মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩

মিস্টার কমলাপুর : দেবব্রত মুখোপাধ্যায়

0

সকাল থেকে একটাও ট্রেন আসে নাই।

লাইনে কী নাকি সমস্যা হইছে। অন্য দিন ভোর রাতে পারাবত চলে আসে। আর কিছু না হোক নাস্তার টাকাটা হয়ে যায়। আজ বেলা ৯টা বাজতে চলল, পারাবতের খোঁজ নাই। তাই কামাইও নাই একটা টাকা।

স্টেশনে মানুষ গিজ গিজ করতেছে। ট্রেন ছেড়েও যাচ্ছে না।

পেটের মধ্যে কড় কড় শব্দ হচ্ছে। সকাল বেলায় বাসা থেকে নাস্তা করে বের হতে পারে না ফারুক। অতো ভোরে নাস্তা বানায় না বৌ। নাস্তা আর কী? জাউ ভাত আর আলু সিদ্ধ। ও খাইতেও মন চায় না। ওর চেয়ে পারাবত আসার পর স্টেশনের বাইরে দুটো পরোটা আর ডাইল ভাজি দিয়ে বাড়ির খানার চেয়েও দামি মনে হয়।

আজ সে পারাবতের খোঁজ নাই।

এ পর্যন্ত পড়ে আপনার মনে হতে পারে, ফারুক একজন ট্রেনের কর্তা বিশেষ। ট্রেন এলে বোধহয় তার ইনকাম বাড়ে। আসলে ফারুক কমলাপুর স্টেশনে ভিড় জমানো শতেক কুলির একজন—-আইডি কার্ড ওয়ালা কুলি।

মানিকনগর বস্তিতে থাকে সে। বছর পাঁচেক আগে মামায় ধরে বিয়ে দিয়ে দিছিল। সেই বৌ আর একটা ছেলে নিয়ে ফারুকের এক রুমের সংসার। বস্তিতে একটা রুম নিয়ে থাকে। ওদের বস্তি বাড়িটায় আটটা রুম; আট রুমে আটটা ফ্যামিলি থাকে। আর আছে একটা খোলা গোসল করার জায়গা; থাল-বাসনও ওখানে মাজতে হয়।

ফারুকের বাসা মানিকনগর। লুকানোর কিছু নাই। মানিকনগর বস্তিতে থাকে সে। বছর পাঁচেক আগে মামায় ধরে বিয়ে দিয়ে দিছিল। সেই বৌ আর একটা ছেলে নিয়ে ফারুকের এক রুমের সংসার। বস্তিতে একটা রুম নিয়ে থাকে। ওদের বস্তি বাড়িটায় আটটা রুম; আট রুমে আটটা ফ্যামিলি থাকে। আর আছে একটা খোলা গোসল করার জায়গা; থাল-বাসনও ওখানে মাজতে হয়।

আর আছে দুইটা ল্যাট্রিন। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলে ওই ল্যাট্রিনে ঢোকার জন্য লাইন ধরতে হয়।

এই খানে অবশ্য ফারুকের একটা সুবিধা আছে। সে কখনোই ল্যাট্রিনের জন্য বাসায় অপেক্ষা করে না। ভোর রাতে ঘুম থেকে উঠে লাল জামাটা পরে জোর পায়ে হেঁটে স্টেশনের কাছে চলে আসে। রাস্তার এপারে রমজানের দোকান থেকে কড়া লিকারের এক কাপ চাপ খেয়ে একটা বিড়ি ধরায়। তারপর ছুটে চলে যায় স্টেশনের পাবলিক টয়লেটে। এই সময়টা পাবলিক টয়লেট ফাঁকা থাকে। আগের রাতে পরিষ্কার করা টয়লেটে পায়খানা করার মজাই আলাদা।

আজ অবশ্য পায়খানা করেই ভুল হয়েছে। পেট ফাঁকা হয়ে গেছে। এখন খিদেয় খুব কষ্ট পাচ্ছে। খাওয়ার উপায়ও নেই। নিবারনের রেস্টুরেন্টে ফারুককে আর বাকি দেবে না।একবার ভাবছে, এর চেয়ে বাসায় চলে যাই; দুটো জাউ ভাত খেয়ে আসি। আবার মনে হচ্ছে, যদি ট্রেন চলে আসে!

গার্ড মনির ভাইকে দেখা গেল। জোর পায় এগিয়ে গেল ফারুক, ‘স্যার, আইজকে ট্রেনে কী হইছে?’

মনির ভাই খুব ভাব নিয়ে বলল, ‘বুঝবি না। লাইন ডাউন।’

‘ও। ট্রেন না আইলে তো বিপদ।’—একটু বিমর্ষ হয়ে বলে ফারুক।

মনির ওর দিকে ফিরে বলে, ‘যে শরীর বানাইছ, তাতে তোর আর বিপদ কী? চাইলে তো কুলির কাম ছাইড়ে শরীর দেখাইয়ে খাইতে পারো।’

ফারুক একটু লজ্জা পেয়ে যায়।

তা সত্যি কথা বলেছে মনির ভাই। ফারুকের একটা দেখানোর মতো শরীর আছে বটে। ছোটোবেলা থেকেই ফারুকের শরীর খুব পেটানো। ঢাকায় এসে এই কুলির কাজ করতে করতে কিলবিলে হয়ে উঠেছে তার মাসলগুলো। সালমান খানের মতো পেট পর্যন্ত মাসল। ঠিক দুপুর বেলায় গরমের চোটে জামাটা যখন খুলে ফেলে, ট্রেন থেকে নামা মেয়েগুলো আরেকবার ফিরে তাকায় ফারুকের মাসলের দিকে।

মনে মনে হাসে ফারুক— আহা, মাসল বেচে যদি খাওয়া যেত।

মাঝে মাঝে সত্যিই ফারুকের মনে হয়, এই মাংস বেচে খাওয়া দরকার। রাতের বেলা বাসায় ফিরলে দৌড়ায়ে আসে প্রিন্স। প্রায়দিন বুকের কাছে মাথা রেখে বিড়বিড় করে, ‘আব্বা, গোশত আনছেন?’

গোশত কেনার টাকা ফারুকের জোগাড় হয় না। সে বোঝে এভাবেই তার জীবন কেটে যাবে। তার আর গোশতের মায়া হয় না। কিন্তু ছেলেটার কথা শুনে দুই এক দিন মনে হয়, নিজের মাসল বেচে যদি একটু গোশত পাওয়া যেত!

ছেলেটার ওপর বড়ো মায়া তার। নয়ন; নয়ন তার ছেলেটার নাম। এই নয়ন ছাড়া আপন কাউকে মনে করতে পারে না ফারুক। বাপের মুখ দেখে নাই কোনোদিন; মরে গেছে কিংবা ছেড়ে গেছে। মাও ছোটোবেলাতে কাশতে কাশতে মরে গেছে। ফারুক অনেকটা স্বনির্মিত মানুষ।

আসলে ছেলেটার ওপর বড়ো মায়া তার। নয়ন; নয়ন তার ছেলেটার নাম। এই নয়ন ছাড়া আপন কাউকে মনে করতে পারে না ফারুক। বাপের মুখ দেখে নাই কোনোদিন; মরে গেছে কিংবা ছেড়ে গেছে। মাও ছোটোবেলাতে কাশতে কাশতে মরে গেছে। ফারুক অনেকটা স্বনির্মিত মানুষ। এই কমলাপুর স্টেশনে আর মানিকনগরের রাস্তায় দৌড় ঝাঁপ করতে করতে বড়ো হয়েছে। কোনোদিন কেউ তার আপন হবে বলেও আশা করেনি।

এমনকি বিয়ে করে বৌকে নিয়ে ঢাকায় আসার পর বুঝছে, এই বৌ-ও তার আপন না। কেন? সে গল্প আরেকদিন বলব নে। কেবল ফারুক জানে, ওই নয়ন ছাড়া তার আর কেউ নেই। নয়ন চাইলে তাই নিজের মাংসটাও কেটে খাওয়াতে পারে।

নয়নের সাথে ফারুকের দেখা সাক্ষাত কম হয়। ফারুক যখন বের হয়, নয়ন তখন ঘুমে। সকালে স্কুলে যায়। বিকেলে স্টেডিয়ামের পাশে কোথায় খেলতে যায়। রাতে ফিরে আধো ঘুমে টলতে দেখে ছেলেটাকে। ওই আধো ঘুমের ছেলেকে কোলের কাছে নিয়েই ফারুকের জীবনটা ভরে যায়।

হঠাৎ হই হই আওয়াজে মটকাটা ভেঙে যায় ফারুকের। আওয়াজ শুনে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে হয় না। এই আওয়াজ তার চেনা— ট্রেন আসছে।

ফারুক কখনোই যাত্রী ধরার জন্য ছোটাছুটি করে না। তার যাত্রীর অভাব হয় না। এক ট্রেনে আর কয় খ্যাপ মারা যায়; জোর হলে দুই তিন বার। সে ফারুক পেয়েই যায়। সে ব্যাগ ধরে টানাটানিও করে না। তার বিশাল শরীর খানা দেখলে যাত্রীরাই যেচে বলে, ‘লাগেজ তোলো।’

 

হাফিজ সাহেব একটু জলদ গম্ভীর গলায় বললেন, ‘লাগেজ তোলো।’

হাফিজ সাহেবের বড়ো ধকল গেল। চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন মেয়ের বাসায়। সকাল বেলায় ফেডারেশনে একটা অনুষ্ঠান ছিল। ভেবেছিলেন, ভোর রাতে পৌঁছে যাবেন। আরামসে অনুষ্ঠানে থাকা যাবে। কিন্তু সেই ট্রেন এসে পৌঁছাল বেলা একটায়। এখন নিশ্চয়ই অনুষ্ঠান তার জন্য বসে নেই।

হাল ছেড়ে দেওয়া একটা ভঙ্গিতে তাই ফারুককে বললেন, ‘সিএনজি স্ট্যান্ডে চলো।’

লাগেজ খুব বেশি না। এটুকু ফারুক সাহেব একাই নিয়ে হাঁটতে পারেন। কিন্তু গত বছর বাথমরুমে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় সরে গেছে। ডাক্তার বলেছে, এক কেজিও ওজন তুলবেন না। ছেলে মেয়েরা কোথাও গেলেই পই পই করে বলে, ‘বাবা কুলি নেবেন কিন্তু।’

আগে হয়তো কারও কথা শুনতেন না। আজকাল ছেলে মেয়েদের কথা অমান্য করেন না। হাজার হোক এখন ছেলে মেয়ের কথা আর পয়সায় জীবন চলে।

‘তোমার শরীরটা তো চমৎকার!’ ছেলে মেয়ের কথা ভুলে কুলি ছেলেটার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন হাফিজ সাহেব।

ফারুক এর মধ্যে বিরক্তি আর ঘামে লাল জামাটা খুলে ফেলেছে। এই সাহেব পয়সা দিলে একটু নাস্তা করা যায় কি না ভাবছে। হাফিজ সাহেবের কথায় খুব একটা হেলদোল হলো না। এমন কথা বহুবার শুনেছে। তাই একটু হাসার একটা ভঙ্গি করল।

হাফিজ সাহেব ছাড়ার লোক না। তিনি কাছে এসে কাঁধটায় একটু চাপ দিলেন; এক ইঞ্চিও ডাবলো না মাংসপেশী। হাফিজ সাহেব যেন রত্ন পেয়ে গেছেন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, ‘তোমার বাসা কোথায়?’

‘এই তো স্যার, মানিকনগর।’

‘আমার সাথে যাবা? বডি বিল্ডিং শিখবা?’

ফারুক এবার পানিতে পড়ল। সে তার জীবনে এই ‘বডি বিল্ডিং’ ব্যাপারটা শোনেনি। মাথা চুলকে বলল, ‘স্যার, সেটা কী?’

‘আছে। আছে। টিভিতে দ্যাখো নাই? মাসল দেখায়। পুরষ্কার পায়।’

ফারুক হেসে ফেলল। এইবার ব্যাপারটা বুঝতে পারছে। এই কাম সে করতে পারবে না। বলল, ‘না স্যার, ওইসব করবো না।’
হাফিজ সাহেব অবাক হলেন, ‘কেন? কেন করবে না! অনেক সম্মান পাবে চ্যাম্পিয়ন হলে।’

ফারুক বলার জন্য বলল, ‘আমার সংসার দেখবে কেডা? আমি তো এই মাল টানি, সংসার চালাই।’

হাফিজ সাহেব একটা ঘোরে পড়ে গেছেন। তার ৩২ বছরের ক্যারিয়ারে এরকম গঠিত শরীর দেখেননি। তিনি কোথা থেকে বলে ফেললেন, ‘তোমাকে আমরা একটা দৈনিক ভাতা দেব। তুমি চলো আমার সাথে।’

কী একটা প্যাঁচে পড়া গেল। ফারুক এই প্যাঁচ থেকে বেরোতে চায়। কিন্তু পারছে না। সে ফেঁসে গেছে। ভালো মতোই ফেসে গেছে। কারণ, এই ঘটনার ঘন্টা খানেক পর দেখা গেল

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের শরীর চর্চা ফেডারেশনের সামনে সিএনজি থেকে হাফিজ সাহেবের পেছন পেছন নামছে ফারুক।
আচ্ছা ভালো কথা। হাফিজ সাহেব সম্পর্কে দু চার লাইন তো বলা দরকার।

হাফিজ সাহেব হলেন কোচ; যাকে বলে বডি বিল্ডিং ট্রেনার। নিজে কোনো কালেও বডি বিল্ডার, ভারোত্তলক টাইপের কিছু ছিলেন না। বরং ফুটবল খেলতেন। কিন্তু কী করে কী করে যেন এই বডি বিল্ডিংয়ের নেশায় পড়ে গেলেন।

হাফিজ সাহেব হলেন কোচ; যাকে বলে বডি বিল্ডিং ট্রেনার। নিজে কোনো কালেও বডি বিল্ডার, ভারোত্তলক টাইপের কিছু ছিলেন না। বরং ফুটবল খেলতেন। কিন্তু কী করে কী করে যেন এই বডি বিল্ডিংয়ের নেশায় পড়ে গেলেন। প্রথম যখন এই ফেডারেশন হলো, হাফিজ সাহেব তাদের সঙ্গে কাজও শুরু করলেন।

এই করতে গিয়ে জীবনে বড়ো কিছু করা হয়নি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চাকরিটাও হবে হবে করে হয়নি। কোনোক্রমে একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে ডিগ্রি পাশ করিয়েছেন। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। সে-ই মূলত বাবাকে মাসে মাসে কিছু হাত খরচ দেয়। আর ছেলেটা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে কী যেন কাজ করে। সে বাসার খরচ চালায়।

অন্য কেউ হলে এভাবে ছেলে-মেয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়তো অপমান বোধ করত। কিন্তু হাফিজ সাহেব এসব টের পান না। তার জগত জুড়ে শুধু বডি বিল্ডিং। তার কল্পনা জুড়ে শুধু বাংলাদেশ থেকে একজন ‘মিস্টার ওয়ার্ল্ড’ তৈরি করা।

অবশেষে হাফিজ সাহেবের মনে হচ্ছে, তিনি সেই মিস্টার ওয়ার্ল্ড পেয়ে গেছেন।

অবশ্য প্রায়শ হাফিজ সাহেব এরকম কাউকে ধরে এনে ফেডারেশনে মিস্টার ওয়ার্ল্ড বলে ঘোষণা করে দেন। তাই কর্মকর্তারা এখন আর তার এসব আওয়াজে খুব একটা পাত্তা দেন না। কিন্তু খালি গায়ের ফারুককে দেখে ফেডারেশন সেক্রেটারিরও চোখ কপালে ওঠল, ‘হাফিজ ভাই, এ তো জেম। কোথায় পেলেন?’

হাফিজ সাহেব মোচে তা দেওয়া একটা হাসি হাসলেন।

নিজেরা টুকটাক কথা সেরে নিয়ে হাফিজ সাহেব এক পাশে ডাকলেন ফারুককে, ‘শোনো ফারুক, তুমি এখন থেকে রোজ সকালে ফেডারেশনে আসবা। দুপুরে এখানেই খাবা। আর ট্রেনিং করবা। তোমার আগে মিস্টার বাংলাদেশ হতে হবে।’

ফারুক সবই বুঝতে পারে। কিন্তু তার মনের দ্বন্ধ কাটে না, ‘স্যার। আমার তো কোনো আয় নেই। সংসার…’

হাফিজ সাহেব ধমক দেন, ‘সংসার আমরা দেখব। স্যার তোমার একটা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। মাসে ১০ হাজার টাকা পাবা। চলবে?’

ফারুক বুঝতে পারছে না এই লোকটা কী আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো মানুষ!

চোখের পানি মুছে ফারুক বলল, ‘স্যার, এতো টাকা আমার লাগবে না।’

‘লাগবে, লাগবে। বাসায় ভালো ভালো খেতে হবে। প্রতিদিন মাংস খাবা, দুধ খাবা। আমরা চার্ট বানায়ে দেব।’

ফারুকের কানে কিছু ঢুকছে না। এখনই সে বাসায় ফিরে যাবে। নয়নকে সব খুলে বলবে। তাদের জীবন বোধহয় এবার বদলেই গেল।

বিদায় নিতে চাইলেই হাফিজ সাহেব বললেন, ‘চলো, দুপুরে একসাথে খাই। ক্ষুধা লেগেছে।’

ফারুকের ক্ষুধা পালায়ে গেছে। তারপরও স্যার বললেন। ফারুক ইতস্তত করে বলল, ‘স্যার আমারে এডভান্স কয়ডা টাকা দেবেন? বাসায় একটু…’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। এডভান্স না। তুমি আমার কাছ থেকে এমনি নাও। বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাও।মিষ্টি না; ফারুক বাসায় যাবে গোশত কিনে নিয়ে।

তার কপালে আজ গোশতই আছে।

এতো ভালো রেস্টুরেন্টে আগে কখনো খায়নি ফারুক। বসার পরই স্যার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী খাবে?’

‘আপনি যা বলেন?’

‘রোস্ট আর পোলাও খাও। এখানকার রোস্ট খুব ভালো।’

ফারুকের মনটা টানছিল না ছেলেটাকে রেখে গোশত খেতে। তারপরও স্যার বললেন। রোস্টেরও দারুণ স্বাদ। এক কামড় দেওয়ার পর ফারুক সম্বিত ফিরে পেয়ে রেস্টুরেন্টের বাইরে তাকাল। দুনিয়াটা দেখে নিতে চায়। বাইরে জ্বলজ্বলে চোখে কাচের ওপার থেকে রানটার দিকে চেয়ে আছে নয়ন!

‘নয়ন!’ চিৎকার করে উঠল ফারুক।

ছুটে বের হলো। তার থেকেও জোরে ছুট দিল নয়ন। ফারুককে বের হতে দেখে বের হয়ে এলেন হাফিজ সাহেব। কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘কে?’

‘স্যার, আমার ছেলে’—ফারুকের চোখে একটু পানি।

হাফিজ সাহেব হাসলেন, ‘ও তোমাকে দেখে লজ্জা পেয়েছে। যাওয়ার সময় ওর জন্যেও রোস্ট-পোলাও নিয়ে যাও।’
এটা ভালো কথা। ফারুকের মনে ধরল।

এক হাতে রোস্ট-পোলাওয়ের বক্সওয়ালা পলিথিন, আরেক হাতে সদ্য কেনা গরুর গোশতের টোপলা। ফারুক আজ সম্রাটের মতো বাড়ি ঢুকল। বাইরে থেকেই হাত দিলো, ‘নয়ন। নয়ন। দ্যাখ, গোশত আনছি।’

নয়নের কণ্ঠ শোনা গেল না। রাগ করেছে মনে হয়।

বাড়ির লোহার গেট ঠেলে ঢুকল ফারুক। বাড়ির উঠোনে অনেক মানুষ। এতো মানুষ কেন? কী হইছে? বউটা আবার মাথা ঘুরে পড়ে গেল নাকি?

ফারুককে দেখে কে যেন এগিয়ে এলো, ‘ফারুক, শুনছিস কিছু?’

‘কী? কী হইছে?’

‘তোর পোলাডা বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে…’

ফারুক আর কিছু শুনতে পায় না। গোশতের টোপলাটা ছিতে মাটিতে পড়ে যায়। গোশতের টুকরোগুলো গড়াগড়ি খেতে থাকে।

ফারুক গোশতর দিকে চেয়ে থাকে— নয়ন কী এই গোশত খেতে চাইবে? ময়লা লেগে গেল যে!

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কথাসাহিত্যিক, ক্রীড়া সাংবাদিক

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।