কলকাসুন্দা বিষয়ে
কলকাসুন্দা নিরল হাওয়ায় বিথার:
শান্ত সবুজ এই গুল্ম এশিয়ার সোনালি দুপুরে
ভেষজ গান, বোঁটায় হলুদ কুসুম
বীজেরও আছে ব্যবহার কাশি কিংবা রক্তে দোষ হলে—।
কলকাসুন্দা বিষয়ে আরও আরও যা জানা দরকার
তা আজ না জানলেও চলে;
কেননা পৃথিবীতে ফাগুন আসার আগে
কলকাসুন্দা দ্যাখার মতো চোখ আমাদের গিয়েছে ঝরে।
যন্ত্রবৎ
সোনাঝুরি থেকে দূরে গেলে জানা যায়
সোনাঝুরি ঝরে গিয়ে আমি, যা দেখছি মূলত তা—
সোনাঝুরির মেমোরি।
এদিকে মালকোষের উঠানে
ঝরা হেমন্তের জংলায়
মাগো, কে যে কেঁদে কেঁদে মেঘমল্লার,
কে যে দীপক আগুনে পুড়ে
তীব্র ইকুয়াস, জানি না, শুধু মনে হয়
কালিম পাখিরা মুছে যেতে চায়— পয়ার ছন্দে।
আমাদের ঘরের কোণে ডালিমগাছ,
আমাদের সংসারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া
হাস্নাহেনার সুবাস, আমাদের পাতকুয়ার পাশে
সারিসারি সুপারিবাগান—
যা ছিল সবই, অর্থ-ডিলেমাভরা অভিসন্দর্ভ আজ;
হঠাৎ ঠুমরির ভিতর কোন ঋতুরাজ উঁকি দিল
কে আর রাখে বলো তার খবর!
সোনালি ডানার চিল প্রচার করছে, বাংলাদেশ বেতার।
যেন মেঘে মেঘে রি-প্লে করা রোদ
হুবহু কান্নার মতন কাঁদছে মেয়েটা—
আদতে সে
বকুল ঝরার মিমিক্রি করছে,
কান্নার ছলে।
মেয়েটা লাল হচ্ছে— নীল হচ্ছে—
মেয়েটার মেকাপ বক্সে ছড়িয়ে আছে
একরাশ দুঃখের বিকাল।
হুবহু হাসির মতন হাসছে মেয়েটা—
আদতে সে
দুপুরগন্ধের গ্রাম মিমিক করছে,
হাসির আড়ালে।
মেয়েটার ভিতর রোদ উঠছে— বৃষ্টি পড়ছে—
মেয়েটা ড্রেসিং টেবিলে
সাজিয়ে রাখছে গ্রীষ্মকাল, আনমনে।
মেয়েটা— যেন কতোকাল ধরে
নুয়ে পড়া লতার আচরণ গড়ে তুলেছে— হৃদয়ে।
রুট অভার এক্সের মতো কৌশলে
ঘন সোমবার ও আষাঢ়া নক্ষত্রের পূর্ববর্তী দিনে—
পকেটে টাকা-পয়সা থাকে না যখন
এবং অশান্ত লাগে,
রাস্তায় রাস্তায় নাম না জানা সব ভিড়ে
হেঁটে বেড়াই।
বিধুরা বাতাসের মতন
আওয়ারা বোধ এসে চোখেমুখে লাগে—
শোষণ ও শুশ্রূষার মাঝে
কতোরকম গোলাপি দর্শন,
কতো যে জাদুবিদ্যা লোকেরা জানে— সবিস্ময়ে ভাবি!
—তবু সফেদা বিক্রেতাই সবচে গভীর।
ফুটপাতে সারি সারি
করুণার উদ্রেগ ঘটিয়ে বেঁচে আছে যারা
কিংবা বাটিতে দু’পয়সা ছুঁড়ে— মহৎ হয়েছে যেসব হারামি,
তাদের মর্ষকামী আচরণ হতে— নিঃশব্দে উড়ে যায় বক,
টুপকরে সন্ধ্যা হলে—
হঠাৎ মর্মভেদীভাবে ভেসে আসে বেলীফুলের ঘ্রাণ, আস্তে আস্তে, প্রপঞ্চ ঝাপসা হয়, সবকিছু সুন্দর লাগে, হাঁটতে হাঁটতে, দীর্ঘশ্বাস ছোটো হয়, শরীর ও মন হালকা হতে থাকে, যেভাবে ঘাম দিয়ে ছেড়ে যায় দুদিনের জ্বর।
হারমোনি
দুপুররোদে যে লোকটা জামগাছের ছায়া ছড়াতে ছড়াতে ক্লান্ত, দোয়া করি, তার হৃদয়ে যেন নসিব হয় খোদা। সে যেন নিজেরে খুঁজে পায়, সে যেন ভুলে যায় নিজেরে।
যেহেতু ধরণীর গোপন সিন্দুকে শুধু ভূ-মগ্ন রাত, যার মর্মে মর্মে চাঁপাগাছ, ছিপিখোলা সেন্টের শিশি, ফেনিল সন্ধ্যা। যেহেতু ঈষৎলাল স্পর্শে ঘটে যেতে পারে সূর্যাস্ত আমাদের, মদালস হতে পারে সংজ্ঞা।
দুপুররোদে যে লোকটা জামগাছের ছায়া ছড়াতে ছড়াতে ক্লান্ত, দোয়া করি, তারে যেন দোলাতে পারে মৃদু ফুলের টোকা। সে যেন সবকিছু গ্রহণের জন্যে, সবকিছু ছাড়তে পারে।
এবং তার কথা জানুক সে, এই বিস্তীর্ণ ভূমা ও ব্যাপ্ত ভূলোকে, ঝরতে ঝরতে অবশেষে যে বকুল হয়ে যায়।
জন্ম ১৪ নভেম্বর ১৯৯২। রৌমারী, কুড়িগ্রাম। প্রকাশিত বই : ‘ওঁ রুত’ (২০১৯), ‘গুমারডুলির পথ’ (২০২১)।