আব্বাস কিয়ারোস্তামি। আর্টের একজন বিশ্বনাগরিক। যেখানেই সিনেমার আলো পৌঁছেছে, সেখানেই কিয়ারোস্তামির উপস্থিতি আছে। পার্সিয়ান শিল্পরাজ্যের এই সম্রাটকে কেবল ইরান-ই ধারণ করে না, ধারণ করে শিল্প-সাহিত্যের সমগ্র জগৎটাই। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পেইন্টিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের ছাত্র থাকাকালে পড়াশোনার খরচ জোগাতে ট্রাফিক পুলিশের চাকরি করেছেন। এরপর ফাইন আর্টসের নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন। ষাটের দশকের পুরোটাই নিজেকে বিজ্ঞাপন জগতের একজন হিসাবে নিবেদিত রেখেছিলেন। টেলিভিশনের জন্য শত-শত বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন। ছবি আঁকা, গ্রাফিক্সের কাজ, ফটোগ্রাফি, ইন্সটলেশন, বিজ্ঞাপনের কাজ করতে করতেই সিনেমায় এসেছেন।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে পেইন্টিং ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের ছাত্র থাকাকালে পড়াশোনার খরচ জোগাতে ট্রাফিক পুলিশের চাকরি করেছেন। এরপর ফাইন আর্টসের নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন। ষাটের দশকের পুরোটাই নিজেকে বিজ্ঞাপন জগতের একজন হিসাবে নিবেদিত রেখেছিলেন। টেলিভিশনের জন্য শত-শত বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন। ছবি আঁকা, গ্রাফিক্সের কাজ, ফটোগ্রাফি, ইন্সটলেশন, বিজ্ঞাপনের কাজ করতে করতেই সিনেমায় এসেছেন।
কবিতার কাছেও সমর্পিত ছিলেন আজীবন। অন্য পরিচালকদের জন্য বেশ কিছু চিত্রনাট্য লিখেছেন। আর ছোটো-বড়ো ফিচার ফিল্ম, ডকুমেন্টারি মিলিয়ে নিজে পরিচালনা করেছেন ৪০টি ছবি। ইরানের ল্যান্ডস্কেপ আর মানুষের জীবনাচার বুঝতে নির্দ্বিধায় আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমাগুলির কাছে যাওয়া যায়। কাব্যিক চিত্র-দর্শনের অনন্য কারিগর ছিলেন তিনি। কিয়ারোস্তামির যেকোনো শিল্প-সৃষ্টিতে তীব্র জীবনতৃষ্ণা খুঁজে পাওয়া যায়। সৃষ্টিমুখর বর্ণিল এক জীবনে সিনেমা বানানোর বাইরে তিনি হাজারো কবিতা লিখেছেন। সেসব কবিতার কলেবর ছোটো, কিন্তু ওজন অনেক। কবিতাকে তিনি কখনো অযথা টেনে লম্বা করতে চাননি। বেশিরভাগ কবিতাই তিন-চার পঙ্ক্তির। বহুমাত্রিক চিন্তার প্রকাশ ঘটেছে সেসব কবিতায়। কিয়ারোস্তামি শুধু যে কবিতা লিখেছেন তা নয়, তাঁর সিনেমায় কবিতার ব্যবহার করেছেন নানাভাবে।
নিজের মৌলিক লেখা কবিতার বই আছে তিনটি। সেই তিনটি বইয়ের সমগ্র আছে; যেগুলোর ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশ হয়েছে। নির্বাচিত কবিতা সংকলন প্রকাশ হয়েছে ‘A Wolf Lying in Wait’ নামে। এছাড়া সিনেমার স্কেচ হিসেবে লেখা কবিতাগুলি নিয়েও একটি বই আছে। এর বাইরে কিয়ারোস্তামি ছয়টি কবিতার বইয়ের সঙ্গে যুক্ত।
নিজের মৌলিক লেখা কবিতার বই আছে তিনটি। সেই তিনটি বইয়ের সমগ্র আছে; যেগুলোর ইংরেজি অনুবাদও প্রকাশ হয়েছে। নির্বাচিত কবিতা সংকলন প্রকাশ হয়েছে ‘A Wolf Lying in Wait’ নামে। এছাড়া সিনেমার স্কেচ হিসেবে লেখা কবিতাগুলি নিয়েও একটি বই আছে। এর বাইরে কিয়ারোস্তামি ছয়টি কবিতার বইয়ের সঙ্গে যুক্ত। কিংবদন্তী পার্সিয়ান কবি হাফিজ, সাদী, নিমা ও রুমির নির্বাচিত কবিতা দিয়ে তিনি ‘Wine’, ‘Tears’, ‘Water’ এবং ‘Fire’ নামে চারটি সংকলন করেছেন। পার্সিয়ান কবিতা নিয়ে কিয়ারোস্তামির আরও দুইটি বড়ো কাজ আছে। দুটিরই দুটি করে ভলিউম। এক. ‘Night: Poetry from the Contemporary Persian Canon’; দুই. ‘Night: Poetry from the Classical Persian Canon’. সিনেমা নিয়ে লেখা, প্রকাশিত গদ্যের বই-ও একাধিক। সেসব নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
আমি সম্প্রতি আব্বাস কিয়ারোস্তামির দুইটি কবিতার বইয়ের বাঙলায়ন করেছি। ইংরেজি থেকে। বইগুলি পড়তে পড়তেই মনে হয়েছিল, আরেহ এগুলা তো বাঙলাতেও রূপান্তর করা যায়। ইংরেজি অনুবাদে কবিতাগুলি পড়তে পড়তে এ-ও অনুভব করেছি যে, যদি ফার্সি ভাষাটা জানতাম! তাহলে কবিতার ভিতর দিয়ে কিয়ারোস্তামির চিন্তাজগতে আরও ভালোভাবে জার্নি করা যেত! সিনেমায় ইমেজ দেখা যায় বলে ডায়লগের মূল ভাষা না জানলেও চলে, ছবি আর সাবটাইটল দিয়ে প্রায় পুরাপুরিই বুঝে নেওয়া যায়। কিন্তু কবিতা এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনূদিত হবার পর, সেই দ্বিতীয় ভাষা থেকে আরেকটি ভাষায় রূপান্তরিত হলে কবিতার খোলসটাই যে কেবল থাকে, তা না বললেও চলে। তারপরও ইংরেজি অনুবাদগুলাতে ভরসা রাখা যায়। কারণ মাতৃভাষা ফার্সি, এমন লোকজনের তত্ত্বাবধানেই ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। এখানে দুইটি বই থেকে কুড়িটি কবিতা রইল।
— রুহুল মাহফুজ জয়
আব্বাস কিয়ারোস্তামির কবিতা
আমি এক শেষকৃত্যানুষ্ঠান থেকে ফিরছি
বোধ করি জুতাগুলা সংকুচিত হচ্ছে
প্রেম পাইতেছে
এমন একজনের প্রতি, যারে আমি চিনি না।
**
ভালোবাসতে বাসতে্
আমি অসুস্থ হয়ে গেছি।
**
আহত এক অশ্ব শুয়ে আছে
যার মালিকানা দাবি করেনি কেউ
**
যেহেতু আমি পার হয়েছি পাগলামির সকল সীমা
পথ
তাই ব্যাপক মসৃণ দেখায়।
**
যুবতী হতে থাকা মেয়ে
লেটুসখেতের পাশ দিয়া গেলে
তাজা আখরোটের সুবাস
উড়ে আসে হাওয়ায়।
**
কীভাবে
আমি শান্তিতে ঘুমাই
যখন সময় এক সেকেন্ডের জন্যেও থামে না
এমনকি ঘুমেও?
**
এক আগন্তুক
দিক জিজ্ঞেস করল
এইমাত্র পৌঁছানো আরেকজন
আগন্তুকের কাছে।
**
নোটিসে পড়লাম:
‘ছোঁয়া নিষিদ্ধ’;
আমার আঙুলের ডগা কেঁপে উঠল।
**
আমি মাপি
জলাভূমির গভীরতা
ব্যাঙের চিল্লাফাল্লা দিয়া
**
বেহেশত আর দোজখ
পাশাপাশি,
খুব কাছে এবং অনেক দূরে দূরে।
**
উদাসীনভাবে
সাপটা
তার চামড়া থিকা ছাড়া খোলসের পাশ দিয়া চলে গেছে।
**
রাতভর চলা
ব্যাঙের ভোজসভায়
কী হিস্যা আছে
সাপেদের জন্যে?
**
আমি জানি না
কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত
নাকি রাগান্বিত
অই ব্যক্তিটার প্রতি যে আমারে শিখায় নাই
কীভাবে মিথ্যা ফিরায়ে দিয়ে আরামে থাকা যায়।
**
‘তুমি কখন ফিরা আসবা’, আমি জিগাইলাম।
শে বলল, ‘কখনোই না’।
আমার সময় থেমে গ্যালো।
**
বেহেশতে পৌঁছাইতে
অবশ্যই যাইতে হবে
জাহান্নামের রাস্তা দিয়া।
**
শাদা এক অশ্বশাবক
কুয়াশার ভিতরে দেখা দিল
আর অদৃশ্য হয়ে গেল
কুয়াশার ভিতরেই।
**
হাজারো চেরি ব্লসমের মধ্যে
মৌমাছিরা
দ্বিধাগ্রস্ত।
**
সহস্র ছোট্ট পাখির স্বপ্ন জবাই হলো
কোমল একটা বালিশে।
**
ও অঙ্কুরিত হলো
পুষ্পিত হলো
সম্পূর্ণ শুকায়ে
মাটিতে ঝরেও গ্যালো।
কোনো আত্মাই দেখতে পেল না তা।
**
যেহেতু হাওয়া বেগবান হলো
এবার কোন্ পাতাটার পালা
ঝরে পড়ার?
জন্ম ৩১ মার্চ, ১৯৮৪, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ। প্রকাশিত কবিতার বই : আত্মহত্যাপ্রবণ ক্ষুধাগুলো (২০১৬, ঐতিহ্য) কালো বরফের পিস্তল (২০১৮, জেব্রাক্রসিং) বিদ্যুতের প্রাথমিক ধারণা (২০১৯, তবুও প্রয়াস, ভারত), মান্দার ফুলের সখা (২০২১, ঢাকাপ্রকাশ)। প্রকাশিত গদ্যের বই : এ টু জেড বিশ্বকাপ (২০১৮, ঐতিহ্য)। সম্পাদিত গ্রন্থ : কূটালাপ (২০১৮, ঐতিহ্য)। এছাড়া কবি ফারাহ্ সাঈদের সঙ্গে তিনটি ব্রেইল বই সম্পাদনা করেছেন। শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক ওয়েবজিন শিরিষের ডালপালা’র সম্পাদক।