়ে উঠছে মিশে যাচ্ছে

রক্তও নিজস্ব নয়
ফিসফিস করে উঠল শিরা ও ধমনি

মণ্ডলের ও-মুখ ছিল বিগত কোনো জন্মের
একটি অস্থির ঘর, ড্যাম্পলাগা মেঝে
পোড়া কাগজের স্তূপ থেকে একমাত্র
পাইপ তাকিয়ে আছে তোমার ঠোঁটের দিকে

ডুবে যাওয়ার আগে আর পরে
পরস্পরকে জড়িয়ে ধরছে দু-জন কঙ্কাল

শুধু জ্বলজ্বল করে উঠল আদিম অক্ষর

বসন্তশ্রমিক


শীতেরও তো কথা থাকে
থাকে শুদ্ধ নীলিমার গান

রোদসারি পার করে একলা শালিখ
ডানাদুটো ভাঁজ করে রাখে

গহীন দেরাজ খুলে দেখে নেয়
কুহেলিচোবানো ছবি

হনন-প্রবণ এক ঠোঁট
বাসা ভেঙে ডিম ভেঙে
চলে যাচ্ছে
চলে যাচ্ছে

বসন্তদিনের ডালপালা
এসবের খবর রাখে না


আহা স্বপ্ন, ওহে ঘুমপোকা
যেটুকু শিশির লেগে বথুয়ার শাকে
ঘেঁটুফুলে যেটুকু মদিরা
ভলকে ভলকে রতিরস
ভরে যায় শূন্য গেলাস

গুঞ্জিত রমণমাখা দিন
গুঞ্জিত রমণমাখা রাত

আমি তো রুদালি একা বসে আছি
বসন্তের অভিনয়, কতো কতো ফাগ


মাথার ভেতর ভাঙে ধ্বনিহীন ক্ল্যাপ

একদিন সব নদী থমকে দাঁড়াবে
পাহাড়ের সানুদেশ ভ’রে যাবে গহন শিলায়

আমি এক থরোথরো স্নান
সরলগাছের ফুল
জারুলের বেগুনি বেগুনি

বসন্ত কামড়ে ধরি দাঁতে

ধ্বনি শুধু নিঃশব্দে গড়ায়
আরও গভীরে নামে ঘ্রাণ

চায়ের দাগ

আলুনি ভাতের থালা ধানিপেঁয়াজের ঝাঁজ

ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে আছে ফণা

আটকে হাঁ-মুখ
হরিণ গিলছে সাপ

বনবাংলো
শিরিষ কাগজে ঘষা চাঁদ
বৃষ্টি
নুনচাটা রাত

চলে যাচ্ছি
মনে পড়ে
পুরোনো চায়ের দাগ, পেয়ালা-পিরিচ

রিভলভিং স্টেজ

সমান্তরাল কয়েকটি রেখা ফুটে উঠবে দিকচক্রবালে

ভ্রূকুটিতে নুয়ে পড়ছে খেজুরপাতা
বুননের কারিকুরি, স্তবকের ঘাম

টলে যাচ্ছে কেন্দ্রবিন্দু
গ্রীষ্মদুপুরের ভাঁজে দুলে ওঠে নীরবতা

রিভলভিং স্টেজ। ঘুরে যেতে হবে তোমাকেও

স্বচ্ছ কাচও আয়না হয়ে উঠবে একদিন
সামান্য মার্কারি, তারও কতো গেরামভারী পা
আসব আসছি করে দিন যায়, দিন যায়…

মুচকি হাসছে কাচ, কী ছেনালি, কী ছেনালি

ছবি ধরে রাখবার এ-ও এক জাদুবাক্স
নার্সিসাসি উপত্যকা
আতশকাচ বসিয়ে দিচ্ছে মাছির চোখে

চোখ নাচছে… নাচছে…

অন্ধকার খুলতে খুলতে
দেখে ফেলছ
দেখে ফেলছ
দেখে ফেলছ

রৌদ্রগণিকার পথ

খিদের দলিলঘর এই দেহ

ওয়ান টেকে উৎরোচ্ছেই না শট
কী জ্যাম, কী জ্যাম

স্ক্রিপ্ট-ট্রিপ্ট সব ঘেঁটে ঘ
গাঁটগচ্চা, টাইম কি বারোভাতারি

জংধরা রেলের রাস্তা
রক্তের ছিটে লাগা কাশফুল

শরীরের হেঁশেলে রোগা একটি দেশলাইকাঠি
বিড়ি জ্বালিয়ে নেয়ার পর জ্বলজ্বল করছে একচোখো আগুন

রৌদ্রগণিকার পথে ক্ষুধাযজ্ঞ

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

শূন্য দশকের কবি। প্রকাশিত কবিতাবই : বেদ পয়স্বিনী (২০০৬), খেলাহাট (২০০৮), দ্রাক্ষাফলের গান (২০০৮), ঢেউ এবং সংকেত  (২০১৮), জিপার টানা থাকবে (২০১৯), অন্ধ আমার আলোপোকা (২০২০)। প্রকাশিত উপন্যাস : মাশান রহস্য (২০২০)। পুরস্কার : ২০০৮ সালে কৃত্তিবাস পুরস্কার পেয়েছেন প্রথম কাব্যগ্রন্থ বেদ পয়স্বিনী-র জন্য।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।