বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক ভ্লাদিমির নভোকভ ২২ শে এপ্রিল, ১৮৯৯ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। জার শাসকের সাথে সম্পর্ক থাকায় অক্টোবর বিপ্লব পরবর্তীকালে ইউরোপে পাড়ি জমায় তাঁর পরিবার। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় পড়াশোনা করেন, এবং পরবর্তী সময়ে ফরাসি ভাষায়ও পড়াশোনা করেন।
রুশ, ইংরেজি ও ফরাসি এই তিনটি ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে লিখেছেন তিন ভাষায়। সাহিত্য চর্চা কবিতা দিয়ে শুরু হলেও উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজীবনী, অনুবাদ সহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন। কীটতত্ত্ববিদ হিসেবে প্রজাপতি গবেষণার কাজে বিশেষ অবদান রেখেছেন। ভালোবাসতেন দাবা খেলতে।
‘ললিতা’ তাঁর সবচেয়ে নন্দিত ও নিন্দিত উপন্যাস হলেও প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন ‘পেল ফায়ার’ উপন্যাসের মাধ্যমে।
পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর উপন্যাসগুলো রুশ ভাষায় অনুবাদ করলে তাঁর মাতৃভূমি রাশিয়াতে পৌঁছে যায় তাঁর লেখা এবং নিজভূমে খ্যাতি অর্জন করেন।
শেষ জীবনে থিতু হন আমেরিকাতে। দীর্ঘ প্রবাস জীবন নিয়ে কষ্ট থাকলেও স্বীকার করেছেন, ‘হয়তো রাশিয়াতে থেকে গেলে ভিন্ন রকম লেখক হতেন, এবং হয়তো এখনকার চেয়েও ভালো লিখতে পারতেন’।
২রা জুলাই, ১৯৭৭ সালে সুইজারল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন বিশ্বখ্যাত ঔপন্যাসিক ভ্লাদিমির নভোকভ।
পাখি
গোধূলি বেলায় আমরা জেটির কাছে ছিলাম
‘দেখো, পাখিটি কেমন করে উড়ে গেল আকাশে’
আমি বলেছিলাম
‘এই পাখিটির কথা তুমি ভুলে যেতে পারবে
যতদিন তুমি বাঁচবে?’
তুমি বলেছিলে, ‘আমি চিরকাল করব স্মরণ’
অতঃপর আমরা ভেঙে পড়লাম কান্নায়
জানো তো, ভালোবাসা আহত পাখির মতো
জেটির কাছে সেই গোধূলিলগ্নে কেঁদেছিল!
চিরকালের জন্য! যতদিনে না হয় আমাদের মরণ!
মনে রেখো
আমরা দুজনে মিলিত হয়েছিলাম আঁধারে
যেমন করে নিশ্চুপ জাহাজেরা পরস্পরের কাছে ভেড়ে।
একদিন এই কবির উদাসীন খ্যাতি তোমাকে মনে করিয়ে দেবে এক আধো ভুলে যাওয়া নাম।
আমি চাই তুমি অনুতপ্ত হও সেই ভালোবাসার জন্য যা একদিন তোমার ছিল।
তুমি ছিঁড়ে ফেললে আমার জীবনের এক উজ্জ্বল পাতা।
আমাদের বিচ্ছেদের যন্ত্রণায় তোমার হৃদয় কেঁপে উঠুক
যেমন করে জোছনাপ্লাবিত সৈকত কেঁপে ওঠে ঝোড়ো হাওয়ায়
লিলিথ
আমি মরে গিয়েছি গতকাল
নুয়ে যায় ডুমুরের ডাল
সড়কে ধূলিঝড়, বদ্ধ বাড়ি-ঘর
শহরের বাসিন্দারা আজ যেন লাশ!
আমি জানি রগড় করছে দেবতা এওলাস!
হেঁটে যাই আমি
ছাগল-দেবতারা আজ পথের সঙ্গী
তারা কি দেবতা প্যান?
তাহলে কি আমি স্বর্গে আছি?
মেয়েটি এসে দাঁড়ায় দরজার কাছ
রোদের আড়ালে
নগ্ন দেহ
লাল বাহুমূল
খোঁপায় গোজা কয়েকটি লিলিফুল!
স্তনবৃন্ত ফুটছে ধীরে ধীরে
যেন ফুটেছে কমল
আমার পানে চেয়ে।
এমনি এক বসন্তের দিনে
দেখেছিলাম তারে
একটা গাছের আড়ালে
স্নান শেষে উঠে এসেছিল দীঘির জল থেকে
বাদামি ত্বকে জল ঝরছিল
দুই পায়ের ফাঁকে কুঞ্চিত পশম আর্দ্র ছিল
এগোই আমার লিলিথের কাছে
গতকালের খুন হওয়া আমি
খেলারাম হাসি আমার ঠোঁটে
বেসেছে ভালো আমার প্রেয়সী।
তার সবুজ চোখের দিকে চেয়ে
জ্বলে গেছে আমার পোশাক
আদিম নগ্নতা নিয়ে আমায় উৎসর্গ করি
আমার লিলিথের সামনে
গ্রিক সোফা
লাল ওয়াইন
আঙুরের থোকা
আর দেয়ালে টানানো আদিম প্রেমের ছবি
এই কি স্বর্গ?
লাস্যময়ী দুই আঙুলে তুলে নেয়
আমার গর্বোদ্ধত মুকুট
‘এসো! আমার অন্তরীক্ষে এসো!’
তার দুই হাঁটু মেলে দেয় ডানার মতো
এমন প্রলুব্ধ বাসনায় কেঁপে ওঠে সেই মুখ!
বুনো ঢেউয়ে তলিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে
আদিম সাপ নেচে ওঠে রহস্যময় সুড়ঙ্গে
আচমকাই পা দুটো সরিয়ে নেয়
শরীর অবগুণ্ঠিত করে নেমে যায়
আমার লিলিথ।
আমার আমিকে আবার খুঁজে পাই সড়কে
চারপাশে ছাগল দেবতাদের ভীড়ে
‘আমাকে আসতে দাও
আসতে দাও
নয়তো পাগল হয়ে যাব’
মরিয়া হয়ে ডেকে যাই
তবুও সাড়াহীন তুমি
রুদ্ধ দরজার সামনে বীর্যের স্খলন ঘটল
আর আমার দিকে তাকিয়ে রয় দেবতারা
আমি বুঝেছি এটাই আমার নরক!
ভেরাকে লেখা চিঠি
তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন, আমার রূপকথা!
নইলে মেঘের রং নিয়ে কইবো কার সাথে কথা!
একটা নতুন চিন্তা যখন গান গায় প্রতিক্ষণ
কীভাবে আজ কাজে গেলাম, আর কখন
এসব গল্প করতে করতে বলব সূর্যমুখীর কথা
কেমন করে কালো বীজ নিয়ে হাসে বলব সেই কথা!
কত যে ভালোবাসি তোমায়
সবুজ কিংবা ধূসর—কত রেখা আঁকে বৃষ্টি!
বাতাবীলেবুর ঘ্রাণ—উন্মাতাল এই প্রাণ
চলো যাই এই বাগান ছেড়ে! আসুক যত অনাসৃষ্টি
এলোমেলো ফুলের বাগিচায় আজ বৃষ্টি-ফেনিল পথ
চলো ফিরে যাই একই চাদরে! দেখো না বাড়ছে কত বৃষ্টি!
জন্ম ২৬ শে জুলাই, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ। বেড়ে ওঠা বরিশালে। পেশায় চিকিৎসক। ভালো লাগে জীবনানন্দ দাশ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, লিয়েফ তলস্তয়, রবার্ট ফ্রস্ট, সাদত হাসান মান্টো, হুমায়ুন আহমেদ প্রমুখ লেখকের লেখা।প্রকাশিত বই: ডিঙ্গো : রুভিম ফ্রেয়ারম্যান (অনুবাদ) রাশিয়ান কিশোর উপন্যাস।