বুনো আঠালির গান ০১
কোথাকার কোন গান দরজায় কড়া নাড়ে এসে
সে কি জানে, কী স্তব্ধ প্রদাহ এ হৃদয় ধরে আছে—
সহস্র বছরব্যাপী? পাথর, ডানাভাঙা পাথর—
পালাতে পারনি দেহভারে!
ঘাসের কবিতা পড়া শেষে, যদি তুমিও উড়তে
শিখে যাও, তুমুল হাওয়ায়—আকাশে ও মেঘে
মার্জিন না-মেনে যদি ওড়ার সাহস পেয়ে যাও!
জমা রেখো সে গানের শেষ প্রতিধ্বনি—রুহের ভান্ডারে
বুনো আঠালির গান ০২
জীবন যখন সহজ কিছুই নয়
ছদ্মবেশী সাপের ধেয়ে চলা
নিজের ভাষা-ই জটিল ঘোরতর
রক্তমাখা চাবুক নিয়ে খেলা
উড়ছে কথা বুনোলতার পাশে
গাইছে পাতা মাতাল হাওয়ার স্বরে
ঊর্ণাজালে সূর্য ঝুলে আছে
বিস্ময়ে মুখ আসছে আঁধার করে
আগুনরঙা দুপুর নাচে পিঠে
আরও গভীর ধুলাক্রান্ত চোখ
রাক্ষুসে দিন তরতরিয়ে এলে
চন্দ্রাহত আকাশ নিবিড় হোক
যাপন যখন সহজ মোটেই নয়
সাপলুডুতে ডুবিয়ে রাখি ধ্যান
ঘুম-মোড়ানো রাতের শহর ধরে
সৃষ্টিছাড়ার চলছে কারাভ্যান
নীরবতার প্রাচীন বানানে
স্ট্রবেরির গায়ে বৃষ্টি পড়ল। ধুয়ে গেল রোদ, ধুলো—
আরবসমুদ্রের জলে তুমি ফেলে এলে শেষ রুমাল
মধ্যাহ্নের খা খা রোদ, সমুদ্রঘামমাখা শামুক
নীরবতার প্রাচীন বানানে লিখে চলেছ বিচ্ছেদ
ছায়ামনীষায় অবাক সেঁটে দিয়েছ উড়ুক্কু মাছের চোখ
সেখানে নীলের জাদু, মনউচাটন ডাক সুষুম্না বেয়ে ওঠে
সান্দ্রনিন্দুকের মুখে ঝড়ের প্রগলভতা
মদের বুদবুদ তুমি ঘরে নিয়ে এলে
এখন তাবৎ ঈর্ষার অন্ধকার আমাকে ঢেকে দিচ্ছে!
প্রান্তরের সেলাই খুলে যায়। উন্মুখ দূর গাঁয়ের ছবি
তুমি দাঁতরাঙার ঝোপে উপুড় করেছ সমস্ত রগড়—
যতিচিহ্ন ভুলে যে ভাষায় শিখেছ রাত্রিসংলাপ
কামের রাজহাঁস যেভাবে সাঁতার শেখে তোমার ভেতরে
তুমি কি তার সৌন্দর্যবিভব থেকে কেড়ে নাও দুদণ্ডের আয়ু?
পিছুডাক
ফিরে এসো! মন্থর ট্রেনে তীর্থফেরত যাত্রীর মতো
তোমার গল্পগুলো এবার শুনব ভেবে মনস্থির করেছি
ধর্মে আস্থা নেই। আস্থা নেই এই রোদের উদরে বসা ছায়াময়তায়
শুধু দূর সুদূর হবার আগে একবার খরবায়ু উচাটন মনে
তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে চাই দুদণ্ড—
মুখোমুখি হতে চাই প্রেম আর অপ্রেমের
অফুরন্ত পতঙ্গ আমাদের সময় বেয়ে উঠে পড়ার আগেই
ঝরিয়ে দিতে চাই সকল ফিসফিস
প্রিয়তম, সু
বহুদিন বোকা বোকা ঘোরে
একদিন হেঁটেছিলে—শরীর দূরত্বে রেখে
গামারি ফুলের মতো পেয়েছি তোমাকে
হাতের তালুতে, চোখের সীমায়
চটুল নদীর স্বরে…
বহুদিন, চন্দনবনের দিকে
আমার হৃদয়, কীটদষ্ট পাতা
চোরাসূর্য আলো ফেলে গেছে
প্রস্তরখণ্ডের পাশে, পিঁপড়ের নীরবতা
তোমাকে পেয়েছি একটিমাত্র দিন
পেয়েছি কি? সন্ধ্যার বাতাসে
কুঁড়িমেলা প্রেম—তোমার হাসিতে
অপ্রস্তুত বিরহ, বিভ্রমে হাসে
বহুদিন, বুকের ভিতর হাবাগোবা প্রেমে
নিজেকেও মেলে দিয়ে—
হেঁটেছি দুজন সমুদ্র-বাহাসে
জন্মান্ধ তিমিরে দেখে ভয়
দগ্ধ গল্পে আমরা সমায়াতীত ঘোড়া
আছে শস্যাদি মাড়িয়ে যাওয়া ভুল
এটুকুই অসম্ভব বুনোসুখ
হতে পারে!
সীমালঙ্ঘন অথবা ক্ষুদ্র পরাজয়…
কবি ও ঔপন্যাসিক। জন্ম ৮ জুলাই ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। পেশায় তিনি একজন উন্নয়নকর্মী। প্রকাশিত গ্রন্থ : লিলিথের ডানা [কবিতা, চৈতন্য, ২০১৬], কয়েক লাইন হেঁটে [কবিতা, জেব্রাক্রসিং, ২০১৮], ময়ূরফুলের সন্ধ্যা [কবিতা, বাতিঘর, ২০১৯], সুবেহ তারা [কবিতা, তবুও প্রয়াস, ২০১৯], বিস্ময়চিহ্নের মতো [উপন্যাস, বাতিঘর, ২০২০], অনন্তকলহ [কবিতা, বাতিঘর, ২০২২]।