মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩

চেকলিস্ট

0

হাফ হাতা টপস, জিনসের প্যান্ট শার্ট, কাঁধের ফ্যাকাসে ব্যাকপ্যাক আর এলোমেলো দৃষ্টিতে চারপাশে তাকানো দেখে আমাকে অনেকেই ভাবলেশহীন এবং বদমেজাজি মানুষ ভাবতে পারে। কিন্তু আমি ছিলাম আসলে একদমই উল্টা। আর সেই ব্যাপারটাই আমার প্রেমিক অন্য সবার আগে ধরতে পেরেছিল বলে ওকে আমার পছন্দ হয়েছিল।

ফ্রিল্যান্সিং এবং অনলাইন টিউশনির টাকায় আমাদের একসাথে সিনেমা দেখার কিংবা মেক্সিকান খাবার খাওয়ার সন্ধ্যাগুলো ছিল সবচেয়ে সুন্দর। আর সবচেয়ে কুৎসিত ছিল আমাদের শেষ ঝগড়ার বিচ্ছিরি রাতটা। সেই রাতে আমি শুধুই আমার ফেসবুকের হোমপেইজে ঘুরে বেড়িয়েছি অকারণে। আর ভেবেছি ঠিক কোন মুহূর্ত থেকে আমাদের দু’জনের মাঝে সমস্যা শুরু হলো। এটা ঠিক যে আমি এর আগে দীর্ঘদিন কোনো সম্পর্কে জড়াইনি তাই অনেক সময়ই বুঝতে পারি না যাকে ভালোবাসি তার সাথে আমার কেমন আচরণ করা উচিত। এও জানি আমাকে দেখতে অনেক অপরিণত মানুষ মনে হয়, যা ভেতরে ভেতরে আমাকে হীনমন্যতায় ভোগায়। আমি একদমই ফ্যাশন সচেতন নই। কথা বলি কম, সবকিছু নিয়মমাফিক করার জন্য অনেকগুলো চেকলিস্ট দেখি এবং আমার অল্প কিছু বন্ধু আছে। এগুলোর কোনোটাই এমন কোনো নতুন ঘটনা ছিল না যা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমস্যা হতে পারে। বরং ও আমার জীবনে আসার কারণে কিছু সমস্যা কমতে শুরু করেছিল। আমি অনেককিছু সহজ ও স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করেছিলাম যা আগে পারতাম না।

এটা ঠিক যে আমি এর আগে দীর্ঘদিন কোনো সম্পর্কে জড়াইনি তাই অনেক সময়ই বুঝতে পারি না যাকে ভালোবাসি তার সাথে আমার কেমন আচরণ করা উচিত। এও জানি আমাকে দেখতে অনেক অপরিণত মানুষ মনে হয়, যা ভেতরে ভেতরে আমাকে হীনমন্যতায় ভোগায়। আমি একদমই ফ্যাশন সচেতন নই। কথা বলি কম, সবকিছু নিয়মমাফিক করার জন্য অনেকগুলো চেকলিস্ট দেখি এবং আমার অল্প কিছু বন্ধু আছে। এগুলোর কোনোটাই এমন কোনো নতুন ঘটনা ছিল না যা নিয়ে আমাদের মধ্যে সমস্যা হতে পারে। বরং ও আমার জীবনে আসার কারণে কিছু সমস্যা কমতে শুরু করেছিল।

রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমার ফোনে ফুল চার্জ থাকা এজন্য দরকার যেন আমি ফোন চার্জে রেখে না ঘুমাই। কারণ, চার্জ হতে হতে ফোনে বিস্ফোরণ ঘটলে আমি বিপদে পড়ব। ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা কম বলে, টেবিল ঘড়ি ও কলমদানির মাঝখানে প্লাস্টিকের গ্লাসে পানি রাখা, পড়তে থাকা বইয়ের কোনো পাতা যেন ভাঁজ হয়ে না থাকে তা খেয়াল রাখা, একটু পরপর হাত ধোয়া বা শাওয়ারে দীর্ঘ সময় কাটানো, এ কাজগুলো আসলে উল্লেখ করার মতো কোনো বিষয় না। এসব আমি করে আসছি অনেক বছর ধরে। ভুল হতে পারে ভেবে কিছু বারবার গুনতে থাকা, পরখ করা, একই কথা একাধিকবার বলা সিনেমা-সিরিজে বা বাস্তব জীবনে খুব হাস্যকরভাবে দেখায়। তবে এগুলো আমার জন্য অন্তত হাস্যকর ছিল না। নিজের আতংক, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, অস্থিরতা কমাতে এবং স্বাভাবিক মানুষের মতো বাঁচতে আমাকে এগুলো করতে হতো। আমি আমার প্রেমিককেও বলেছিলাম, পানির ট্যাপ বন্ধ করা আর খোলা কিংবা দরজার লক চেক করা আমার একেকটা দিনকে ভারমুক্ত করে।

ও তখন হাসতে হাসতে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তুমি কি হোয়াট অ্যাবাউট বব’ সিনেমার বিল মারি কিংবা ‘অ্যাজ গুড অ্যাজ ইট গেটস’ সিনেমার জ্যাক নিকলসনের বাঙালি ভার্সন নাকি? উত্তরে আমি অপ্রস্তুতভাবে একটু হেসেছিলাম। আমার জন্য এটা কোনো কমেডি বা ড্রামার মতো ফ্যান্সি বিষয় ছিল না। হ্যাংওভারের মতো যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি নিয়ে যার সর্বত্র বিচরণ। সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করার জন্য তার নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে বহুদূর নিয়ে যেতে হয়। যেকোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় কমপক্ষে দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে। আর সারাক্ষণ মাথার ভেতরে কেউ কথা বলে যায়, যাকে উপেক্ষা করার কোনো স্পর্ধা থাকে না। তাই অবলা শ্রোতার মতো আমাকে শুনতে হয়,

‘চুলা বন্ধ না থাকলে গ্যাস সিলিন্ডার লিক করে পুরো বাড়িতে আগুন লেগে যেতে পারে।’

‘ফ্রিজ খোলা থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে সমস্ত খাবার ।’

‘মাল্টিপ্লাগে কানেকশন দিয়ে রাখা সবকিছু ফিউজ হয়ে যাবে।’

‘দরজা খোলা থাকলে সিরিয়াল কিলার এসে আত্মগোপন করবে।’

আমার মাথার ভেতরে শিকড় গেড়ে বসে থাকা সত্তাটার কথাগুলো শুনে মাটিতে পাথরের মতো আটকে যেত আমার পা। কোথাও যাওয়ার জন্য যতদূরেই আগাই না কেন আবার ফিরে এসে ফ্ল্যাটের চুলা, ফ্রিজ, কল, দরজা, জানালা চেক করতে হতো। ঘরের প্রতিটি কোণ দেখে, আশ্বস্ত হয়ে তবেই আমি আবার বের হতে পারতাম। কিন্তু ততক্ষণে অন্য জায়গায় পৌঁছাতে দেরি হয়ে যেত। আমি আমার জীবনের অনেক ইন্টারভিউ, কুইজ, পরীক্ষা, সিনেমা আর আড্ডা এভাবে মিস করেছি। অনেকবার চেষ্টা করেছি এগুলো ঠিক করার কিন্তু সম্ভব হয়নি। ভার্সিটিতে, কাজে, পরিচিত মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে চাইতে আমি হয়ে উঠেছিলাম ক্লান্ত। এমন অবস্থা দেখে আমার প্রেমিক আমাকে ফ্ল্যাটের ভেতর ও পেছনের দরজায় সিসি ক্যমেরা বসিয়ে দিয়েছিল। ওর মনে হয়েছিল এতে করে হয়তো আমার দুশ্চিন্তা কমবে। কিন্তু ক্যামেরা লাগানোর পর আমি সর্বক্ষণ মোবাইল অ্যাপ খুলে পেছনের দরজা এবং বাসার ভিতরে বসানো ক্যামেরার রিয়েল টাইম ফুটেজের দিকেই তাকিয়ে থাকতাম। আমার ফ্রিল্যান্সিং কাজ জমে যাচ্ছিল, ডেডলাইন মিস করছিলাম, টাকাপয়সা উপার্জনের পরিমাণ পর্যন্ত আসছিল কমে। আমার এমন দৈন্য দশা দেখে ও একদিন বাইরে থেকে বেশ কিছু খাবার অর্ডার করে আমাকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করল এবং নম্র স্বরে জানালো, আমার ভালোর জন্যই আসলে সিসি ক্যামেরাগুলো সরিয়ে ফেলা দরকার।

ছোটোবেলায় মা বলতেন আমার মানসিক পুষ্টিহীনতা আছে। কথাটার অর্থ আমি তখন বুঝতাম না। আমি মনে করতাম এটা কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা যা সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হয়। বড়ো হয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার মা আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন।

ছোটোবেলায় মা বলতেন আমার মানসিক পুষ্টিহীনতা আছে। কথাটার অর্থ আমি তখন বুঝতাম না। আমি মনে করতাম এটা কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা যা সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে হয়। বড়ো হয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার মা আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন। আমার হলুদ আলোয় ভরা ঘরগুলো, ধুলা না জমে থাকা ফার্নিচারগুলো, অজস্র তালায় সুসজ্জিত ঘরের দরজা, জানালা সবই আসলে মায়ের বলে যাওয়া সেই কথাটাকেই বার বার সত্য করে তুলেছিল। তবে এসবকিছুর মাঝেও আমি সম্ভবত ভালোই ছিলাম। কারণ আমার একটা সম্পর্ক আছে। একজন মানুষ আছে যাকে আমি প্রেরণা, আমার বাঁচার খড়কুটো হিসেবে ধরে নিয়েছি। কিন্তু সেখানেও সমস্যা হলো যখন ও এসে আমার সাথে একই ফ্ল্যাটে থাকা শুরু করল। প্রথম প্রথম এই সিদ্ধান্তে আমার মনে জেগে উঠেছিল প্রবল আনন্দ। কিন্তু ও এসে থাকা শুরু করার পর আমি ভেতরে ভেতরে দমে গেলাম। ভোরবেলা আলো ফোটার আগেই আমাকে ঘুমিয়ে থাকতে বলে ও দৌড়াতে চলে যায়। যাবার আগে আমাকে হালকা চুমু দিয়ে বলে :

‘আমি ঘন্টাখানেকের মধ্যে ফিরে আসব, এরপর একসাথে ব্রেকফাস্ট করব। ঠিক আছে?’

আশ্চর্য! ও চলে যাবার পর দরজা ঠিকমতো লাগাবে কি না সেটারই তো ঠিক নেই। হয়তো কেউ ওর পিছু নিয়ে ফ্ল্যাটে ফেরার সময় অতর্কিত হামলা করে আমাদেরকেই খুন করে ফেলবে। হয়তো ও দরজা ভালো করে বন্ধ করেনি বলে কোনো চোর ঢুকবে। বাদবাকি সব কথা না হয় বাদই দিলাম। এগুলো পুরোপুরি চেক না করে কেউ আবার ঘুমাবে কীভাবে? আর রোমান্টিক ব্রেকফাস্ট তো বহুদূরের কথা! আতংকে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেত। উপন্যাসে কিংবা নাটক-সিনেমায় এইসব মানসিক বিষয়গুলোকে যেভাবে দেখায় তার সিকিভাগও যদি বাস্তব জীবন থেকে কেউ নিত তাহলে সম্ভবত আমার চিন্তাগুলোকে কেউ অস্বাভাবিক বলত না। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা পপ কালচারে এই ধরণের সমস্যাগুলোকে বেশিরভাগ সময়ই হালকাভাবে তুলে ধরে। যার কারণে দর্শকরা সেগুলো দেখে বিনোদন পায়। চরিত্রগুলো পছন্দ করে। তবে নিজেদের চারপাশে এমন চরিত্র দেখলে কেউ আর সিরিয়াসলি নিতে চায় না। জানতে চায় না খুঁটিয়ে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জাগার পর আমার বুকের ভেতরে কেমন শঙ্কা ও ভয়ানক চিন্তা কাজ করে, তা জানলে হয়তো আমার প্রেমিক পর্যন্ত আমাকে মরবিড বলবে কিংবা স্বাভাবিকভাবে স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ, তথাকথিত আঁতেল কিংবা রং মিলিয়ে সব কিছু সাজিয়ে রাখা পরিচ্ছন্ন মানুষ হবার মতো এত সহজ আমার জীবন ছিল না। বহুবছর ধরেই আমার এই দৈনন্দিন জীবন ছিল ভয়াবহ। কিন্তু তা আরও দুর্বিষহ হলো যখন থেকে আমার প্রেমিক ও আমি একসাথে থাকা শুরু করলাম। সারাক্ষণ আমার মনে হতো বাড়িতে ও কোনো না কোনো অঘটন ঘটাবে যেটার কারণে আমরা দু’জনেই মারা পড়ব। মনে হতো মানুষ খাল কেটে কুমির ডেকে আনে আর আমি ভালোবাসার মানুষের নামে ডেকে এনেছি অকালমৃত্যু।

এরমাঝে আমার বাবার সাথে একদিন ফোনে প্রচণ্ড ঝগড়া হলো। আমরা প্রায় ওয়াকিটকিতে মেসেজ চালাচালির মতো করে চিৎকার করতে থাকলাম। আমার কাজিন ওর টিউমারের অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আমার বাবা চাইছিলেন আমি সেখানে গিয়ে সময় দেই। কিন্তু, হাসপাতালের মতো জায়গায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থাণুর মতো বসে থাকার চেয়ে মধ্যরাতে মদ খেয়ে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট ধরে কাউকে উন্মাদের মতো কাঁদতে দেখা আমার জন্য সহজ। আমার বাবাকে সেই কথাটা বলতেই সে এক পর্যায়ে আমাকে ইংরেজিতে গালি দেওয়া শুরু করে দিলেন। আর আমি শুনতে পেলাম ফোনের অন্যপাশে আমার মাও ততক্ষণে চিৎকার করছেন। আমি বাধ্য হয়ে কেটে দিলাম কলটা। এরপর আমার ভয়াবহ খারাপ লাগা শুরু হলো। আমার কাজিনকে আমি খুবই পছন্দ করতাম। গতবছর নিউইয়ার পার্টিতে ওর সাথে যাবার পরেই খুঁজে পেয়েছিলাম আমার বর্তমান প্রেমিককে। যদিও তখনও আমার সোশ্যাল অ্যাংজাইটি বেশ প্রকট ছিল। তাই, নানাভাবে আমি পার্টির দাওয়াতটা উপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। ও জোর করে ঠিকই নিয়ে গিয়েছিল। সেই পার্টিতেই আমার প্রেমিককে প্রথম দেখি। আদতে সে ছিল কিছুটা স্বল্পভাষী ও লাজুক। এমন পুরুষদের আমার ভালোমানুষ মনে হতো বরাবরই। কারণ আড্ডায় কিংবা উৎসবে যারা আসর জমিয়ে রাখে তাদের মাঝে কোথাও না কোথাও একটা আবছা ভণ্ডামি মিশে থাকে বলে আমার মনে হয়। অভিজ্ঞতা, রাজনীতি ও ট্রেন্ডিং খবর বলে এরা মানুষের চোখেমুখে মুগ্ধতা দেখার লোভে নিজেকেই বিক্রি করতে থাকে সস্তা দামে। এমনই কিছু মানুষদের থেকে নজর ফিরিয়ে চলে আসার এক ক্ষণে ওর সাথে পরিচয় হলো। কিছুক্ষণ আলাপের পর আমি নিজেই বলে বসলাম:

‘তোমার ফোন নাম্বারের এগারটা ডিজিট কী?’

এই কাজিন না থাকলে কখনওই আমার প্রেমিকের সাথে আমার পরিচয় হতো না। বিষয়টা নিয়ে আমি মনে মনে কৃতজ্ঞ থাকলেও হাসপাতালে যাবার সাহস করে উঠতে পারলাম না। আমার কাজিনের বয়স মাত্র ২৭ বছর। জিমে যেত, ভালো খাবার খেত। সুস্থ সবল মানুষ। কীভাবে এমন একজন মানুষের মধ্যে টিউমার জন্ম নেয় এবং এত দ্রুত তা বড়ো হতে থাকে যা জীবনের হুমকি হয়ে যায়, আমি তা ভেবে পাইনি। মাথাব্যথা বাদে ওর কোনো অসুখের কথা আমি কোনোদিন শুনিনি। তাই প্রথম যেদিন ফোনে বলেছিল ওর এমআরআই করাতে হয়েছে টিউমারের জন্য, আমি সেদিনই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম! আরও একটা কারণে সেই দিনটা উল্লেখযোগ্য ছিল।

আমি সেদিন বহুদিন পর বিউটি পার্লারে গিয়েছিলাম চুল কাটাতে। ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করার সময় টিভির স্ক্রিনে চোখ পড়ে গিয়েছিল। সেখানে একটা সিরিজে দেখাচ্ছিল, একটি মেয়ে কীভাবে সাত সংখ্যাটির মাধ্যমে জীবন পার করছে। কীভাবে সে একই চিপস সাতটা কিনে নিপুণভাবে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখে। যেকোনো খাবার সাতবার চাবায়। পানির গ্লাসে চুমুক দেয় সাতবার। কোনো কিছু ভালো করে দেখে নিশ্চিত হতে চোখের পলক ফেলে সাতবার। দরজার তালা সাতবার চেক না করে বাড়ি থেকে বের হয় না। এবং প্রতিদিন বাইরে যাবার আগে তার নিজেকে সাহস দেওয়ার জন্য সাতবার বলতে হয়, ‘সবকিছু ঠিক আছে। তোমার কিচ্ছু হবে না।’ এরপর একটা দৃশ্যে দেখা যায় সে টয়লেটে কমোডের পাশে দাঁড়িয়ে আছে গুণে গুণে সাতবার ফ্ল্যাশ করবে বলে। যতক্ষণ ট্যাংকে যথেষ্ট পরিমাণে পানি না জমছে সে ফ্ল্যাশ বোতাম চাপতে পারছে না, তাই তাকে অপেক্ষা করছে হচ্ছে। টয়লেটের বাইরে অন্য মানুষদের লাইন ধরে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটি অপেক্ষা করছে ট্যাংক ভরে ওঠার। সে নিজেও অস্থির হয়ে উঠছে। কিন্তু তার কিছু করার নেই। যদিও কেউ তাকে আটকে রাখেনি তাও সাতবার ফ্ল্যাশ না করলে সে টয়লেট থেকে বের হতে পারছে না। মেয়েটিকে লাইনে থাকা সবাই গালাগালি করছে, আর সে ফ্যাকাসে মুখে প্রতিবার ট্যাংক ভরলে একবার ফ্ল্যাশ করে পরেরবারের জন্য অপেক্ষা করছে। এই ঘটনা দেখার পর আমার হৃদয়ে বয়ে গিয়েছিল একটা হিম শীতল স্রোত। মনে হচ্ছিল টিভির ভেতরের মেয়েটাই আমি। আর ওয়েটিং রুমে থাকা সব মেয়ে, মহিলারা আমাকে এক ঝলকে চিনে ফেলছে আর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করছে। আমার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছিল, যেন এখনই শ্বাসকষ্ট শুরু হবে। মনে হচ্ছিল একটা ধারালো ছুরি দিয়ে কেউ আমাকে চিরে ফেলছে নিপুণভাবে। আমার শুধু মনে হলো, যে করেই হোক এখান থেকে আমাকে এখনই পালাতে হবে। সাথে সাথে আমি প্রায় টালমাতাল অবস্থায় ছুটে বের হয়ে এসেছিলাম পার্লার থেকে।

আমি এরপরেও যতটা সম্ভব ফোনে আমার কাজিনের খবর নিয়ে যাচ্ছিলাম। হাসপাতালের একঘেয়ে সময় আর পানসে খাবার বাদে আর কোনোকিছু নিয়ে ওর কোনো অভিযোগ ছিল না। বরং আমার মনে হতো ওর চেয়ে আমারই বেশি সমবেদনার প্রয়োজন। সেই দিনগুলোতে বাসায় থাকলেও আমি ভালো থাকতাম না; কারণ, আমার মনে হতো আমার প্রেমিক আমার মতো বাড়ির সমস্ত বিষয়ে সতর্ক না। সিগারেট খাবার পর সেটার শেষাংশ ও দেয়ালে একবার চেপে ধরেই বারান্দায় ছুঁড়ে দিত। এটুকু দেখেই আমার দম বন্ধ করা অনুভূতি চলে আসত, যে কী হবে যদি বারান্দার বাইরে পড়ে থাকা কোনো কিছুতে লেগে আগুন ধরে যায়। ও তো দেখেইনি ঠিকমতো সিগারেটটা নিভেছিল কি না! ওর জায়গায় আমি হলে ওই সিগারেটের বাটটুকু কমপক্ষে সাত-আটবার পরখ করতাম। টয়লেটে গিয়ে কমোডের পানির মধ্যে ফেলে ফ্ল্যাশ করতাম। ময়লার ঝুড়িতেও ভয়ে ফেলতে পারতাম না। ও যেহেতু এসব কিছু নিয়েই মাথাব্যথা দেখায় না, আমাকেই তাই আরও সচেতন হতে হলো। ও রান্না করে চলে আসার পর আমাকে আবার নিশ্চিত হতে হতো চুলাগুলো আসলেই বন্ধ আছে কি না। রান্নাঘরে গিয়ে ওর কারণেই আমার প্রতিবার কমপক্ষে দশ, পনের মিনিট নষ্ট হয়ে যেত। আমি মনে মনে বিরক্ত হলেও তা আর প্রকাশ করতাম না। ও ছিল বেশ সহজ মানুষ। রাতে বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে যেত, আর ওর গাঢ় ঘুম দেখে আমি শঙ্কিত হয়ে ভাবতাম যে, নিজের, আমার কিংবা আমাদের ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা নিয়ে ওর মধ্যে কেন কোনো সতর্কতা নেই। অথচ নিউ ইয়ারের পার্টির রাতে আমি যখন বিদায় নেওয়ার সময় ওর হাত ধরেছিলাম তখন আমার মনে হচ্ছিল অন্তত ও পাশে থাকলে আমার অনেক কিছু নিয়েই দুঃসহ অনুভূতি আর দুশ্চিন্তা কাজ করবে না।

কারণ, ওর মাথার ভেতরের টিউমারটা বেশ বড়ো। এতই বড়ো যে সেটার আকার, আয়তন ও অবস্থানের জন্য কোনো রোগীর পক্ষেই স্বাভাবিক আচরণ করা সম্ভব না। আমার কাজিন আসলে কীভাবে এসবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল আমি পরিষ্কারভাবে ভাবতে পারছিলাম না।

এরপর একদিন জানতে পারলাম ডাক্তার বলেছে আমার কাজিনের পোলিও থেরাপি শুরু করতে হবে। পোলিও থেরাপির বিষয়ে আমার কোনোকিছুই জানা ছিল না। কিন্তু আমি ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলাম। শুঁয়োপোকা রূপান্তরিত হয়ে যেভাবে প্রজাপতি হয় সেভাবেই যেন ওর টিউমারের রূপান্তরটুকু ক্যান্সারে পরিণত হলো। একদিন আমার মা ফোন করে জানালেন, শরীরের অবস্থা শোচনীয় বলে শহরের এক নামকরা নিউরো-অংকোলজিস্টের কাছে আমার কাজিনের চিকিৎসার দায়-দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, ওর মাথার ভেতরের টিউমারটা বেশ বড়ো। এতই বড়ো যে সেটার আকার, আয়তন ও অবস্থানের জন্য কোনো রোগীর পক্ষেই স্বাভাবিক আচরণ করা সম্ভব না। আমার কাজিন আসলে কীভাবে এসবের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল আমি পরিষ্কারভাবে ভাবতে পারছিলাম না। ওর কথা ভাবলে বাস্তব জীবন অল্প সময়ের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো লাগত। রাতের ঘুম আরও কমে আসত। মাঝে মাঝে আমি পা টিপে টিপে ঘর থেকে বের হয়ে, অজস্রবার ফ্ল্যাটের লক চেক করে, পথের পাশে নিরিবিলি একটা জায়গায় গিয়ে বসতাম। কিছুক্ষণ পর আমার মনে হতো সেখানে হয়তো কারও কফ, থুথু আর নোংরা স্পর্শ লেগেছে। দেয়ালের অন্যপাশ থেকে হয়তো কেউ মুহূর্ত গুনছে, কোনো ধারালো ছুরি দিয়ে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য। কিংবা ঘুমের মধ্যে ফোনের চার্জারের তার পেঁচিয়ে ফেলে আমার প্রেমিক কোনো অঘটন ঘটিয়ে যেকোনো সময় হয়তো মারা পড়বে। এইসব ভেবে আমার হৃদস্পন্দন প্রচণ্ড বেড়ে যেত এবং আমি কাঁপতে কাঁপতে দ্রুত ফিরে আসতাম বাসায়।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি দু সপ্তাহের জন্য অফিসের কাজে দেশের বাইরে গিয়েছিল আমার প্রেমিক। আমি ভেবেছিলাম ও না থাকার কারণে হাতে জমে থাকা কাজ শেষ করে নতুন কাজ নিব। যাতে বেশকিছু টাকা উপার্জন করতে পারি। কিন্তু, হিতে বিপরীত হলো। আমি আবিষ্কার করলাম দিনের পর দিন আমি কিছু রান্না করছি না; কারণ আমার ভয় লাগছে, আমি রাঁধতে গেলেই কিছু না কিছু ঘটে যেতে পারে। এরচেয়ে চুলা না জ্বালালে আমার আর কোনো চিন্তা করতে হচ্ছে না। প্রথম কিছুদিন বাইরে থেকে খাবার কিনে মাইক্রোওয়েভে গরম করে খেতাম। এরপর মনে হলো খাবার গরম না করলে মাইক্রোওয়েভ নিয়েও চিন্তা করতে হবে না। দেখতে হবে না সেটা ঠিক মতো বন্ধ করেছি কি না। আমি ধীরে ধীরে আমার চা বানানোর ইলেকট্রিক কেটলি, মাইক্রোওয়েভ, চুলা, ফ্রিজ, ফ্যান ব্যবহার করা বন্ধ করে দিলাম। পাউরুটি, জেলি, কিছু ফল, চিপস, বিস্কুট আর ক্যানড খাবারের ওপর দিন পার করতে থাকলাম। একটা সময় এমন হলো, নখ কাটতে শুরু করলাম নিজের দাঁত দিয়ে কারণ নেইলকাটার দেখলে মনে হতো নিজের আঙুল কেটে ফেলতে পারি। আর সকালে ঘুম থেকে জেগে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে শুয়ে ভাবতাম, আমার কি কি চেক করতে হবে, কোথায় কোথায় কী ভুল হতে পারে। আমি পারতপক্ষে বাড়ি থেকে বের হওয়াও কমিয়ে দিয়েছিলাম। সাপ্তাহিক বাজার করা বাদে আমি আর কোথাও যেতাম না। আমি সব ধরণের ঔষুধ পর্যন্ত কিনে এনেছিলাম যেন আমাকে কোনো কিছুর জন্য ফার্মেসীতে যেতে না হয়।

দুই সপ্তাহ এসব করেই দ্রুত চলে গেল। আমি আমার নতুন এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। আমার প্রেমিক অফিসের ট্যুর শেষ করে দেখা করতে গিয়েছিল ওর বাবা-মায়ের সাথে। আমিই ওকে সেখানে আরও কিছুদিন থেকে আসার জন্য জোর করছিলাম। কারণ, ভয় পাচ্ছিলাম ও ফিরে আসলে হয়তো আমার অভ্যস্ত হয়ে থাকা জীবন আরও জটিল হয়ে যাবে। ততদিনে এমন অবস্থায় চলে গিয়েছি যে করিডোরে প্রতিবেশীদের পায়ের কিংবা গলার আওয়াজ শুনলে আমি বাইরে বের হই না। করিডোরে যখন পিনপতন নীরবতা নেমে আসে, তখন পা টিপে টিপে বের হোই। যেন ফ্ল্যাটের দরজার তালা অজস্রবার চেক করার সময় অন্য কেউ দেখে না ফেলে। আমাকে দেখে হাসাহাসি না করে। দিন দিন আমার এমন অবস্থা হয়ে গেল যে সপ্তাহের একদিন বাজার করার সময়েও বের হতে ইচ্ছে করে না। যে দিন বাজার করতে যাব তার কয়েকদিন আগে থেকে আমি বাড়ি-ঘরের সবকিছু অসংখ্যবার চেক করতে থাকি। বার বার বাজারের লিস্ট করি। আর মনে হয় যেদিনই কেনাকাটা করতে যাব সেদিনই কোনো না কোনো ভুলের কারণে ভয়ংকর কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে।

এরমাঝে আমার মা একদিন ভিডিও কল করে আমার কাজিনের সাথে কথা বলিয়ে দিল। আমি ওকে দেখে ভয়ংকরভাবে কেঁপে উঠলাম। একটা চকচকে ছবি বহুদিন স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে রেখে দেবার পর যেমন ম্লান হয়ে ওঠে, ওকে দেখে ঠিক তেমন কিছু মনে হচ্ছিল। ক্লান্ত, অসুস্থ। যেন দীর্ঘ যুদ্ধের পর এক পরাজিত সৈনিক। ওর আচরণও ছিল এলোমেলো, কথা যাচ্ছে জড়িয়ে। মাথায় চুল নেই। চোখের কোলে গাঢ় দাগ। ওকে দেখে মনে মনে আমি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছিলাম। একজন প্রাণবন্ত মানুষের একি অবস্থা? চৈত্রের খরায় যেভাবে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায় আমার তেমন এক ধরণের অনুভূতি হচ্ছিল। আমার কাজিন বিচিত্রভাবে নিজের ঠোঁট নাড়িয়ে জানাচ্ছিল যে, ডাক্তাররা বলেছেন ওর অবস্থা বেশ ভালো। পেছনে বসে বিষণ্ণভাবে মাথা নাড়ছিলেন আমার মা। এই কথোপকথন আমি আর নিতে পারছিলাম না, কোনোক্রমে কাজের বাহানা দেখিয়ে কল কেটে দিয়েছিলাম।

এরপরের কিছুদিন আমি আর স্বাভাবিক থাকতে পারিনি। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করত পৃথিবীতে যাদের আমার মতো এতকিছু নিয়ে ভাবতে হয় না, তারা ঠিক কতটা সুখী! তাদের জন্য জীবন কতটা সহজ? বিছানা থেকে নেমে চুলা ধরাতে আমাকে নিজের সাথে যে যুদ্ধ করতে হবে আমি কি সেটা কোনোদিন কাউকে বোঝাতে পারব? মনে হয় না। আমার সাথে আমার প্রেমিকের শেষ ঝগড়ার রাতেও আমি পারিনি। জুবুথুবু হয়ে নিজের খোঁয়াড়ের মধ্যে বাস করা বাদে আমার সম্ভবত আর কিছু করার নেই। দীর্ঘ সময় ধরে ঘরের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের চেকলিস্টের পাশাপাশি কখনও আমার কাজিন আর কখনও আমার প্রেমিককে আমি ভাবতাম। এভাবেই আমার দিনগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছিল।

তবে নতুন বছরের প্রথম দিন শুরু হলো ভিন্নভাবে। খুব ভোরে, আলো ফোটার আগে আমার কাজিন মারা গেল। আমার মা আগেই জানিয়েছিল ডাক্তাররা বলেছেন, তাদের দিক থেকে আর কিছুই করার নেই।

তবে নতুন বছরের প্রথম দিন শুরু হলো ভিন্নভাবে। খুব ভোরে, আলো ফোটার আগে আমার কাজিন মারা গেল। আমার মা আগেই জানিয়েছিল ডাক্তাররা বলেছেন, তাদের দিক থেকে আর কিছুই করার নেই। আর মাত্র অল্প কিছুদিন হয়তো বাকি আছে। আমার মোবাইলের গ্যালারিতে আমার কাজিনের সাথে যাওয়া নিউইয়ার পার্টির বেশ কিছু ছবি ছিল। ওর মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর আমি বিছানায় শুয়ে থেকেই মোবাইল গ্যালারি থেকে সেই পার্টির ছবিগুলো বের করে দেখতে শুরু করলাম। তখন আমার বাবা-মা আমাকে অনবরত কল করছিল। আমি জানতাম কলটা ধরলেই তারা আমাকে হাসপাতালে ডাকবে। তাই ফোনে এরোপ্লেন মোড দিলাম। এরপর আবার শুরু করলাম ছবিগুলো দেখতে। সব ছবিতে ও হাসছে কিংবা বিচিত্র মুখভঙ্গি করছে। আমি বুঝতে পারলাম, আমি ওর মৃতদেহ দেখতে চাই না, এমনকি শেষ ভিডিও কলটাও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে চাই। মনে রাখতে চাই ছবির উচ্ছ্বল চেহারাটুকু। মনে রাখতে চাই আমি শেষ যে পার্টিটায় গিয়েছিলাম সেখানে ও ছিল আমার সাথে।

আমি ভেবেছিলাম, বছরের প্রথম দিন থেকে আরেকটু নতুন করে সব শুরু করব। বেশ কিছু পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, মৃত্যুসংবাদটার জন্য সকালের অনেকটুকু সময় ব্যয় হয়ে গেল। দুপুরের দিকে আমি বিছানা থেকে উঠতে গেলাম, সাথে সাথেই মাথা উঠল ঝিমঝিম করে। চারপাশটুকু কেমন অন্ধকার ও ঘোলাটে। যেন অচেনা কোনো করিডোরে আমি বিভ্রান্তের মতো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিজের ঘরের দরজা খুঁজে যাচ্ছি। আর হারিয়ে যাচ্ছি অন্যকোনো জগতে। ঘোরলাগা দৃষ্টিতে আমি চারদিকে তাকাতে চেষ্টা করলাম। এত গুমোট অন্ধকার, এরমাঝে মোবাইলের স্ক্রিনের আলোটা এত তীব্র কেন? সেই তীব্র আলোয় বিছানা, দেয়াল সব সাদা। বিছানার সাথে ছোট্ট মনিটর, অজস্র তার। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়? আমি ভয়ে কেঁপে উঠে, শ্লেষ্মা জড়ানো কণ্ঠে সর্বশক্তি দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে করুণ আর্তনাদটা করতে চাইলাম। কিন্তু কোথাও কোনো শব্দ হলো না…

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

বাংলা কমিউনিটি ব্লগের স্বর্ণযুগে মূলত লেখালেখির হাতেখড়ি, সাহিত্য চর্চা এবং বই প্রকাশ। ব্যবসায় শিক্ষা ও হিসাববিদ্যায় পড়ালেখা করলেও শিল্প-সাহিত্যের দোরগোড়ায় তাকে ফিরে আসতে হয়েছে নিয়ত। প্রকাশিত গ্রন্থ : ‘গল্পগুলো বাড়ি গেছে’, ‘কাচবন্দি সিম্ফনি’ এবং ‘সাদা পালকের নির্জনতা’। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসে বসবাস।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।