আসভিচ : এক দুঃসহ স্মৃতি জাগানিয়া গ্রাম
শাকুর মজিদ
আমাদের পঞ্চপর্যটকের বয়ে নিয়ে যাওয়া ভ্যানটি ছুটে চলেছে ক্রাকভ শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে আসভিচ (Auswitch) নামের একটা ছোট্ট গ্রামে।
পোল্যান্ডের নতুন শাসনব্যবস্থার আওতায় নির্মিত ঢাউস হাইওয়ে, দু’পাশের অপরূপ ভূমিরূপ কোনো কিছুই মনকে ছুঁতে পারে না।
শীত কেটে গিয়ে গ্রীষ্মের শুরুতে হাইওয়ের পাশের বিস্তৃর্ণ ফসলের ক্ষেতে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে নবীন ফসলেরা। চোখকে টানে না সে সবুজ।
কারণ এমন একটা জায়গায় যাচ্ছি যেখানে ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাস, এই সময়ের মধ্যে এই জায়াগাটিতে হত্যা করা হয়েছিল প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ।
মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে স্পিলবার্গের বিখ্যাত সিনেমা ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’।
মাত্র তিন দিনের যুদ্ধ শেষে হিটলার সাহেব যখন পুরো পোল্যান্ড দখল করে নিলেন তখন তিনি এক অর্ডিন্যান্স জারি করলেন ইহুদি নিধনের। সেই প্রকল্পেরই অংশ হিসেবে পোল্যান্ডের প্রাক্তন রাজধানী ক্রাকভ শহরে নিয়োজিত জেনারেল ক্রাকভ শহরের ইহুদিদের মধ্য থেকে ২৪ জন কাউন্সিলর মনোনীত করে তাদের দায়িত্ব দিলেন ইহুদিদের একটি লিস্ট তৈরি করতে। এই লিস্ট অনুযায়ী ইহুদিদের নতুন আবাসস্থল তৈরি করে দেওয়া হবে এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সে সময়ে পুরো পোল্যান্ডে ধনী পরিবারগুলো ছিল ইহুদিরা। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রায় সবগুলোই ছিল ইহুদিদের দখলে।
শুরু হলো নাম লেখানোর পালা। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা নাম লেখালো সে লিষ্টে। ছেড়ে যেতে হলো তাদের ঘরবাড়ি, শিল্প কলকারকানা যাপিত জীবন সব।
শুরু হলো প্রতি পদে পদে ঠগবাজি। রাতের আঁধারে তাদের ওপরে জারি হলো নির্দেশ, তাদের এখনই নিয়ে যাওয়া হবে নতুন আবাসস্থলে। পুরো ক্রাকভ শহরের ইহুদিদের এক জায়গায় জড়ো করা হয় মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে। কয়েক ঘন্টার অভিযানে হত্যা করা হলো কয়েকহাজার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। স্টেশনের প্লাটফর্মে তাদের দুটো ভাগে ভাগ করা হলো। একভাগে কর্মক্ষম নারী-পুরুষ, আরেক ভাগে কর্মঅক্ষম নারী-পুরুষ এবং শিশু।
এই সেই স্পট। শিন্ডলার্স লিস্টের সেই লোকেশন। স্পিলবার্গ সাহেব যদিও এর কিছু অংশ শুট করেছিলেন হলিউডের সেটে, কিন্তু যে জায়গাটির আদলে তাকে বানাতে হয়েছিল কৃত্রিম-লোকেশন, আমরা এসে পড়েছি সেই মূল লোকালয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে কলংকময় অধ্যায় যে জায়গাটুকুতে ঘটেছিল, তাঁকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখব আজ।
বধ্যভূমির এই আসভিচ প্রায় পঁচিশ বর্গমাইল এলাকার পুরোটাই কাঁটাতারে ঘেরা। এটি এখন জাদুঘর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তার জীবন্ত সাক্ষী আসভিচ বধ্যভূমি।
আমাদের সবার কাছেই এ জায়গাটিকে বেশ পরিচিত মনে হয়। সেই পরিত্যক্ত রেলওয়ে স্টেশন। রেললাইনের শেষ মাথায় গন্তব্যহীন একটি ট্রেনের ওয়াগন, স্থিরচিত্রের মতো দাঁড়িয়ে।
যেতে যেতে দেখা হয়ে যায় সেই কাঁটাতারের বেড়া। তিন স্তরের কাঁটাতারের বেড়া মাঝের স্তরটিতে আবার থাকত হাই ভোল্টেজ ইলেকট্রিক লাইন। একটু পরে পরে ওয়াচ টাওয়ার, যে ওয়াচ টাওয়ারগুলোতে পাহারারত থাকত জার্মান এসএস বাহিনী। এখন ভাঙা ইট-ভাটার মতো পড়ে আছে পুরো লোকালয়। ভেঙে ফেলা হয়েছে প্রায় সবগুলো স্থাপনা। খা খা করা মাঠের মধ্যে কোথাও ওয়াচটাওয়ার, কোথাওবা একখানা লম্বাটে ঘর। এই যা।
১৯৩৯ সালে হিটলার যখন পোল্যান্ড দখল করে নিল তখন নাৎসি বাহিনী এই ব্যারাকটাকে তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করল। সে সময় হিটলার যখন ‘ফাইনাল সল্যুশন অব দ্য যিউশ কোয়েশ্চন ইন ইউরোপ’ বাস্তবায়ন করতে শুরু করল তখন তাদের একটি বধ্যভূমির দরকার পড়ল। এরকম একটি নিরিবিলি গ্রাম্য এলাকাকেই তারা বধ্যভূমি হিসেবে তখন বেছে নিয়েছিল।
প্যোলান্ডের সাবেক রাজধানী ক্রাকভ শহর থেকে ৫০ কিলোমিটর দূরের এই আসভিচ সে সময়ে ছিল একেবারেই শান্তশিষ্ট একটি ছোট্ট শিল্প শহর আর এটির নাম ছিল অসভিসিম। এখানে পোলিশ সৈন্যদের ছোট্ট একটা ব্যারাক ছিল। ১৯৩৯ সালে হিটলার যখন পোল্যান্ড দখল করে নিল তখন নাৎসি বাহিনী এই ব্যারাকটাকে তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করল। সে সময় হিটলার যখন ‘ফাইনাল সল্যুশন অব দ্য যিউশ কোয়েশ্চন ইন ইউরোপ’ বাস্তবায়ন করতে শুরু করল তখন তাদের একটি বধ্যভূমির দরকার পড়ল। এরকম একটি নিরিবিলি গ্রাম্য এলাকাকেই তারা বধ্যভূমি হিসেবে তখন বেছে নিয়েছিল।
হিটলারের এসএস বাহিনী যখন পোলিশ ব্যারাক দখল করে তখন এই এলাকায় জনসংখ্যা ছিল ১২০০। ১৯৪০ সালের ১৪ জুন বন্দিদের প্রথম চালানটি এসে এই ব্যারাকে পৌঁছে। তাদের মধ্যে ৭২৮ জন পোলিশ এবং ২০ জন ইহুদি বন্দি। সে সময় তারা এখানে একটি বড়োসড় বধ্যভূমি তৈরির পরিকল্পনা করে এবং আশপাশে প্রায় ৪০ বর্গকিলোমিটার ফাঁকা এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলে। এর নাম দেয় ‘ইন্টারেস্ট এরিয়া অব দ্য ক্যাম্প’। এবং আশপাশের সমস্ত লোকজনকে ক্যাম্প তৈরির কাজে স্বেচ্ছাশ্রমে বাধ্য করে। পরে যখন হাজারে হাজারে বন্দি আসতে থাকে এই ক্যাম্পে তখন তাদের দিয়েই নির্মাণ করা হয় তাদের জন্য নির্যাতন শালা।
এখন আমরা যে রাস্তাগুলোকে মসৃণ ঝকঝকে দেখছি সে রাস্তাগুলো সে সময়ে এতোটা মসৃণ ঝকঝকে তকতকে ছিল না। মাটির রাস্তায় মাইনাস ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বরফ জমে থাকত। আর বরফ গলে গেলে পানি কাদায় থকথক করত এই রাস্তা। আর সেই পানি কাঁদার ভিতর দিয়ে প্রচণ্ড শীতে অল্পকাপড়ে হাজার হাজার বন্দি আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা হেঁটে যেত। নতুন আশা নিয়ে, ‘কাজের বিনিময়ে মুক্তি’। কাজ করলেই মুক্তি মিলবে। কিন্তু তখনও তারা জানত না সামনে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।
সে-সময় প্রায় পঁচিশ বর্গমাইল এলাকা এরকম কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে আটচল্লিশটি ছোটো বড়ো ক্যাম্প নিয়ে ক্যাম্পের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল হিটলারের এসএস বাহিনী। তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো তিনটি ক্যাম্প হলো আসভিচ-১। এটি ছিল সবগুলো ক্যাম্পের হেডকোয়ার্টার, আসভিচ-২ [বির্কেনাও] এটি প্রথম ক্যাম্পের চেয়ে আকারে বেশ বড়ো, আসভিচ-৩ বা বুনা মোনোভিচ। এ তিনটি ছাড়াও আরও ৪৫টি ছোটো ছোটো ক্যাম্প ছিল।
হিটলারের এ বধ্যভূমিটি দেখার জন্য যে ট্যুরের ব্যবস্থা আছে তা আসলে শুরু হয় বির্কেনাও থেকে। গোডাউনের মতো কতগুলো সারি সারি ঘর। সেগুলো প্রত্যেকটি ছিল এক এক ধরনের নির্যাতন শালা, আজ তার প্রতিটিই জাদুঘর। এই জাদুঘরগুলো একে একে দেখে তবেই ফেরত আসব আবার এই বিশাল খোলা মাঠে, কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই দুঃসহ স্মৃতিমাখা জায়গাটুকুতে। এই জাদুঘরে ঢোকার আগে বেশ খেলামেলা জায়গা। পার্কিং লট। আহ! কী আরাম করে সারি সারি গাড়ি রাখা আছে এই লটে। অথচ এই খোলা জায়গাটিতেই এক সময় ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইহুদিদের নিয়ে এসে জড়ো করে রাখা হতো। ট্রেন থেকে নামার পরই দুটো ভাগ করে লাইনে দাঁড়াতেন বন্দিরা নাম লেখানোর জন্য।
এখানে চেয়ারটেবিল নিয়ে বসতেন এসএস বাহিনীর কর্মকর্তারা। বন্দিদের রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে তাদের জন্য একটি নাম্বার বরাদ্দ হয়ে যেত। তারপর সে নাম্বারটি ট্যাটু আকারে স্থায়ী ভাবে বসে যেত বন্দিদের হাতে।
আসভিচ বন্দিশিবিরের বন্দিদের মতো আমরাও গাইডের সাথে ভিতরে ঢুকে পড়ি।
আসভিচ বন্দিশিবিরে
আমাদের টিকেট কাটা আছে। টিকেটের সাথে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে হেডফোন এবং একটি ওয়ারলেস সেট। প্রত্যেক ট্যুরিষ্ট এই হেডফোন কানে লাগিয়ে রাখবেন। আমাদের সাথে যে গাইড আছেন তার কোনো হেড ফোন নাই, তার আছে মাইক্রোফোন। এই ক্লিপ মাইক্রোফোন তার শার্টের বোতামের সাথে আটাকানো। তিনি হেঁটে হেঁটে কথা বলবেন আস্তে আস্তেই, তার কথা সকল পর্যটকই শুনবেন নিজের হেড ফোনে।
যে ভদ্রলোক আমাদের গাইড হয়েছেন, তার গলার স্বর অতি মিষ্টি। ইংরেজি উচ্চারণটা এমন যে, অল্প ইংরেজি জানা যে কেউ খুব সহজে তার কথা বুঝতে পারবে। প্রথমে যে পরিচয়টুকু দিলেন, তা শুনে ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা। গত ১৬ বছর ধরে তিনি এই ক্যাম্পে ইংরেজিভাষী পর্যটকদেরকে নিয়ে আড়াই ঘন্টার এই গাইডেড ট্যুরটা করে এসেছেন। তিনি কথা বলেন অত্যন্ত ধীর এবং শান্ত লয়ে।
ভিতরে ঢুকতেই একটি গেট। ওপরে একটি সাইন বোর্ড, তাতে জার্মান ভাষায় লেখা ‘ARBET MACHT FRET’ যার ইংরেজি ‘Work makes you free’ কাজ করো এবং মুক্তি পাও। আদতে এটি ছিল বিশাল এক ধোঁকাবাজি।
এখানে আগত বন্দিদের প্রথমেই দুটো ভাগে ভাগ করে আনা হতো। কর্মক্ষম নারী-পুরুষ আর কর্মঅক্ষম নারী-পুরুষ এবং শিশু। কর্মক্ষম নারী-পুরুষদের ভাগ্যে জুটতো কাজ এবং বন্দিত্ব আর অক্ষম নারী-পুরুষ এবং শিশুদের ভাগ্যে জুটতো সাক্ষাৎ মৃত্যু।
এখানে আগত বন্দিদের প্রথমেই দুটো ভাগে ভাগ করে আনা হতো। কর্মক্ষম নারী-পুরুষ আর কর্মঅক্ষম নারী-পুরুষ এবং শিশু। কর্মক্ষম নারী-পুরুষদের ভাগ্যে জুটতো কাজ এবং বন্দিত্ব আর অক্ষম নারী-পুরুষ এবং শিশুদের ভাগ্যে জুটতো সাক্ষাৎ মৃত্যু।
কর্মক্ষম নারী পুরুষদের প্রথমে লাইনে দাঁড় করানো হতো এবং রোল কল করা হতো, সেই রোল নাম্বার লেখা থাকত হাতে স্থায়ী ট্যাটু আকারে। তারপরে তাদের গার্ড দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো স্থানীয় কারখানাগুলোতে। যেগুলোর অধিকাংশেরই মালিক হয়ে গিয়েছিল জার্মান এবং জার্মান অনুগত ব্যবসায়ীরা। সারাদিন কাজ শেষে আবার তাদের রোল কলের মাধ্যমে ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলা হতো।
আমরা এখন সেই গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। এই গেট দিয়েই ঢুকতে হয়েছে সবাইকেই। হয় সরাসরি মৃত্যুপুরীতে, নয়তো কাজের বিনিময়ে মুক্তির লোভে তাদের বন্দিসেলে। এখানেও তিন স্তরের কাঁটাতারের বেড়া। মাঝের কাঁটাতারের বেড়াটিতে থাকত হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ, স্পর্শ করার সাথে সাথে নিশ্চিত মৃত্যু।
আমরা একটা কাঁটাতারের বেস্টনী পার হয়ে কতগুলো ব্যারাকের সামনে এসে পড়ি।
এটি যখন পোলিশ সৈন্যদের ব্যারাক ছিল তখন এখানে ২০টি একতলা ব্যারাক ছিল। পরে এখানে আসা বন্দিদের দিয়ে এই একতলা ব্যারাকের চৌদ্দটির ওপরে আরও একতলা করে দ্বিতল ভবন বানানো হয়। এবং বন্দিদের দিয়ে আরও নতুন আটটি ভবন তৈরি করা হয়।
এবার একে একে এই চৌদ্দটি ব্যারাক আমাদের অতিক্রান্ত হতে হবে। এক একটি ব্যারাক, মানেই এক একটি জঘন্য পৈশাচিকতার ইতিহাস। আমরা প্রথম যে ঘরটিতে ঢুকলাম তার একদিকের দেয়ালে একটি ম্যাপ। গাইড দাঁড়িয়ে যান সে ম্যাপের সামনে।
এ সবই সেইসব দুর্বিসহ সময়ের সাক্ষী। মজার বিষয় হচ্ছে, হিটলারের লোকজন যখন এই ছবিগুলো তুলেছিল, তারা কেউই বুঝতে পারেনি, তাদের তোলা এই ছবিগুলোই কোনো এক কালে তাদের অত্যাচারের দলিল হিসেবে চিহ্নিত হবে।
ট্রেন থেকে নামানো হচ্ছে হাজার হাজার হতভাগ্য বন্দিকে। বন্দিদের সাথেই থাকত বড়ো বড়ো সুটকেস এবং ঝুড়ি। তাদেরকে তখন বলা হয়েছিল তোমাদের জন্য নতুন আবাসস্থল দেওয়া হবে। আর প্রত্যেকটি পরিবার ৫০ কেজি ওজনের জিনিসপত্র নিয়ে আসতে পারবে। বিশ্বাস করেছিল এই মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে।
একটা আলোকচিত্রে দেখা যাচ্ছে, ট্রেন থেকে নামানো হচ্ছে হাজার হাজার হতভাগ্য বন্দিকে। বন্দিদের সাথেই থাকত বড়ো বড়ো সুটকেস এবং ঝুড়ি। তাদেরকে তখন বলা হয়েছিল তোমাদের জন্য নতুন আবাসস্থল দেওয়া হবে। আর প্রত্যেকটি পরিবার ৫০ কেজি ওজনের জিনিসপত্র নিয়ে আসতে পারবে। বিশ্বাস করেছিল এই মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে। তাই সে সময়কার ধনিক শ্রেণির এই ইহুদিরা তাদের সহায় সম্পত্তির মূল্যবান জিনিস পত্র নিয়ে ট্রেনে সোয়ার হয়ে এসে নামত এই বার্কেনাভ স্টেশনে। রেল স্টেশনে নেমেও তারা বুঝতে পারত না তাদের জন্য কী অনাচার অপেক্ষা করছে কিছুক্ষণের মধ্যে। সে কারণে এই আলোকচিত্রে সদ্য ট্রেন থেকে নেমে আসা যাত্রীদের চেহারার মধ্যেও নেই কোনো উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
অথচ এই প্লাটফর্ম থেকেই প্রথমে বন্দিদের নিয়ে আসা জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে একটা ব্যারাকে জমা করা হতো। সে ব্যারাকের নাম দেওয়া হয় ‘কানাডিয়ান ব্যারাক’। সে সময় কানাডা ধনে-সম্পদে সম্পদশালী হিসেবে গণ্য ছিল বলেই হয়তো এমন নাম ছিল তার।
সেই সব স্যুটকেস এবং ঝুড়িগুলো এখনও আছে এই জাদুঘরে। তবে তা আছে প্রায় বিশফুট লম্বা কাচের শো-কেসের মধ্যে।
আরও একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে চশমার শোকেস। সে সময়ে আগত বন্দিদের শরীর থেকে সবকিছু খুলে নেওয়া হতো। একদম নেংটো অবস্থায় তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো। তারপর তাদের পরিয়ে দেওয়া হতো নীল এবং স্টাইপের কয়েদি পোশাক। সে সময় বন্দিদের যত চশমা জড়ো হয়েছিল তারই একটা ক্ষুদ্র অংশ এই কাচের শোরুমের মধ্যে জড়ো হয়ে আছে।
চশমার শোকেশটা পেরিয়ে একটু সামনে গেলেই জুতার শোকেস।
এসব জুতোর বেশির ভাগই শিশুদের। ১২ বছরের কম বয়সী শিশু যেহেতু তাদের কোনো কায়িক শ্রমই দিতে পারবে না, সুতরাং এই ক্যাম্পে এসে জড়ো হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের মৃত্যু কূপে ফেলে দিতে হবে। গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মেরে ফেলার আগে পরনের কাপড়চোপড়ের সাথে পায়ের যে সকল জুতা ছোট্ট, অবোধ শিশুরা খুলে রেখেছিল, তা দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে এই শো-কেস।
ক্যাম্পে এসে জড়ো হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাদের মৃত্যু কূপে ফেলে দিতে হবে। গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মেরে ফেলার আগে পরনের কাপড়চোপড়ের সাথে পায়ের যে সকল জুতা ছোট্ট, অবোধ শিশুরা খুলে রেখেছিল, তা দিয়ে সাজিয়ে রাখা আছে এই শো-কেস।
আর যারা সে যাত্রায় কিছুদিনের জন্য বেঁচে যেত, বন্দিদশার কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের জুতা খুলে নেওয়া হতো এবং তাদের পরিয়ে দেওয়া হতো কাঠের জুতা। এই কাঠের জুতা পরার কারণে অনেকের পায়ে গ্যাংগ্রিনের মতো অসুখ হতো।
একটা আলোকচিত্রে দেখি কতগুলো লোক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে। সকাল বেলা বন্দিদের প্রথমে লাইনে দাঁড় করানো হতো। এ সময় একটি বাজনা বাজানো হতো। এই বাজনা আসলে বন্দিদের মনোরঞ্জনের জন্য বাজানো হতো না। বাজানো হতো মিউজিকের তালে তালে মার্চ করার জন্য। তালে তালে পা মেলানোর সময়ই এসএস বাহিনী বন্দিদের গণনার কাজটি সেরে নিত।
শিশুদের গণনার বেলায় আবার মিউজিক পরিবর্তন করা হতো। তাদের শারিরীক কাঠামোর ভিন্নতার কারণেই মিউজিকের পরিবর্তন। হায়রে মানুষের জ্ঞান, হায়রে তার প্রয়োগ! সোভিয়েত রেড আর্মি এই বন্দিশালা থেকে যখন বন্দিদের মুক্ত করে তখন তারা এখান থেকে প্রায় ৩৮ হাজার জোড়া পুরুষ জুতা এবং প্রায় ৫ হাজার জোড়া নারী জুতা উদ্ধার করে।
আর সেই উদ্ধার করা জুতাগুলোই আমাদের সামনে এই শো-কেসের মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
গাইডের পিছে পিছে আমরা হাঁটতে থাকি। এসে দাঁড়াই অন্য একটি শো-কেসের সামনে। এখানে বন্দিদের চুল। হরেক বর্ণের, হরেক দৈর্ঘের। লম্বাচুল, ছোটো চুল, সোনালি চুল, কালো চুল, বেণী করা চুল, বেণী ছাড়া চুল।
সোভিয়েত রেড আর্মিরা শেষের দিকে যে চুলগুলো উদ্ধার করেছিল সেই চুলগুলোই সাজিয়ে রাখা হয়েছে এই জাদুঘরের শো-কেসগুলোতে।
এসব দৃশ্য আসলে আমাদের আর দেখতে ইচ্ছা করে না। আমরা উসখুশ করতে থাকি। একবার ভাবি, গাইডের কাছে হেডফোন জমা দিয়ে চলে যাই। ঐ দিকে কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর বেশ বড়ো খালি মাঠ, সেই মাঠে লোকজন তেমন নেই। সেখানে গিয়ে একা একা বসে থাকি। দুই ঘন্টার এই ট্যুর শেষ হবে সেই মাঠে গিয়ে। কিন্তু একা একা বেরোনোও যাবে না। আমাকে দলের সাথেই থাকতে হবে। আমাদেরকে আরেকটি ক্যাম্পের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়।
একটি শো-কেসের মধ্যে দেখি বড়ো বড়ো বেডসিট সাজিয়ে রাখা। এগুলো আসলে হসপিটালের বেডের চাদর। এখানে তাহলে বন্দিদের জন্য হসপিটালও ছিল? হ্যাঁ ছিল। সে হসপিটাল ছিল আসলে মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অথবা রোগ নিরাময়ের জন্য বন্দিদের পাঠানো হতো এই হসপিটালে। যেখানে আসলে মানুষকে গিনিপিগ বানানো হতো। বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করা হতো এইসব মানুষদের ওপরে। সোভিয়েত রেড আর্মিরা যখন এই বধ্যভূমি দখল করে তখন এই হাসপাতাল থেকে প্রায় তিন হাজার নারী এবং শিশুকে তারা উদ্ধার করে। এখানে এই হাসপাতালে যারা একবার ঢুকেছে তাদের কাউকেই আর জীবিত ফিরে আসতে দেখেনি বন্দিশিবিরের কেউ। সে কারণেই এই হাসপাতাল ছিল নিশ্চিত মৃতপুরী।
ভালো লাগে না ৬ বছর ধরে চালানো নির্যাতনের স্মারক এসব চিহ্ন। বেরিয়ে আসি জাদুঘর থেকে। আমি বাইরে এসে আরেকটা ক্যাম্পের সিঁড়ির ওপর বসে থাকি। পাশাপাশি দুটি ব্লকের মাঝখানে দেয়ালের সামনে আরেকটি ছোট্ট দেয়াল। তার পিছনে একটি পতকা উড়ছে। পতাকাটি তখনকার বন্দিশিবিরের বন্দিদের পোশাক দিয়ে বানানো।
ভালো লাগে না ৬ বছর ধরে চালানো নির্যাতনের স্মারক এসব চিহ্ন। বেরিয়ে আসি জাদুঘর থেকে। আমি বাইরে এসে আরেকটা ক্যাম্পের সিঁড়ির ওপর বসে থাকি।
পাশাপাশি দুটি ব্লকের মাঝখানে দেয়ালের সামনে আরেকটি ছোট্ট দেয়াল। তার পিছনে একটি পতকা উড়ছে। পতাকাটি তখনকার বন্দিশিবিরের বন্দিদের পোশাক দিয়ে বানানো।
এই সেই কুখ্যাত জায়গা। ফায়ারিং স্কোয়াড। যে সব বন্দি এসএস বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত, অথবা পালানোর পায়তারা করত অথবা এসএস বাহিনীর কথা শুনত না, তাদের এই ফায়ারিং স্কোয়াডে এনে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করা হতো। এই ফায়ারিং স্কোয়াডে ৬ বছরের বদ্ধভূমির বয়সকালে কখনো রক্তের দাগ শুকায়নাই।
বামের এই ব্যারাকটি দশ নাম্বার ব্লক। এই ব্লকের একটি অংশকে পৃথক করে নিয়ে একটি অফিস কক্ষ বানানো হয়েছিল সে সময়ে। যাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হবে তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করা হতো এখানে। তার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হতো পাশের এই কক্ষে। এখানে তাদের কাপড়চোপড় খুলে গোসল করানো হতো। সেই গোসলখানাটা এখনও আছে। সেখানে কয়েদিদের কাপড়চোপড় এখনও সেরকমই পড়ে আছে। তবে প্রকৃত যে দেয়ালটি এখানে ছিল, তা নেই। ওয়ারশো, ক্রাকভে যখন জার্মান বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে তখন খুব তাড়াহুড়া করে জার্মান বাহিনী এই বধ্যভূমি থেকে পালানোর তোড়জোড় শুরু করে। সে সময় পালানোর আগে তারা এই বদ্ধভূমিতে তারা যে নির্যাতন চালিয়েছে তার সব স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার অংশ হিসেবে ফায়ারিং স্কোয়াডের এই দেয়ালটিও ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তীতে বন্দিদের জবানি শুনে হুবহু সেই দেয়ালের আদলে এই দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়।
আমাদের সামনে নতুন করে বানানো সেই বিখ্যাত দেয়ালটি। তার পিছনে পত পত করে উড়ছে কয়েদিদের পোশাক দিয়ে বানানো পতাকা। আর সামনে, ঠিক যেখানে মানুষদের দাঁড় করিয়ে চোখে অপর মানুষেরা তাদের গুলি করে হত্যা করত, সেখানে এখন কয়েকটি ফুলের তোড়া। এসব ফুল এই জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সাজানো নয়। এখানে যারা বেড়াতে আসেন, তারাই সাথে করে নিয়ে এসে সেই সব শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে রেখে যান।
আমাদের সামনে নতুন করে বানানো সেই বিখ্যাত দেয়ালটি। তার পিছনে পত পত করে উড়ছে কয়েদিদের পোশাক দিয়ে বানানো পতাকা। আর সামনে, ঠিক যেখানে মানুষদের দাঁড় করিয়ে চোখে অপর মানুষেরা তাদের গুলি করে হত্যা করত, সেখানে এখন কয়েকটি ফুলের তোড়া। এসব ফুল এই জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সাজানো নয়। এখানে যারা বেড়াতে আসেন, তারাই সাথে করে নিয়ে এসে সেই সব শহিদদের স্মৃতির উদ্দেশে রেখে যান।
ফায়ারিং স্কোয়াডের পাশের যে দুটি ব্লক দেখা যাচ্ছে এই ব্লক দুটি সেই কুখ্যাত দুটি ব্লক— দশ এবং এগারো। বায়ের দিকের ব্লকটি দশ নাম্বার ব্লক। এখানে যুবতী বন্দিদের রাখা হতো। তাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে পিশাচ ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাত। ঔষধ এবং কেমিক্যালের প্রভাব পরীক্ষা করা হতো জীবন্ত বন্দিদের ওপরে।
পিশাচ সেই ডাক্তারদের মধ্যে দু’জন বিখ্যাত হয়ে আছেন ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে। একজন প্রফেসর ডা. কার্ল ক্লোবার্গ অপরজন ডা. যোসেফ মেঙ্গেলা।
এই ছোট্ট সেলগুলোতে প্রায় এক দেড়শো বন্দিকে একবারে ঢুকিয়ে এর দরজাটা বন্ধ করে দেওয়া হতো। দরজা বন্ধ করার সাথে সাথে অক্সিজেন প্রবেশের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যেত। তার পরেও রুমের ভিতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হতো যাতে করে খুব তাড়াতাড়ি রুমের অক্সিজেন নিঃশেষ হয়ে যায়।
ডানের ব্লকটি এগারো নাম্বার ব্লক। এটি ডেথ ব্লক। এটি জেলখানার ভিতরে জেলখানা। এটার ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বেশ কয়েকটা সেল। এই সেলগুলোর কোনো জানালা বা ভেন্টিলেটার নেই। এই ছোট্ট সেলগুলোতে প্রায় এক দেড়শো বন্দিকে একবারে ঢুকিয়ে এর দরজাটা বন্ধ করে দেওয়া হতো। দরজা বন্ধ করার সাথে সাথে অক্সিজেন প্রবেশের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যেত। তার পরেও রুমের ভিতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হতো যাতে করে খুব তাড়াতাড়ি রুমের অক্সিজেন নিঃশেষ হয়ে যায়। এভাবে অক্সিজেনের অভাবে একসময় দম বন্ধ হয়ে মারা যেত বন্দিরা।
ভালো লাগে না, মাথাটা ভারী হয়ে আসে। বেরিয়ে আসি সামনের রাস্তায় প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেব বলে। নিশ্বাস আটকে আসে। আর যে জায়গাটাতে দাঁড়িয়েছি তার পাশের ব্যারাকের দেয়ালের সাথে একটি ছবি। একসারিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে কয়েকজন বন্দিকে। সে সময়ের আলোচিত্র। এই ফাকা জায়গায় একটি লম্বা ফাঁসিকাষ্ঠ বানিয়ে একসাথে ১৪ জন পোলিশ বন্দিকে একবারে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে মারা হয়।
আশেপাশে তাকাই। প্রতিটি স্থাপনা, প্রতিটি ইটকাঠ, প্রতিটি ধূলিকণা লক্ষ লক্ষ প্রাণের নির্যাতনের ফলে মুত্যুর সাক্ষ্য বহন করছে।
ভালো লাগে না এই নির্যাতনখানা। একটু দূরে আরেকটি বধ্যভূমি আছে অসভিচ টু; যার নাম বার্কেনাভ। সেখানে বোধ হয় নির্যাতনের মাত্রা কম ছিল। ছুটতে থাকি সে বার্কেনাভ-এর দিকে।
যেতে যেতে দেখা হয় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নিদর্শন।
যে গেট দিয়ে ঢুকেছিলাম, সেই গেট দিয়ে বেরিয়ে আসতেই চোখে পড়ে, ফটকের গায়ে কতগুলো তরতাজা লাল ফুল এঁটে রেখে গেছেন কোনো পর্যটক। ফুলগুলোর অনেকটাই আমাদের চেনা। কোনোটি লাল গোলাপ, কোনোটি গাঁদা ও কোনোটি রক্তজবা। এখনো যেকোনো ইহুদি পর্যটক এই বধ্যভূমির জাদুঘর দেখতে খালি হাতে আসেন না। তাদের হাতে থাকে ফুল। নাৎসী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারানো স্বজাতির প্রতি ভালোবাসার এই সশ্রদ্ধ প্রকাশ তাদের।
ধারাবাহিকটির অন্য পর্বগুলো পড়ুন :
পোল্যান্ড : লেস ওয়ালেসার দেশ ।। পর্ব-০১
পোল্যান্ড : লেস ওয়ালেসার দেশ ।। পর্ব-০২
পোল্যান্ড : লেস ওয়ালেসার দেশ ।। পর্ব-০৩
পোল্যান্ড : লেস ওয়ালেসার দেশ ।। পর্ব-০৪
পোল্যান্ড : লেস ওয়ালেসার দেশ ।। পর্ব-০৫
পোল্যান্ড : লেস ওয়ালেসার দেশ ।। পর্ব-০৬
পোল্যান্ড : লেস ওয়ালেসার দেশ ।। পর্ব-০৭
জন্ম ২২ নভেম্বর, ১৯৬৫। তিনি একজন বাংলাদেশি স্থপতি, নাট্যকার, তথ্যচিত্র নির্মাতা ও চিত্রগ্রাহক। ভ্রমণকাহিনি ও জীবনী সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।