মাকসুদ উল আলম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র। একদিন দেখা গেল, মাকসুদ উল আলম তার আবাসিক হলের বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন কিংবা ঘুমের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে গেছে। চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলেন তিনি। বুকের উপরে খোলা ‘যে তুমি হরণ করো’। মাকসুদ উল আলম কি কারণে মাত্র ২৮ বছরে মারা গেলেন? কাউকে কি প্রগাঢ় ভালোবেসেছিলেন? কে তাকে হরণ করেছিল? পারিবারিক-সামাজিক-ধর্মীয় বিধান কি ভেঙে যাচ্ছিল সেই ভালোবাসায়? আমার সেই বয়সে খুব বেশি জানার সুযোগ ছিল না। শুধু কিছু চাপাচাপা ফিসফাস আঁচ করেছিলাম। অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ১০০ কি.মি. দূরে মধুপুর গ্রামটি। মধুপুর গ্রামই আমার পৈত্রিক গ্রাম। স্থানীয় বাজার গাড়াগঞ্জ। অদূরে নদ কুমার প্রবাহিত শৈলকুপার দিকে।
একদিন দেখা গেল, মাকসুদ উল আলম তার আবাসিক হলের বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন কিংবা ঘুমের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে গেছে। চিৎ হয়ে শুয়ে ছিলেন তিনি। বুকের উপরে খোলা ‘যে তুমি হরণ করো’। মাকসুদ উল আলম কি কারণে মাত্র ২৮ বছরে মারা গেলেন? কাউকে কি প্রগাঢ় ভালোবেসেছিলেন? কে তাকে হরণ করেছিল?
মাকসুদ ভাই আমাদের মধুপুরেরই সন্তান। দুপুর নাগাদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার লাশ এসে গেল মধুপুরের বাড়িতে। মাকসুদ ভাই আমাদের এই মধুপুরের সন্তান কিন্তু তার সঙ্গে আমার অতটা সম্পর্ক কখনও হয়ে ওঠেনি। বরং তার ছোটো ভাই মাসউদ উল আলম এর সঙ্গেই আমার বেশি মাখামাখি ছিল। মাসউদ ভাই পড়তেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইংরেজিতে। বামপন্থি রাজনীতি করতেন। অবশ্য তখনকার মেধাবী ছেলেটি বা মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে আর বামপন্থি রাজনীতিতে জড়াবে না, সেটাই অস্বাভাবিক ছিল। মাসউদ ভাইই আমাকে প্রথম পড়তে দেন আবুল হাসান।
মধুপুরে মাসউদ ভাইদের বাড়িটা ছিল এমন একটা বাড়ি, যে বাড়ির পুরো একটি ঘর শুধু বইয়ে ভর্তি। কোনো ভাবেই আমার দেখা সেকালে গ্রামজীবনে এমন কোনো বাড়ি দেখিনি, যে বাড়ির একটি ঘর শুধু বইয়ে ভর্তি। যেনবা একটি পাবলিক লাইব্রেরি। যদিও সেটি কোনোভাবেই পাবলিক লাইব্রেরি ছিল না, ছিল একান্ত পারিবারিক। সেই লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ে ফেরত দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হলো আমার। মাকসুদ ভাইয়ের জন্য কবর খোঁড়া হলো তার পিতার কবরের পাশে। গ্রামবাসী সবাই দেখছে শোকাচ্ছন্নতায়। আমিও সারাদিন ওই বাড়িতেই ছিলাম। সেদিন মনে মনে ভাবছিলাম, কি সেই সম্পর্ক, যার জন্য নিঃশব্দে মরে যেতে হয়? আর আমার জানা ছিল কবি আবুল হাসানও মাত্র ২৮ বছর বয়সেই মারা গেছেন। সে ছিল ১৯৭৫ সালের ঘটনা কিন্তু আমি যখনকার কথা বলছি, মাকসুদ ভাই যখন মারা যান, তখন ছিল আমার কলেজে পড়ার দিন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেসময় এরশাদের বিরুদ্ধে প্রবল ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে সারাদেশে।
সেদিন মাকসুদ ভাইয়ের লাশ কবরে নামানোর পর তার ছোটো ভাই মাসউদ ভাই কী আর্তনাদ করে কান্নাকাটি করছিলেন! কয়েকদিন পরেই আমি ঝিনাইদহ পাবলিক লাইব্রেরি থেকে গোপনে চুরি করলাম ‘রাজা যায় রাজা আসে’। সেই উঠতি বয়সে বাংলা কবিতার বড়ো বড়ো কবিদের সান্নিধ্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার ছিল কিন্তু আমি তো বড়ো হচ্ছিলাম গ্রামে, মধুপুরে। মধুপুরে বসে বড়ো কবিদের সান্নিধ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য এসএসসি পরীক্ষার আগে শৈলকুপার ওপাশে মনোহরপুরে কবি গোলাম মোস্তফা হাইস্কুলে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল, যেখানে ঢাকা থেকে এসেছিলেন কবি আল মাহমুদ, কবি তালিম হোসেন, শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, শিল্পী মোস্তফা আজিজ এবং আরও কেউ কেউ। তো প্রয়াত আবুল হাসান আমার প্রিয় কবি হয়ে উঠলেন। ‘রাজা যায় রাজা আসে’, ‘যে তুমি হরণ করো’ কিংবা ‘পৃথক পালঙ্ক’ আমার বারবার পড়া হয়ে গেল। ‘পৃথক পালঙ্ক’ বইটা কিনেছিলাম ঢাকা থেকে। কী কারণে যেন ঢাকায় গিয়ে জগন্নাথ কলেজের সামনের ফুটপাত থেকে তিন টাকা দিয়ে কিনেছিলাম ‘পৃথক পালঙ্ক’। ঝিনাইদহ কেসি কলেজে পড়ার দিনে আমার প্রিয় অধ্যাপক, কবি ও গল্পকার শহীদুর রহমানকে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম আবুল হাসান তার পরিচিত ছিলেন। আবুল হাসান বিষয়ক যেকোনো তথ্যও তখন আমার জানতে উৎসাহ ছিল এতই, যেন মনে হতে পারে আবুল হাসান আমার বন্ধু, কিন্তু মরে গিয়েছেন ৭৫ সালে, আর আমি ১৯৮৯-৯০ সালে বসে সেই কবির সন্ধান করছি। প্রথমত আবুল হাসানের কবিতার ভেতর দিয়েই তাকে জানবার শুরু। তারপর তার লেখা গল্প, চিত্রনাট্য, অগ্রন্থিত কবিতা ইত্যাদি পড়ার সুযোগ নিতে থাকি। একদিন পেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে আসা কবি বিষ্ণু বিশ্বাসকে। জিজ্ঞেস করলাম কবি আবুল হাসান বিষয়ে। যেনবা আবুল হাসানকে আমার জানতেই হবে, কেন তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে মরে গেলেন? এই প্রশ্ন আমি কাকে করব? শিকারি লোকটাকে? বনভূমিকে? নির্মলেন্দু গুণ কিম্বা সুরাইয়া খানমকে? নাকি আবুল হাসানের বোন বুড়িকে?
৪ আগস্ট আবুল হাসানের জন্মদিন। ২৬ নভেম্বর মৃত্যুদিন। ঝিনাইদহে বসে একদিন পত্রিকায় দেখলাম আবুল হাসানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠান হবে। সারারাত জার্নি করে ঢাকায় গিয়ে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো এক বড়ো ভাইয়ের রুমে উঠলাম। বিকালে অনুষ্ঠান শুরু হলো টিএসসি অডিটোরিয়ামে। অনুষ্ঠানের আয়োজক তরুণ কবি তারিক সুজাত। সুন্দর পোস্টার ছাপা হয়েছিল কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে। পোস্টারে আবুল হাসানের ছবি আর লেখা ‘সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে’। টিএসসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান চলছিল। কবি বেলাল চৌধুরী সম্ভবত ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছিলেন। তারপর জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় আবৃত্তি করলেন ‘যুগলসন্ধি’
‘ছেলেটি খোঁড়েনি মাটিতে মধুর জল!
মেয়েটি কখনো পরে নাই নাকছাবি।
ছেলেটি তবুও গায় জীবনের গান,
মেয়েটিকে দেখি একাকী আত্মহারা…’
তারপর এক তরুণ গায়ক ওই কবিতাটি গান গেয়ে শোনালেন। সেই গায়ক এর নাম সঞ্জীব চৌধুরী। পরবর্তী জীবনে শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত মাখামাখি হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে আমি আবার ঢাকা থেকে গাবতলী হয়ে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এমন অনেক দুপুর গেছে ঝিনাইদহ কেসি কলেজ হোস্টেলের পেছনে অশ্বথ গাছের শেকড়ে বসে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মনে হতো আমার পৃথিবী ঐ আকাশের দিকে। ভাবতাম, ঝিনাইদহ থেকে কবে আমি পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করতে পারব? কবে আমি হেঁটে যাব মিসিসিপি-মিরুজিন নদীটির তীরে? মনে হতো আবুল হাসান আমার সব কথা তাঁর কবিতায় লিখে রেখেছেন। আমার ভেতর থেকে উদগত বাক্য আমি খুঁজে পেতাম ‘রাজা যায় রাজা আসে’, ‘যে তুমি হরণ করো’, ‘পৃথক পালঙ্ক’ কিংবা মুহম্মদ নূরুল হুদা, জাফর ওয়াজেদ ও ফকরুল ইসলাম রচি সম্পাদিত ‘অগ্রন্থিত আবুল হাসান’ বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম হাসানের।
এমন অনেক দুপুর গেছে ঝিনাইদহ কেসি কলেজ হোস্টেলের পেছনে অশ্বথ গাছের শেকড়ে বসে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মনে হতো আমার পৃথিবী ঐ আকাশের দিকে। ভাবতাম, ঝিনাইদহ থেকে কবে আমি পৃথিবীর দিকে যাত্রা শুরু করতে পারব? কবে আমি হেঁটে যাব মিসিসিপি-মিরুজিন নদীটির তীরে? মনে হতো আবুল হাসান আমার সব কথা তাঁর কবিতায় লিখে রেখেছেন।
আমার সেই উনিশ-কুড়ি বছর বয়সে মনে হতো, আমারও বয়স ২৮ বছর হলে আমি মরে যাব। সেই মর্মে আমার তখনকার দিনে চিঠিপত্রে লেখা কবিবন্ধুদের আমি জানিয়েছিলাম। তারা এখন কেউ কেউ বলে, ‘মরলে না তো’।
সোনালি দুঃখ, রুপালি ব্যথা, না বলা কথা, কোনো মেয়েকে ভালো লেগে যাওয়ার পর তাকে বলতে চাওয়া কিংবা বলতে না পারা কিংবা তারুণ্যের নিরুদ্দেশ হাওয়ায় ভাসতে ভালো লাগত। সবই খুঁজে পেতাম আবুল হাসানের কবিতায়। আমার তখনকার বন্ধুরা জানে আমি আবুল হাসানের কতটা প্রেমিক ছিলাম। ঢাকার পত্রপত্রিকায় হাসান সম্পর্কিত কিছু তথ্য পেলেই আমি সেগুলো গোগ্রাসে গিলতাম। একদিন আজকের কাগজ নামক একটি পত্রিকায় দেখলাম একটি কবিতা, কবিতার বিষয় আবুল হাসান লিখেছেন তরুণ কবি আনিসুল হক।
ঝিনাইদহ থেকে একদিন আমি খুলনায় চলে যাই। খুলনা আর্ট কলেজের ছাত্র ছিলাম। আবুল হাসানের অনেক কবিতা আর্ট কলেজের কমপক্ষে ৫০ জন ছেলেমেয়েদের মুখস্ত করিয়ে ফেলেছিলাম। একদিন জানলাম আবুল হাসানের বোন বুড়ি খুলনা শহরেই থাকেন। দেখাও করতে গেলাম। বুড়ি আপার স্বামী হাফিজুর রহমানের সঙ্গে আলাপ হলো। হাফিজুর রহমানও কবি এবং আবুল হাসানের মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন পিজি হাসপাতালে। ছোট্ট কয়েকটি ছেলেমেয়ে দেখলাম বুড়ি আপার। তারা জিজ্ঞাসা করছিল, আমি কে? বুড়ি আপা তার ছেলেমেয়েদের উত্তর দিলেন, তোমার মামার বন্ধু। তারমানে আমি আবুল হাসানের বন্ধু। খুলনার উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরিতে ২৬ নভেম্বর আবুল হাসানের মৃত্যুদিন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান করেছিলাম। অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘হেমন্তে হলুদ পাতা যেরকম ঝরে যায়’। সে অনুষ্ঠান আমরা বন্ধুরা মিলে করেছিলাম। মিল্টন মোল্লা, মাসরুর আরেফিন, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, সাদাত রিপন, মুনির হাসান, রশিদ হারুন, কাউসার মাসুম, সৈয়দ আব্দুস সাদিক, ফারহানা ইসলাম জয়া, সাইমুম রেদওয়ান এবং আমার আর্ট কলেজের একদল বন্ধুরা মিলে করেছিলাম অনুষ্ঠানটি। খুলনা শহরে আবুল হাসানের কবিতা মাথায় নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ানো দিন পার হতে লাগল। জানতাম পিরোজপুরে ঝনঝনিয়া গ্রামে আবুল হাসানের পৈতৃক নিবাস, গোপালগঞ্জের বর্ণিতে মামাবাড়ি। বরিশালে কেটেছিল তার কলেজ জীবন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন ইংরেজি বিভাগে। পড়াশোনা কন্টিনিউ হয়নি। এক দুর্দান্ত বোহেমিয়ান জীবন বেছে নিলেন। সেই জীবনের সঙ্গী আরেক কবি নির্মলেন্দু গুণ। আরও একটি তথ্য আমাদের জানাই ছিল, নাচের শব্দ তুলে হেঁটে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রজ্ঞাসুন্দরী অধ্যাপিকা সুরাইয়া খানম ও আবুল হাসানের মর্মর প্রেমকাব্য।
খুলনায় ছিলেন কবি আনসার আলী, কবি শাহনুর খান। ষাটের দশকে তারা আবুল হাসানের বন্ধু ছিলেন। দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতাম, যেতাম গল্লামারি থেকে সোনাডাঙ্গা হয়ে বৈকালী, বয়রা, নিউ মার্কেট, পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলো মোড়, দোলখোলা, শিববাড়ি চত্বর। আমার বন্ধু পল লাভেলুকে নিয়ে সারারাত ঘুরে বেড়াতাম আর বোদলেয়র, র্যা বো, আজিজুল হক, ট্রেড হিউজ, সিলভিয়া প্লাথ কিংবা আবুল হাসানের কবিতা পড়তাম। পৃথিবীতে সেই দুর্দান্ত দিন, দুর্বিনীত রাত মাথায় নিয়ে আজও নিশ্চয়ই কোনো তরুণ কবি রাতের ফুটপাত পরিভ্রমণ করছে?
খুলনার দিন শেষ করে এবার ঢাকায় যাওয়ার পালা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র হলাম। হলে থাকতাম। কবিতা লিখতাম আর সেই সব কবিদের খুঁজে বেড়াতাম যারা আবুল হাসানকে দেখেছেন বা চিনতেন, জানতেন। নির্মলেন্দু গুণ এর সঙ্গে দেখা হলো, মামুনুর রশিদ এর সঙ্গে দেখা হলো, মহাদেব সাহার সঙ্গে দেখা হলো, আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হলো, সবার কাছেই আমার জিজ্ঞাসা, “আচ্ছা, আবুল হাসান ‘শিকারি লোকটি’ কবিতা লিখে তার যে অবস্থান ব্যক্ত করলেন, এশীয় শ্রেষ্ঠ কবিতা উৎসবের সেই সংকলনটা কি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্পাদনা করেছিলেন? একদিন আবদুল মান্নান সৈয়দকে জিজ্ঞাসা করলাম, একদিন রফিক আজাদকে। আহমদ ছফার কাছে আবুল হাসানকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, হাসান মরে গিয়ে আকাশের তারা হয়ে গেছে। বললাম, সুরাইয়া খানম এখন কোথায়? আহমদ ছফা বললেন, আমেরিকায়। তারপর জিজ্ঞাসা করি, আবুল হাসানের সঙ্গে তো সুরাইয়া খানমের খুব সম্পর্ক ছিল, ছফা রেগে যান। ছফা হঠাৎ ঈর্ষাকাতর প্রেমিকের মতো চিৎকার করে উঠলেন, ‘সুরাইয়াকে যখন আমি চিনি, আবুল হাসান তখনও সিনে আসে নাই’। এই কথার মর্মার্থ পরে বুঝেছি বেশি করে। ‘কিছুধ্বনি’র সম্পাদক আনওয়ার আহমেদকে জিজ্ঞাসা করলাম, সুরাইয়া খানম আবুল হাসানের মৃত্যুর পর যে লেখাটি লিখেছিলেন আপনার পত্রিকায়, সে লেখাটা পড়তে চাই, যে লেখায় শিরোনাম ছিল, ‘আবুল হাসান : আহত, ক্ষুধার্ত সিংহ।’ অবশ্য ঝিনাইদহে থাকতেই ফরিদ কবির সম্পাদিত ‘পঞ্চাশ বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ গ্রন্থে আবুল হাসানের ছবি ও হাতের লেখা আমি দেখি। সম্ভবত হাতে লেখা কবিতাটি ছিল ‘মানুষ শব্দটি’। আর সে সময় হাসানের ‘ওরা কয়েকজন’ চিত্রনাট্য পড়ি। সে চিত্রনাট্যের তরুণী চরিত্রটির প্রেমে পড়ে যাই। অবশ্য আমি একলাই বা কেন, চিত্রনাট্যে আরো পাঁচ-ছয় জন যুবকের উপস্থিতি ছিল, তারাও তার প্রেমে পড়েছিল। এক স্টেশনে বসে একদল ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ে অপেক্ষা করছে, ট্রেন এলেই তারা উঠে পরবে। সবুজ ট্রেন যেতে থাকবে আরও সবুজ বনভূমির ভেতর দিয়ে। কোনো এক স্টেশনে গিয়ে সেই যুবক যাত্রী দলের কেউ একজন হয়তো নেমে যাবে। নেমে কয়েক মাইল হেঁটে তারপর এক নদী। নৌকায় সেই নদী পার হয়ে যাবে তার গ্রামে। কে আছে অপেক্ষা করে সেখানে? ট্রেন যেতে থাকবে। পরবর্তী স্টেশনে নেমে যাবে আরও একজন। যাত্রী দলের সেই তরুণীকে নিয়ে তরুণদের যার যার কল্পনা রূপায়িত চিত্রনাট্যে।
একদিন আমাদের বন্ধু মৃগাঙ্ক সিংহ এলো আমেরিকা থেকে ঢাকায়। বলল, কবিতার বই বের করবে। বললাম, বইয়ের নাম কি হবে? মৃগাঙ্ক বলল, নির্মলেন্দু গুণ। নির্মলেন্দু গুণ বইয়ের নাম? মৃগাঙ্ক বলল, ‘হ্যাঁ’। সেই বইয়ের কভার আঁকলেন শিল্পী মাসুক হেলাল। আমি ব্যাক কভারে ভূমিকা লিখলাম। উপহার হিসেবে মৃগাঙ্ক আমাকে এক বোতল আমেরিকান পানীয় ও একটি বার্ষিক প্লেবয় সংখ্যা উপহার দিল। নির্মলেন্দু গুণ কাব্যগ্রন্থ তো বেরিয়ে গেল। মৃগাঙ্ক বলল, ‘আমার বইয়ের একটা প্রকাশনা উৎসব করতে হবে’। বললাম, ঠিক আছে। কোথায় হতে পারে উৎসব, কোন অডিটোরিয়ামে? কোন সময়ে? শ্রোতা-দর্শক কারা থাকবেন? অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়ে মৃগাঙ্ক সিংহ রচিত ‘নির্মলেন্দু গুণ’ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবের লগ্ন ধার্য করা হলো রাত দুটো থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। স্থান বনানী কবরস্থানে আবুল হাসানের কবরের মধ্যে। সেই অনুযায়ী মারজুক রাসেল, আলফ্রেড খোকন, মৃগাঙ্ক সিংহ ও আমি একরাতে চলে যাই বনানীতে। কবরস্থানের মধ্যে ঢুকে খুঁজতে থাকি আবুল হাসানকে। দেখি একটি কবরের গায়ে লেখা এপিটাফ—
‘যতদূর যাও ফের দেখা হবে/ কেননা মানুষ যদিও বিরহকামী, কিন্তু তার মিলনই মৌলিক, ২৬ নভেম্বর ১৯৭৫।’ আমরা চার বন্ধু রাতের কবরের মধ্যে বসে দেখি আমাদের মাথার কাছে নেমে আসে আকাশের চাঁদ। আমরা নির্মলেন্দু গুণ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতা পড়ি। ২০০০ সালের দিকে সদ্য আসা মোবাইল ফোনে আমি ফোন করলাম কবি নির্মলেন্দু গুণকে, সেই রাত তিন-চারটায়। আমরা যা করছি জানালাম। একদিন পুরনো ঢাকার শিংটোলায় কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর বাসায় বসে আবুল হাসানের কথা উঠল। বুলবুল চৌধুরী জানালেন হাসান তাকে একটি কবিতা লিখে দিয়েছিলেন। কবিতার প্রথম লাইন ‘সাধু হে, যাব না তিবেত আমার ঘরের পাশেই বন…’
আস্তে আস্তে কি আমি আবুল হাসানকে ভুলে যেতে থাকলাম? আস্তে আস্তে কি আমি আবুল হাসান এর চেয়ে বয়সে সিনিয়র হয়ে গেলাম? আবুল হাসানের বয়স সেই আটাশই থেকে গেল। একদিন ফেসবুকে যোগাযোগ হলো এক তরুণীর সঙ্গে। তরুনী জানালেন তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে মাস্টারি করছেন। এবং তিনি আবুল হাসানের ভাগনি। আমি যাকে ছোটোবেলায় খুলনায় নিরালা আবাসিক এলাকায় বুড়ি আপার বাসায় দেখেছিলাম। আর আমাদের সাদিক— চারুকলার সাদিক আহমেদ আবুল হাসানের ফুপাত ভাই। ও প্রায়ই আমাকে জানাত ফুপু আসছে আমাদের বাসায়। কয়েকদিন থাকবে। সেই ফুপু হচ্ছেন আবুল হাসানের মা। কয়েক বছর আগে যিনি মারা গেছেন। মারা গেছেন আবুল হাসানের ছোটোভাই চলচ্চিত্র নির্মাতা আবিদ হাসান বাদল। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত জীবনী গ্রন্থমালা সিরিজে বিশ্বজিৎ ঘোষের লেখা আবুল হাসানের জীবনী পুস্তিকাটি পড়েছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে আমার আবুল হাসানকে ভুলে যাবার দিন এসে গেল। একদিন শুনলাম, উত্তর আমেরিকার কোনো এক শহরে সুরাইয়া খানম মারা গেছেন।
২০১৯ এর মাঝামাঝি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গলিতে এক সন্ধ্যায় পরিচয় হলো কবি মোশতাক আহমেদের সঙ্গে। জানালেন আবুল হাসানকে নিয়ে কাজ করছেন। পাণ্ডুলিপি প্রায় প্রস্তুতির দিকে। নবীন প্রকাশনা প্রকল্প পেন্ডুলাম থেকে রুম্মান তার্সফিক বইটা প্রকাশ করবে। সেই সন্ধ্যাতেই মোশতাক আহমেদের সঙ্গে আবুল হাসানকে নিয়ে এক পশলা আলাপ হয়ে গেল। এবং ২০২১ এর আগষ্ট মাসে এসে গ্রন্থখানি হাতে পেলাম, গ্রন্থের নাম— ঝিনুক নীরবে সহো। রয়েল সাইজে খুবই পরিশ্রমী ও দৃষ্টিনন্দন একটি প্রকাশনা।
মোশতাক আহমদ রচিত ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ একটি ডকু ফিকশন। পেন্ডুলাম প্রকাশিত এই গ্রস্থের প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। সত্তর দশকের বাংলাদেশী সামাজিক সিনেমার পোস্টার মনে হয় প্রচ্ছদটিকে। প্রচ্ছদে আবুল হাসানের প্রতিকৃতি ছাড়াও আরও কয়েকটি মুখ অঙ্কিত। সেই মুখ শহীদ কাদরী, আহমদ ছফা, নির্মলেন্দু গুণ ও সুরাইয়া খানমের মুখ। ডকু ফিকশন হওয়ায় প্রচ্ছদে লেখা শ্রেষ্ঠাংশে কবি আবুল হাসান। ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ গ্রন্থটি এককথায় কবি আবুল হাসানের বায়োগ্রাফিকাল নোভেল। যার জীবনই মাত্র আটাশ বছরের— তার আবার জীবন বৃত্তান্ত? বৃত্তান্তই বটে, যদি সে বৃত্তান্ত হয় আবুল হাসান বৃত্তান্ত। গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, বরিশাল, ঢাকা ও বার্লিন প্রধানত এসব লোকেশনেই প্রোটাগনিস্ট আবুল হাসান ঘোরাফেরা করেন। এক বোহেমিয়ান কবির জীবনগাথা তথ্যবহুল উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে মোশতাক আহমদ ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ অত্যন্ত পরিশ্রম ও মন্ময় গাঁথুনিতে চিত্রিত করেছেন। শ্রেষ্ঠাংশে কবি আবুল হাসান হলেও ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ ডকু ফিকশনে আরও অসংখ্য চরিত্র স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে। বিশেষ করে মধ্য ষাট থেকে মধ্য সত্তর দশ বছর ব্যাপ্ত সময়ে যারা কবিতায়, গল্প-উপন্যাসে বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডায় ঢাকা শহরে চষে বেড়িয়েছেন, আবুল হাসান সেই সময়ের ত্রুবাদুর প্রতিনিধি। কিছু নাম আবুল হাসান ডকু ফিকশনে আসবেই। সুরাইয়া খানম, নির্মলেন্দু গুণ, আহমদ ছফা, শহীদ কাদরী এরা হাসানের জীবনের সঙ্গে জড়িত। হাসানের জীবনে জড়িত কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, রফিক আজাদ, মোহাম্মদ রফিক, মহাদেব সাহা, মাহাফুজুল হক খান, শাহাদত চৌধুরী, ইকবাল হাসান, হাসান হাফিজ, হেলাল হাফিজ, আবিদ আজাদ, অরুনাভ সরকার, কাজী সালাহউদ্দিন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মাকিদ হায়দার, রাহাত খান, শাহজাহান হাফিজ, হুমায়ুন আজাদ, সৈয়দ সাজ্জাদ হুসাইন, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, শশাঙ্ক পাল, হুমায়ুন কবির, ফরহাদ মজহার, পুরবী বসু, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, বুলবুল চৌধুরী, হাসান হাফিজুর রহমান, মামুনুর রশিদ, রফিক কায়সার, আব্দুল মান্নান সৈয়দ, শিহাব সরকার, সুলাতানা রেবু, আহমদ শরীফ, সিরাজ শিকদার, হুমায়ুন আহমেদ, দিলওয়ার, শওকত ওসমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, মুহাম্মদ নুরুল হুদা, মাহমুদুল হক, আফজাল চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, আবু কায়সার, জিনাত আরা রফিক, রুবী রহমান, আসাদ চৌধুরী, সাযযাদ কাদির, সাবদার সিদ্দিকী, বার্লিনবাসী চিত্রশিল্পী রাইনহার্ট হ্যাভিকো, স্থপতি গ্যাব্রিয়েলা, কিংবা আরও শতাধিক চরিত্র, যারা সবাই পরিচিত এবং ‘ঝিনুক নীরবে সহো’র পার্শ্ব চরিত্র।
‘ঝিনুক নীরবে সহো’ ডকু ফিকশনে আরও অসংখ্য চরিত্র স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে। বিশেষ করে মধ্য ষাট থেকে মধ্য সত্তর দশ বছর ব্যাপ্ত সময়ে যারা কবিতায়, গল্প-উপন্যাসে বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, বিউটি বোর্ডিংয়ের আড্ডায় ঢাকা শহরে চষে বেড়িয়েছেন, আবুল হাসান সেই সময়ের ত্রুবাদুর প্রতিনিধি।
এছাড়াও ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ, ৬৬ তে বাঙালির ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা হওয়ার মতো বর্বর ঘটনা অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসের এক টালমাটাল সময় লিপিবদ্ধ হয়েছে ডকু ফিকশনটিতে। অনেক বছর ধরে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক পরিশ্রম করে কবি মোশতাক আহমদ ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ বাঙালি পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন। বাঙালি কোনো কবির জীবনকে আমরা এভাবে আর চিত্রিত হতে দেখিনি। কবিতার জন্যে ভেতরে প্রবল জ্বর থাকলেই কেবল এই জাতীয় একটি ফিকশন রচনা করা সম্ভব, যা করেছেন ডাক্তার ও কবি মোশতাক আহমদ। ইতোপূর্বে শাহাদুজ্জামান রচিত জীবনানন্দ দাশের জীবনকে কেন্দ্র করে ‘একজন কমলালেবু’র স্ট্রাকচার সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত। জ্ঞাত কর্ণেল তাহেরকে নিয়ে রচিত ’ক্রাচের কর্ণেল’। হাসনাত আব্দুল হাই এর রচনায় জীবনী ভিত্তিক ফিকশন সুলতান, নভেরা, একজন আরজ আলী সম্পর্কেও আমরা জ্ঞাত। দেখেছি পোস্টম্যান। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই সম্ভবত ‘ঝিনুক নীরবে সহো’র মতো এত সন তারিখ ভিত্তিক প্রামাণ্য নয়। যে কবির মৃত্যুই হয়ে গেছে ১৯৭৫ সালে, ২০২১ সালে এসে তাঁর ২৮ বছরের জীবনযাপন তুলে এনে এরকম একটি ডকু ফিকশন দাঁড় করানো প্রায় দুঃসাধ্য একটি কাজ। হাসানের বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যকে অবলম্বন করে, কখনো পত্র পত্রিকার ছাপা হওয়া তথ্য থেকে, কখনো হাসানের কবিতার পঙক্তির ভেতর থেকে গল্প নির্মিতি পেয়েছে। ঠিক গল্প কি? নাকি সত্য? তথ্য, সত্য কিছুটা কল্পিত বাস্তবতাকে দ্রবীভূত করে আবুল হাসানের প্রতি প্রেম ঢেলেছেন মোশতাক আহমদ। সেই প্রেম পাঠকেরও বুকে এসে লাগে। চমৎকার মুন্সিয়ানায় রচিত আবুল হাসান ডকু ফিকশন পড়ার ফাঁকে একবার রাজিয়ার মুখ আমাদের মনে আসে। যাকে হাসান ভালোসাবতেন উঠতি বয়সে। সুরাইয়ার মুখোমুখি তো আমাদের হতেই হবে। মুখোমুখি হতে হবে সৌন্দর্যরাক্ষসের, যে রাক্ষস পাঠককে গিলে খাবে। যে কবির জীবন ছিল মাত্র আটাশ বছরের আর বাংলাদেশে কবিতাই বা ক’জন পড়ে সেই বাস্তবতায় আবুল হাসানের উন্মাতাল জীবনযাপনকে অনেকটা ছবির মতো করে এঁকেছেন মোশতাক আহমদ। মধ্য ষাট থেকে মধ্য পঁচাত্তর অবধি ঢাকা শহরের এক সাংস্কৃতিক দলিলও বটে, ‘ঝিনুক নীরবে সহো’। এক রুগ্ন তরুণ কবির জীবন থেকে বিচ্ছুরিত সবুজ রঙয়ের রোদ ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ‘ঝিনুক নীরবে সহো’র গ্রস্থে। আজকের তরুণ কবি, কবিতার পাঠক কিংবা শিল্পকলায় অনুসন্ধানী যেকোনো নিবিড় প্রেমিকের জন্য আবুল হাসান যেমন তাঁর কবিতা লিখে গিয়েছেন, মস্তিষ্কে কর্কট আক্রান্ত কবি মোশতাক আহমদও তুলে এনেছেন ‘ঝিনুক নীরবে সহো’। মোশতাক আহমদের ডকু ফিকশন ‘ঝিনুক নীরবে সহো’ নিয়ে সর্বশেষ আবুল হাসানের দুটি পঙক্তি পুনর্ব্যক্ত করছি ‘ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভেতরে বিষের বালি, মুখ বুজে মুক্তা ফলাও’
জন্ম ১ ডিসেম্বর, ১৯৭২, ঝিনাইদহ। বেড়ে ওঠা, বসবাস: ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা ও ঢাকা। একাডেমিক (সর্বশেষ) পড়ালেখা: চারুকলা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রন্থ প্রকাশনা: কবিতার বই কয়েকটি, গদ্যের বই কয়েকটি। সম্পাদিত গ্রন্থ: ২টি। ছবি নির্মাণ: ‘ব্ল্যাকআউট’ (২০০৬) আনরিলিজড। ‘রাজপুত্তুর’ (২০১৪), ‘কাঁটা’ (২০২৩) । পেশা: আর্ট-কালচার চষে বেড়ানো।