পুনর্জন্ম
বোবা এ শহরে আমি আর্তনাদ, আমি খুন
আমিই অন্ধের দলপতি
নিশিডাক পেয়েছে যে ঘোড়ানিম গাছ, তার
পত্রবজালে গোপন সম্মতি, লিখে রেখে
ঝিরিপাতা ঝরে ঝরে যায়
এই জন্মভোরে—
আমি চিৎকার, ডেটলগন্ধে সেলাইমুখ
রক্তরেখা ধরে
মায়ের জঠরে যে শিশু আবারও জন্মায়
এ বেদনা বজ্রাহত, এই ভার অলকের
এ বেদনা বজ্রাহত, এই ভার অলকের
দাঁড়িয়েছো অবনত; দূ-রে
চরাচরে রোদ নামে, কুয়াশা পাহাড়ে
তবু শীতকাল কোনদিন আসবে না আসবে না আসবে না
ঝড় ছাড়া হাওয়া কারো বার্তাবাহক নয়,—
এ সত্য যত গোপন, তত বজ্রগন্ধময়
নির্ভরতা
আর সবার মতো, তুমিও, রাখোনি হাত
ক্ষয়ে যাওয়া বিবর্ণ দেহে
প্রচণ্ড জলের রাতে, হাত থেকে পড়ে গেছে নিরীহ পেয়ালা
প্রতিবার দূরত্ব পেরিয়ে এসে, লিখেছি—
……………………………… চি-ৎ-কা-র
আর সবার মতো, তুমিও, রাখোনি খোঁজ
স্তনে শিশুমুখ, নির্ভরতার…
দেয়াল
আমাকে অতিক্রম করে এগোতে পারো না বলে, দেয়াল,
…………………………………………..দাঁড়িয়ে আছো দেয়ালে
এই স্থির, অবিচল ভঙ্গির ভেতর গৌরব আছে, বেদনাও
তোমাকে পাহারায় রেখে, সম্পর্কের হাতে তুলে দেয়া
সন্দেহতালা—চিরদিন তোমার সম্মুখে গড়ায়, পায়ের তলায়
চাপা পড়ে থাকে তোমার গম্ভীর চোয়াল, চিৎকার
অজস্র ফাটল নিয়ে, দেয়াল, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো দেয়ালে
মদ
অজস্র যুদ্ধের দাগ মুছে দিয়ে, আততায়ী, বিপরীত
বাতাসে ফিরিয়ে নিলে মুখ
জনশ্রুত গল্পের নায়িকার মতো গুচ্ছ চুমুর বিনোদন
নগড়জুড়ে অহেতু গুঞ্জরিত আজ
যেন কিছু প্রশ্ন, কিছু সন্দেহ অধ্যুষিত এই ভিনদেশি পোতাশ্রয়ে
খুব গোপনে ফেলে এসেছো, প্রেমিকার স্তনজুড়ে
কারো দন্তক্ষতের মালা
প্রশ্রয়
আগুনকে দিয়ে কিছু কাঠ, শুকনো খড়; পেয়েছি এই বনপোড়া ছাই
আপন ছায়ার পাশে দাঁড়িয়ে বহুদিন যুগলবন্দনায় জেনেছি,
ছায়াবেশে সে এক ক্ষুব্ধ আততায়ী
ঈর্ষা গোপন রেখে সে কেবল এতটা পথ ধরে এসেছে
তার চোখ কি নীল? নোনা? বাতাবিবেদনার আবরণ খুলে
সেও কি চিনতে পারে জীবনের গোপন ঘাতক?
পাথরকে দিয়ে মৃদু টোকা, কিছু ঘর্ষণ; পেয়েছি এই ছাইচাপা আগুন
আগুনকে দিয়ে কিছু কাঠ, শুকনো খড়; পেয়েছি এই বনপোড়া ছাই।
মৃত্যু
মহাসমুদ্রের কোনো বিষণ্ণ সৈকতে, গুমোট বালির ভেতর, অনুদ্ধারে
চাপা পরে আছে এক চিৎকার;
……………………… আমার জন্ম সেই ঘুর্ণিধাঁধা থেকে
আমার মৃত্যু হবে সমুদ্রের কোনো গোপন চোরাবালিতে
মা
সময়ের অনন্ত ফাটলের ভেতর তোমার মুখ,
……………………..রূপকথার মতো,
…………………………………….ঈষৎ অনুপস্থিত।
কোলবদলের দিনে, দোলনা ঠেলে ঠেলে যে গান শুনিয়েছিলে,
আজ তার স্বরলিপি রক্ষিত নেই কোথাও। কেবল অস্পষ্ট রেখার মতো,
‘এইখানে কিছু একটা ছিল’—আর তা হাতড়ে যতটুকু যাওয়া যায়,
……………………………………………..ততটুকুই তুমি
মা, কোনো অবয়বে নেই, কোথাও থাকে না
কল্পকথার ভেতর হঠাৎ ঢুকে পড়া কোনো মুখ, অসমাপ্ত গল্পের
পত্রে লেখা, মা
বোকা বনে গেছি বুঝি আজ
নিদাঘের উঁচু ঐ দেয়াল টপকে, ওপারে রূপকথা,
………………………………ঝিল্লিঘ্রাণ
মা—
অনন্ত জিজ্ঞাসার পাশে নতজানু হয়ে থাকি, যতিচিহ্ন হয়ে থাকি
এভাবে এভাবেই মৃত্যু থেকে শৈশব হামাগুড়ি দিয়ে চলা
আমি কি মানুষ তবে? হাড়েরবেদনা থেকে জন্ম নেয়া পাপ? অনাহুত?
চিরবৃক্ষের গোপন ব্যথা মুছে আজ এ প্রশ্ন নিয়েছে পিছু।
শোকে চিতার আগুন নেভে না জেনেও মানুষ যেমন শোকগ্রস্ত হয়…
বীনা রায় অথবা প্রাক্তন প্রতিবেশির স্মরণে
যে ডাকঘরে ডাকগাড়ি যায়নি কোনোদিন সেখানেও পত্র পৌঁছায়
তোমার পুরুষ কবে কার ছিল, সে প্রশ্ন আমাকে করো না
প্রশ্নরা উত্তর প্রত্যাশী শুধু নয়, অজস্র প্রশ্নের উদ্গাতা
শুধু জেনো—
আমি সেই লোকাল, লোকাল ট্রেন, পরিত্যক্ত জেনেও
প্রতিটি স্টেশনের কুশল জেনে যাই…
জন্ম ২০ আগস্ট, সোমবার। সাল ১৯৭৯। অধুনালুপ্ত রাজশাহী মিশন হাসপাতাল। গ্রামের বাড়ি বগুড়া হলেও আশৈশব বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গের শান্ত শহর দিনাজপুরে। বাবার চাকরিসূত্রে। হিসাববিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স বগুড়া সরকারী আযিযুল হক কলেজ থেকে। কর্মজীবন শুরু অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের মাধ্যমে, ২০০৫ সাল থেকে। এখনো গণমাধ্যমে কর্মরত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘আততায়ীর চোখ’, ‘গোরখোদকের গান’। ছোটোগল্প সংকলন ‘তিন টেউড়ি’। সাক্ষাৎকার গ্রন্থ ‘কথার রূপকথা’ ও ছোটদের জন্য লেখা ছড়াগ্রন্থ ‘টাপুর টুপুর মেঘের দুপুর’। সম্পাদিত ছোটোকাগজ ‘সুতরাং’।