রবিবার, নভেম্বর ২৪

বিজয় আহমেদের কবিতা : পীর শেখ ফরিদ ও অন্যান্য কবিতা

0

কন্যাকে শোনানো গান


মাঘ যাবে পৌষ যাবে, আমি যদি পিতা
তুমি কন্যা ধরো ফুল যমুনা-দুহিতা।
হাওয়া ভেঙে জাগে নীল জরির জাহান
ধরে দ্যাখ পিতা-বুকে জেগেছে আসমান।

তোর মা তো মৃদু হাসে যেন-বা ঘাসফুল
তুই তো বাছুর তার বুকেতে ব্যাকুল
খির দিলো সিন্নি দিলো দিয়েছে বাতাসা
জমিনের বুকে মায়া নির্জন তামাশা।

নদী ছোঁয়া সূর্য পাখি থাকো কত দূরে
গড়েছে আবাস মাংস, ত্বক কিংবা হাড়ে
সুতীব্র মাস্তান মাছ গোপন আউলিয়া
হয়েছো উড্ডীন জানি বুলবুলে চড়িয়া;

জবরদস্ত এক পাগড়ি শীত টেনে আনে
কসমিক পার্পেল আজ মরে কোনখানে?
রাখালের মেয়ে তুই কাজলের কালো
বাঘাড়ের মতো প্রেম তীব্র হোক ভালো।

মাঘ যাবে পৌষ যাবে, আমি যদি পিতা
তুমি কন্যা ধরো ফুল যমুনা-দুহিতা।
হাওয়া ভেঙে জাগে নীল জরির জাহান
ধরে দ্যাখ পিতা-বুকে জেগেছে আসমান।


আমিও আসমান


পইড়ো না জিনের হাতে দোহাই আল্লার সমঝে থাকো
আউলা খোঁপার আঁচে যেন এই মহল্লা না-কাঁপে
তোমারে বুকেতে চাই, যদিও জিনেরে ভয় পাই
তুমি খলিফার মাইয়া আধাআধি চন্দ্র লাগা নারী।

খুইলো না খোঁপার লাল, খুইলো না দু-বুক রাত্রি-দিনে
ফেইলো না আচল জলে, ঢাইকা রাখো শালুকের তিল
শরমের হাসি রাইখো তুমি গোপন অতলে যেন মাছ
তুমি ঋজু-শ্যামা বোরো ধানি মেয়ে সেগুনের গাছ।

দোহাই আল্লার তুমি সামলে রাখো যমুনা-জমিন
তিলের খলবল আর হাসির ঝলমল গুপ্ত রাখো
জিনের দঙ্গল যেন তোমার খোঁজ না পায় সোনা
যে দস্যু বনহুর যেন সে আর না পায় গন্ধ কোনো।

পইড়ো না জিনের হাতে; ইরান তুরান দেশে তুমি
যাইয়ো না তো চৈত্রদিনে জিন-যুবকের কান্ধে চড়ে;
তুমি বাংলা মেয়ে, রূপসী শ্যামার মতো উড়াধুরা
আমি বাঞ্চা করি, রূপকথা নয়, সত্যি বাঞ্চা করি;
তুমি খলিফার মাইয়া, যেন তলোয়ার, সুপ্ত থাকো
আয়নায় না-রাখো চোখ পানিতেও না, নাতো দল্লিবিলে
নিজের তুমুল রূপ, অখ্যাত অজ্ঞাত থাক তবু
নিজেরে গুটাও ফুল, নিজেরে গুটাও স্বর্গে থাকো
যদিবা পুরুষ চাও, বেহরম আমাকেই ডাকো।

যখন পিপাসা আহা উথাল পাথাল থরো থরো
আসমানে মিলেছে নুর-পক্ষি আসমানের চেয়ে বড়ো;
দোহাই আল্লার তুমি মোনাজাতে আমাকেই চেয়ো
কাজা নামাজের শেষে, আমাকেই তপ্ত দিল দিয়ো।
খলিফার মাইয়া তুমি, দুই ডানা বেহেশতের কাছে
আমিও আসমান জাইনো ডাকাবুকা আসমানের নিচে।

তুমি বাংলা মেয়ে, রূপসী শ্যামার মত উড়াধুরা
নিজেরে গুটাও দোহাই আল্লার লুকাও সুবাস
লুকাও নীলাভ তিল, দুস্তনের ভাঁজে রাখা ত্রাস
খুইলো না খোঁপার জাদু, উরু পিঠ বেদম একরোখা
আসমানে রাখিলে চোখ শোনো আমারেই পাবে দেখা।

পইড়ো না জিনের হাতে দোহাই আল্লার সমঝে থাকো
পইড়ো না দস্যুর হাতে, আসমান জমিনে গুপ্ত থাকো
‘রুখকে রুখকে’ বলে ছুইড়া ফেলো তুমি কুর্চি-পমেটম
আমারেই চাও দরবারে খোদার, প্রেমে যে সক্ষম।

জিনের দঙ্গল যেন তোমার খোঁজ না পায় সোনা
যে দস্যু বনহুর যেন সে আর না পায় গন্ধ কোনো।
খলিফার মাইয়া তুমি, দুই ডানা বেহেশতের কাছে
আমিও আসমান জাইনো ডাকাবুকা আসমানের নিচে।


পীর শেখ ফরিদ-১


আসমান কার গো বুক যায় না জড়ানো। পূর্নিমায়
যমুনা উজার যদি, তুমি কেন কাঁদো অভিশাপে।
যে বাথানে নাম লেখা নেই, তার কাঁধে খোঁজো স্মৃতি
কিছুটা নির্ভার হলে, চুম্বনের স্মৃতি যায় উবে;

জলের মিম্বর ঠেলে ফরিদ শেখের চাঁদ আজ
উঁকি দেয়; রমণীরা পরি হলে, পরাজিত ডানা।
গঞ্জে কতকিছু মেলে, সুবাস তবুও অজানার
গ্রামে আজ পত পত করে পরী উড়ে যায়, ওড়ে।

চন্দ্রের স্তনের খাঁজে নারী তার ফুল রেখে গেছে
আজ মাতোয়ারা এই পূর্ণিমা, উদ্দেশ্যে তার ভাসে
নিরুদ্দেশ কভু তীব্র হতে পারে জেনে মরে যাই
বলেছো, ‘বেহেশত দেখো নাই, যাও নাই নরকেও’।

জলের মিম্বরে চড়ে বসো পির হে শেখ ফরিদ
আসমানে আসমানে ভাঙা বুক আর পূর্ণিমার ঈদ
যমুনা উথাল হলে খোদার আরশ কাঁপে জানি
বাঘারের পিঠে চড়েছে দুনিয়া যেন-বা কুরবানি
কোথায় গিয়েছো— শেখ ফরিদ, পালিয়ে এই ভূমি?
চন্দ্রের উন্মুখ প্রাণ, জলের মিম্বর ধরে টানে।
নফল নামাজ শেষে, মা যদি গো বুঝে গেল হায়
চৌত্রিশ বছর চলে, কোথায় তাহার পুত্র, কন্যা—
তাহার বেদনাভার, কোথায় লিখিত হবে, বলো?

জলের মিম্বরে চড়ে বসো পির হে শেখ ফরিদ
আসমানে আসমান মিলে, যমুনায় মিলে আহা মাছ
নামাজে নিমগ্ন কেউ, মাতা নাকি জলের ওপরে?
জলের মিম্বরে চড়ে বসো পির হে শেখ ফরিদ;


পীর শেখ ফরিদ-২


পাখির পিঠে বসেছে চড়ে শেখ ফরিদ
মাছের পিঠে মারো চাবুক শেখ ফরিদ;

আসমান কি আজ ডাকছে অধীর নীল
তোমার বুকে উড়ছে তিন চক্ষু চিল;

নিজের পিঠে চাবুক মারো শেখ ফরিদ
নিজ পশুর দখল রাখো শক্ত হাতে।

পাখির পিঠে বসেছে চড়ে শেখ ফরিদ
মাছের পিঠে মারো চাবুক শেখ ফরিদ;


পীর শেখ ফরিদ-৩


‘আসমান আসমান’ কারে ডাকে, খুলে বুক ডালিমের
তারো পথ, আরো দূর কোনো তারা, পথভুলা আহা
বুকের গভীরে লাল যেন-বা রাখাল কই যাবে?
কোথায় বা লেখা পক্ষী কোনো রমণীর ঘাড়ে, পিঠে
বোশেখের দিন গেল গজারের ঘাই গেল প্রাণে
খোদার রহম পেলে জানি তুমি ফলের সুবাসে
জিনের তাকত জিন্দা থাকে জেনো অসীম ভূমিতে
কোথাও মজলুম তুমি, পরিচয়হীন, মরে যাবে!
‘আসমান আসমান’ কারে ডাকে উঁচু উঁচু তারা, স্তনে
কলঙ্ক নিয়েছো বুঝে হিরকের, কোন সে কুক্ষণে!


পীর শেখ ফরিদ-৪


তোমার আত্মায় মনে হয়, শুধু নরোম সুগন্ধি;
দূর খোরাসান নয় ভাবো বোরোখেত, কিংবা ভাবো
হাওয়া, মৃত্যু আসমানের কাছে ঋণী থাকে চিরকাল;
জমিনের কাছে নত হলে চাষা তবে বসন্তের শুরু
গমের উদ্যত শীষ থেকে শোনো আযানের শব্দ

সূর্য, উদিতের পর পক্ষী হলে, বুক খুলে রাখি।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৬ ডিসেম্বর, নান্দাইল, ময়মনসিংহ। কবিতার বই: সার্কাস-তাঁবুর গান, মুচকি হাসির কবিতা, কমিকস, ক্যামেরা, ট্র্যাভেলগ ইত্যাদি, শস্য ও পশুপালনের স্মৃতি, আমি ইয়াসিন আমি বোরো ধান। ফিল্মের বই (যৌথ সম্পাদনা): ফিল্মমেকারের ভাষা (চার পর্ব: ইরান, আফ্রিকা, লাতিন ও কোরিয়া)। কিশোর উপন্যাস: বাবলুর অদ্ভুত সাইকেল। কিশোর কবিতার বই: লাল মোরগের ঝুঁটি। সম্পাদিত ওয়েবম্যাগ (যৌথ): লাল জীপের ডায়েরী

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।