মার্গারেট টেইলর-বারোজ (১৯১৫-২০১০) আমেরিকান চিত্রশিল্পী, লেখক, কবি, শিক্ষাবিদ এবং শিল্প সংগঠক ছিলেন। জন্ম আমেরিকার লুজিয়ানায়। তিনি DuSable Museum of African American History (প্রাক্তন Ebony Museum of Chicago) এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। আমেরিকায় আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিকের শিল্প-সাহিত্য বিকাশের একজন অন্যতম অগ্রণী। পড়াশোনা করেছেন শিকাগো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: Jasper, the drummin’ boy (১৯৪৭), Celebrating Negro History and Brotherhood: A Folio of Prints by Chicago Artists (১৯৫৬) , What shall I tell my children who are Black? (১৯৬৮), Africa, my Africa (১৯৭০)। পেয়েছেন প্র্রেসিডেন্ট হিউম্যানিটারিয়ান এবং পল রবসন পুরস্কার। কবিতাটি ‘What shall I tell my children who are Black?’ বই থেকে থেকে নেওয়া হয়েছে।
আমার কালো সন্তানদের আমি কী জবাব দেবো
(এক আফ্রো-মার্কিন মায়ের আত্মানুভব)
আমার কালো সন্তানদের আমি কী জবাব দেবো
এই গাঢ় কালো ত্বকে বন্দিত্বের অর্থই বা কী
আমার আপনজন—আমার গর্ভের ফসল তাকে কী বলব
যখন যেখানেই চলেফেরে—কী সুন্দর ওরা!
অথচ কালো হওয়ায় সবকিছুতেই ঘৃণার শিকার তারা
খলনায়কেরা কালো—তাদের মন কালো।
কালো গাই দুধ দেয় না। কালো মুরগি ডিম পাড়ে না।
খারাপ খবর কালোতে প্রকাশ, কালো হলো শয়তান
শয়তান হলো কালো এবং অশুভ প্রেতের খাবার কালো—
সাদাদের দুনিয়ায় বেড়ে উঠা আমার প্রিয়জনদের আমি কী বলব
সব ভালো, বিশুদ্ধ, সুন্দর আর শোভনের প্রতিনিধি সাদা এখানে।
মেঘ সাদা, পুতুল সাদা, নিশ্চিত যে স্বর্গ—তাও সাদা,
সাদা আসনে বসা দেবদূতের সজ্জা সাদা,
কটন ক্যান্ডি, আইসক্রিম, দুধ, রোববারের পরিপাটি পোশাক,
স্বপ্নের ঘরবাড়ি, সুবৃহৎ বিলাসী ক্যাডিলাক গাড়ি,
এমনকি দেবদূতের খাদ্যও সাদা; সব—সবকিছু সাদা।
কালো, পুরু ঠৌঁট, ভোঁতা নাক আর মাথায় নিগ্রো চুল বলে
খেলার সাথীর গালি খেয়ে আমার সন্তান
কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলে
তখন তাকে কী বলে দেবো সান্ত্বনা আমি?
‘হ্যাঁ। তা ঠিক। তবে তা কম সুন্দর আর কম প্রিয় না’
ওর চোখ মুছে দিতে দিতে ফিসফিস করে যখন বলব ওকে
তখন কী ভাববে ও?
কীভাবে উঁচুতে তুলে ধরব ওর শির?
কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চোখে ওর কাঁধ সমানে খাপ খাওয়াব?
কীভাবে ওর নিজের জ্ঞানের ওপর ওর ভরসা বাড়াব?
কীভাবে ওর নির্মল কালো ত্বক আর সৌন্দর্যের জন্য
ওকে অহংকারী করে তুলব?
একপেশে আইন আর অমানবিক কায়কারবারের দুনিয়ায়
তার শক্তি জোগাতে আমি কী করব
যে দুনিয়ায় জীবনের প্রতিকূলতা পেরিয়ে
নিরপেক্ষ ও মানবিক হবে সে
যেখানে তাকে টিকে থাকতে হবে।
তাকে তো টিকে থাকতেই হবে!
এই কালো শিশুর মাঝেই এমন প্রতিভা লুকিয়ে আছে
যে হয়তো আবিষ্কার করবে ক্যান্সারের দাওয়াই
বা উৎঘাটন করবে মহাবিশ্বের রহস্য ।
কেউ কী তা জানে?
তাই সকল মানবতার মঙ্গলের জন্য তাকে টিকে থাকতে হবে
অবশ্য টিকে থাকতে হবে তাকে—সে টিকে থাকবে
অবশেষে আমি গভীর উপলব্ধিতে
আমার কালো সংস্কৃতির শেকড় করছি পান,
হাঁটুতে মাথা গেঁড়ে মা-আফ্রিকাকে জেনে
আমার ঐতিহ্যের সত্যকে করেছি আবিষ্কার
যে সত্য অশ্রুত আর মুঝে ফেলা হয়েছে।
আমি বুঝেছি আমার কালো সন্তানদের আমার বলার আছে অনেক কিছু।
আমি গর্বিত কালোত্ব দিয়ে
আমি তাদের মাথা উঁচুতে তুলে ধরব
তাদের পূর্বপুরুষদের, তাদেরও পূর্বপুরুষদের
বীরত্বগাথা তুলে ধরে।
আমি তাদের অতীতের কথা স্মরণ করাব
রাজা রানিদের কথা—যারা নীলনদের উপত্যাকা শাসন করত
তারকারাজি আর গণিতের সূত্র আবিষ্কার করেছিল
যাদের শ্রমেঘামে গড়ে উঠেছে মহাদেশগুলোর সম্পদ
আমি তাকে এগুলো বলব
আরও বলব অনেক কিছু
আর তার ঐতিহ্য হবে অস্ত্র আর তার ঢাল;
যা তাকে কোনো কোনো যুদ্ধ জয়ে শক্তি জোগাবে;
যে যুদ্ধের মুখোমুখী হয়তো তাকে হতে হবে।
এই সব ইতিহাস ম্রিয়মাণ হয়ে যায়;
সন্তানদের তা স্মরণ করিয়ে দিতে আমি সবকিছু করব।
যেমন করে ওদের অন্ন আর বাসস্থানের জন্য নিজেকে করেছি উৎসর্গ।
যদি তাদের ভালোবেসে থাকি তাদের জন্য এগুলো করবই আমি।
কেউ আমার জন্য এগুলো করবে না।
নিজের জন্য অবশ্যই ঐতিহ্যের সত্য খুঁজে বের করে
ওদেরকে জানিয়ে দেবো। ওই সত্যের অস্ত্রে তাদের করব সজ্জিত।
তাই সামনের যে যুগ আসছে
আমার বিশ্বাস আমার সন্তানেরা—
তাদের সন্তানেরা আমাকে সম্মান করবে।
এটাই সত্য আর সেই সত্যই আমাদের দেবে মুক্তি!
সম্পাদক ‘লেখালেখির উঠান’ সাহিত্য পত্রিকা। অনূদিত গ্রন্থ: হাওয়ার্ড জিনের নাটক ‘এমা’ এবং আমিরি বারাকার কবিতা ‘কেউ আমেরিকা উড়িয়ে দিয়েছে’।