বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

টোকন ঠাকুরের ধারাবাহিক : জার্নি অব কাঁটা : পর্ব ২১

0

ফিকশন, সে টেক্সটই হোক আর অডিও-ভিজুয়ালই হোক, সেখানে আমরা হরহামেশা যা দেখি তা হচ্ছে কয়েকটা প্রধান চরিত্র থাকে, আর থাকে কিছু অপ্রধান চরিত্র। অপ্রধান বললেও তাদের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় কোনোভাবেই। সবটা মিলিয়েই তো গল্পটা বলা। অন্য ভাষায় যেমন, বাংলা ভাষাতেও সাধারণত তাইই লক্ষণীয়। এমন কি পাঠক যখন পড়ে, দর্শক যখন দ্যাখে, তারাও এটা মেনে নিয়েই পড়ে বা দ্যাখে। এই প্রবহমানতায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু জনাব শহীদুল জহির এমন একজন লেখক, দীননাথ বাংলা ভাষায়, তাঁর গল্প-উপন্যাসে লোকেশন বেইজড সামষ্টিক মানুষের অংশগ্রহণই প্রায় মুখ্য হয়ে ওঠে। লেখক নিজের বক্তব্যের ভেতর দিয়েই হাজির করেন একদল মানুষকে। তখন লেখক বলেন বা বলতে থাকেন, হয়তো মহল্লাবাসিরা মনে করতে পারে যে সেইরাতে আকাশে ছিল চরাচর ভেসে যাওয়া চাঁদ, চাঁদের আলোয় ভূতের গলিতে দুধজোসনা ঢলে পড়ে সরসর করে এবং আজিজ ব্যাপারী তাঁর বাড়িতেই ছিলেন কিংবা জহির বলেন, সেইরাতে আকাশে কোনো চাঁদ ছিল না, সেই রাতে ছিল ঝুপঝুপে অন্ধকার আর মহল্লাবাসিরা সেই অন্ধকারে যে যার বাড়িতে বসে থাকে গুম মেরে, আজিজ ব্যাপারীকেও সেইদিন তারা দেখতে পায় না। তাহলে ব্যাপারী কোথায়—এই জিজ্ঞাসা নিয়ে কিংবা অকারণেই ইয়োর চয়েস সেলুনের সামনে পেতে রাখা কাঠের বেঞ্চে মহল্লাবাসিরা চুপচাপ বসে থাকে। তখন হয়তো গাল হা করে একজনের হাই ওঠে, হাই দেখে হাই ওঠে অন্যদেরও। মহল্লাবাসিরা গল্প বলতে বলতে শুনতে শুনতে হাই তোলে। আমরা হাই তোলার শব্দ শুনতে পাই। এই ধরনের ন্যারেশন, মানে এই যে ‘মহল্লাবাসি’— মহল্লাবাসির আড়ালে ঠিক কত চরিত্র হাজির আছে দৃশ্যে, তার সংখ্যাতাত্ত্বিক নির্ণয় দেন না লেখক। নির্ণয় থাকে না, কতজন মহল্লাবাসি বসে চা খাচ্ছিল, কতজন মহল্লাবাসি বসে ডালপুরি খাচ্ছিল, কতজন মহল্লাবাসি সুবোধের বউ স্বপ্নার হাতে বানানো নিমকপারা খায়? কতজন যেমন অনির্ণেয়, সেই মহল্লাবসিদের স্ট্যাটাসও সুর্নিদিস্ট নয়। মহল্লাবাসির বেশিরভাগেরই আলাদা নাম নেই গল্পে, তাদের নাম তো সেই সামস্টিক কণ্ঠস্বর—’মহল্লাবাসি’। শহীদুল জহিরের বেশির ভাগ ফিকশনেই এই অবস্থা, কাঁটাতে তো বটেই। কাজেই, মহল্লাবাসি কাঁটার বড়ো ফ্যাক্টর। ঠিক কতজন মহল্লাবাসি থাকবে, তা গল্পে নির্ণিত না হলেও কাঁটাতে কয়েকশো মানুষ সেই মহল্লাবাসি হয়ে স্ক্রিনে থেকেছেন। ভূতের গলির মহল্লাবাসি বলতে ১৯৮৯-৯০ সালে যেমন একদল মানুষ, তারাই মহল্লাবসি; আরেকদল মহল্লাবাসিকে দেখা যাবে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের বাস্তবতায়। আরেক দল মহল্লাবাসিকে আমরা দেখতে পাব ১৯৬৪ সালের বাস্তবতায়। বিরাট ব্যাপার। এক সিনেমার মধ্যে তিন সিনেমা কাঁটা।


p 21. 1

ভূতের গলির মহল্লাবাসিদের পলায়নপর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখ…


প্রচুর ক্যারেক্টার কাঁটার ভেতরে, তারা হয়তো সিনেমা হলে দর্শক হয়ে সিনেমা দেখছে, সেখানেও অনেক মানুষ। বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষ। পাকিস্তানি সেনা দল, জিমখানা, দুষ্টু ছেলের দল, মন্দিরের ভেতরে কীর্তনে প্রায় শতখানেক নারী-পুরুষ, একটা ‘পাবলিক মব’সহ নানান দৃশ্যে শুধু মানুষ আর মানুষ! সেই মানুষ বা মহল্লাবাসিই কাঁটার বড়ো অংশ, যারা কিনা সবাই ভূতের গলির বাসিন্দা—তাদের নিয়েই কাঁটা। পিরিওডিক্যাল ছবি, তাই চরিত্রদের কস্টিউম, প্রপস ঠিকঠাক সময় অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়েছে। কাঁটা ছবিতে মহল্লাবাসিই গল্পটা ডেলিভারি দেয়, তাদের গল্পের চরিত্র হয়ে আসে সুবোধচন্দ্র দাস ও স্বপ্নারানী দাস। এত চরিত্র প্রয়োজন অনুযায়ী ম্যানেজ করা কি চাট্টিখানি কথা? বাংলাদেশে যারা রেগুলার প্রোডাকশন করে থাকে, নিশ্চয়ই তারা বুঝতে পারছেন উল্লিখিত বর্ণণায় আমি যা লিখেছি। কী আয়োজনের কথা লিখেছি? কাঁটা টিমের উপরে অনেক চাপ গেছে খুব স্বাভাবিকভাবেই। মগবাজার কাঁটা ক্যাম্পে থাকাকালীন আমরা প্রথম আলো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কয়েকশো মানুষকে অডিশন করে এনে, নারিন্দায় এসেও চরিত্র খোঁজাখুঁজি অব্যহত রেখেছি। তাদের কাস্টিং করতে গিয়ে সেই চাপ নিতে হয়েছে তুরাকে। এত লোকজন কীভাবে সামাল দিলো? সে সময়, কাজের সেই বাস্তবতায় আমি নিশ্চয়ই খুব কঠিন ও রুঢ় আচরণ করেছি? হ্যাঁ, কাঁটা টিমের সবার সঙ্গেই করেছি। কারো কারো সঙ্গে বেশিই করেছি। আমার তো পেটে বাচ্চা, আমার কী করার আছে তখন? এই বিবেচনার প্রজ্ঞা ঘটে না থাকলে বা চিন্তা করতে না পারলে তাদের কাছে আমি অপরাধী হয়ে থাকব। অপরাধ যে আমার নেই, তা তো নয়! হতে পারে সমাজের যেকোনো মানুষের চেয়ে আমার অপরাধই বেশি, মানুষ হিসেবে আমার যা দায়িত্ব, তা কি আমি পূর্ণাঙ্গ পালন করতে পারি? অতএব আমার অপরাধের সীমানা নিয়ে জার্নি অব কাঁটা একটি পর্বে লিখতে চাই। কনফেস করতে চাই। টিম কাঁটায় সৌরভ, শুভ, রাসেল, দোলা, লতা, তুরা, জ্যানেট, দীপন’দা, শক্তি, তন্ময়, গাজী, সূর্য, আয়েশা, ঝিনুক, রোমান বা কৃতী বা সাময়িক আরও কজন—সবার মিলিত প্রাণান্তকর প্রয়াসই তো কাঁটা।


p 21. 4

ইয়োর চয়েস সেলুন ঘরের সামনে রাস্তার মোড়ে শুটিং চলছে…


আজ আমি ভাবতেও পারি না, একটি রাস্তা কী করে তৈরি করেছিলাম আমরা? কৃতী এটা বলতে পারবে। কারণ, ওর উপর দিয়েই তো রোলার গেছে। কিন্তু রাস্তাটা কাঁটা নির্মাণে খুবই দরকার ছিল, তখন আমরা শুধু তাই জানি। দুড়মুশ হাতে করে সারা দিন কৃতী রাস্তা নির্মাণ শ্রমিক তখন। এতে মাসখানেক লেগেছিল। যেহেতু নাসিরুদ্দিনের বাড়ির পেছনের দিককে আমরা করেছি সামনের দিক, তাই রাস্তার কোনো বিকল্প ছিল না। একদিকে পাঁচিল বানানো হচ্ছে, দীপন’দাসহ তন্ময় এবং আরও কয়েকজন ওখানে লটকে আছে। শক্তি বিভিন্ন প্রপসকে রংতুলি দিয়ে ঠিকঠাক করছে। পঞ্চাশ বছরের ডাম্প গলি উদ্ধার করেছি আমরা। সৌরভ-শুভ সেদিকে লেবার লাগিয়ে দিয়ে নিজেরাও লেবার হয়ে গেছে। অন্য দিকে কাঠ মিস্ত্রি গফফার কাজ করেছে রাতদিন। আর গেণ্ডারিয়া থানার পেছনে, বুড়িগঙ্গার পাশে মামুর মাজারের মোড়ে ১৯৮৯-৯০ সাল-বাস্তবতায় একটি সেলুন ঘর বানানো হয়েছে। তখনো ক্ষুর-কাচির চল ছিল সেলুনে। সিনেমার পোস্টার, চিত্রালী পত্রিকা সাঁটানো সেলুন ঘর। আগেই বলেছি, তখন আমরা আছি একটা এলাহি কারবারের মধ্যে। সেই এলাহি কারবারের নাম কাঁটা। কাঁটা একটি ঘোর।


p 21. 5

মাওলানা আবুবকর রাজাকারদের নিয়ে আজিজ ব্যাপারীর বাড়িতে যায়


মহল্লাবাসি লিড হওয়ার কারণে অনেক মানুষ কাঁটাতে অভিনয় করেছে। সেই অনেক মানুষকে এড়িয়ে গিয়ে যেমন কাঁটা নয়, তেমনই কাঁটা-কেন্দ্রিক প্রচার-সম্প্রচারেও সেই মহল্লাবাসিদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কাজেই, সুবোধ-স্বপ্না, আজিজ ব্যাপারী, কুলসুম, মাওলানা আবুবকর, রাজাকার কমান্ডার জব্বার বা ক্যাপ্টেন সরফরাজ কিংবা বিহারি নাপিত আবদুল আলী যেমন গুরুত্বপূর্ণ কাঁটা ছবিতে, প্রতিজন মহল্লাবাসিও তেমনই গুরুত্বপূর্ণ এই ছবিতে। এমন কি একটা বিড়াল, একঝাঁক কবুতর, একজোড়া ঘুঘু, একটি ময়না ও একটি টিয়া, এ ছবির পাত্রপাত্রী। সেরকমই দেখা যাবে স্ক্রিনে। কথিত স্টারকাস্ট নেই কাঁটাতে। কাঁটা সাধারণ মানুষের ছবি। কয়েকশো সাধারণ মানুষই এ ছবির চরিত্র বা অন স্ক্রিন পাত্রপাত্রী। আমি জানি না, দর্শক তার নিজেকে দেখার জন্য একটি ছবি দেখতে আগ্রহী কি না! ধারণা করি, আগ্রহী। অবশ্য দর্শকও প্রত্যেকে একই জনরার নয়, একই অভিজ্ঞতায় সিক্ত নয়। এখন প্রশ্ন করাই যেতে পারে, কাঁটা কোন ধরনের দর্শকের ছবি? আমি জানি না। নিজেকে তো আয়নায় সবাইই দ্যাখে, শহর বা গ্রাম, গরিব বা ধনী, ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষকমণ্ডলী, কর্মচারী বা কর্মকর্তা, আসামী ও বিচারক, পুলিশ বা প্রায় সব ধরনের মানুষই তো আয়নায় নিজেকে দ্যাখে, তাহলে কাঁটাও তারা দেখবে। ‘তারকা’ নয়, নিজেকে দেখতে পাবে দর্শক। সেটাই কি কাঁটার উপর্যুক্ত শক্তি নয়? হতে পারে, কাঁটা একটি আয়না, যেখানে তাকালে দর্শক তাঁর নিজেকে দেখতে পাবে। তাই আমরা জানি, কাঁটা আপনাকে দেখতে হবে, নইলে চোখ থেকেই বা কী লাভ আপনার? কাঁটা আপনাকে বুঝতে হবে, নইলে মন থেকেই বা কী লাভ? দর্শক হিসেবে কাঁটার মুখোমুখি হতে হবে আপনাকে, নইলে এত আলোচনার অবকাশ কেন—দেখার আগ পর্যন্ত কি তা বোঝা যাবে? আর কয়েকটা দিনেরই তো অপেক্ষা মাত্র! অপেক্ষা কষ্টকর, সুন্দরও। এ ক্ষেত্রে সুন্দর হবে, আস্থা দিচ্ছি আমি।


p 21. 6

আমার ভেতর থেকে চরিত্রদের বের করে দিচ্ছি যারা অভিনেতা, তাদের কাছেই…


নায়ক-নায়িকা বা ভিলেন কি আছে কাঁটাতে? কে নায়ক? কে নায়িকা? কেই-বা ভিলেন? নায়ক-নায়িকা বা ভিলেন ছাড়া যে ছবি হয় না, তা তো নয়। ‘তিতাস নদীটা আমার নায়ক, মালোপাড়া গ্রামটাই আমার নায়িকা—’ এ কথা বলেছেন নীলকণ্ঠ বাগচী। উনি আবার কে? কোলকাতার ব্রোকেন ইন্টেলেকচুয়াল? এভাবেই তো নিজেকে পরিচয় করালেন ঋত্বিক কুমার ঘটক—তিনিই ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রসঙ্গে এমনতরো বললেন। আর কাঁটা প্রসঙ্গে আমি কী বলব? তিনটে ঘটনাই কি এ ছবির নায়ক? আর সময়, সময়ই কি কাঁটার নায়িকা? তাহলে ভিলেন কে? প্রকৃতপ্রস্তাবে, আমার বলার নেই নায়ক বা নায়িকা নিয়ে! ছবিটা বানানোর কথা, বানিয়েছি। আমার সঙ্গে যারা থেকেছে, তারাও এ ছবির কারিগর। ক্যামেরার সামনের লোকেরা যেমন কারিগর, ক্যামেরার পেছনের ওরা তো কারিগর বটেই। যদিও, এক ঝাঁক নতুন মানুষ নিয়েই আমি ছবিটা করেছি। আমার চিন্তা তাদের মাথায় ঢেলে তাদের দিয়েই কাজটা বের করে এনেছি। পরিশ্রম গেছে অনেক, কষ্ট হয়েছে। সবারই হয়েছে। পরিশ্রম বিনে তো ছবি হয় না। অর্থও গেছে। অর্থ ছাড়াও ছবি হয় না। লাগে টেকনিক্যাল টিম ও প্রযুক্তি। শহীদুল জহিরের গল্পের মধ্যে আমি আমাকে মিশিয়ে দিয়েছি, যাতে গল্পটা যার পড়া আছে, পড়া থাকুক, ছবিটা যেন তার কাছেও এমন কিছু লাগে যা সে ভাবেনি। আমি ভেবেছি। আমারই ভাবনার বুদবুদ আমি ছড়িয়ে দিয়েছি ‘মনোজগতের কাটা’র মধ্যে। ইতিহাস আশ্রিত এই গল্পের তিনটে অধ্যায়, যার দুইটা আমার দেখা নেই। হ্যাঁ, ১৯৮৯-৯০ সাল আমি দেখেছি। আমার উঠতি তারুণ্যের দিন তখন শুরু হয়ে গেছে। পাতলা গোঁফ গজাচ্ছিল। সেলুনে যাওয়া শুরু করি ওই সময়ই। কিন্তু ১৯৭১ সাল আমি নিজের চোখে দেখিনি। ১৯৬৪ সাল আমি দেখিনি। কাঁটা গল্পটি চিত্রনাট্য করতে বসে তাই বিস্তর গবেষণা করেছি আমি। এই গল্পের চিত্রনাট্যের জন্য আমাকে পড়তে হয়েছে একাধিক বই, সাময়িক জার্নাল, পত্রপত্রিকা। শহীদুল জহিরের যেকোনো গল্পই শুধু গল্প কিন্তু কাঁটা একই সঙ্গে একটি গল্প, একই সঙ্গে তা ইতিহাস। বরং বলা ভালো, নির্মম ইতিহাস। এই কারণেই, আমি বলেছি, কাঁটা, ইটস নট অ্যা ফিল্ম; ইটস ট্র্যাজেডি। এই ট্র্যাজেডির ভূগোল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশ বলতে পুরোনো ঢাকার একটি প্রাচীন মহল্লা, মহল্লার নাম ভূতের গলি। ভূতের গলির ৩৬ নম্বর বাড়ির মালিক আব্দুল আজিজ ব্যাপারীর বাড়ির গল্প কাঁটা; যদিও এই গল্প সম্প্রচারিত হয় একটি সেলুন ঘরে বসে থাকা কয়েকজন মহল্লাবাসির মুখ থেকে, সেই সেলুন ঘরের নাম ইয়োর চয়েস সেলুন। সেখানে রেডিওতে বাজে গান, প্রচার হয় খবর।


p 21. 9

শুটিং চলছে নারিন্দায়, পাশে কাঁটার অভিনেতা শিবু কুমার শীল


পুরান ঢাকায়, বাড়ির ছাদে কবুতরদের আড্ডা মারা জন্য বাঁশ দিয়ে বানানো যে কাঠামোটা দেখা যায়, ওর নাম কী? আমি স্ক্রিপ্টে লিখেছিলাম কবুতরের এন্টেনা। কিন্তু পুরান ঢাকায় ফিরে জানলাম, ওর নাম বাম। বাম মানে কী? বাম মানে সব সময় যেমন ডান-বামের বাম নয়, বা লেফটিস্টও নয়, বাম এখানে কবুতরের খানকা শরিফ। আজিজ ব্যাপারীর বাড়িতেও আমরা একটি বাম বসিয়েছিলাম। সেখানে কবুতররা আড্ডা দিত। ‘মানুষ কেন কবুতর ধরে খায়’ এই নিয়ে কবুতররা আলোচনা করত। বা বাকবাকুম করত সব সময়। কেন করত বাকবাকুম? আমি জানি না। আপনি জানেন কেন কবুতর বাকবাকুম করে? প্রায় পঞ্চাশটা কবুতর আমি কিনেছি। প্রথম দিকে কিছু কবুতর মারাও গেছে আমাদের অজানা কারণে। আবার কিনে এনে পুষিয়ে নিয়েছি। কারণ, যে ঘর আমরা বানিয়েছিলাম কবুতরের জন্য, সেখানে ত্রিশটি খোপ ছিল। অর্থাৎ ত্রিশ জোড়া কবুতর অনায়াসে দাম্পত্য চালিয়ে যেতে পারে।

বিড়াল নিয়ে তো আগেই বলেছি। বিড়াল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই প্রথম বিড়ালের মনস্তত্ব বুঝতে চেষ্টা করছি। বিড়াল আছে মানুষের মধ্যেও। তবে মানুষের তিন সাড়ে তিন মাস পর অন্তত বাচ্চা হয় না, মোটা দাগে এই পার্থক্য আছে মানুষ ও বিড়ালের মধ্যে। মহল্লাবাসি পালিয়ে যাচ্ছে ভূতের গলি ছেড়ে, তারা বিড়ালকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে না। তবে পোষা পাখি তারা নিয়ে যাচ্ছে। তবু একদিন বিড়ালকে নদীর ওপারে ফেলে দিয়ে আসা হবে, এই ছবিতে। তারপর কি বিড়াল ফিরে আসবে আজিজ ব্যাপারীর বাড়িতে? বিড়াল কি সেই দূরাগত আশ্রিত আত্মীয়া? বিড়াল কি সেই দুঃখ? যার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তাই ঘুরে ফিরে ব্যাপারীর বাড়িতেই এসে ওঠে? অনেক অনুগল্প এসে যুক্ত হয়ে গেছে কাঁটায়। এই যুক্ত হওয়াটা আমার চিত্রনাট্যে যুক্ত হয় আগে, সেই অনুযায়ী শুটিং করা হচ্ছিল তখন।


p 21. 10

কোনোদিন অন ক্যামেরা অভিনয় করেনি, তাদেরই অভিনয়ের জন্যে প্রস্তুত করছে তুরা


মুন্সিগঞ্জে যখন আমরা শুটিংয়ে যাই, ওখানকার এক পাল বাড়িতে আমরা রাধাকৃষ্ণের প্রতিমা গড়তে দিয়েছিলাম। খুব সুন্দর করেই তা বানানো হয়েছে। মৃতপ্রায় পদ্মার শাখা নদীর ওপারে আমাদের শুটিং শুরু হবে। আমি আর্ট সেকশনের শক্তি ভৌমিককে বললাম, ‘তুমি এপারেই থাকো। আমরা নদীর ওপারে যাচ্ছি। তুমি রাধা-কৃষ্ণ প্রতিমার মাটির শরীরে রং লাগাও। রং দিয়ে কস্টিউম করে ফেলো।’ শক্তি শুরু করল ওর কাজ। একজন সহকারীকে শক্তির পাশে রেখে আমরা নৌকায় চলে গেলাম পদ্মার ওপারে। ওপারে শুটিং চলছে। একসময় এদিকে, যেখানে শক্তিকে রেখে এসেছি আমরা, সেদিকে তাকিয়ে দেখি, প্রচুর লোকজন। টুপি পরা লোকজন। একটা গ্যাঞ্জাম লেগে গেছে বোঝাই যাচ্ছে। ওখানে নদীর এপার-ওপার ফোনের নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। কারণ, আমরা দেখে শুনেই গেছি অমন জায়গায়। ওখানে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য কয়েক মাইলের মধ্যেও টাওয়ার যেন ফ্রেমে ধরা না পড়ে। আমরা নদীর ওপারের কাজ শেষ করে এপারে এসেই বুঝলাম, কী হয়েছে! একটু বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব দেখে শক্তি ও সহকারী একজন, সেই রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা নিয়ে নদীর ধারেরই একটা বিল্ডিংয়ের বারান্দায় নিয়ে গেছে, ওখানে বসেই রং করবে, এমনটা ভেবেছে। ওই বিল্ডিং একটি স্কুল ঘরের মতো। অনেক লম্বা বারান্দা। কেউ নেই বারান্দায়। এমন সময় কেউ কেউ এসে ব্যাপারটা দেখে তারা ছুটে গেছে আরও লোক ডাকতে, কারণ, ওটা ছিল একটা লম্বা বিল্ডিং, একটি মাদ্রাসার বারান্দা। শক্তিরা ওটা বুঝতে পারেনি। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওরা ওই বারান্দায় গিয়ে রঙের কাজ করা শুরু করেছিল। ওদিকে খবর হয়ে গেছে, ‘কারা যেন রাধা কৃষ্ণের মূর্তি বসাইয়া মাদ্রাসা দখল কইরা লইছে।’ কারা মানে আমরাই। আমাদের আর্ট ডিপার্টমেন্টের শক্তি ও আরেকজন সহকারী।


p 21. 7

আমেরিকান মেয়ে মালিহা মোর শাড়ি পরেছে, কাঁটা সেটে, পাশেই দীপন’দা


এরকম খবরের টেস্ট কেমন, আধাঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া গেল। দলে দলে টুপি পরা মাদ্রাসার ছাত্র, যারা জুম্মার নামাজে ছিল, তারা বিরাট উত্তেজনা নিয়ে চলে এলো স্পটে। ‘মূর্তি সরান, নইলে মূর্তি ভাইঙ্গা ফেলমু আমরা’—এরকম একটা জটিলতা জমে উঠল। ওরা বলেছে, ‘বৃষ্টি ভাবটা কমে গেলেই আমরা বারান্দা থেকে নেমে যাচ্ছি।’ কারণ, ওখানে, নদীর পাড়ে, আর কোনো বিল্ডিং নেই। পুরোটাই ফাঁকা। যাবেই বা কোথায়? অতএব উত্তেজনা বাড়বেই। বাড়ল। আমি নদীর ওপার থেকে ফিরে এসে এই সব দেখে বললাম, ‘মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের বারান্দা থেকে নামাও রাধাকৃষ্ণকে।’ নামানো হলো। বললাম, ছাতা মেলে ধরো বৃষ্টি থেকে রক্ষা করো। শুটিংয়ে ছাতা তো থাকেই। তাই করা হলো। বললাম, ‘টিমের লোকেদের সব কিছু খেয়ালে রেখেই কাজ করতে হবে।’ কিন্তু তা যদিও সব সময় সম্ভব হয় না। যেমন, নদীর ওপারে সুবোধ-স্বপ্নাকে নিয়ে একটি সর্ষেখেতের ভেতরে লুটোপুটি করাচ্ছিলাম ড্রোন উড়িয়ে। নদীর চরের খেত, লোকালয় থেকে দূরে, কিন্তু হঠাৎ সেই সর্ষেখেতের মালিক তার দলবল নিয়ে ছুটে এলো। ততক্ষণে আমাদের কাজও হয়তো শেষ। অতএব, চাপ খেতে হলো গৃহস্তের কাছে, এবং সেই চাপ আমাদের পাওনা। ভাবছিলাম, চাপ খেলে খাব। কাজ থেকে পিছু হটব না। কাজটাই মুখ্য। মনে তো সব সময় আছেই সেই ডায়লগ, ‘দুগগা, আমরা থাকব না, কাজটা কিন্তু থেকে যাবে।’ এক মাতাল তাঁর বউকে এ কথা বলছে ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’তে। সেই মাতালের নামই নীলকণ্ঠ বাগচী, কোলকাতার ব্রোকেন ইনটেলেকচুয়াল।’ অর্থাৎ রাজশাহীর ঋত্বিক ঘটককে মনে থেকে যাচ্ছে আমাদের। সেদিন রান্নাবান্নার জন্য আমাদের কিনে নিয়ে যাওয়া বড়ো বড়ো হাড়ি-ডেকচি আমরা অত তাড়াহুড়োয় ফেলে এসেছি নদীর ওপারে। কিছু পেলে কিছু তো হারাবেই। তাই না?

আমি নিমকি চিনতাম, প্রচুর খেয়েছিও। ঝিনেদার নিমকির টেস্ট খুলনায় পাইনি। খুলনার নিমকির টেস্ট যশোরে পাইনি। আবার ঢাকায় এসে যে নিমকি খেয়ে থাকি, তাও একটু আলাদা। খুব যে আলাদা, তাও না। তবু একটু একটু আলাদা, স্বাদবৈচিত্র্যে। কিন্তু কাঁটা গল্পে নিমকপারার কথা বলা আছে। নিমকিই কি নিমকপারা? একদিন ফোন করি কথাসাহিত্যিক বন্ধু আহমাদ মোস্তফা কামালকে। কামাল বলল, ‘একই। গঠনে সামান্য আলাদা।’ সেই নিমকপারা তৈরি করে স্বপ্নারানী দাস। ভূতের গলির মহল্লার লোকেরা এসে স্বপ্নার হাতে বানানো চা খায়, নিমকপারা খায়। খুব সুস্বাদু নিমকপারা খেয়ে প্রশংসা করে তারা। কিন্তু এই চা বা নিমকপারার খেতে খেতে তাদের মনে সন্দেহ হয়, এরকম নিমকপারা তারা আগেও কি খেয়েছে, এই বাড়িতেই? এই সন্দেহের কারণ ছবিতে পরিষ্কার করে দেখানো হয়েছে।


p 21. 3

নদীপাড়ে আমরা কি ড্রোন উড়িয়ে মোবাইল ফোনের মনিটর দেখছিলাম?


কাঁটা ছবিতে আজিজ ব্যাপারীর বাড়িই একটা অন্যতম ফ্যাক্টর। এমন কি হতে পারে, আদতে ব্যাপারী বলেও কেউ ‘নেইক্কা।’ ব্যাপারী যদি না থাকে তাহলে তাঁর কাজের বুয়া নিজামের মা আসে কোত্থেকে? ভাড়াটিয়া সুবোধ-স্বপ্নাই বা কোত্থেকে আসে? তাইলে তো তুলসীগাছও ‘নেইক্কা।’ হয়তো কুয়াও নেই। কুয়ার মধ্যে কেউ মরে ‘নেইক্কা।’ এবং মহল্লাবাসি কি তাহলে আছে? সেলুন ঘরটা আছে? সেলুন ঘরে তো একাধিক সিকোয়েন্স, একাধিক চরিত্র, তাহলে তারা থাকবে না কেন? সেই চরিত্রদেরই তো কেউ কেউ আসে আজিজ ব্যাপারীর বাড়িতে। বাড়িতে একটা বিরাট উঠোন। উঠোনের একপাশে একটা পাতকুয়া। পাতকুয়ার অপজিটে পাতাবাহারসহ আরও কিছু ‘জঙ্গল-মঙ্গল’ গাছগাছালি। সেই গাছেরই ছত্রছায়ায় আছে একটি তুলসীগাছ। তুলসীগাছের গোঁড়ায় মাটি দিয়ে লেপে দেওয়া। সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানো হয়। ডাকে কবুতর, ডাকে বিড়াল, ডাকে ঘুঘু। ব্যাপারী একলা মানুষ। কিছুটা দূর থেকেই তাকিয়ে দ্যাখেন নিজের পরিপার্শ্ব। সুবোধের দিকে বিশেষ খেয়াল না করলেও যুবতী বউ স্বপ্নারানীর দিকে কি তাঁর নজর নেই? তাহলে ব্যাপারী অ্যাবসার্ড, বাড়িটা অ্যাবসার্ড, সুবোধ-স্বপ্না অ্যাবসার্ড—এরকম ভাবনাই তো অ্যাবসার্ড। অর্থাৎ বাড়ি আছে, সুবোধ-স্বপ্না আছে, আজিজ ব্যাপারী আছে। ছুটা বুয়া নিজামের মা আছে। তুলসীগাছ আছে।


p 21. 11

ভূতের গলির বাড়িঅলা আজিজ ব্যাপারী দাঁড়িয়ে আছেন বাড়ির ছাদে


আমরা দেখতে পাই, ১৯৮৯-৯০ সালের সুবোধচন্দ্র সিনেমা হলের প্রজেকশন মেশিন চালায়। ৩৫ মিলিমিটার ক্যান চালানোর শব্দটা আমাদের মনে থাকে। এখন অবশ্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ধাক্কায় ৩৫ মিলিমিটার ক্যান ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু কাঁটা যেহেতু ১৯৮৯-৯০ সালের গল্প, আর সুবোধও চাকরি করে সিনেমা হলে, তাই ৩৫ মিলিমিটার ব্যবস্থা কাঁটার ভেতরে সক্রিয় সচল দেখা যাবে। নতুন প্রজন্মের দর্শক দেখতে পাবে ব্যাপারটা। আর সিনিয়র প্রজন্মও মেমোরাইজ করতে পারবে। মজা হবে। আবার ১৯৮৯-৯০ সাল থেকে গল্পটা একটু ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে যাবে আমাদের, ১৯৭১ সালে, তখনকার সুবোধচন্দ্রও সিনেমা হলে চাকরি করে, সিনেমার টিকিট বিক্রি করে। তখন হয়তো ‘বানাজারান’ উর্দু ছবিটি চলছিল। ১৯৬৪ সালে চলছিল উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘সপ্তপদী।’ কলকাতার বাংলা সিনেমা বাংলাদেশের হলে বৈধভাবেই চালানো হতো আগে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কাঁটাতে উপস্থিত আছে ১৯৬৪ সাল। তাই ‘সপ্তপদী’ দেখানো হচ্ছিল মুকুল সিনেমা হলে। ১৯৬৪ সালের হিন্দু-মুসলিম রক্তারক্তির সময় মুকুল ব্যানার্জি তাঁর ‘মুকুল সিনেমা’ হল বিক্রি করে দিয়ে কলকাতায় চলে যান। যিনি কিনে নেন, তাঁর দেওয়া নামেই পুনরায় হলের নামকরণ করা হয় ‘আজাদ ম্যানশন’ সিনেমা হল নামে। রাইছাবাজার থেকে সদরঘাটের দিকে যে রাস্তাটা জনসন রোড বলে পরিচিত, এখনো ওই রোডেই, সিএমএম কোর্ট বিল্ডিংয়ের অপজিটে দাঁড়িয়ে আছে আজাদ ম্যানশন সিনেমা হল। খুবই পুরোনো একটি সিনেমা হল। কী, সিনেমা ডি প্যারাডিসোর কথা মনে পড়ল? না রে ভাই, এই দেশ অতটা সিনেমার দেশ না, নইলে গুলিস্থান হল ভেঙে ফেলা নিয়েও আরেকটি সিনেমা না হোক, একটি গল্প অন্তত লেখা হতে পারত। তা তো আমার চোখে পড়েনি। একটা থিয়েটার বা সিনেমা হল থাকা না থাকা নিয়ে সংবেদন তৈরি হবে আমাদের মনে, আমরা কি তেমন জাতি হয়ে উঠেছি আজও? প্যারাডিসো তো ইটালিয়ান বাস্তবতা, বাংলাদেশ ওই লেভেলে পৌঁছুবে কখনো? হয়তো পৌঁছুবে। কবে? তা আমার জানা নেই। আর্ট আমাদের অত উৎসাহিত করবে, আমরা সেই অনুভবের জায়গাতেই পৌঁছুতে পারিনি। এখনো আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের বড়ো একটা অংশ রাস্তায় ‘অমুখ ভাই জিন্দাবাদ’ ‘তমুখ ভাই জিন্দাবাদ’ করেই তারুণ্য খরচ করে। শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান-দর্শন-চিকিৎসা-সমুদ্র-মহাকাশ নিয়ে ভাববার সময় আসেনি এখনো আমাদের তারুণ্যের। অতএব, জাতির পিছিয়ে না থাকার, দাস হয়ে না থাকার তো কোনো কারণ নেই।


p 21. 15

শ্রীমতী ডায়না, এই মহিলা বিড়াল দেখেছে কাঁটাতে কি কি ঘটেছে


কাঁটার শুটিং নারিন্দায় শেষ হয়ে আসছে। আর কয়েকপর্ব আমরা নারিন্দায় শুটিংয়ের জন্য আছি। এরপর চলে যাব নারিন্দা থেকে। কাঁটা টিম ফিরে যাবে যে যার ঠিকানায়। আমি মগবাজার ফিরে যাব। মগবাজার থেকে যাব হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্টে। তারপর আরও কিছু আস্তানা বদলের পর আমি পুনরায় যখন নিউ এলিফ্যান্ট রোড ফিরে যাব, কাঁটা সম্পাদনা শুরু হবে। সম্পাদনার পর কাঁটা সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবো পুনরায়। তারপর আমার মামলা নিষ্পত্তি হবে। কাঁটা ডাবিং শুরু হবে। ডাবিং হবে একশো সাতজন ক্যারেক্টরের। ডাবিংয়ের পর সাউন্ড শুরু হবে। সাউন্ডের লেজ ধরে হবে গান রেকর্ডিং। গান, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, অ্যানিমেশন, কালার কারেকশন ও সাউন্ড মিক্সিং করার মধ্য দিয়েই কাঁটা নির্মাণযাত্রা সমাপ্ত হবে। ছবি সেন্সর বোর্ডে যাবে। ছবি রিলিজ হবে। এখন আমরা আছি গান রেকর্ডিং ও সাউন্ড নির্মাণে। কাজ তো আর বেশি নেই। এই যে শুটিংয়ের পর এত এত কাজ—এসব কীভাবে সম্পন্ন হলো বা হচ্ছে, জার্নি অব কাঁটায় সেসব চলে আসবে। নারিন্দা থেকে চলে আসার পর দেশে করোনা আসবে, আমার মামলার কথা আসবে, কাঁটার ফান্ডিং নিয়ে কথা হবে, কীভাবে এত টাকার সংস্থান হলো? বাদ যাবে না একটা শিশুও—থিয়োরিতে যদ্দুর সম্ভব, যতটা মনে পড়ে—পর্বে পর্বে তুলে ধরা হবে ‘শ্রী’তে প্রকাশিত জার্নি অব কাঁটাতে। ছবি রিলিজের সময়েই এই জার্নি আরেকটু সম্পাদনা করে বড়ো সাইজের একটা বই আকারে প্রকাশ করা হবে। দু-তিনজন প্রকাশক এরই মধ্যে আমার সঙ্গে কথাও বলছেন জার্নি অব কাঁটাকে বই হিসেবে প্রকাশের জন্য। আমি বলেছি, আচ্ছা। লেখাটা আগে শেষ হোক। প্রডাকশন মান খুব ভালো করতে হবে—এই হচ্ছে শর্ত। পাঠকের স্বার্থে এ শর্ত। বইতে চারকালারে প্রচুর ছবি ছাপা হবে। এ ছাড়াও কাঁটা স্ক্রিপ্টও বই আকারে প্রকাশিত হবে। সেই বইতেও প্রচুর ছবি যাবে। আবার আমার মামলা ও গ্রেফতার সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে একটি পুস্তিকা করা হবে, সে পরিকল্পনাও হয়ে আছে। আর কাঁটা ছবিটা তো দর্শকের মুখোমুখি হতে তখন বেরিয়ে পড়বে। কাঁটার গান যারা গাচ্ছেন, তাদের নিয়েই কিছু গানের শো করা হবে সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভেনুতে। মহাপরিকল্পনা জমে আছে। কিছুই বিফলে যাবে না, কাঁটা জার্নির, একথা আপনাদের মনে করিয়ে দিলাম।

আপাতত পড়তে থাকুন। জার্নি অব কাঁটা পড়তে পড়তে আপনিও কাঁটার একজন টিম মেম্বর হয়ে উঠতে থাকবেন হয়তো, আপনাকে আমি খুঁজে নেব। আপনিও খুঁজে পাবেন আমাকে বা কাঁটা টিমকে। আমরা মিলিত হবো। ওই যে, মিলিবে মেলাবে ব্যাপার আছে না? ব্যাপারটা তাই হবে। সেদিকেই যাচ্ছি আমরা। ‘আমরা কারা?’

‘আমরাই তো ওরা।’

‘ওরা আমরা হলে আমরা কারা?’

‘আমরাই তো ওরা।’

‘আমরা’ আর ‘ওরা’ নিয়ে তো প্যাঁচের শেষ নেই। মনে পড়ল, কাঁটাতে এরকম একটি দৃশ্যই আছে। আপাতত বিদায় নিচ্ছি এই পর্ব থেকে। পরের পর্বে পর্যবেক্ষণ রাখুন। ঠিক আছে?


আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ১ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ২য় পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৩য় পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৪র্থ পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৫ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৬ষ্ঠ পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৭ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৮ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৯ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ১০ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১১
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১২
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৩
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৪
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৫
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৬
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৭
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৮
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১৯
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ২০


কাঁটা প্রোডাকশন ফটোগ্রাফি : হোসেইন আতাহার

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১ ডিসেম্বর, ১৯৭২, ঝিনাইদহ। বেড়ে ওঠা, বসবাস:  ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা ও ঢাকা। একাডেমিক (সর্বশেষ) পড়ালেখা: চারুকলা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রন্থ প্রকাশনা: কবিতার বই কয়েকটি, গদ্যের বই কয়েকটি। সম্পাদিত গ্রন্থ: ২টি। ছবি নির্মাণ: ‘ব্ল্যাকআউট’ (২০০৬) আনরিলিজড। ‘রাজপুত্তুর’ (২০১৪), ‘কাঁটা’ (২০২৩) । পেশা: আর্ট-কালচার চষে বেড়ানো।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।