এখানে শীতের শুরু
উইন্ডমিল পেরোলো বাতাস, ধুলাজমা ভাঙা উইন্ডশিল্ড, হলুদ ফুলের গাছ ঝুঁকে প’ড়ে ছুঁয়ে দিলো ঘাস, গন্ডোলায় দুইটা চড়ুই, ত্যাড়াব্যাকা দূরে তালগাছ, রোদজ্বলা সরিষার ক্ষেত, সাইক্লোপস সূর্যের চোখ, ফরফর বইয়ের পাতা, জংধরা লোহার শিকল, পিরিচের গায়ে লাল দাগ, বুক-ফাঁড়া লালচে আপেল, আধগ্লাস পানি তাতে এক নীলমাছ কাটছে সাঁতার, জানালায় সাদা পর্দা, জানালার বাইরে সময়, মূক-বোবা একা প্রান্তর, উঁকি মারা হিম-নীলাকাশ, পাশে রেখে ভুট্টার ক্ষেত উইন্ডমিল পেরোলো বাতাস…
গ্র্যান্ড ট্যুর
শহরভর্তি বাইসাইকেল
গ্র্যান্ড ট্যুর মামা, উড ইউ লেট মি গো?
আমরা বৃত্তাকারে ফার্মহাউজ ছেড়ে যাবো নদীর ওপারে। হুইটফিল্ড— স্বপ্নে ঢুকে উঁচিয়েছে সোনার দানা, লম্বা বড় শিষ, মামা, ওখানে কখনো কোনো হায়েনা থাকে না, রিপ ভ্যান উইংকল শুধু, দোনলা বন্দুক, কাঁধে নিয়ে দাঁড়ানো হর্সম্যান
আমাদের মাথাভর্তি হুডি, আমাদের পিঠভর্তি হ্যাভারস্যাক মামা। টিনের ক্যান, নোনা বিস্কুট, আমার স্যানিটারি প্যাড, তুলা আর ব্যান্ডেজ সব রেখে চলে আসবো আদিগন্তের সোনালি সে ক্ষেতে। ফিরবো যখন আমি, আমার ব্যাগভর্তি কুয়াশা, গমের দানা, হর্সম্যান শুধু হর্সম্যান
ওকে তুমি না যেন ব’লো না
শুকিয়ে যাচ্ছে সব গমের দানা,
উফ্, জ্বলে যাচ্ছে মা!
অল ইট্’স গ্র্যান্ড ট্যুর, আয়াম গেটিং লেইট, উড ইউ লেট মি গো, উড ইউ, উড ইউ মামা…
সেরেনাদ
বৈদ্যুতিক কাঁটাতার, ওপারে তোমাদের বাড়ি,
এপারে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাদে
বৃষ্টিতে নিভে গেছে আমার হাতে ধরা সিগারেট
পাতার অন্তর্বাস সরানো ফলেরা
উঁকি মেরে মেরে দেখছে আমাকে,
প্রবল বাতাসে লুকিয়ে যাচ্ছে আবার
এ কেমন আবহাওয়াপীড়িত দিন,
আমার জ্বর-জ্বর দশা!
নদীতে ডুবে পাথর তুলে আনা লোকগুলো,
কালো কালো পাথর, কালো কালো নৌকাবোঝাই করা
দূর অরণ্যে বাতাসে-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ছে
উঁচু উঁচু গাছের দেয়াল
বাজ চমকালো—
শব্দ আর বাতাস একই সাথে
আছড়ে পড়লো একটা পাথরের ওপর
এসবের আড়ালে তুমিও আছো
গ্রিজমাখা মটরের পার্টস ডুবে যায় ঐ নৌকাগুলো থেকে
কালো কালো মানুষগুলোর কোলাহল পরোয়া না করে;
ওপারে তোমাদের বাড়ি,
এপারে বৃষ্টিতে ভিজে গ্যাছে আমার সিগার
স্কেচবুক
বসে আছি—
একটি অখণ্ড আকাশের প্রেক্ষাপট
তার বিপরীতে
সারাদিন হানা দেয়া সূর্যের আলো ম্লান
এখন এই হেমন্তের বিকালে
দুপুরে কোলাহল তোলা কর্কশ-কণ্ঠের মহিলারা ক্লান্ত
বিকালভর্তি এতো শব্দহীন নির্জনতা
পাতার হালকা ছায়া ফুটে আছে;
দুলছে বাতাসে
রেলকলোনির হলুদ দেয়ালে…
মেলানকলি
শীতকালীন ট্রেন যাচ্ছে
জয়পুরহাট।
জয়পুরহাট যাবার কথা ছিল;
সেখানে কতো কতো বন্ধ চিনির কল!
আমি যাচ্ছি না।
শীতের ট্রেন যাচ্ছে
—একা।
জন্ম ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের দিনাজপুরে। স্বাধীন চিত্রনির্মাতা। সাংবাদিকতা করেন। প্রকাশিত কবিতার বই আদিম পুস্তকে এইরূপে লেখা হয়েছিল (২০১৫), ধুলা পবণের দেশ (২০১৮)।