প্রতিটি রাত্রি জ্যাজ সংগীত
তোমার প্রতিটি রাত্রি জ্যাজ সংগীত হয়ে যাবার
আগে খুলে ফেলো অন্তর্বাস; যেইভাবে ধ্যান করে
নাগাসাধু, কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর বৃন্দাবন কিশোরী
যেইভাবে পূজা করে তুলসী বৃক্ষের; তারপর
ঘুরে আসো একবার— আদিবাসী মেয়েটির গ্রামে
লৌকিক দেবীরা ঘুমিয়ে গেলে কুমিরেরা ডাঙায়
উঠে আসে; আমি দেখেছি তাদের সূচালো দাঁতের
পৃথিবীতে— বহুবর্ণে সুযোগসন্ধানী ঘোড়া আছে;
এইরূপ বিরহ-ভ্রমণ শেষে যদি ফিরে আসো
ভোরবেলা আমার বাড়ি হাসপাতাল হয়ে ওঠে;
হাসপাতালে
বাসনা, এই কবিতাটি যখন আমি লিখছি
কোনো শব্দ, উপমা মাথায় আসছে না
শুধু দেখি তুষারাবৃত মৃত মুখ তোমার
এই শীতে আরও বেশি শাদা হয়ে গেছে
আর—
তুমি আশ্চর্য হয়ে যখন এই কবিতাটি পড়ছ
তখন হাসপাতালে শুয়ে আরেকটি কবিতায়
আমি তোমাকে লিখছি— শীত জীবনের দুঃখ
আমার নিঃসঙ্গতার অন্তধ্বনি কোথায়?
বিবাহ আসর
তরুণ ও দিপ্তী’কে
বিবাহ-গীতি ভেসে যায় দূর—
তারকারাজি… যেন আলোক সজ্জা
এই মহাসমুদ্রকূলে
এতবড়ো বিয়ে বাড়ি তবু
কন্যাদান করবে এমন কেউ নেই
কোথাও যজ্ঞের ধূপ নেই, ধোঁয়া নেই
উলুধ্বনি, আমের পল্লব কিচ্ছু নেই
শুধু আছে এই মন্ত্রপাঠ:
‘আমার হৃদয় তোমাকে দিলাম’
আর—
একে একে সাতটি আকাশ প্রদক্ষিণ করে শ্রীমতী শ্রীমান;
২৪শে এপ্রিল
যেকোনো বাঙলা গানের চেয়ে বেশি ভালোবাসি
নির্জন সন্ধ্যা, হরিতকী বনে প্রকৃত মাতালতা
উত্তীর্ণ হয়ে এলে— কাঠবিড়ালির দাম্পত্য রাত্রি
আমিও হয়ে যেতে পারি মহাভারত রচয়িতা
রবিশস্যহীন খেতে শুয়ে শুয়ে দেখেছি আমি
চিরবিষণ্ন মায়ের শালদুধ পানের মতোন
চিন্তাবিদ্যুতের মধ্যে নক্ষত্রের কথোপকথন
পুষ্পক বিমানে উড়ে কই যাচ্ছে বাঙলা কবিতা?
প্রহেলিকা
কেন আড়াল হয়ে আছো তুমি? নিখুঁত কপটতা
প্রকাশ করে দাও লক্ষ্মীটি, সজোরে আঘাত করো
যেন কুঁচকানো পাতাটির মতো পরে থাকি, যেন
আর দাঁড়াতে না পারি মেরুদণ্ড সোজা করে, ঘাড়
ভেঙে দাও না কেন? শুধু কপটতাই কি তোমার
রাজ্যনীতি প্রাতঃকালে ভালোবাসি বলে চুষে চুষে
রক্ত খেয়েছো রাতের গোপনে, ডাইনি নাকি তুমি?
এই বিশেষ কপটতা শুধুই তোমার জেনেও
তোমাকে ভেবেছি সঙ্গিনী, মহাজাগতিক মেঘের
মতো আমি ঘুরে বেড়াই জিন্স পরা এক বাউল—
কেউই তাকায় না মুখ তুলে, তবু গান শোনাই;
জন্ম ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালে ঢাকার রামপুরায়। শৈশবের একাংশ এবং শৈশব পরবর্তী গ্রামেই বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা ইংরেজি সাহিত্যে। কবিতা ও গদ্য লেখার পাশাপাশি গান নিয়ে কাজ করেন।