কবিতা কী? আলোকবর্ষ দূর থেকে আগত বিশৃঙ্খল রেডিও বিকিরণ তরঙ্গমালা। যা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর রেডিও অবজারভেটরির অ্যান্টেনায় ধরা পড়ে। রিসিভারে লিপিবদ্ধ হতে থাকে অর্থহীন বেতার সংকেত। টেলিস্কোপে প্রাপ্ত সেসব মহাজাগতিক সংকেত বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হয়তো কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানী আবিষ্কার করে ফেলে একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও সিগন্যাল, পুনরাবৃত্তিময়, কিছু সময় বিরতি দিয়ে ফিরে ফিরে আসে। যেন ভিনগ্রহীর পাঠানো যোগাযোগবার্তা। ভিন্ন ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির রেডিওতরঙ্গ, যা হয়তো উৎপন্ন হয়েছে দূরের প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্রে, জলীয় ধূমকেতুর মধ্যে বা দুটি অতিভারী কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে, তা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণীচালুনে ছেঁকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেন।
কবিও এক অবিরাম সংগ্রাহক যন্ত্র, শক্তিশালী রিসিভার, তার পঞ্চেন্দ্রিয়ে চারপাশ থেকে আসা রূপ-রস-গন্ধ-শব্দ বেজে উঠে। কখনো কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যে, মৃদু কম্পাঙ্কে। কখনো তারস্বরে, বৃহৎ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে। কিন্তু অল্প কিছু সংকেতই কবি তার কবিতার বিষয়-আশয় রূপে গ্রহণ করেন। কবিকে আলোড়িত, বিস্মিত, নাড়িয়ে দেবার মতো সংকেত, প্যাটার্ন কবিতার অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে বা উঠতে পারে। কবিভেদে কবিতার প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গের মধ্যে তারতম্য লক্ষ্য করি। কারো কবিতায় ছায়া দান করে গ্রামীণ চিত্রকল্প, লোকজ শব্দ, পুরাণ, গণমানুষের মুখের ভাষা। কারো কবিতার বাগদেবী হেঁটে বেড়ায় বনসাই-সজ্জিত রাজপথে, দশটা-পাঁচটা টাইমলুপে আবদ্ধ নাগরিক জীবনের কোলাহলে। আমার কবিতায় লক্ষ্য করা যায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অসংখ্য উপাদান: জ্যোতিপদার্থবিদ্যা, বায়োলজিক্যালি সাইবর্গ, সাইকোলজিক্যালি হিউম্যান চরিত্র। স্বনিয়ন্ত্রিত সচেতন রোবট, ইন্টারনেট অব থিংকস, এ. আই, ন্যানো টেক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অবদমিত কামনা বাসনা… এই বিশেষ জনরার কবিতাকে আপনারা ডাকতে পারেন বিজ্ঞানকল্পকবিতা বলে। যেখানে পাঠক মুখোমুখি হবে এক ভঙ্গুর, পৃথিবীর। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, পরমাণু যুদ্ধ, বায়ো উইপন, জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারিং করে সুপার হিউম্যান, সোলজার তৈরির হাতছানি, গণবিলুপ্তি, নক্ষত্রলোকে যাত্রা… এসবই পাঠককে পৌঁছে দেবে টান টান ক্লাইমেক্সে। তবে কোনো বিশেষ বিষয়ের কবিতারচনা কবিকে একটা গন্ডিতে আটকে ফেলে কিনা সেটাও ভাবনার বিষয়। সাহিত্য সমালোচক ম্যাথু আর্নল্ড যেমন মনে করতেন: ‘To be interested in philosophy or any other subject is not a permanent desire for a poet’
ম্যাথু আর্নল্ডের কথার প্রতি দৃষ্টি রেখেই বলছি, আমার কবিতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শুধুই একটা টুলস, যা সময়ের রূপ-রেখা, বাঁকবদল সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে, আরোপিত নয়, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সময়ের প্রয়োজনে।
‘ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিসঅর্ডার’ কবিতার বইটি লেখা হয়েছে জোড় শব্দের সাথে জোড়, বিজোড় শব্দের সাথে বিজোড় শব্দ জুড়ে দিয়ে, মুক্তক অক্ষরবৃত্ত ছন্দে। সংকলিত কবিতার সংখ্যা ৩৭। বইয়ের নাম কবিতা ’ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিসঅর্ডার’ । এ কবিতায় দেখা যাবে ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অগমেন্টেড রিয়েলিটি মানুষের পার্সোনালিটি, জীবনযাত্রায় কতটা পরিবর্তন সাধন করবে তা। বাস্তব ও কল্পনার মাঝখানে বিভেদের শক্তদেয়াল ভেঙে ফেলবে ভি আর হেডসেট। কবিতা রাষ্ট্রবিরোধী। এই রাষ্ট্রবিরোধিতার কারণে প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের রাখতে চাননি। বর্তমানকালেও এ বিরোধিতা চলমান বলে, ‘জিন ইঞ্জিনিয়ার অনাগত শিশুদের ডিএনএ থেকে কেটে ফেলছে কাব্যকলাবীজ।’ শ্রেণীবিভাজন রেখে যে রাষ্ট্র গড়ার কথা ব্যক্ত করেছিলেন প্লেটো সে রাষ্ট্রে আজকের দিনে আরেকটি শ্রেণী বিকাশমান, রোবটশ্রেণী। রাষ্ট্র নাগরিকদের উপর নজরদারি করতে নিয়োজিত রাখে ড্রোন। পরিবেশ দূষণের ভয়াল প্রভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন ঘটে যায় মাছের। কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেডিও বার্তার অপেক্ষা করতে করতে জীবন কেটে যায় রেডিও এক্সপার্টের। স্যামুয়েল বেকেটের অ্যাবসার্ড নাটক Waiting For Godot এর অন্যতম চরিত্র ভ্লাদিমির যেমন উচ্চারণ করেন:
‘’We wait. We are bored. No don’t protest. We are bored to death, theres no denying it.”
বিজ্ঞাপন
প্রিয় লেখক, ২০২১ গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত আপনার বইটি নিয়ে লিখুন ‘আমার বই’ বিভাগে। লেখা পাঠান আমাদের ইমেইলে। সঙ্গে আপনার এবং বইয়ের পরিচিতিমূলক তথ্য এবং ছবি। লেখা পাঠানোর মেইল : editor.sreebd@gmail.com
জন্ম ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭। পড়াশোনা: বিজ্ঞান, মানবিক , ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য। প্রকাশিত কবিতার বই : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিসঅর্ডার [চৈতন্য , বইমেলা ২০২১]।