রবিবার, নভেম্বর ২৪

চেক আউট বা ইন : দেবদুলাল মুন্না

0

Eid Motifএই আমার শেষ দিন বা অন্যভাবে দেখলে আজ থেকে শুরু হবে ফের নতুন দিন। এখন ডিসেম্বর। স্টকহোমে শীতের রাতে জর্জেন্ডেন পার্কে একটা ছোটো ক্যাফেতে বসে আছি। না, এখনও আমার হেরিং অথবা ব্লানডাড ফ্রুক্টশপ্পা’র (এক ধরনের সুইডিশ ফলের সুপ) অর্ডার দেওয়া হয়নি। হেপবার্ণ আমার দিকে বারবার নজর রাখছে। হেপবার্ণ খুব কেতাদুরস্ত। কিন্তু তার দিকে মাঝে মাঝে আমার নজর গেলেও যায়নি আসলে। আমি ব্যস্ত দিন শেষ বা শুরুর শেষ ছক কাটায়।

ছোটো দ্বীপের মধ্যে পার্ক। চারিদিকি সবুজ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। বিকালটা কেটেছে আইসবারে। একাই। ব্রিলাই এভিনিউর ফিফথ লেনের মুনের বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর। সম্ভবত মুনের সাথে আর দেখা হবে না। অথবা আমাকে ভাবতে হবে আমাদের দেখা হয়নি কোনোকালেই। ওই বাসা থেকে বেরিয়ে দ্বিতল বাসে এসে নামি সেনজা সেন্টারের স্টপেজে। সেখান থেকে একটু ডান দিকে এগুলে আইসবার। শীতে সন্ধ্যা আলাদাভাবে কড়া নাড়ে না, বিকাল বিদায় নেয় না। অন্ধকার।

এরকম সময়ে আমার কেন যেন মনে হয় সব শহর বা গ্রামেই কোনো মেহমান বিদায় নিচ্ছে। কোনো নতুন মেহমান ফিরে এসেছে। সময়টা যেন হোটেলের চেক আউট বা ইনের মতো। আইসবারে ঢোকার সময় দেখি, আগেও এমন মনে হয়েছে, যেন এ বারে ঢোকার পথে ‘সিলভার সমর্থিত ভদকা পানকারীরা’ ক্যামেরা নিয়ে সশস্ত্র। ছোটো টেবিল আর ছোটো টুলে বসে পান করার ফাঁকে আমার মনে হয় ওয়েটাররা এতোবেশি কাস্টমার কেয়ারে তটস্থ যে কেউ কেউ মলত্যাগও করেননি যেন জীবনে। মানে এতো গিভ এন্ড টেক ব্যস্ত যে মলত্যাগের দরকার নেই তাদের। এতো মলত্যাগহীন জীবন!

আমি স্টকহোমে যখন বছর সাতেক আগে একটা কাজে প্রথম এসেছিলাম তখনই মুনের সাথে পরিচয়। সে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল শহরের বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট ‘ডেন গিলডেন ফ্রেডেন’ এ। ও আচ্ছা, এটিই নাকি এ শহরের, নাহ, পৃথিবীরও পুরনো রেস্তেরা। অভিজাতদের। সেই ১৭২২ সালে নির্মিত হয়েছিল। নির্মাণের পর থেকে এখনও এর অন্দরের সাজসজ্জা একটুও পরিবর্তন করা হয়নি। মুন আমাকে সেই রাতে ডিনার করিয়েছিল ফ্ল্যাট ব্রেড ও হোয়াইটফিশ দিয়ে। পরে ভ্যানিলা কাস্টার্ড।

হেপবার্ণ এ শীতেও লং গাউন পরেনি। হয়তো তাদের জন্য এটা কোনো শীতই না। শীত তো থাকে অন্যসময়। তাকে ইশারা করতেই সে কাছে এলে আমি খাবারের অর্ডার দিই। হেপবার্ণের নাম কি? জানি না। এটি অড্রে হেপবার্ণের দীঘির মতো চোখ বলে আমার দেওয়া। জর্জেন্ডেন পার্ক বেশি প্রিয়। একটু বেশি সবুজ চারপাশ। আমি হেলোফোওয়িক আলোয় দ্বীপঘেরা জলরাশি দেখি। কি অদ্ভুত এ এলাকার দেশ বা শহরগুলো। স্টকহোম শহরটাই যেন প্রচুর দ্বীপের এক প্রোডাকশন। আর, এই দ্বীপগুলোর মধ্যে প্রচুর সেতু। সেতুগুলো যোগাযোগ রক্ষা করে। স্টকহোমের জর্জেন্ডেন হলো মূল শহরের মাঝখানেরই একটি দ্বীপ। এ শহরে মুনের সাথে আমার দেখাও সেতুর ওপরই। সেই সাত বছর আগে, মনে আছে তো?

স্টকহোমের দক্ষিণে কিগ্রাই দ্বীপের লামডি সেতুতে টুরিস্টরা ঘুরতে যায় সারাবছরই। টুরিস্ট কেন, স্থানীয়রাও যান। আমি সেতুর ওপর উঠছিলাম একপাশ থেকে। মুন অন্যপাশ থেকে। আমার হ্যাভারস্যাকে ট্রাউজার টিশার্ট আর অসমাপ্ত মদের বোতল। মুনের ওভারস্যাকে চকলেটের বক্স, ডায়েরি আর একটা দামি চিরুনি। আমার হাতে সিম্পল মিনারেল ওয়াটার।

স্টকহোমের দক্ষিণে কিগ্রাই দ্বীপের লামডি সেতুতে টুরিস্টরা ঘুরতে যায় সারাবছরই। টুরিস্ট কেন, স্থানীয়রাও যান। আমি সেতুর ওপর উঠছিলাম একপাশ থেকে। মুন অন্যপাশ থেকে। আমার হ্যাভারস্যাকে ট্রাউজার টিশার্ট আর অসমাপ্ত মদের বোতল। মুনের ওভারস্যাকে চকলেটের বক্স, ডায়েরি আর একটা দামি চিরুনি। আমার হাতে সিম্পল মিনারেল ওয়াটার। ওর হাতে ল্যাম্ব্রা (স্পেশাল কোল্ড ড্রিংকস)। আমাদের পরিচয় সেতুর মাঝামাঝি পৌঁছালে। দুজনই বাঙালি চেহারা ও গড়নে একইরকম বলে কৌতুহলী। বাংলাদেশি জেনে আরেকটু আগ্রহী। ও জানতে চায়, এখানেই সেটেলড?

বলি, না আজো কোথাও সেটেলড হতে পারিনি।

এটি একটা হেঁয়ালি কথা। এটি ধরতে পারে মুন। সে বলে, হেঁয়ালি রাখুন। বুদ্ধিজীবিতা দিয়া সব হয় না।

জানতে চাইলাম, কেমন?

সে বলল, কোন খাবারে কতোটা কামড় দিলে হজম হবে সেটা র‌্যাশনালি ভেবে নিশ্চয়ই আপনি আপনার খাবার খান না?
আমি তখন টের পাই, নিচে বয়ে যাওয়া শান্ত জলরাশির মতো সে। না কোনো গর্জন নেই। নেই জলোচ্ছ্বাস। আছে বয়ে যাওয়া।

বলি, তেমন কিছু না। সাংবাদিকতা করি। একটা কাজে এসেছিলাম।

অবাক করে দিয়ে বলে, নিশ্চয়ই গ্রেটা থানবার্গ?

সে আমাকে আরেকটু কৌতুহলী করে। বলি, জি।

সে বলে, আমি গ্রেটাকে অনেক পছন্দ করি। এতো বাচ্চা একটা মেয়ে জলবায়ু মুভমেন্ট নিয়ে সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশ্বনেতাদের থ্রেট করছে। ইন্সপায়ারিং।

আমি পাল্টা বলি, না, ইন্সপায়ারিং না। গ্রেটা ম্যানুফ্যাকচারিং পলিটিক্সের শিকার হচ্ছে।

সেসময় সন্ধ্যা সমাগত। মুন আমার খুব কাছাকাছি হাওয়ায় তার লং লেয়ারকাট চুলের এক ফালি এসে আমার কপালে লাগে। আমি হ্যাভারস্যাক থেকে ছোটো পারফিউম মার্কা কনিয়াকের শিশি বের করে এক চুমুক দিই।

মুন হাসে, বলে, রাজনীতিও কি কারখানায় তৈরি হয়? তাও এ মেয়েটি কিছুই বোঝে না। সম্পূর্ণ আবেগ দিয়ে কাজ করছে গ্রেটা। কী তৈরি করছে সে? তাকে ব্যবহার করেই বা কার লাভ?

মুনের সাথে এই হচ্ছে পরিচয়পর্ব। এরপর বন্ধুত্ব। কিন্তু সেতুর চরিত্র বড়ো নির্মম। সেতু যোগাযোগস্থাপনকারী। আবার ভেঙেও যায় একদিন নিশ্চিত।

একবার পেরুতে গিয়েছিলাম। কাস্কো প্রদেশের আপরিমাক নদীর ওপর যে সেতু এর নাম, কেসওয়াচাকা। সেই ইনকা আমলের। ৬০০ বছরেরও বেশি তার বয়স। বেঁচে আছে সেই সেতু। কিন্তু নতুন নতুন মৃত্যু দিয়ে যেন। ঘাসের আর পরমায়ু কতোটুকুই বা। দুই পাহাড়কে আলাদা করেছে খরস্রোতা এক নদী। সেতুটি তৈরি হয়েছিল দুই পাহাড় আর পাহাড়ি মানুষদের সংযুক্ত করতেই। সেতুটি ঘাসে বোনা দড়ির তৈরি! ঘাস জন্মায়, মরে যায়। সেইসব পাহাড়িরা আবার নতুন ঘাসে সেতু বানায় পুরনো সেতুটি ভেঙে যাওয়ারই আগে। এ যেন আমি মরলাম। আমার সন্তানকে রেখে গেলামের মতো। কিন্তু আমার আর মুনের তো সন্তান নেই। ফলে আমরা কেসওয়াচাকা’র মতো নই আর। আমাদের বেশি স্মৃতিও নেই। যেসব আছে সেসব মুনের জন্য কষ্টদায়ক। আমাকে রিহ্যাবে ভর্তি করা, ম্যাডনেস, ম্যুড সুয়িং সব মিলিয়ে আমার দিকটা বিরক্তিরই মুনের জন্য। প্রেম হওয়ার মূহূর্তগুলো সুন্দর। ওটিই প্রেম। পরে ধীরে ধীরে ক্লোজ শট থেকে লং শটে যাওয়া।

মুনের সাথে পরিচয়ের পর প্রেম এরপর একদিন তার ঢাকা আসা। আমাদের বিয়ে। আমার জীবনে প্রাক্তন রোমেনা নেই। কন্যা তুণা নেই। কিছু বান্ধবী ছিল। কিন্তু তারা তো দিন শেষে আমার একা থাকার সঙ্গী নয়। তুণার ও লেভেল পরীক্ষা। তাই গোপনে বিয়ে করলেও একদিন তারাও জেনে গেল এবং মেনে নেওয়া কষ্টের হলেও মানুষ জগতে কতো না মেনে না নেওয়াকে মেনে নেয়। ওদিকে মুনের জীবনে সন্তান অর্থ কিছু বিভৎস স্মৃতি। তারও আগে দুটো বিয়ে হয়েছিল। টেকেনি। দুই ঘরে দুই সন্তান। এখন প্রথম স্বামীর ক্যান্সার। দ্বিতীয় স্বামী বাংলাদেশে।

রাত বারোটার বাসটা ধরলে ভোরে অসলো শহরে পৌঁছে যাব। ওই শহরে আমার পরিচিত কেউ নেই। কামালউদ্দীন নীলু থাকেন। অসলোর’র একটা ইউনিভার্সিটিতে নাট্যতত্ত্ব পড়ান। উনি মুশফিকার প্রেমিক ছিলেন। মুশফিকা আমার প্রেমিকা ছিল। মুশফিকার মুখে ওনার অনেক গল্প শুনেছি।

হেপবার্ণ খাবার দিয়ে যায়। খেতে খেতে ভাবি, রাতেই বাসে প্রথমে যাব নরওয়ে। স্টকহোম থেকে ৬ ঘণ্টার বাস জার্নির দূরত্ব নরওয়ের অসলো। রাতে বাসের জানালা দিয়ে দূরের খামার কিংবা মিটে মিটে আলো জ্বলে থাকা গ্রামগুলো খুব সুন্দর দেখায়। ছবির মতো সাজানো। রাত বারোটার বাসটা ধরলে ভোরে অসলো শহরে পৌঁছে যাব। ওই শহরে আমার পরিচিত কেউ নেই। কামালউদ্দীন নীলু থাকেন। অসলোর’র একটা ইউনিভার্সিটিতে নাট্যতত্ত্ব পড়ান। উনি মুশফিকার প্রেমিক ছিলেন। মুশফিকা আমার প্রেমিকা ছিল। মুশফিকার মুখে ওনার অনেক গল্প শুনেছি। দেখিনি। তিনিও বিয়ে করেননি। মানে আমার মতো। কেসওয়াচাকা’র মতো জীবন তার নয়। তার বাসা যতোটুকু শুনেছিলাম অসলোর ফ্রগনার পার্কের কাছাকাছি। শুনেছি, পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত। কোনো টিকেট কাটতে হয় না। ভোরে পৌঁছে একটা ঘুম পার্কের বেঞ্চে দেওয়া যাবে। অনেক গাছপালা নাকি ওই পার্কে। অনেকগুলো ভাস্কর্যও নাকি ওখানে। ওসব ভাস্কর্যে কখনো ছোট্ট শিশুর সঙ্গে বাবার কিংবা মায়ের খেলা, দুষ্টুমি, কখনো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মান-অভিমান, প্রেম বিরহ-একাকীত্ব খুনসুটির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসবের স্রষ্টা গুস্টাভো ভিজল্যান্ড। তার জীবনও ছিল কেসওয়াচাকা’র মতো। ওখানে ঘুমাতে আমার মন্দ লাগবে না। যদিও এ পার্কটি হাঁটার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু আমার তো আর না হাঁটলেও চলবে আজ থেকে। আমি কাল ভোরে পৌঁছে ঘুমাব। এরপর গুগল ম্যাপে কামালউদ্দীন নীলুর বাসা খুঁজব। ঠিকানা তো জানি। না থাকুক পরিচয়। মুশফিকা আমাকে ছেড়ে যখন ওনার প্রেমে পড়ল তখন ওকে বলেছিলাম তোমাদের বিয়ে হলে কামালউদ্দীন নীলু ভাইয়ের অসলোর বাসায় বেড়াতে যাব। মুশফিকার অন্যত্র বিয়ে হয়েছে ঢাকায়। এতে আমার সমস্যা নেই। মুশফিকা ছাড়া আমি গেলে কি আমাকে উপেক্ষা করবেন! করলে করবেন। তবু যাব। বিল পেমেন্টের সময় হেপবার্ণ পাশে ছিল। একটু হাসি। যেন ওটিও দোকানে বিক্রি হয়। শুনেছি আমেরিকায় বাচ্চারা যাতে বেশি না কাঁদে, বাবা-মাকে বিরক্ত না করে, সেজন্য ওষুধ বেরিয়েছে। কান্না না করার ওষুধ। মানে, এইখানে কান্নার মতো আমি হেপবার্ণের কাছে যেন হাসি বিক্রি করলাম।

যেভাবে বিক্রি আমি হয়েছিলাম। মুনের কাছে। দেনমোহন ছাড়া। যেনবা শপিংমলের গিফটবোনাস। সেবার, মানে প্রথমবার মুনের সাথে দেখা হওয়ার পর আমি ঢাকা ফিরে আসার পর ওর সাথে হোয়াটসঅ্যাপে মাঝেমাঝে কথা হতো। সে আমাকে কখনো তার অটিস্টিক শিশুর গল্প শোনাত। সেসব স্পেশাল চাইল্ডরা কি করে সেসব বলত। আমি মনোযোগ দিয়ে শোনার ভান করতাম। ভানের কথা এ জন্যই বলছি কারণ আমি এমন শিশুদের মনোজগত নিয়ে গুস্তফ ইয়ুং এর একটা বই পড়েছিলাম। এসব অটিস্টিকদের নিয়ে যুগোস্লাভিয়ান পরিচালক মিরাজভ একটা মুভি বানিয়েছিলেন। নাম, ‘ইয়েট ব্রিজ ব্রোকস’ তিনটা দৃশ্যের উদাহরণ দিই।

প্রথম দৃশ্য:
একটা রেল স্টেশন। সেখানে ম্যাজাক (অটিস্টিক শিশু) দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। বয়স তেরো/চৌদ্দ। শেষ বিকেল। রোদের আভা খেলা করছে তার চোখেমুখে। সে অপেক্ষা করছে একটানা তিনদিন থেকে। কারণ তিনদিন আগে ম্যাজাক তার মায়ের সঙ্গে ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। সেদিন এক মানুষ যাওয়ার সময় ঠিক ওখানেই তার হ্যাভারস্যাক থেকে একটা হারমোনিকা পড়ে গিয়েছিল। সেই হারমোনিকা ম্যাজাকের মা তুলে অল্প সুর তুলে ছিল। সেদিন থেকে ম্যাজাক ওইসময় হলেই তার মাকে তাড়া করে রেল স্টেশনে আসত। কারণ তার ধারণা, সেই টুরিস্টটি আবার যাবে। আবারও একটি হারমোনিকা ভুলবশত পড়ে যাবে। আর তার মা সেটি তুলে সুর তুলবে আর সে তখন নাচবে। এ কথাগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে বলতে শোনা যায়। দৃশ্যে ম্যাজাকের মায়ের হাত ধরে অপেক্ষা। রোদের আভা। একটু লাফিয়ে নাচের মুদ্রায় দুটো চক্কর। যেন ধুলোঝড়ের ঘুর্নির মতো সেই নাচের মুদ্রা মিশে যাচ্ছে মুহূর্তেই। এরপরই চিৎকার। কারণ সেই টুরিস্ট আসেনি। ফেলে যায়নি হারমোনিকা।

দ্বিতীয় দৃশ্য :
এ দৃশ্যে দেখা যায় ম্যাজাকের বয়স প্রায় তিরিশ। সে একটা পার্কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে আর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে জগিং করছে আর বলছে ‘সেভ দ্য এনভয়রমেন্ট, ইয়া ইয়া।’ নেপথ্যে শোনা যায়, ম্যাজাক ঠিক এসময় দেখেছিল এ পার্কে এক লোক এভাবে এসব কথা বলে সকালবেলা যাচ্ছিল। এরপর থেকে সে-ও সকাল হলে এ পার্কে আসে এমন মনে করে। অন্যসব জগিংরত মানুষরা তার এ দৃশ্য উপভোগ করবে।

তৃতীয় দৃশ্য:
এক চিকিৎসকের চেম্বারে বসা ম্যাজাককে নিয়ে তার মা মিলিনিয়া। মিলিনিয়াকে সেই চিকিৎসক বলছেন, এদের নিউরোব্যাংকে স্মৃতি বেশিদিন স্থায়ি হয় না। ডিলিট হয়ে যায়। প্রতিদিন না হলেও প্রায়ই নতুন নতুন স্মৃতি জমা হয়। সেই স্মৃতিগুলো আবার বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো স্পর্শকাতর ঘটনা দেখে। যে ঘটনা তাদের স্পর্শ করে। এরপর দেখা যায় সেই নতুন স্মৃতি নিয়ে তারা বিভোর হয়। ফের ভুলে যায় পুরনো স্মৃতি। চিকিৎসকের কথা শেষ হতে না হতেই একটা ড্রপসিন পড়তে দেখা যায়।

সে ভেবেছিল, এখানে এলে খুঁজে পাবে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর। এই টিলা ব্রহ্মজ্ঞানের উৎসমুখ, এমনটাই শুনেছিল। পৌঁছে দেখে, সেখানে বসে রয়েছে এক লোলচর্ম বৃদ্ধা। শাদা শনের নুড়ির মতো চুল, চোখে বিছুটি। এর কাছেই রয়েছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর? সন্দেহ হয় মিলিনিয়ার, ভুল ঠিকানায় যায়নি তো? তাও প্রথম প্রশ্নটা করেই ফেলে

সেই মুভিতে আরও দেখা যায় ম্যাজাকের মা মিলিনিয়ার অসহায়ত্ব। তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। প্রেম নেই। নতুন বিয়েতে ভয় পায়। হারানোর ভয়। সন্তান জন্ম না দেওয়ার ভয়। ম্যাজাকের জন্য তার সব ভালোবাসা তুলে রাখছে কিন্তু ম্যাজাককে হারানোরও ভয়। মিলিনিয়া অবাক হয় এবং বিরক্ত। দীর্ঘ কঠিন পথ পেরিয়ে একদিন এক পাহাড়ের টিলায় যায়। সে ভেবেছিল, এখানে এলে খুঁজে পাবে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর। এই টিলা ব্রহ্মজ্ঞানের উৎসমুখ, এমনটাই শুনেছিল। পৌঁছে দেখে, সেখানে বসে রয়েছে এক লোলচর্ম বৃদ্ধা। শাদা শনের নুড়ির মতো চুল, চোখে বিছুটি। এর কাছেই রয়েছে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর? সন্দেহ হয় মিলিনিয়ার, ভুল ঠিকানায় যায়নি তো? তাও প্রথম প্রশ্নটা করেই ফেলে, ‘বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি আমি। সবকিছুর প্রতি, সকলের প্রতি। মনে হয়, এক কঠিন ফাঁদে পড়েছি যা কেটে বেরোনোর পথ নেই কোনো। যাকেই বিশ্বাস করেছি, সেই আঘাত করেছে, বারংবার আঘাত এসেছে অতর্কিতে। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না আর৷ আমার কি আত্মহত্যা করা উচিৎ? আত্মহত্যা করতে চাই না। অনেক লড়েছি। কিন্তু এন্ড অব দ্য ডে মনে হয় কিছুই নেই আমার।

বৃদ্ধার নির্লিপ্ত উত্তর, ‘ভালোবাসো’।

ভালোবাসব! কাকে! কাকে? কাকে? কেউ নেই।

কোনো একজনকে নয়৷ সবাইকে৷ সবকিছুকে। ঘাস থেকে শুরু করে সুদূর মহাকাশ পর্যন্ত, সবকিছুকে।

ধুর! কোনো কথা হলো এটা? ভালো একজনকেই বাসা যায়। একটাই মানুষকে। সকলকে ভালোবাসা যায় নাকি?

যদি একজনকে ভালোবাসা যায়, তবে সবাইকে যাবে না-ই বা কেন? তোমার ভালোবাসাকে কী ভাবো? মোহরের ঘড়া? আগলানোর জন্য যক্ষ নিয়োগ করতে চাও যে বড়ো! যেদিন তুমি ভাবতে শুরু করেছ, ভালোবাসা কোনো এমন সম্পদ যাকে গোপন সিন্দুকে তালা মেরে রাখবে, আর শুধু এমন কারও হাতেই সমর্পন করবে যে সেই সম্পদের কদর জানে, সেদিন থেকেই, জেনো, একমাত্র নিজেকে ভালোবেসেছ তুমি। আর কাউকে না। যাও, তালা খুলে দেখে এসো, ও ঘড়া শূন্য। কিছুই নেই।

ভালোবাসতে আধার লাগে না মানুষের?

খুঁজে নিয়েছিলে তো আধার। কী হলো?

কী আবার হবে? সোনা ভেবেছিলাম যাকে, দেখলাম সে পিতল। ঘৃণা হলো।

কেন? পিতল কি ঘৃণার যোগ্য? পিতলকে ভালোবাসা যায় না, আর সোনাকে যায়? কেন? দামী বলে? অর্থমূল্যে হিসেব করো ভালোবাসার? তবে যাও, মুদির দোকান খোলো। দুশো কেজি চিনি মাপবে দাঁড়িপাল্লায়, ঠোঙায় মুড়ে দিয়ে দশ টাকা বুঝে নেবে। শান্তি পাবে এতে।

মিলিনিয়া আর নিতে পারে না। চেচিয়ে বলে, আপনি কে তা জানি না। তবে জ্ঞান আপনার নেই বললেই চলে। ভালোবাসা অবশ্যই দামি জিনিস। যে কেউ পারেও না ভালোবাসতে। অনেক, অনেক সাহস লাগে।

সেই বৃদ্ধা ক্ষীনকন্ঠে উত্তর দেয়, তা লাগে। সত্যিই ভালোবাসতে পারলে, লাগে। কিন্তু সে তো তুমিও পারোনি। তুমি তো দোকানির মতো দরাদরি করো। হিসাব মিলাও। কিন্তু ভালোবাসা তো অমূল্য, যার দাম হয় না, ওজন হয় না, কোনো হিসেবে যাকে বাঁধা যায় না।

মিলিনিয়া এবার বলে, আর সেই অমূল্য জিনিস তুলে দেব যার তার হাতে? আর কয়েকদিন পর সব ভোগ করে চলে যাবে সে? পথের ধারে পড়ে থাকব পরিহার্য এক বস্তু হয়ে? ঘাসফুলের মতোন? আমার কী নেই? সব আছে। সব করেছি। আর সে এসব ভোগ করবে চাতুরি করে?

তাতে কী? বিনামূল্যের যে কোনো জিনিসই যে পরিহার্য হয় একদিন।

মিলিনিয়া জবাব দেয়, তবে বিনামূল্যে বিলোব কেন ভালোবাসা?

কারণ মূল্য ধরলে যে আর সে জিনিস অমূল্য থাকে না। দাম লেখা চিরকুট গলায় ঝুলিয়ে নিতে হয়। গিয়ে বসতে হয় বাজারে, বিক্রি হতে। নিজেকে সাজিয়ে রাখতে হয় দোকানের কাচের জানলায়। তাকেই তো কেনা যায়, যার মূল্য আছে। যা অমূল্য, তা যে একমাত্র বিনামূল্যই হতে পারে।

মিলিনিয়া জবাব দেয়, তবে বিনামূল্যে বিলোব কেন ভালোবাসা?

কারণ মূল্য ধরলে যে আর সে জিনিস অমূল্য থাকে না। দাম লেখা চিরকুট গলায় ঝুলিয়ে নিতে হয়। গিয়ে বসতে হয় বাজারে, বিক্রি হতে। নিজেকে সাজিয়ে রাখতে হয় দোকানের কাচের জানলায়। তাকেই তো কেনা যায়, যার মূল্য আছে। যা অমূল্য, তা যে একমাত্র বিনামূল্যই হতে পারে।

তাতে কী লাভ? যার মূল্য কেউ দিতেই পারে না, তা থেকেই বা কী লাভ? কী পাব, আমি?

লাভ নেই তো। কোনো লাভ নেই। লাভ-ক্ষতির হিসেব যদি করতে চাও, তবে ক্ষতি আছে। নিদারুণ ক্ষতি। আঘাতে জর্জরিত দেহমন, সেও আছে। কী পাবে? অত আঘাত সহ্য করেও ফের উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে, বারংবার। যন্ত্রণায় ডুবে গিয়েও ফের হাসি ফুটবে মুখে। আলো পাবে, অনেক অনেক আলো। আলোয় ঝলমল করে উঠবে তুমি।

মিলিনিয়া এবার জানতে চায়, সে কেমন করে হবে? ভালোবেসে ভালোবাসা ফেরতই যদি না পেলাম, তবে তো অন্ধকারে ডুবে যাব আমি!

এমন মনে হচ্ছে, কারণ এখনও তুমি ভালোবাসাকে ভাবো মোহরের ঘড়া। ভাবো, যোগ্য জহুরির কাছে নিয়ে গেলে সে কদর করে উপযুক্ত মূল্য দেবে তোমায়। মূল্যের প্রত্যাশী হলে ব্যবসা করো, লাভবান হবে। ভালোবাসতে যেও না। কারণ ভালোবাসা তো সোনা নয়, সে হলো পরশপাথর।

পরশপাথর?

হ্যাঁ। যে পারে ভালোবাসতে, সত্যিই পেরে ওঠে, যে চারিপাশের সমস্ত সস্তা ও দামি, জড় ও জীবন্ত, খারাপ ও ভালো, নিত্য এবং অনিত্য, সবটাকে, এই সবটাকে দু’বাহুতে জড়িয়ে নিতে পারে, আগলে রাখে স্নেহে, শাসন করে অধিকারবোধে, মুগ্ধ হয় প্রেমে, রিক্ত হয় ভালোবাসায়, সে মানুষের ভালোবাসা হয়ে ওঠে পরশপাথর। এইটুকু এক নুড়ি মাত্র। তার নিজের কোনো মূল্য নেই। তাকে কেউ যত্নে তোলে না সিন্দুকে৷ কিন্তু সে যাকে ছোঁয়, সে হয়ে ওঠে সোনা। আলো সে আহরণ করে না অন্যত্র। আলো জন্মায় তার নিজের মধ্যেই৷ যে অন্ধকারে সে ডুবে ছিল, সেই অন্ধকারের গর্ভ থেকেই জন্মায় আলো।

মিলিনিয়া জানতে চায়, কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি। কিচ্ছু না। কাকে ভালোবাসব তবে? কাকে ভালোবাসব?

বৃদ্ধা রুক্ষ জমি থেকে একটা পাথর তুলে নেয় হাতে। বলে, যাও, একে ভালোবাসো।

এই পাথরটাকে?

হ্যাঁ, পাথরটাকেই। ভালোবাসো, তোমার ‘আমি’টাকে উজাড় করে ভালোবাসো, এই নিতান্ত বিনামূল্যের পাথরের টুকরোটাকে।

কেন? কেন? কেন? এটাকে কেন? মিলিনিয়া ফের চিৎকার করে জানতে চায়।

বৃদ্ধা এবার বলে, তুমি যেখানে জন্মেছ, এই পৃথিবী, সেও তো এমনই একটা পাথরেরই টুকরো, তাই। সেই বিরাট পাথরটারও মূল্য নেই কোনো। কেনা যায় না, বেচা যায় না। তাই না? যদি আধার লাগেই, তবে এই নাও আধার। আজ এইটুকু পাথর তোমার বুকের খাঁচার মাপমতো হবে। যদি সত্যিই পারো ভালোবাসতে, অবোধ শিশুর মতো ভালোবাসতে পারো একটা সামান্য নুড়িপাথরকে, তবে তুমি বাড়তে থাকবে দৈর্ঘে ও প্রস্থে। বাড়তে থাকবে তোমার ভালোবাসার আকাশ। বাড়তে বাড়তে একদিন গোটা ব্রহ্মান্ডটাকেই জড়িয়ে নিতে পারবে তুমি ভালোবেসে। আলাদা করে আর কিছু চাওয়ার বা পাওয়ার থাকবেই না।

মুনকে আমি বাধ্য হয়ে এ মুভির গল্পটা একদিন শুনিয়েছিলাম। কোনো এক রোববার রাতে বাংলাদেশ সময় বারোটায় মুন ফোনকল দেয় হোয়াটসঅ্যাপে। মুন চমকে দিয়ে জানায়, তার সাথে মিলিনিয়ার হাহাকারের অনেক মিল আছে। জানতে চায়, আমি কী তার পরশ পাথর হবো?

প্রেমের শুরুটা এভাবে। ছয় মাস আমাদের ভার্চুয়াল প্রেমের পরিণতিতে আমি সুইডেন তার কাছে যাই। বেশ ছিল। কারণ আমি তো অমুল্য কেউ না। কম ছিল, মুনের প্রত্যাশা। বেশ ছিল আমাদের সংসার জীবন। কাগজবিহীন। কাবিনবিহীন। আমরা নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে শুধুই কবুল কবুল বলেছিলাম। কতো কি! সে আমার লম্বা চুল আচড়ে দিত। পনিটেল ঠিক করে দিত। আমি ওর চুলে ওয়েল মেসেজ করে দিতাম। ছুটির দিনে হেরিটেজের দোহাই আমরা ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে গান শুনতাম। দূরের দূরের শহরে বড়োতে যেতাম। আমাদের সঙ্গী তার ছোটো ছেলেটা। তার নাম নীল। নীলকে আমি যেন মুহূর্তে মুহূর্তে যতোক্ষণ সময় পেতাম দিতে চাইতাম নতুন নতুন স্মৃতি। কারণ আমার মনে হতো নতুন নতুন স্মৃতি আমি যত দেব সে ততো পুরনো স্মৃতি ভুলে গিয়ে স্মৃতির পাহাড়ে শেরপার মতো উঠে যাবে আর ফিরে যাবে স্মৃতি না হারানোর জগতে।

মুন একদিন আমায় বলল, তুমি কি কিছুই করবে না? তার কথার মানে বুঝিনি। আমি বললাম, নীলের কোনো সঙ্গী নেই। আমি ধীরে ধীরে নীলের ভুবনে ঢুকে যাচ্ছি। আমি ও নীল মিলে স্মৃতির পাহাড় জমানোর খেলায় মেতেছি।

কিন্তু আমি এ কাজে এতো মেতে উঠলাম যে মুন একদিন আমায় বলল, তুমি কি কিছুই করবে না? তার কথার মানে বুঝিনি। আমি বললাম, নীলের কোনো সঙ্গী নেই। আমি ধীরে ধীরে নীলের ভুবনে ঢুকে যাচ্ছি। আমি ও নীল মিলে স্মৃতির পাহাড় জমানোর খেলায় মেতেছি। কিন্তু মুন আমার মতো ভাববে কেন? মুন বলল, ‘আমি বুড়ো অটিস্টিককে পালতে পারব না। তুমি চলে যাও বাসা ছেড়ে।’ খুব অল্প নোটিশে বলা।

জীবন খুবই ব্যয়বহুল, নাকি? কাল রাতেই মুনকে আমি বললাম, বলতে বাধ্যই হলাম, তোমার হিসেব নিকাশে আমি নেই। আসলেই জীবন ব্যয়বহুল। তোমার ব্যয় কমাতে চাই। আমার তো কোনো দেশ নেই। আমার তো কেসওয়াচাকা’র জীবন নেই। ফলে আমার ছিল নন-ম্যানুফ্যাকচারিং সব কিছু। আর তুমি ধরতে পারোনি ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রেটাকে। তুমি সোশ্যাল ডেমোক্রেট। আর আমি ওরকম কোনো ইজমের জগতকেই বিলং করি না। আমি আসলে পরশপাথর ছিলাম না কখনোই। নেহাতই পাথর।

রাত সোয়া এগারোটার নরওয়েগামী বাসে উঠি আমি। বাস চলছে। রাস্তার দু-পাশের খামারগুলো দেখি। খুব মায়াময়। একটা অধ্যায়। একটা দৃশ্যের ভেতর দিয়ে যেন যাচ্ছি আমি। এর বেশি কিছুই নই। এ যাত্রার শুরু নেই। শেষ নেই। আবার যেন যাচ্ছিও না কোথাও। ফিরছি নিজের কাছে। বহুদিন পর। বহু পথ মাড়িয়ে। কী যে ভালো লাগে। দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে যেন পাখির মতো ভাসতে থাকি। উড়তে থাকি। একটা বোঝা আর না-বোঝার ওড়া।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯৬৭ সালে। শ্রীমঙ্গল চা বাগানে শৈশব, শহরে তারুণ্যের প্রথমভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স। সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। ২০০০ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস, হ্রা হ্রা হ্রি হ্রি। এরপর প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রকাশ পায়, নাম, ‘বাজারে হুমায়ুন আজাদ গোরস্থানের দিকে যেতে যেতে আহমদ ছফা’। বিআইডিএসের গবেষণা বই ‘বায়ান্নো থেকে মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট’ লিখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ও অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে। এটি প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, ‘জবাফুলের দুনিয়া’। ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় মুক্ত গদ্যের বই, ‘বিশ্ব সাহিত্যের আখড়া রিপাবলিক’।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।