তিন তলার সিঁড়ি দিয়ে মজনু নিচে নামতে নামতে অস্ফুট স্বরে মাদারচোদ বলে গালি দেয়। বারবার দেয়। কাকে গালি দিলো নিজেও জানে না। জানতেও চায় না। তার এখন আনলিমিটেট গালি দিতে ইচ্ছে করছে। সে গালি হোক অন্যের উদ্দেশে অথবা নিজের উদ্দেশে। কিন্তু গালিটা তাকে দিতেই হবে। একটানা গালি না দিতে পারলে মজনুর শান্তি নেই। মজনুর মগজে গালি সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যেন সুযোগ পেলেই সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্যের মতো মার্চ করে বেরিয়ে যাবে। মজনু ফুঁসছে। তার ভেতরে অসহ্য অপমানের দায়। অপমানের প্রতিক্রিয়ায় ফোঁসফোঁস করতে থাকে অজস্র গালি। কিন্তু কয়েকটা গালি নিজের অনুমতি ছাড়াই মুখ থেকে বের হওয়ার পর সচেতন হয় মজনু। আরেকটা গালি পেটে দলা পাকিয়ে গলা দিয়ে বের হওয়ার আগেই সেটাকে আটকে দেয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় আর কখনো এখানে আসবে না। মজনুর পাশ দিয়ে নামতে থাকা মানুষ, উঠতে থাকা কৌতূহলি চোখ, প্লাস্টার উঠে যাওয়া দেয়াল কিছুই তার চোখে আটকায় না। তার চোখের মধ্যে আটকে থাকে নিজের গ্রাম। তেজদাসকাঠীর ইট বিছানো ঘুরানো প্যাঁচানো পথ। নিরিবিলি বয়ে চলে হোতাখাল। মাঝে মধ্যে ভেঙে যাওয়া পুরানো ব্রিজ। কিংবা খাল দিয়ে জোয়ারের দিকে চলে যাওয়া কুমারদের নৌকা। নৌকায় সাজানো মাটির হরেক জিনিসপত্র। যদিও মজনু এখন যে অবস্থার মোকাবেলা করছে তাতে এসব দৃশ্য তার সামনে আসার কথা না। তারপরও আসে। জোর করে মজনুর মধ্যে ঢুকে যায়। নতুন পশমের মতো কিলবিল করতে থাকে সারা গায়।
দশ-পনেরো দিন পার হওয়ার পরই নতুন সিনেমা দেখার ইচ্ছা হয় মজনুর। সেটা সিনেমা হলে চলা সিনেমা না। প্র্যাকটিকাল সিনেমা। যে সিনেমার টিকিট পঞ্চাশ টাকা নয় দুইশত থেকে পাঁচশত পর্যন্ত। তার মাথায় পোকারা কিটকিট করে কামড়ানো শুরু করে। সবকিছু ঝাপসা লাগে তার কাছে।
এই নিয়ে পাঁচবার এখানে এসেছে মজনু। যে কাজের জন্য এসেছে কোনোবারই সেটা ঠিকঠাক শেষ করতে পারেনি। বরং উল্টো কিছু বিতৃষ্ণা নিয়ে ফিরে গেছে ঘিঞ্জি আবাসস্থল বালুরমাঠ বস্তিতে। প্রতিবারই এখান থেকে বের হওয়ার সময় মনে মনে ঠিক করে এখানে আর আসবে না সে। কিন্তু দশ-পনেরো দিন পার হওয়ার পরই নতুন সিনেমা দেখার ইচ্ছা হয় মজনুর। সেটা সিনেমা হলে চলা সিনেমা না। প্র্যাকটিকাল সিনেমা। যে সিনেমার টিকিট পঞ্চাশ টাকা নয় দুইশত থেকে পাঁচশত পর্যন্ত। তার মাথায় পোকারা কিটকিট করে কামড়ানো শুরু করে। সবকিছু ঝাপসা লাগে তার কাছে। রঙের হাওয়া তাড়া করতে থাকে। সে হাওয়া বন্ধ করতে এই দেয়ালের রং খসে যাওয়া বাড়িটির বিকল্প কোনো চিকিৎসা জানা নাই মজনুর।
হোটেল চানপুরায় মজনু প্রথম এসেছিল বছর খানেক আগে। তার বাল্যবন্ধু শুক্কুরের সাথে। শুক্কুরের ঘরে বউ থাকার পরও সে অভ্যাসবশত প্রায়ই এখানে আসে। এবং এই আসাটা সে কোনো লজ্জা-শরমের ব্যাপার মনে করে না। বিশেষ করে বন্ধুর কাছে। শুক্কুরের কাছে গল্প শুনে শুনেই এই হলদে রঙের পুরানো বাড়িটির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। শুক্কুর বরিশাল শহরে সাত বছর ধরে ভ্যান চালায়। ভ্যানে করে বিভিন্ন শো-রুমের মালামাল ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। দিনে তিন-চারটা খেপ পেলেই শুক্কুরের কাজ বন্ধ। বেলস্ পার্কের উল্টো দিক দিয়ে কীর্তনখোলার পাড়ে চলে যায়। বস্তির শেষ প্রান্তে কবিরের মুদি দোকানে গিয়ে ফিস ফিস করে এক পুরিয়া নিয়ে সোজা নদীর পাড়। তারপর শুক্কুরকে আর কে পায়। তখন সে বেহেস্তের সিঁড়ি দিয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। শুধু উঠতেই থাকে। আর এই স্বার্গারোহন পর্বে প্রায়ই তার সঙ্গী হয় প্রিয় বন্ধু মজনু। সিঁড়িতে উঠতে উঠতে শুক্কুরের মনে থাকে না গত বছর জন্ম হওয়া তার তৃতীয় সন্তানের কথা। তার আগের বছর জন্মানো মেয়ে প্রিয়াংকার কথা। তারও আগের বছর জন্মানো শাকিবের কথা। আর এই তিন সন্তানের জন্মদাত্রী তার স্ত্রী সখিনাতেও তখন কোনো আগ্রহ থাকে না। অথচ এই সখিনাকে নিয়ে চিটাগাং থেকে পালিয়ে এসেছিল শুক্কুর। সাত বছর আগের সে গল্প এখন শুক্কুরের স্মৃতির ডাইরিতে শুয়ে আছে। ধুলো জমে গেছে সেসব দিনের প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
বিদেশ থেকে খালি পকেটে ফেরত আসার পর চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছিল মজনু। পাওনাদারদের বিরক্তিতে বাড়িতে থাকারও সুযোগ নেই। একেতো মা-বাবার জমি বিক্রি করা টাকা লোকসান দেওয়ার অভিযোগ। সাথে সাথে পাড়া-পড়শির ধার দেনার বোঝা। এসব নিয়ে বাড়িতে এক সপ্তাহও থাকতে পারেনি মজনু। দুবাই থেকে ভাঙা শরীর নিয়ে কোনোক্রমে দেশে আসার পরও তাকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। তখন দিনের আলোর মধ্যেও তার মনে হচ্ছিল গভীর অন্ধকার। চারদিকে অন্ধকারের তুফান দেখে তিন ক্লাস পড়া মজনু কোনো ডিসিশান নিতে পারছিল না। তখন বাল্যবন্ধু শুক্কুরের সাথে দেখা হলো তার। নিজের মনের কষ্ট কারো কাছে বলতে পারছিল না সে। একদিন বিকেলে মুনশিবাড়ির পেছন দিয়ে আড়াআড়িভাবে শুয়ে থাকা হোতা খালের পাড়ে বসে ছিল মজনু। হাতে আধ খাওয়া আলম বিড়ি। চোখের সামনে ভাটায় নামতে থাকা ঘোলা পানির দৌড়। এসব দেখতে দেখতে নিজের ছোট্ট জীবনের হিসেব মেলাতে চেষ্টা করছিল সে। ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু সাড়ে তিনলাখ টাকা ঋণের বোঝা। এই ঋণ কিভাবে শোধ করবে আর কিভাবে নিজের ভাঙাচোরা রোগাক্রান্ত শরীরের চিকিৎসা করাবে কিছু ঠিক করতে পারছিল না মজনু। পেছন থেকে কে যেন ডাক দেয়, কি রে মজনু না?
মজনুর ভাবনায় ছেদ পরে। চেনা কণ্ঠের উৎস খুঁজতে বিমর্ষ মুখে পেছন ফিরে তাকায় সে। দেখে বাল্যবন্ধু শুক্কুর।
মজনু মনে মনে খুব খুশি হয়। বলে, হয় দোস্ত। কোমনে গোনো আইলি?
দোকাছা দেওয়া লুঙ্গি ছেড়ে মজনুর পাশে দূর্বা ঘাসের ওপর বসে যায় শুক্কুর।
আরে দোস্ত আর কইস না। সোমেস্সার শ্যাষ নাই। আইজ এইডা তো কাইল ওইডা…
কথা শেষ না করেই মজনুর মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয় শুক্কুর, আরে তোর অবস্থা দেহি মরা মানষের লাহান অইয়া গ্যাছে! তুই না দুবাই গেছিলি? আইছো কবে? কি অইছে তোর?
মজনু আধমরা মানুষের মতো একটু নড়েচড়ে বসে। নিজেকে যতোটা সম্ভব শক্ত করে।
ওই আর কি! কপাল ফাডা থাকলে যেহেনেই যায় একই অবস্থা।
তারপর মজনু কোমরের পেছনে লুঙ্গিতে পেচিয়ে রাখা আলম বিড়ির প্যাকেট বের করে শুক্কুরকে একটা বিড়ি দেয়।
নে আগে বিড়ি খা।
শুক্কুর হাসে।
কোমনে যাও এহন?
হউর বাড়ি যামু। বউ রাগ অইয়া বাড়ি আইয়া পরছে।
মজনু একটু হাসার চেষ্টা করে।
ও। বউ থাকলে তো সোমেস্যা অইবেই।
তুই তো এহনো বিয়া ঠিয়া করো নায়। না?
না রে। কোনো রহম মইরা বাঁইচা আছি। আবার বিয়া!
শেষ শব্দটি উচ্চারণের সময় মজনুর ঠোঁটের কোনায় ছিল নিজেকে তাচ্ছিল্যের এক টুকরো হাসি।
কথা শুনে বন্ধু যে বেশ হতাশাগ্রস্থ সেটা ভালো করেই বুঝতে পারে শুক্কুর আলী। আন্তরিক গলায় বলে, তয় কি করবি এহন? কিচ্ছু ঠিক করছো?
তিন ক্লাস পড়া বিদ্যার জোর নিয়ে যে এই পৃথিবীতে তেমন কিছু করা সম্ভব না সেটা এত দিনে ভালো করেই বুঝেছে মজনু। ছোটোবেলা থেকে এমন কোনো কারিগরি কাজও শেখেনি যে ভালো কিছু করে রোজগার করবে। তাছাড়া তার শরীরের অবস্থাও তেমন খাটুনী করার মতো নেই। মজনু গলার স্বর কিছুটা নিচু করে বলল, কি করমু ক!
গ্রামের অবস্থা মোটেই অজানা ছিল না শুক্কুর আলীর। বয়স তিরিশ পাড় না হলেও এই জীবনে সেও দেখে ফেলেছে জীবনের টার্নগুলো। মরতে মরতেই আবার বেঁচে দাঁড়িয়েছে জীবনে। পোড় খাওয়া মানুষের দুঃখ যেন পোড় খাওয়া মানুষই বুঝতে পারে। শুক্কুর আলীও বন্ধুর দুঃখ বুঝতে পারে। বলে, ল মোর লগে বরিশাল। কী, যাবি?
মজনুর কাছে আর কোনো অপশন না থাকায় সে বেশিক্ষণ চিন্তা করার সময় নিলো না। আনমনে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।
কিন্তু! কি করমু ওহেনে?
এবার শুক্কুর আলী হাসল। অন্তহীন কুয়ায় পড়া প্রাণের বন্ধুকে ডাঙায় তোলার আনন্দ তার চোখে-মুখে। সে উচ্ছ্বাস ভরা গলায় বলল, আগে তো ল। হের পর এট্টা কিছু অইবেই।
সেদিন সন্ধ্যায় শুক্কুর আলীর এক কথার ওপরই চলে এসেছিল মজনু। প্রথম কিছুদিন কীর্তনখোলার পাড়ে বসে গাঞ্জায় টান দিয়ে সুখ খোঁজার চেষ্টা করেছে। আবার কখনো মাঝে রাতে নদীর পাড়ে বসে একা একা হাউমাউ করে কেঁদেছে। নিজের জীবনের এই বেহাল অবস্থার উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছে আল্লাহর কাছে। কিছুদিন পর বস্তিতেই একটা হোটেলে পেটেভাতে কাজ শুরু করেছিল মজনু।
এসব কথা প্রায় দেড় বছর আগের। জীবনকে উল্টেপাল্টে দেখে এখন কিছুটা ঠিক হয়ে দাঁড়িয়েছে মজনু। থাকছে শুক্কুর আলীর সাথে বালুর মাঠ বস্তিতে। কাজের ধরনও পরিবর্তন করেছে কয়েকবার। এখন বাসের হেলপারের কাজ করে। মাঝে মাঝে দুঃখ করে নিজেকে গালি দেয়, ইস্ হেই সোময় যদি আরও কয়েক ক্লাস পড়তাম!
মাঝে মাঝে তার গপ্পে মজনু অতিষ্ঠ হয়ে যায়। তার কাছে তেমন স্কুলের গল্প নেই। সে তখন গল্পের মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কন্ডাক্টর ক্লাস সিক্সে তার প্রেমের গল্প না শুনিয়ে কোনো ক্রমেই মজনুকে ছাড়ে না। তখন মজনুর আরও দুঃখ হয়। বিড়বিড় করে বলে, হালার এট্টা জেবন।
মজনুর এই দুঃখের কারণ জজ-ব্যারিস্টার না হতে পারার জন্য না। তার এই দুঃখ করার একটাই কারণ। তার বাসের সুপারভাইজার ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছে। মাঝে মাঝে তার গপ্পে মজনু অতিষ্ঠ হয়ে যায়। তার কাছে তেমন স্কুলের গল্প নেই। সে তখন গল্পের মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কন্ডাক্টর ক্লাস সিক্সে তার প্রেমের গল্প না শুনিয়ে কোনো ক্রমেই মজনুকে ছাড়ে না। তখন মজনুর আরও দুঃখ হয়। বিড়বিড় করে বলে, হালার এট্টা জেবন। এট্টা পেমও অইলো না।
প্রেম হয়নি ঠিক তবে মজনু প্রাইমারিতেই একটি মেয়েকে ভালোবেসেছিল। সেই ভালোবাসার গভীরতা টের পেয়েছে পরিণত বয়সে এসে। জীবনের দৌড়ে সেই কচি মুখের ওপর মরিচা পড়ে গিয়েছিল। এখন মাঝে মাঝে ঝড়ের গতি বেড়ে উঠে যায় সেই মরিচা। মজনুর চোখ হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে ময়নার মুখ। প্রাইমারি ছাড়ার পর আর কখনো দেখা হয়নি ময়নার সাথে। এত বছর পর ময়না কই আছে? কেমন আছে? মাঝে মাঝে মজনুর জানতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে হয় খুঁজে বের করে ময়নাকে। তারপর কখনো না বলা কথাটা সিনেমায় দেখা নায়কের মতো বলে, ময়না তোকে অনেক ভালোবাসি।
ইচ্ছেটা যেমন হুরমুর করে জোয়ারের গতিতে আসে তেমনই তাড়াতাড়িই ভাটায় দ্রুত নেমে যায়। ময়নার মধ্যবয়সী মুখটাকে আর খুঁজে বের করা হয় না। তার চেয়ে সোনালি হলে ঢুকে অর্ধনগ্ন-নগ্ন ইংলিশ সিনেমা দেখার কথা ভালোই মনে থাকে মজনুর। বিদ্যার যে দৌড় তাতে ইংরেজি বুঝা তো দূরের কথা ইংরেজির দরজায় যাওয়ার সাহসও মজনুর নেই। কিন্তু শরীরের ভাষা যে সব দেশেই এক; সেটা ইংলিশ সিনেমার যৌন উদ্দীপক দৃশ্য দেখে খুব সহজেই বুঝতে পারে মজনু। সেখানে সীমান্তের কোনো গণ্ডি নেই। এই শরীরী ভাষার দর্শন প্রথম যেদিন চোরের মতো সোনালি হলে ঢুকেছিল সেদিনই বুঝেছে মজনু।
সোনালি সিনেমা হলে ময়নাকে ভুলে গেলেও আবার কোনো কোনো দিন অবসর যাপনে দীর্ঘ সময় নিয়ে ময়নার কথা ভাবে। ভাবে এত দিনে নিশ্চয়ই ময়না তিন-চার বাচ্চার মা হয়ে গেছে। অথবা ময়না বেঁচে আছে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ হয় মজনুর। দু-একদিন রাতে ঘুমানোর আগে ময়নার কথা চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলে স্বপ্নের মধ্যে চলে আসে ময়না। হলুদ ফ্রক পড়া পিচ্চি একটা মেয়ে। গোল্লাছুট খেলছে। স্কুলের মাঠে চোখ বাঁধা অবস্থায় কানামাছি খেলছে। গোল্লাছুট খেলা কিংবা কানামাছি খেলা কোনো দৃশ্যেই মজনু ময়নার চোখ খুঁজে পায় না। এ নিয়ে মজনু চিন্তাও করে মাঝে মাঝে। সব স্বপ্নেই ময়না চোখহীন কেন! আরও একটা ব্যাপার মজনুর চিন্তার জায়গা দখল করে স্বপ্নে ময়না কখনোই যুবতী হয়ে ওঠে না। আদর করে না মজনুকে। এটাও মজনুর একটা দুঃখ। বাস্তব জীবনে ময়নাকে পেল না তাই বলে স্বপ্নেও কি তাকে পাবে না!
গত পরশু বাসায় ফেরার পথে দেখা হয়েছিল হোটেলের সেকেন্ড ম্যানেজার রতন পালের সাথে। ছেলে মেয়েদের জন্য আঙুর কিনতেছিল সে। একটু দূরে নেভি সিগারেট ফুকতে থাকা মজনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোট্ট করে রতন পাল বলে, নতুন মাল আইছে ভাই। আইয়ো।
নতুন কোনো মেয়ে এলে তার খবর পৌঁছে যায় মজনুর কাছে। তাই বলে এমনটা ভাবার সুযোগ নেই যে মজনু সপ্তায় সপ্তায় হোটেলে যায়। মজনু এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বার গেছে বোর্ডিংয়ে। কিন্তু নতুন মেয়ের কথা শুনে মজনুর চোখে মুখে উৎসুক ভাব দেখা যায়। সে রতন বাবুর চোখে চোখ রাখে। রতন বাবু বলে, হয়। এইবার আইয়ো। ঢাকার কলেজে পড়ে! তয় আগের ডবল।
মজনুর কাছে সহজ হিসেব। এমনিতে রেট একশ-দুইশ। স্পেশাল হলে পাঁচশ। আর ডবল মানে এক হাজার। রতন পাল আর কথা বলে না। চলে যায়। মজনু ভাবতে থাকে অদেখা মেয়ের কথা। বিড়বিড় করে বলে, এক আজার টাহা। এক আজার টাহার মাল!
মুচকি হেসে আবার নেভিতে টান দেয় মজনু। আকাশের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। কিছুক্ষণ ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনোকিছুর দিকে খেয়াল থাকে না মজনুর। তার মাথায় এক হাজার টাকার মাল!
মজনু মাঝে মাঝে রতন বাবুর কথা চিন্তা করে। বয়স পঞ্চান্ন হবে। ভাঙা-চোরা শরীর। খুকখুক করে কাশতে থাকে। দেখেও খুব সুস্থ মানুষ মনে হয় না। যখনই দেখেছে কিছু না কিছু অসুখ তার লেগেই থাকে। হাঁপানির কারণে ইনহেলারও পকেটে রাখে সবসময়। তারপরও এই বয়সী একটা মানুষ মেয়েদের ব্যাবসা করে! এমন একটি হোটেলে কাজ করে এবং তা দিয়ে সংসার চালায়! সন্তানদের কাছে তার লজ্জা করে না! মনে মনে ঠিক করে রাখে সামনের বার দেখা হলে এ নিয়ে তাকে প্রশ্ন করবে মজনু।
এবার নতুন মালের খবর পেতে পেতেই তিন দিন চলে গেল মজনুর। তাছাড়া রতন পাল যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলেছে তাতে মজনুর আরও আগ্রহ বেড়ে যায়। কিন্তু এক হাজার টাকা তার কাছে কম না। এক সপ্তাহের রোজগার। হাতে আছে চার দিন সময়। মজনু ঠিক করে যে করেই হোক এই ঢাকাইয়া মালের নগ্ন দেহখানা তার একবার দেখতেই হবে।
দুদিনে ছয়শ টাকা জোগার করেছে মজনু। বাকি টাকা ধার করেছে বন্ধু শুক্কুর আলীর কাছ থেকে। গন্তব্য চানপুরা হোটেল। রাত নয়টার দিকে পৌঁছে যায় চানপুরায়। মজনু রাতের প্ল্যানও করে নেয়। চানপুরা থেকে কাজ সেরে ত্রিশ গোডাউন নদীর পাড়ে চলে যাবে। শুক্কুর আলীর কাছ থেকে দুইটা স্টিক নিয়ে সুখ টান দেবে আর বদ্ধভূমিতে শুয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলবে। ঢুকতে ঢুকতেই দেখা হয়ে যায় রতন পালের সাথে। রতন পাল মজনুকে হাসি মুখে সম্ভাষণ জানায়।
মজনু একটা চোরা হাসি দিয়ে দোতালায় উঠে যায়। তার পেছন পেছন আসে রতন।
এট্টু বইতে অইবে দাদো। ভিতরে কামাল চেয়ারম্যান আছে।
এই লোকটার নাম শুনেছে মজনু। সবাই তাকে ভয় পায়। একসময় নাকি সর্বহারা পার্টি করত। কিন্তু কখনো তাকে দেখেনি। কামাল চেয়ারম্যানকে মজনুর দেখার ইচ্ছা হয়। কিন্তু মজনু কোনো কথা বলে না। পকেট থেকে ছয়টা একশ টাকার নোট আর কিছু খুচরা টাকা রতন বাবুর হাতে দেয়।.
রতন বাবু হাসি মুখে টাকা পকেটে রাখতেছিল।
মজনু বলে, গুইন্না লও দাদো।
আরে গোনা লাগবে না। তুই তো ঠগানের মানুষ না।
মুখে একথা বললেও পওয়ারী চশমার মধ্য থেকে চোখ বড়ো বড়ো করে রতন পাল টাকাটা ঠিকই গুনতে শুরু করে। দুইবার গোনা শেষে টাকা পকেটে রাখে।
মজনু পুরানো রংচটা নেভিব্লু জিন্সের পকেট থেকে ব্যানসনের প্যাকেট বের করে নিজে একটা নেয় আর রতনের দিকে একটা এগিয়ে দেয়, নেও দাদো।
রতন আবার হাসে।
মজনু এমনিতে নেভি সিগারেট খায়। তবে বোর্ডিংয়ে এলে বেনসন। বেনসনের ধোঁয়া শূন্যে ওড়াতে ওড়াতে নিজের মধ্যে একটা ভাব আনার চেষ্টা করে।
মজনুর মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ গোল পাকাতে থাকে। সাতাশ বছর বয়সী মজনু জানে না জীবনে অনেক কিছুই জানার ও বোঝার থাকে না কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে সেসব ঘটনা ঘটে যায়। মজনুর আগ্রহী চোখ বারবার বন্ধ দরজার দিকে চলে যায়। চোখের মধ্যে কাল্পনিক একজন নগ্ন নারীর শরীর। মনে মনে মজনু খুশি হয়। নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয় আর তো কিছুক্ষণ। তারপরই মজনুর সামনে উন্মোচিত হবে ঢাকাইয়া কন্যার লোভাতুর শরীর। ছেলেবেলার ছবি আঁকা ছড়ার বইয়ের মতো উল্টেপাল্টে পড়বে তাকে। শরীর বইয়ের প্রতিটি অক্ষর ধীরে ধীরে পাঠ করতে থাকবে মজনু। ডুবে যাবে ঢাকাইয়া কন্যার প্রতিটি পৃষ্ঠা।
রতন পাল উৎসাহ নিয়ে মজনুকে তার জীবনের গল্প শোনায়। মজনু রতন পালের খুশি খুশি মুখের দিকে তাকিয়ে সেসব গল্প শোনার ভান করে। কিন্তু রতন পালের কোনো কথা মজনুর কান হয়ে মাথায় পৌঁছায় না। রতন পাল কেমনে একবার শরীয়তপুরের এক হোটেল মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছিল সে গল্প বলে যায়।
সময়ের দূরত্ব ভুলে যাওয়ার জন্য মজনু রতন পালের সাথে গল্প পাতে। বিভিন্ন গল্প। রতন পাল উৎসাহ নিয়ে মজনুকে তার জীবনের গল্প শোনায়। মজনু রতন পালের খুশি খুশি মুখের দিকে তাকিয়ে সেসব গল্প শোনার ভান করে। কিন্তু রতন পালের কোনো কথা মজনুর কান হয়ে মাথায় পৌঁছায় না। রতন পাল কেমনে একবার শরীয়তপুরের এক হোটেল মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছিল সে গল্প বলে যায়। এ গল্প আগেও একবার শুনেছে সে। এ গল্পের শেষ দিকে রতন পালের কিছু টাকা মেরে দিয়েছিল লীলা নামের মেয়েটা সে গল্পও মজনুর মনে আছে।
মজনু হাসে। তার হাসির মধ্যে চেনা-অচেনা বিদ্যুৎ খেলা করে। মজনু জানতে চায় এই মেয়ের কথা। রতন পালের গল্প বাধাগ্রস্থ হয়। তারপরও সে পান চিবুতে চিবুতে মুখ আর নাকের মাঝখান দিয়ে ডান হাতের একটা ঘষা দেয়। তারপর আয়েশি ভঙ্গিতে বলে, এমন মাল তো সব সময় পাওয়া যায় না দাদো।
একটু থামে। গোপন কথা বলার মতো গলা নিচু করে আবার বলে, ভালো মাল আইলে আমি তো তোমারে খবর দেই। আমি জানি তোমার কাছে খবর দিলে তুমি আইবাই।
মজনু মিটমিট করে হাসে। গলা নিচু করে বলে, চেয়ারম্যান কহন আইছে?
রতন পাল মজনুর অধৈর্য মনোভাব বুঝতে পারে। সান্ত্বনা দেয়, আরে এট্টু কামড় খাও দাদো। চেয়ারম্যান আমাগো বান্দা কাস্টমার। তাছাড়া তার…
কথা শেষ করে না রতন পাল। তার চোখে মুখে জড়তার চিহ্ন। মজনু চোখের ইশারায় বাকি কথা জানতে চায়।
রতন পাল আগের মতোই গলা ছোটো করে ফিসফিসিয়ে বলে, আরে হোটেলে তো চেয়ারম্যানেরও শেয়ার আছে। হেইডা তো তুমি জানো না।
মজনু অবাক হয় না। মনে মনে ভাবে তা তো থাকতেই পারে। পাওয়ারওয়ালা মানুষ ছাড়া শহরে এ ব্যাবসা চালাবে কেমনে।
মজনু চুপচাপ শোনে। চুপ করেই থাকে। কোনো কথা বলে না। এসব বিষয়ে মজনুর কোনো আগ্রহ নেই।
মাথার ওপরে ন্যাশনাল ফ্যান ফুল পাওয়ারে ঘুরছে। তার মধ্যেও মজনুর শরীরে ঘাম। পাঁচ দিনের না কামানো খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে হাত দিয়ে মজনু ঘাম পরিমাপের চেষ্টা করে। সেভ না করতে পারার জন্য মনে মনে আক্ষেপও করে। রতন পালের গল্পে স্থির থাকে না মজনুর মন। তারপরও তাকে অপেক্ষা করতে হয়। ঠিক উনচল্লিশ মিনিট পর চেয়ারম্যান ঢাকাইয়া কন্যার রুম থেকে বের হয়।
রতন পাল ঢাকাইয়া কন্যার রুমের দিকে এগিয়ে যায়। আর মজনুকে উদ্দেশ্য করে বলে, আরেট্টু ব রে ভাই। জাইন্না আহি কিছু লাগবে কি না।
মজনুর সিগারেটের তৃষ্ণা পায়। কিন্তু মজনু সিগারেট ধরায় না। আর মাত্র দুইটা সিগারেট আছে। এই দুইটা সিগারেট সে রুমের মধ্যে বসে খাবে। সে চিন্তা করে প্যাকেটটার ওপর হাত বুলিয়ে আবার পকেটের মধ্যে রেখে দেয়।
চৌদ্দ মিনিট পর মজনু রুমে ঢোকে। যেন ডাক্তারের কাছে রোগী এসেছে এমন ভঙ্গিতে মেয়েটি তার নাম বলে। মজনুর নামও জানতে চায়। তিয়াশার এই আচরণ মজনুর কাছে ভালো লাগে। তিয়াশা নামের সত্য মিথ্যা নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায় না মজনু। সে দেখে সামনে অর্ধনগ্ন এক ভাস্কর্য। মজনু খাটের পাশে বসতে বসতে সিগারেটের প্যাকেট বের করে। প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট তিয়াশার দিকে এগিয়ে দেয়। এটা মজনুর সৌজন্যতা। তিয়াশা সিগারেট নেয় না। খাট থেকে উঠে দাঁড়ায়। চুল ঠিক করার ছলে আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নেয়। মজনুর চোখ তিয়াশার ব্রা’র হুকে, কোমরে আটকে থাকে। মজনু তখন আরও ঘামতে থাকে। তিয়াশা চুল ঠিক করে মজনুর দিকে কনডম ছুড়ে দেয়।
নেও। তাড়াতাড়ি করো। আমি ঘুমাব। বলে সে শরীরের কাপড় কমাতে থাকে। মজনু কনডমের কথা ভুলে তিয়াশার শরীরের বাঁকে ডুবে যায়। যেন এই প্রথম কোনো নারীর নগ্ন শরীর দেখছে সে।
তিয়াশা তাড়া দেয়। মজনু উঠে দাঁড়ায়। যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে খুব নার্ভাস ফিল করে। মজনুকে সময় দেয় না তিয়াশা। তার ঘুমের তাড়া। সে নিজেই মজনুর জামা কাপড় খুলতে থাকে। মজনুর ভয় ভয় লাগে। তেইশ-চব্বিশের আশপাশে ঘুরপাক খাওয়া এই শ্যামলা রঙের শরীরকে তার জাত সাপ মনে হয়। মনে হয় এই জাত সাপ মজনুকে যেকোনো সময় কামড়ে দেবে। কামড়ে শিশ্নকে তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। মজনু স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তিয়াশা কর্মব্যস্ত। সে যেন এখন মজনুকে কনডম ব্যবহারও শিখিয়ে দেবে।
অল্প চেষ্টায়ই মজনুর শিশ্নকে বসে আনতে সক্ষম হয় তিয়াশার কনডম। কিন্তু তারপরই শুরু হয় বিপত্তি। মজনুর শিশ্ন নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে। নিজের এই অবস্থা দেখে মজনু আরও নার্ভাস হয়ে যায়। তিয়াশা তার পেশাদারিত্ব দেখানো শুরু করে। চেষ্টা করে মজনুকে জাগাতে। কিন্তু কনডম মাথায় সে কিছুতেই জাগে না। তিয়াশা তার দায়িত্ব পালন করতে থাকে। কোনো কথা বলে না। এমন সুন্দরীর কাছে নিজের অপ্রস্তুত, নিম্নমুখি হয়ে থাকা শিশ্ন নিয়ে লজ্জিত হয় মজনু। ইচ্ছে হয় দৌড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এক হাজার টাকার মায়া তাকে তিয়াশার রুমেই আটকে রাখে।
তিয়াশা বিরক্ত হয়ে উন্মুক্ত করে দেয় মজনুর শিশ্ন। মজনু মনে মনে খুশি হয়। কিন্তু ভয়ে কথা বলে না। মজনু যেন বোবা হয়ে গেছে। সে ভুলে যায় বাকি সিগারেটটা জ্বালিয়ে নিজের মধ্যে ভাব আনার কথা। তার কিছুতেই মনে থাকে না। প্রাইমারিতে ছবিযুক্ত ছড়ার বইয়ের মতো তিয়াশাকে উল্টেপাল্টে মুখস্ত করার কথা। বরং তিয়াশাকে দেখে খুব মনোযোগী ছাত্রী মনে হয়। সে মজনুকে পড়ছে! অধ্যয়ন করছে। পরীক্ষার আগের রাতের মতো গভীর মনোযোগে। দ্রুত গতিতে।
শেষ পর্যন্ত তিয়াশার পেশাদারিত্বের কাছে পরাজিত হয় মজনুর শিশ্ন। তারপর মজনুকে খাটে ফেলে যা করার তিয়াশাই করে।
মাত্র দেড় মিনিট! তারপর মজনু তলিয়ে যায়। তিয়াশা পাশে তাকিয়ে থাকা নীল কামিজ দিয়ে নিজের যৌনাঙ্গে উথলে পড়া মজনুর বিষ মুছে নেয়। খাট থেকে নেমে বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বিরক্ত কণ্ঠে বলে, পারো না তো আসো ক্যান!
কাঁচা ঘুম চোখে ধরফরিয়ে ওঠার মতো খাট থেকে লাফিয়ে ওঠে মজনু। আর দেরি করে না। তিয়াশার কথা কানে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে মজনু।
রাস্তায় বের হয়ে এলোমেলো হাঁটতে থাকে। পথ ভুলে যাওয়াই যেন তার কাজ। এই নিয়ে ছয়বার চানপুরায় এসেছে মজনু। গত পাঁচবারও সময় পতনের ঘটনা ঘটেছে তার সাথে। সে জন্য এবার শুক্কুরের পরামর্শে রুমে ঢোকার আগে সেনেগ্রা খেয়েছিল মজনু। কিন্তু তার ব্যর্থতা ঘোচাতে পারেনি সেনেগ্রা!
তবে আগের পাঁচবারের তুলনায় এবারের ঘটনাতে একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে মজনু। প্রথমত এক হাজার টাকার দুঃখ। দ্বিতীয়ত এমন সুন্দরী মেয়ের কাছে নিজেকে পুরুষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সে।
হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় পেছন থেকে কয়েকবার রতন পালের ডাক শুনেছে মজনু।
কি রে এত তাড়াতাড়ি অইয়া গেল! কি রে চলে যাও কেন?
মজনু পেছনে তাকায় না। তার যেন কোনো পেছন নেই। সামনেও কুয়াশা ঢাকা পথ।
রাত পৌনে নয়টার মতো বাজে কেবল। মজনু তো এত তাড়াতাড়ি বস্তিতে যায় না। মজনু মনে মনে নিজের কপালকে গালি দেয়। পাশের দোকান থেকে একটা নেভি সিগারেট কেনে। সিগারেট জ্বালিয়ে সুখি মানুষের মতোন আনমনে হাঁটতে থাকে। তার প্যান্টের মধ্যে একটা জাত সাপ তখন যুদ্ধে হেরে যাওয়া সেনাপতির মতোন দ্বিগুন শক্তি নিয়ে ফোঁসফোঁস করতে থাকে। আর অসহয় জমিদারের মতো প্যান্টের পকেটে কাঁদতে থাকে একটি ব্যানসন সিগারেট।
মূলত কবি। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিত্বশীল দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ, সাহিত্য পত্রিকাসহ বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগে লিখছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসও লিখছেন নিয়মিত। তিনি ১৯৮৬ সালের ৪ আগস্ট বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন দক্ষিণ ভূতের দিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে বাংলাভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে এমএ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগ থেকে এমএসএস শেষ করেন। এছাড়া পেশাগত দক্ষতা অর্জনে তিনি সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে বিষয়ে পিজিডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ‘বাংলাদেশের ব্যঙ্গ সাহিত্য’ বিষয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন। ‘আড্ডা’ নামে একটি লিটলম্যাগ সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘদিন যাবৎ। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ: ‘সাইরেন’, ‘কালো হাসির জার্নাল’, ‘মেঘের কার্তুজ’, ‘পৃথিবী সমান দূরত্ব আমাদের’, ‘গুহা’, ‘লাবণ্য দাশের সাথে দেখা হওয়ার পর’।