জটিল জেনারেশন
তুমি আমার চেয়ে আধুনিক
কারণ, তুমি কবিতা লিখ না।
তোমার চেয়ে সে আরো আধুনিক
কারণ, সে কবিতা বোঝে না।
তোমাদের চেয়ে তারা আরো আধুনিক
কারণ, তারা কবিতাই পড়ে না।
তাদের চেয়ে তাহারা আরো, চরম আধুনিক
যাহারা— চোখ উল্টান, কবিতা!
এখনো কেউ লিখে!
ঘাসের ঢিবির গভীর থেকে
সন্ধ্যা নামতে না নামতেই
মাছের কপকপ মিউজিক বাজতো যে গাঙে
তার পাড়ে মাঝে মাঝে গিয়ে বসে থাকে
মায়ের ছোট সন্তান।
এই গাঙে মাছ ধরতো মামুন। মা তা রান্না করতো।
ঝাল তেল নুন কখনো বেশি বা কম হতো না।
মামুন ঐসব স্বাদ ও ঘ্রাণের লোভে
গাঙের পাড়ে এখনো গিয়ে বসে থাকে।
যেখানে বসে থাকে তার পিছনে
ঘার ঘুরালেই ক্ষেতের কোনার ঘাসের ঢিবির গভীর থেকে
কে যেনো বলে— পুত রাত জাগিস না।
যা, ঘুমা গিয়া।
আমার কবিতা
চার কোনায় চার বাঁশ কুপে
দুই পাশের মাথা বরাবর
কিঞ্চিৎ লম্বা আর তারও চেয়ে
সরু দুটা বাঁশ ঝুলিয়ে দিয়ে
তার ওপর শনের দুটা চালা আড়াআড়িভাবে
খাড়া করিয়ে দিলে তৈরি হয় যে শয়ন-স্বর্গ
আমার কবিতাও তাই।
ইট-পাথর-মার্বেল-গ্রানাইট সজ্জিত প্রাসাদতুল্য
কারুকার্যে পাবেন না আমাকে।
আমার কবিতা—
বছর বছর ছাওনি দেয়া আদি-বাংলার প্রান্তিক
শনের ঘর।
হাওরের বাতাস চরের বাতাস
এ বেড়া দিয়ে ঢুকে ও বেড়া দিয়ে বেরিয়ে যায়
আমি তার মায়া ও বিভ্রম নিয়ে জগতমুখী হয়ে
শুয়ে থাকি, থাকছি…
বিরাটের বিরাট
বাবা মানে বারবার চেইন পরে যাওয়া
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন বাইসাইকেল।
চেইন তুলে নতুন উদ্যমে প্যাডেল মারার নামই বাবা।
মা হচ্ছেন চিরকালের আলগোনা, রসুইঘর।
কালি ও কালিমা, বাসি ও গান্ধা
নিজের জন্য রেখে
শরতের সব শুভ্রতা দিগন্তের দিকে ছড়িয়ে দেয়া
নাজুক নতমুখীর নাম মা ।
মাঝখানে আমারা হচ্ছি ফটোগ্রাফার।
ভাবুক। চিন্তক। কবি। নারীবাদ। বিপ্লব।
আমরা বিরাটের বিরাট।
হাশেম এন্টারপ্রাইজ
আমি মদন রোডের হাশেম এন্টারপ্রাইজ।
গণেশের ঢালু জমিন জানে
জানে হাঁসকুড়ি জানে জয়পাশা
জানে বয়রালা ও বান্নিতলা, হাশেমের নাম।
২.
আমার তখন ব্রিজ ছিল না। ইট সুরকি পিচ ছিল না।
আমার চাকার ধুলায় আন্ধা হয় নাই
এমন কোনো বটের বাপ ছিল না পথের দুধারায়..
৩.
ছিল শুধু পা, বারমাসি সচল পা…
তাদের কোটি কোটি পদচ্ছাপের উপর দিয়ে
গভীর রাতে তীব্র হর্ন বাজিয়ে চলে যায়
সুদূরের নাইট বাস!
পলায়নপর পথ
যখন পালাতে চেয়োছো
সফল হওনি
যখন পালাতে পেরেছো
তখনো সফল হওনি।
পালাতে পালাতে বহুদূর গিয়ে
কূলহীন এক নদীপাড়ের নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়
আবিষ্কার করেছো
ফেলে যেতে গিয়েও কিভাবে যেনো আমাকে
সঙ্গেই নিয়ে গেছো।
আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটেছে।
বিপরীতমুখী পলায়নপর পথ শেষ হবার পর দেখলাম
আবার আমরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে!
জিতসোমা : নয়
কামিনীর ঝোপ থেকে জানালায়
হামলে পড়ছে হাওয়ার পর হাওয়া ঘ্রাণের পর ঘ্রাণ—
এমনই খাপে খাপে ঠাট করা রাত।
ডানা থেকে যখন সরে গেল
সমর্পণাচ্ছন্ন পালকের শিহরণ
আধোভেজা কেশরের আড়াল থেকে যখন
………………………..আমিও গুটিয়ে নিলাম তৃষ্ণা—
মনে হচ্ছিল দমবন্ধ হিম একটা মহাকাল
কত যুগ যেন থমকে থেকে
মোমের আলোর পাশ ঘেষে
কোথায় যেন মিলিয়ে গেল হঠাৎ!
আমি পাথর থেতলানো আহত প্রাণীর মতো
একটু সোজা হয়ে কী যেন বলতে চাইছিলাম—
যখন বলছিলে— ‘মানুষ কত আজব, না?’
চেয়ার
কেউ এসে বইসা পড়তে পারে— এই ভয়ে
কেউ-ই ছাড়ছেন না চেয়ার
ত্যাগের বেগ নিয়েও প্রকৃত সুখ থেকে তারা
বঞ্চিত আজ এই একমাত্র চেয়ারেরই কারণে
একমাত্র চেয়ারকেই তারা এই জীবনে মেনেছেন সার
তারা পশ্চাৎ দেবেন তবু ছাড়বেন না চেয়ার!
আমি
০৩.
গ্রীষ্মে মাপো
আমি, মামুন খান।
পৌষে মাপো
আমি, মামুন খান।
তোমাদের ওয়েদার অনুযায়ী চেঞ্জ হওয়া মাল আমি না।
আমি, মামুন খান।
০৯.
মনকে তো আমি অনেক নাম ধরে ডাকি।
কখনো চুনিপুঁটি। কখনো রাঘব বোয়াল।
কখনো বর্ষার খাল।
কখনো ধুমা দেয়া হেমন্তের গোয়াল।
আমি আসলে আমার, বেখেয়াল রাখাল!
শেষ ঋতুর হাওয়া
বেড়ায় আড়াল হয়ে আছে বাগান
বাগানে গোপন হয়ে আছে ফুল
বেড়ার আশপাশে উড়ছে একজোড়া ভ্রমর
বাগান আর ভ্রমরের মাঝখান দিয়ে বইছে
শেষ ঋতুর হাওয়া
ভ্রমর জানে আড়াল-মধুর মাধুরী বেশি:
বাগান কী জানে বেলা পড়ে গেলে
………………………..তৃষ্ণা যে থাকে না ভ্রমরের!
জন্ম ২৫ আগস্ট ১৯৭৮, নেত্রকোনার মদন উপজেলার নায়েকপুর গ্রামে। একই উপজেলার হাজরাগাতীতে তার স্থায়ী বাস। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক খান ও মা রহিমা আক্তার খানম দুজনেই প্রয়াত। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। স্ত্রী নিশাত আরা খান পান্না ও পুত্র পরম খানকে নিয়ে ঢাকায় তার ছোট্ট সংসার। পড়াশোনা করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জ্যেষ্ঠ প্র্রযোজক হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘জল ও জলপাই’ (কবিতা ২০০৮), ‘বাইরে দুপুর ভিতরে ভৈরবী’ (কবিতা ২০১১), ‘জলসায়ররে পলি’ (২০২০), ‘বরুণতলার বাওয়ানি’ (২০২৩), ‘হট্টিটিগুছ’ (সম্মিলিত, ২০০০)। সম্পাদনা: ‘শূন্যদশকের প্রেমের কবিতা’ (যৌথ)। সম্মাননা : জলসিঁড়ি সম্মাননা, মুক্তাগাছা সাহিত্য সংসদ সম্মাননা।