জ্বর ১
বাংলা সিনেমায়
বোতল ভাঙার দৃশ্য দেখে
চোখ সরানোর বয়স তখনও হয় নাই।
তোমাকে চিনতাম। তোমার মাকেও।
সিনেমার দৃশ্য দেখে চোখ সরানোর বয়সে
তোমার মায়ের পাশে দাঁড়ায়ে থাকা এক স্কুল টিচারকে চিনতাম। মায়ের প্রেমিক।
তুমি উনাদের প্রেমের ভিতর টিফিন ক্যারিয়ারের ভূমিকায় থাকতা, প্রায়ই সময়।
আর তিনজনেই ঘুরতে গেছিলা ডোমার ফরেস্ট।
বহুদিন পর ওই ফরেস্টের এক ড্রেনের পাশে
একটা ছেঁড়া কামিজ দেখে আমি বাড়ি ফিরছিলাম।
সেই রাতে আমার খুব জ্বর আসছিল।
জ্বর ২
জ্বরের ধারণা বদলে গেলে
মানুষের ঘন ঘন জ্বরতেষ্টা পায়
যদি সে জানে বৃষ্টি আসে
তর্কের সম্ভবনা নিয়ে
তার ভিজতে ভালো লাগে।
প্রেম যখন খুবলে খাচ্ছে মগজ
শিরা-উপশিরা, আলাদা করছে হাড়
তখন একবার জ্বর আসবে সঙ্গত কারণে।
বাকি জীবনে জ্বর কখনও একা আসবে না
সাথে থাকবে নস্টালজিয়া, রোমান্টিসিজম।
প্রেমিকের জ্বর এলে
তুমি একবার ক্লাস ফাঁকি দিও
বন্ধু
পুরোনো গানের সুর ধরে হাঁটলে ভেসে উঠে বন্ধুর মুখ। দূরে, নদীর ওপাড়ে আছে যে গ্রাম সেই গ্রামে বন্ধুরা থাকেন। পাড়ার পুকুরে কেবল হাত পায়ের ক্ষমতা প্রমাণ আর জীবনকে ক্রমশ উৎসবের উপলক্ষ্য ভেবে আনন্দ পাওয়ার জন্য যেটুকু সাঁতার শিখেছি তা দিয়ে নদী পাড়ি দেওয়ার দুঃসাহস দেখাতে ভয় পাই। ভাঁটফুল আর কাশের তুলোয় পথ ঢেকে যায়।
স্মৃতিদের শরীরও অমন কাশের তুলোর মতো স্পর্শকাতর, ছুঁইলেই সরে যেতে থাকে।
তুলোর বুকে আঘাত করব না ভেবেই তো সমস্ত জীবন মাথার জন্য বালিশ কে ভেবেছি নিরাপদ।
শব্দের সাথে কল্পনার যে সম্পর্ক তার ভিতর বন্ধুদের মুখ সব থেকে বেশিবার আসে। যেহেতু শিক্ষা হয়ে গেছে কল্পনা কলহপ্রবণ, শান্তিবাদে থাকি।
বন্ধুদের বাড়ি নদীর ওপাড়ে, পুরোনো গানের সুরকে জাদুকরের চাদর বানিয়ে ওইপাড়ে যাই।
বিতৃষ্ণার বান্ধবীরা
বিতৃষ্ণা
ভেবেছ তুমিই একা
আর সব
সাজানো বাগান
যেন হাসি হাসি
সুখ সুখ
মৃদূ জ্বরে
জলপট্টি।
বেসিনের আয়নায়
অপরাধবোধসহ
আর যত সুখেদের
ভেবেছ ঘৃণায়
তাহারাও
তোমার মতোই
দুই পা ফাঁক করে
একা বসে আছে।
বিতৃষ্ণা
এইখানে বসো
জোরে জোরে শ্বাস নাও
বুকে হাত রাখো
খুব সাবধানে
তাকে ডেকে আনো
যে গেছে শ্মশানে।
বিতৃষ্ণা
কেন যে ভুলেছ
সেই কানকথা
দুঃখই লক্ষ্য তোমার
মানুষ তো কেবলই
উপলক্ষ্য মাত্র।
উপহার
প্রথম চিঠিতে তোমাকে যে নদীটা দিয়েছিলাম তার বুকে চর জেগেছে। বিলুপ্তির আগেই মাছের জাত সংরক্ষণ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর।
তোমার জন্য যে জঙ্গল রেখেছিলাম, প্রকল্পবিদের নকশায় কাটা পড়ে গেছে সব। খেলনা পাখির কারখানায় বসে
তোমাকে আমি শেষ চিঠিটা লিখছি।
এই চিঠিতে তোমাকে একটা বরফকল সমেত মর্গ পাঠালাম।
খেয়াল রাইখো, লাশগুলোর যেন ঘুম না ভাঙে; পঁচে না যায়।