একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল এস আই এম নূরুন্নবী খান বীরবিক্রম। তিনি প্রয়াত হন ২০১৯ সালের ২২ মে তারিখে। রক্তের বিনিময়ে মানচিত্র আনা এই যোদ্ধার কণ্ঠ আমৃত্যু সরব ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। সুবিধা লাভের আসায় তিনি যেমন আপস করেননি, তেমনি সত্য বলতেও কখনো কুণ্ঠাবোধ করেননি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সংগঠিত ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের’ তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। একবার প্রায় পাঁচ ঘন্টার আলাপচারিতায় তিনি অকপটে তুলে ধরেছিলেন একাত্তরের দুঃসাহিসক দিনগুলোর কথা। এই বীরের ওই কথাগুলোই আজ ইতিহাস হয়ে আছে।
তার ডাক নাম ছিল ‘আবু’। গ্রামের সবাই এ নামেই ডাকত। পরিবারের প্রথম সন্তান হওয়ায় সকলের আদরের ছিলেন। দাদা ডাকতেন ‘শামসুল ইসলাম’ বলে। কিন্তু দাদি বলতেন— ‘নূরুন্নবী খান’। তার পিতা দুজনকেই অনার করলেন। আকিকা দিয়ে নাম রাখলেন ‘শামসুল ইসলাম মোহাম্মদ নূরুন্নবী খান’। সংক্ষেপে ‘এস আই এম নূরুন্নবী খান’।
তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীধরপাড়া গ্রামে। ম্যাট্রিক পাশের পর তিনি চলে আসেন ঢাকায়, ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। আইএসসি পাশের পর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের (তৎকালিন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ) তড়িৎকৌশল বিভাগে। অতঃপর যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে।
ঢাকা কলেজে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে নূরুন্নবী খানের। সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে থাকেন পরবর্তী আন্দোলন-সংগ্রামগুলোতে।
শিক্ষা আন্দোলন চলছে তখন। ওই আন্দোলনেই প্রথম মিছিলে নামি। দায়িত্ব ছিল সাউথ হোস্টেলের সবাইকে নিয়ে মিছিলে আসা। বুয়েটে গিয়েও নেতৃত্বে জড়িয়ে পড়ি। সোহরাওয়ার্দী ইঞ্জিনিয়ারিং হল (বর্তমানে লিয়াকত ইঞ্জিনিয়ারিং হল) সংসদের জিএস নির্বাচিত হই ১৯৬৪ সালে। সেই সময় পরিচয় ঘটে সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে। ‘সোনার বাংলা শশ্মান কেন?’ শিরোনামে আমরা একটা বুকলেটও বের করেছিলাম।
তাঁর ভাষায়— ‘শিক্ষা আন্দোলন চলছে তখন। ওই আন্দোলনেই প্রথম মিছিলে নামি। দায়িত্ব ছিল সাউথ হোস্টেলের সবাইকে নিয়ে মিছিলে আসা। বুয়েটে গিয়েও নেতৃত্বে জড়িয়ে পড়ি। সোহরাওয়ার্দী ইঞ্জিনিয়ারিং হল (বর্তমানে লিয়াকত ইঞ্জিনিয়ারিং হল) সংসদের জিএস নির্বাচিত হই ১৯৬৪ সালে। সেই সময় পরিচয় ঘটে সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে। ‘সোনার বাংলা শশ্মান কেন?’ শিরোনামে আমরা একটা বুকলেটও বের করেছিলাম।
সময়টা ১৯৬৬ সালের মাঝামাঝি। বুয়েটে তখনও ওপেনলি রাজনীতি করা যেত না। ড. রশিদ ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর। আটজন মিলে গোপনে প্রথম বুয়েটে ছাত্রলীগের কার্যক্রম শুরু করি। হারুন চৌধুরী, তোবারক, শফিউদ্দিন, মোহাম্মদ আলী প্রমুখ সঙ্গে ছিলেন। শিক্ষকদের সমর্থন পাওয়ায় পরবর্তীতে ছাত্রলীগ ওপেন করে দিই। ডালুকে আহ্বায়ক করে বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। অতঃপর ১৯৬৭ ও ১৯৬৮ সালে পরপর দুইবার বুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি ছিলাম। বুয়েটকে আমরা ছয়দফা আন্দোলনের দুর্গ হিসেবে ঘোষণা করেছিলাম তখন। ১৯৬৯ সালে ইউকসু (প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ)-এর ভিপি নির্বাচিত হই। কায়দে আজম হলের (বর্তমান তিতুমীর হল) মোস্তাফিজ ছিলেন জিএস।’
বঙ্গবন্ধু তখন জেলে। তাঁর মুক্তির দাবিতে দুর্বার ছাত্র-আন্দোলন গড়ে তোলেন নূরুন্নবীরা। মিটিংগুলো অধিকাংশই হতো বুয়েটের গেস্ট রুম আর কায়দে আজম হলে। সরকারের পক্ষে তখন ছিল এনএসএফ (ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশন)। বুয়েট থেকে কোনো মিছিল বের করলেই লালবাগ থেকে এনএসএফের গুণ্ডা খোকা, আলতাফ, জাহাঙ্গীর আর পাচ পাত্তুর তাদের ধাওয়া করত। এনএসএফ এক সময় ভাগ হয়ে যায়। দোলন গ্রুপ তখন চলে আসে নূরুন্নবীদের সঙ্গে। অতঃপর বুয়েটে বসেই ছাত্রনেতারা চূড়ান্ত করেন এগারো দফা।
সে ইতিহাস জানান নূরুন্নবী খান— ‘ডাকসুর ভিপি তখন তোফায়েল আহমেদ। চারটি দল— ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া), ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) ও এনএসএফ (দোলন গ্রুপ)। সম্মিলিতভাবে এর নাম দিলাম ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। এর মুখপাত্র করা হয় ডাকসু’র ভিপি তোফায়েল আহমেদকে। উনার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব ছিল ইউকসু’র ভিপির অর্থাৎ আমার ওপর।
জানুয়ারির উনিশ তারিখ। সকালবেলা। মিছিল নিয়ে যাই শহিদ মিনারে। বকশী বাজার হয়ে আজাদ পত্রিকার সামনে আসতেই তিনদিক থেকে আক্রমণের মুখে পড়ি। পরদিন পত্রিকাগুলোর শিরোনাম হয়েছিল— ‘প্রকৌশলী ছাত্ররাও পথে নেমেছে।’ বিশ তারিখ বটতলা থেকে বিশাল মিছিল বের করে ছাত্ররা। মেডিকেল কলেজের গেটে ওইদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় আসাদ। ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। চব্বিশ তারিখ সচিবালয়ে ঘেরাওয়ের দিনে শহিদ হয় রুস্তম ও মতিউর। ১৯৬৯-এর ছাত্র আন্দোলনে আশি পারসেন্ট ছিল বুয়েট ছাত্রদের আন্দোলন। অথচ ইতিহাসে বুয়েটের নাম তেমন প্রচার পায়নি।’
এর পরই নূরুন্নবী খান যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে তিনি চলে যান পাকিস্তানের বেলুচিস্থানে, কোয়েটা স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড টেকটিকসে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলে ওই ট্রেনিং।
সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের কমান্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল মিঠঠা খান। একদিন উনি কনফারেন্স রুমে সবাইকে ডাকলেন। অতঃপর বক্তৃতার একপর্যায়ে পাকিস্তানের সর্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এক মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হতে পারে বলে উল্লেখ করে এর জন্য অফিসারদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।
পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক প্রস্তুতি ও জেনারেলদের মনোভাব প্রসঙ্গে একটি অজানা ঘটনার কথা তুলে ধরেন নূরুন্নবী খান। তিনি বলেন— ‘কোয়েটাতে তখন বিভিন্ন কোর্সে প্রায় ১২-১৪শ’ আর্মি অফিসার অবস্থান করছিল। সেনাবাহিনীর কমান্ডোদের কমান্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল মিঠঠা খান। একদিন উনি কনফারেন্স রুমে সবাইকে ডাকলেন। অতঃপর বক্তৃতার একপর্যায়ে পাকিস্তানের সর্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এক মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হতে পারে বলে উল্লেখ করে এর জন্য অফিসারদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। আর্মি ল্যাঙ্গুয়েজে এটাকে বলে ‘মিশন’ দেওয়া।
কথা শুনে আমি ঠিক থাকতে পারি না। দাঁড়িয়ে বলি— ‘স্যার, আমি কি জানতে পারি পাকিস্তানের কোন পার্টে এই কিলিং করার প্রয়োজন হতে পারে? প্রশ্ন শুনে জেনারেলের মাথা যায় গরম হয়ে। উত্তর না দিয়ে উনি আমায় প্রশ্ন করেন— ‘আর ইউ ফরম ইস্ট পাকিস্তান? বলি— ‘ইয়েস’। আর ইউ এ বেঙ্গলি? বলি— ‘ইয়েস স্যার।’ আর ইউ এ আওয়ামী লীগার? আমি বলি— ‘সরি স্যার। দিস ইজ অ্যান আর্মি ইনস্টিটিউট। হাউ ক্যান আই বি এ আওয়ামী লীগার।’ উনি উত্তেজিত হয়ে যান। বলেন— ‘ইউ অফিসার সাট আপ অ্যান্ড সিট ডাউন।’ তখন পাশে বসা সহকর্মীরা হাত ধরে আমাকে বসিয়ে দেয়। ওইদিনই বুঝেছিলাম ওরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। বরং আর্মি ক্রাকডাউন ঘটাবে।’
পাকিস্তানি সেনাদের সামরিক প্রস্তুতি কেমন দেখেছেন?
‘কোয়েটায় ছিল সিক্সটিন রিজার্ভ ডিভিশন। একটা আর্মির লাস্ট রিসোর্স হলো রিজার্ভ ডিভিশন। কিন্তু দেখলাম কয়েকদিন পর পরই রিজার্ভ থেকে কয়েক ইউনিট ইস্ট পাকিস্তানে পাঠানো হচ্ছে। এমন কী ঘটছে সেখানে যে রিজার্ভ থেকে সেনা পাঠাতে হবে!’
নূরুন্নবী খানরা গোপনে এসব নিয়ে আলোচনায় বসতেন। এক সময় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালানোর পরিকল্পনা আঁটেন।
তাঁর ভাষায়, ‘ট্রানজিট ক্যাম্পে সাদেক নেওয়াজ নামে এক বাঙালি সুবেদারকে পাই। আমার ইচ্ছার কথা শুনে উনি বলেন— ‘সর্বনাশ স্যার। ঢাকা যাবেন না। সেখানে সব মাইরা ফেলছে। ওরা তো মানুষ রাখব না স্যার।’
বললাম— ‘বাঁচার জন্য না, কিছু করার জন্য যাচ্ছি।’
শুনেই মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর একটা চিরকুটে নাম, আর্মি নম্বর আর ডেস্টিনেশন লিখে দিলেন। তখন ওটাই ছিল বিমানের টিকিট। দেশে নামতেই তেজগাঁও এয়ারপোর্টকে মনে হলো যুদ্ধক্ষেত্র। সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন আফসার। আমরা উঠি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে, অর্ডিন্যান্স মেসে। দেখলাম কচুক্ষেত এলাকায় লাশ পড়ে আছে। ক্যান্টনমেন্টের এদিক-ওদিক জটলা। জায়গায় জায়গায় আর্মি ট্রুপস। কোন গ্রুপ কোথায় যাবে সে ডিউটি ভাগ করা হচ্ছে। চলছে ব্রিফিংও।’
ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্রুপস নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নূরুন্নবী খান। কিন্তু সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। ২৯ মার্চ ১৯৭১। সিভিল ড্রেসে তিনি চলে যান সেন্ট্রাল রোডে, খালার বাড়িতে। পরদিন বুড়িগঙ্গা হয়ে আসেন রাজবাড়ীতে। অতঃপর নড়াইলে। সেখানে ওয়াবদার রেস্ট হাউজে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় ক্যাপ্টেন রহমান ও ক্যাপ্টেন হাবিবের। প্রতিরোধযুদ্ধ পরিচালনা করছিল তারা। তিনিও তাতে যোগ দেন।
৮ এপ্রিল ১৯৭১। নড়াইলের ওপর পাকিস্তানি সেনারা বোম্বিং করে। তখন ঝিকরগাছা বর্ডার দিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে যান তিনি। নূরুন্নবী কিছুদিন কাজ করেন গঙ্গারামপুরে, মেজর নাজমুলের সঙ্গে। এরপর চলে আসেন কলকাতায়, আতাউল গণি ওসমানির এডিসি হিসেবে কাজ করেন কিছুদিন।
খন্দকার মোশতাক আহমেদ পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না বলেন মনে করেন মুক্তিযোদ্ধা নূরুন্নবী খান। উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরেন ওই সময়ের একটি ঘটনা।
তাঁর ভাষায়— ‘আমি তখন কলকাতায়। একদিন নুরে আলম সিদ্দিকী এসে বলে— ‘নবী ভাই, চলেন খন্দকার ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করি। কী অবস্থা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের, একটু জানি।’
খন্দকার মোশতাক সাহেব বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে কি যেন পড়ছিলেন!
নুরে আলম জিজ্ঞেস করে, ‘মুক্তিযুদ্ধের অবস্থা কী? কী হবে আমাদের?
খন্দকার মোশতাক বললেন— ‘গোলাগুলি করে জনগণের অধিকার আদায় করতে হবে— এই রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না। এগুলো করেও কিছু হবে না।’
কি করতে হবে?
—কাটছাঁট করে ওরা যদি ৬-দফা মেনে নেয়, তাহলে পাকিস্তানিদের সঙ্গে নেগোসিয়েট করা উচিত আমাদের।
নুরে আলম বলেন— ‘আপনি তো প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী। এ ব্যাপারে কি কোনো স্টেপ নিয়েছেন?’
মোশতাকের উত্তর— ‘আমি কলকাতায় আমেরিকার এক কনসুলেটরের সঙ্গে লিয়াজো মেনটেইন করছি। যোগাযোগ রাখছি দিল্লিতেও। তাহের ঠাকুর ও মাহবুবুল আলম চাষীকেও কাজে লাগিয়েছি। ওরা যোগাযোগ করছে নানা জায়গায়। শেখ মুজিবকে পাকিস্তান যদি জীবিত ফেরত দেয় আর ৬-দফা কাটছাঁট করে মেনে নেয় তাহলে আমাদের যাওয়া উচিত।’
খন্দকার মোশতাকের কথা শুনে পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে যায়। যুদ্ধ চলছে তখন। অথচ উনি পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের চিন্তা করছেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করেছিলাম ওইদিন। দেখেন এই মোশতাকই স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর খুবই আস্থাভাজন ছিলেন।
খন্দকার মোশতাকের কথা শুনে পায়ের রক্ত মাথায় চড়ে যায়। যুদ্ধ চলছে তখন। অথচ উনি পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের চিন্তা করছেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করেছিলাম ওইদিন। দেখেন এই মোশতাকই স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর খুবই আস্থাভাজন ছিলেন।’
এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে মেজর শাফায়াত জামিল আসেন কলকাতায়। তার সঙ্গেই নূরুন্নবী চলে যান রণাঙ্গনে। যুদ্ধ করেন থার্ড বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে। মেজর শাফায়াত জামিল ছিলেন থার্ড বেঙ্গলের সিইও।
রেজিমেন্ট রেইজ করার দায়িত্ব তিনি দেন নূরুন্নবীকে। নওগাঁর পত্নিতলা থেকে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পর্যন্ত ক্যাম্পগুলো ঘুরে ঘুরে ১১শ’ ট্রুপসের বেঙ্গল রেজিমেন্ট গড়ে তোলেন তিনি। এরপর কয়েকটি কোম্পানি নিয়ে অপারেশন পরিচালনা করেন দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু জুন মাসের ১৫ তারিখে অর্ডার আসে গারো পাহাড়ের তেলঢালায় চলে যাওয়ার।
ফাস্ট বেঙ্গল বনগাঁ থেকে আসে ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে, এইট বেঙ্গল চট্টগ্রাম থেকে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে আর থার্ড বেঙ্গল আসে হিলি থেকে নূরুন্নবী খানের নেতৃত্বে। তিন বেঙ্গল মিলে একটা বিগ্রেড হয়। জুলাই মাসের ৭ তারিখে মেজর জিয়া ওই বিগ্রেডের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। বিগ্রেডের নাম প্রথম ছিল ওয়ান ইবি (ইস্ট বেঙ্গল) বিগ্রেড। এরপর নাম হয় ওয়ান আর্টি (আর্টিলারি) বিগ্রেড। শেষে নাম দেওয়া হয় জেড ফোর্স।
তিন বেঙ্গলের কয়েকদিন ট্রেনিং চলে তেলঢালায়। এরপরই এসিড টেস্ট হিসেবে তিন ব্যাটেলিয়ানকে তিনটা অপারেশনে পাঠানো হয়। ফার্স্ট বেঙ্গল কামালপুর বিওপি, থার্ড বেঙ্গল বাহাদুরাবাদ ঘাট আর এইট বেঙ্গল নকশি বিওপি অপারেশনের দায়িত্ব পায়। কামালপুর বিওপিতে ফার্স্ট বেঙ্গল ফেল করে। সেখানে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীর-উত্তমসহ শহিদ হন ৬৫ জন। নকশিতেও মারা পড়ে ৩৬ জন যোদ্ধা। একমাত্র বাহাদুরাবাদ ঘাট অপারেশনেই সফল হয় নূরুন্নবীরা।
কীভাবে তা সম্ভব হলো?
তাঁর ভাষায়— ‘যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগস্থলে বাহাদুরাবাদ ঘাট একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর ছিল। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনারা বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, দিনাজপুর ও রংপুর ফ্রন্টে যুদ্ধ করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সৈন্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানি এবং সামরিক যানবাহন রেলওয়ের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ওয়াগনে করে বাহাদুরাবাদ ঘাট হয়েই নিয়ে যেত। তাই উত্তরবঙ্গে শক্রকে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য বাহাদুরাবাদ ঘাট অচল করে দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছিল।
ঘাটটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সেনা, এক কোম্পানি প্যারা মিলিটারি রেঞ্জার এবং ৫০ জন স্থানীয় বিহারি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য। পাকিস্তানিদের শক্তিশালি ঘাঁটি ছিল বাহাদুরাবাদ ঘাটে। ওই ঘাটের ফেরিতে ট্রেনের ওয়াগন পারাপার হতো।
আগেই রেকি করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয় একটি গ্রুপ আমাদের সাহায্য করে। বড়ো বড়ো ১৬টা পাটের নৌকায় ব্রহ্মপুত্র দিয়ে এগোই আমরা। ৩১ জুলাই ১৯৭১। ভোর ৪টার মতো। মুক্তিযোদ্ধারা টর্চ মেরে সিগন্যাল দিতেই নৌকা ভেড়াই। ঘাটের পাশেই একটা মাদ্রাসা। নদীর মোহনায় প্রটেকশনে থাকে আলফা কোম্পানি। দায়িত্বে ক্যাপ্টেন আনোয়ার। পাকিস্তানি সেনারা গানবোট নিয়ে আক্রমণ করতে আসলে ওরা তা প্রতিহত করবে। আমার ডি কোম্পানি সামনে এগিয়ে আক্রমণ চালাবে। আর ব্যাটেলিয়ান হেডকোয়ার্টার কোম্পানি নিয়ে মাদ্রাসা ঘরের মাঝামাঝিতে অবস্থান নিয়েছেন মেজর শাফায়াত জামিল স্যার। উনি আমার প্রটেকশনে থাকবেন। মর্টার বা কাভারিং ফায়ার দিবেন। লাগলে সেনাও পাঠাবেন। আমি অপারেশনে হিট করব। এটাই ছিল পরিকল্পনা।
দিনের বেলায় পাকিস্তানি সেনাদের বড়োখানা চলে দেওয়ানগঞ্জ সুগার মিলে। ফলে তারা ট্রেনের ওয়াগনে ওয়াগনে রেস্ট নিচ্ছিল। আমরা রকেট লঞ্চার দিয়ে ওয়াগনগুলো উড়িয়ে দিলাম। ওরা টিকতে পারে না। গানবোট ছিল। ভয়ে একদল সিরাজগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। বহু সেনা পালিয়েছে নদীর পাড় দিয়ে। ফাইট করার মতো কোনো সুযোগ আমরা ওদের দেইনি। ভোর ৪টা থেকে ৬টার মধ্যেই সব ক্লিয়ার করে ফেলি। ওই অপারেশনে সফল হলেও সুবেদার ভুলু মিয়া নামে এক প্লাটুন কমান্ডারকে আমরা হারাই ওইদিন।’
নূরুন্নবীরা অক্টোবর পর্যন্ত ছিলেন রৌমারিতে। অতঃপর ব্যাক করেন তেলঢালায়। ওই সময় নির্দেশ আসে তিনটা ব্যাটেলিয়ানই সিলেট যাবে এবং সর্বপ্রথম সিলেটকে মুক্ত ঘোষণা করবে। তারা তখন মুভ করে শিলং হয়ে চেলা সাব সেক্টরের বাঁশতলায় অবস্থান নেন। এরপর থেকে স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত তিনি সরাসরি অংশ নেন এবং নেতৃত্ব দেন ছাতক, গোয়াইনঘাট, ছোটোখেল, রাধানগর, সালুটিকর ও লামাকাজি ঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে।
এক অপারেশনে দৈবক্রমে বেঁচে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুন্নবী খান। ১৪ অক্টোবর ১৯৭১। অর্ডার ছিল ছাতক দখলে নেওয়ার। আ্যাসল্টে যায় ব্রাভো আর আলফা কোম্পানি। নূরুন্নবীর গ্রুপের দায়িত্ব ছিল ছাতকের পেছনে কালারুখায়, কাট অব পার্টিতে।
এক অপারেশনে দৈবক্রমে বেঁচে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুন্নবী খান। ১৪ অক্টোবর ১৯৭১। অর্ডার ছিল ছাতক দখলে নেওয়ার। আ্যাসল্টে যায় ব্রাভো আর আলফা কোম্পানি। নূরুন্নবীর গ্রুপের দায়িত্ব ছিল ছাতকের পেছনে কালারুখায়, কাট অব পার্টিতে। সিলেট থেকে কোনো পাকিস্তানি ট্রুপস চলে আসলে তা ঠেকাতে হবে। ক্যাপ্টেন মহসিনও ছিলেন আরেক কাট আব পার্টির দায়িত্বে, টেংরাটিলায়। কিন্তু আগেই ওই জায়গা দখলে নেয় পাকিস্তানি সেনারা। এদিকে নূরুন্নবীর একটা প্লাটুনও হারিয়ে যায় হাওড়ে। ফলে তারা অপারেশন উইড্রো করে। দ্রুত সরে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই পাকিস্তানি সেনারা বোবরা গ্রাম আর পশ্চিম কালারুখা ঘেরাও করে ফেলে। নূরুন্নবী, আলমগীর ও আজাদ মিয়াসহ ছিলেন তিনজন। সবার মনে তখন অজানা আতঙ্ক।
তিনি বলেন— ‘সন্ধ্যার ঠিক আগের ঘটনা। আলমগীরকে বললাম এসএমজি ক্লক করে নেন। আমিও তা তাক করি। দুইজন দুইজনকে কিল করব। কিন্তু তবুও ধরা দিব না। এর মধ্যে একটা নৌকা যাচ্ছিল। তখনই আজাদ মিয়া ওই নৌকাটি নিয়ে আসে। আমরাও দ্রুত উঠে পড়ি। পানির শব্দে বুঝে যায় পাকিস্তানি আর্মিরাও। নৌকায় চড়তেই ওরা দূর থেকে গুলি চালায়। ফলে ফুটো হয় নৌকার তলা। ফুটো দিয়ে দেদারছে পানি ঢুকতে থাকে নৌকায়। সবাই ঘামছিলাম। এই বুঝি ধরা পড়ে যাব। আলমগীর শার্ট খুলে তা দিয়ে ফুটো বন্ধ করার চেষ্টা চালাতে থাকে। আজাদ মিয়া নৌকায় দ্রুত লগি চালায়। ফলে নৌকাটি পাকিস্তানি সেনাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়। আজাদ মিয়ার কারণেই সেদিন বেঁচে গেছি।’
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য নূরুন্নবী খান বীরবিক্রম খেতাব লাভ করেন। অথচ জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ক্যু’র মিথ্যা অভিযোগ এনে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করাসহ তাঁকে এক বছরের জেল দেওয়া হয়। তাই আমৃত্যুই তিনি নামের শেষে গর্বের সঙ্গে লিখতেন ‘বরখাস্ত’ শব্দটি।
দুঃখ নিয়ে তিনি বলেন, ‘চারটা চার্জ ছিল। চার্জে যে ডেটগুলো দেওয়া হয়েছিল সে ডেটগুলোতে ছিলাম বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে। মুভমেন্ট রেজিস্টারে তা ছিল লিপিবদ্ধ করা। সেগুলো উপস্থাপনও করেছিলাম। তবুও সাজা পেয়েছি। ক্যামেরা ট্রায়ালে আমার বিপক্ষে তখন ওকালতি করেছিলেন বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন (সাবেক নির্বাচন কমিশনার)। ১৮-১৯টি ক্যু জিয়ার আমলে হয়েছে। আসলে সবই ছিল বানানো। আপনি আর আমি কথা বলছি— ইনটেশনালি ওটাকেই ক্যু বানাতো ওরা। এভাবেই আর্মি থেকে সব মুক্তিযোদ্ধা সাফ করা হয়েছিল জিয়ার আমলে। এগুলোরও বিচার হওয়া দরকার।’
একাত্তরে হুসেন মুহাম্মদ এরশাদের ভূমিকার কথা এই বীরবিক্রম তুলে ধরেন ঠিক এভাবে— ‘উনি তো মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি। খেমকারান সেক্টরে তিনি ছিলেন সিক্স ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিইও। ভারতীয় বর্ডারের খুব কাছেই ছিলেন। ইচ্ছে করলে পুরো ব্যাটেলিয়ান নিয়ে হেঁটেই ঢুকে যেতে পারতেন ইন্ডিয়াতে। তার এক কোম্পানি ইন্ডিয়া চলে গিয়ে পরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং মুক্তিযুদ্ধের সময়ই উনি পদন্নোতি পেয়ে মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হয়েছিলেন।’
স্বাধীন দেশ নিয়ে এই কমান্ডারের অভিব্যক্তি— ‘আমরা তো নিজের জন্য যুদ্ধ করি নাই। দেশের সব মানুষকে বাঁচাতে যুদ্ধ করেছি। আমরা জেনেশুনেই জীবন দিতে গিয়েছিলাম। স্বপ্ন ছিল একটা বৈষম্যহীন সোনার দেশ পাব। কোনো অন্যায় আর জুলুম-নির্যাতন সেখানে থাকবে না। সর্বক্ষেত্রে ন্যায়ের শাসন থাকবে। কিন্তু আজ কেউ হাজার কোটি টাকার মালিক। আবার কারো হাতে ৫শ’ টাকাও নাই। দেশের সম্পদের আশি পারসেন্ট আছে দুই পারসেন্ট লোকের কাছে। এই বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা তো দেখি নাই!’
তিনি আরও বলেন— ‘আপনি বেতন পান বিশ হাজার টাকা। সম্পদ করেছেন বিশ লক্ষ টাকার। ওই টাকা কোথায় পেলেন? কেউ প্রশ্ন করবে না। সবাই বলবে উন্নতি হইছে বেশ। আবার এরাই মসজিদ ও মাদ্রাসায় দুর্নীতি আর ঘুষের টাকা দিচ্ছে। আর আমগো হুজুররা এদের উন্নতির জন্য দোয়া করতেছে— ‘আল্লাহ তুমি তার সম্পদ বাড়ায় দাও।’
তিনি আরও বলেন— ‘আপনি বেতন পান বিশ হাজার টাকা। সম্পদ করেছেন বিশ লক্ষ টাকার। ওই টাকা কোথায় পেলেন? কেউ প্রশ্ন করবে না। সবাই বলবে উন্নতি হইছে বেশ। আবার এরাই মসজিদ ও মাদ্রাসায় দুর্নীতি আর ঘুষের টাকা দিচ্ছে। আর আমগো হুজুররা এদের উন্নতির জন্য দোয়া করতেছে— ‘আল্লাহ তুমি তার সম্পদ বাড়ায় দাও।’ মানে আরও ঘুষ খাওয়া আর দুর্নীতি করার ব্যবস্থা করে দাও। সমাজে এটা হলে কি ঘুষ আর দুর্নীতি বন্ধ হবে? ১৯৭৫ সালে বিএমএ-এর এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণটাই বাস্তবে কঠোরভাবে কার্যকর করা হোক।’
প্রজন্মই বাঁচিয়ে রাখবে মুক্তিযোদ্ধা নূরুন্নবী খানের বীরত্বের ইতিহাসকে। তাই পাহাড়সম আশা নিয়ে তাদের উদ্দেশেই তিনি বলে গেছেন শেষ কথাগুলো— ‘তোমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটি জেনে নিও। একাত্তরের বীরত্বের ইতিহাসই তোমাদের পথ দেখাবে। কথা ও কাজে সৎ থেকো। মনে রেখো— রক্তে পাওয়া দেশের ম্যাপটিকে তোমাদেরই তুলে ধরতে হবে।’
সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহফুজ আলম বেগ ও বীরবিক্রম লে. কর্নেল এস আই এম নূরুন্নবী খানের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধারা পৌরাণিক কোনো চরিত্র নয়, বরং বাঙালি বীর। তাঁদের রক্ত, ঘাম, ত্যাগে সৃষ্ট বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আজকের সবকিছুই আগামীর ইতিহাসের অংশ হবে তা নয়, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এ দুই কমান্ডারের দুঃসাহসিক ইতিহাস অনাদিকাল পর্যন্ত আমাদের আলোড়িত করবে।
লেখক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। তাঁর রচিত যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক’ পুরস্কার লাভ করে। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং অনলাইন পত্রিকায়। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। প্রকাশিত গ্রন্থ ২২টি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ— ‘৭১-এর আকরগ্রন্থ’, ‘অপরাজেয় একাত্তর’, ‘১৯৭১: রক্ত, মাটি ও বীরের গদ্য’, ‘দেশে বেড়াই’, ‘বিদ্রোহ-সংগ্রামে আদিবাসী’, ‘১৯৭১: যাঁদের ত্যাগে এলো স্বাধীনতা’, ‘আদিবাসী বিয়েকথা’, ‘১৯৭১: রক্তমাখা যুদ্ধকথা’, ‘১৯৭১: যাঁদের রক্তে সিক্ত এই মাটি’, ‘যুদ্ধাহতের ভাষ্য’, ‘রক্তে রাঙা একাত্তর’।