বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

পানিডাঙা গ্রামে যাকিছু ঘটেছিলো-২য় পর্ব : আকিমুন রহমান

0

দ্বিতীয় পর্ব

একা একা জুলহাস!


এদিকে জুলহাসের কী হয়েছিলো, আট বছরে পা দেওয়ার পরপরই সে দেখে, তার আশপাশে কেমন জানি অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে চলেছে! অমন ঘটনা আগে আর কোনোদিন হতে দেখেনি সে! ঘটনার শুরু মাঘ মাস থেকে! তারপর যেতে যেতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস আসে! এর মধ্যে কতো কতো আজব কিছু যে, ঘটতেই থাকে ঘটতেই থাকে!

বিষয়টা শুরু হয় একদম আচমকা!

সেই সময়ে, বাড়িতে তখন, জুলহাসই হচ্ছে একমাত্র বাচ্চা! তার ভাইবোন কেউ নেই! আর থাকার মধ্যে আছে বড়োরা দু-চারজন!

বড়োরা কেউ না-কেউ, সকল সময়ই, জুলহাস আলীকে নিজেদের নজরের সীমানার মধ্যেই রাখে! আবার তারা তাকে ছোটোখাটো, হালকা-পাতলা নানা কাজের ফুট-ফরমাশও দিতে থাকে! নিজেদের জুলহাসকে, আস্তে আস্তে দুনিয়াদারির বিষয়কর্ম শিখিয়ে নেওয়ার জন্যই অমনটা করে তারা!

সেদিন তখন মাঘ মাসের দিন! রোদ একটু তেতে উঠতেই মা জুলহাসকে বলে, ‘যা তো বাজান! গাছের তেনে কয়টা নিমপাতা পাইড়া আন! চাইলের মটকিতে নিমপাতা দেওন লাগবো! দুনিয়ার পোক হইয়া গেছে, চাইলগিলিতে!’

এবারের মাঘমাসে কী যে শীত! সমস্তটা সকাল থাকে ঘুটঘুট্টা ওশেঢাকা। তারপর দুপুর আসার একটু আগে, ছড়ছড়াত করে, আকাশে সূর্য জাগনা দিয়ে দেয়! তখন দুনিয়া ভরে রোদ! ফাটফাটা হলুদ রোদ! অতো যে রোদ, তার মধ্যেও কিন্তু দুপুরটা, শীতে শীতে তুঁতড়ি-মুতড়ি খেতে থাকে! জুলহাস জানে, এমন শীতে সাপেরা নিজের নিজের গর্তে বিরাম-বিশ্রাম করে! মোটের ওপর তারা মাটির ওপরে চরতে আসে না!

ওমা! সেই কথা তো দেখো আদত সত্য কথা না! উঠানের শেষকোণের নিমগাছটা আধমাঝারি। ছায়ছোট্ট তার গড়ন! ওটাতে যখন-তখনই উঠে যেতে পারে জুলহাস! সেই দুপুরের বেলা, সে তখন কেবল উঠানের নিমগাছে চড়েছে মাত্র, এমন সময় শোনে; কে জানি তাকে ডাকে! খুব গলা নামিয়ে, হিসহিস হিসহিস করে করে, কে যেনো তাকে ডেকেই যাচ্ছে! যেনো নিমগাছের একদম গোড়াতে এসেই কেউ ডাকছে জুলহাসকে!

এতো ডাকলে, সাড়া না-দিয়ে কী পারা যায়! নিমের ঝোপড়া ডালগুলো সরিয়ে জুলহাস তখন, নিচের দিকে তাকায়! ‘কেটায় ডাক পাড়ে! কেটায় রে?’

আরে মা! কী আচানক ব্যাপার! অই দেখো! ঢোঁড়া সাপটা ঘাড় উঁচায়ে জুলহাসের দিকে তাকিয়ে আছে!

সে কী! ঢোঁড়া সাপটা ডাকছে জুলহাসকে!

‘ঢোঁড়া সাপে আতকা এমুন, বাড়ির ভিতরে আইয়া পড়ছে ক্যান! কী অইলো অর!’ যদিও আগে কোনোদিন এই ঢোঁড়া সাপটার সাথে কথা বলাবলির কোনো ফুরসত হয়নি তার, তাও তাদের দুজনের মধ্যে বহুত ভালোরকম চেনাশোনা আছে! দুজনেরই দুজনের নড়াচড়াটাকে জানে আর বোঝে!

ঢোঁড়া সাপটা থাকে জুলহাসদের পুকুরের পুব মুড়ার কোনো একদিকে! নিত্যি দুপুরের মুখে সে, পুকুরটা সাঁতরে সাঁতরে, এ-বাড়ির ঘাটার দিকে চলে আসে! সেইখানের ঘাটলার পাশে, ঘাসের ওপরে, জুলহাসে তার জন্য মাছের নাড়ি-মুড়ি, মাথা-পাখনা রেখে আসে কিনা!

ঢোঁড়া সাপটা থাকে জুলহাসদের পুকুরের পুব মুড়ার কোনো একদিকে! নিত্যি দুপুরের মুখে সে, পুকুরটা সাঁতরে সাঁতরে, এ-বাড়ির ঘাটার দিকে চলে আসে! সেইখানের ঘাটলার পাশে, ঘাসের ওপরে, জুলহাসে তার জন্য মাছের নাড়ি-মুড়ি, মাথা-পাখনা রেখে আসে কিনা!

মায়ে একদিকে মাছ কোটা শেষ করে, আর অমনি জুলহাস অই নাড়ি-পাখনাগুলা তুলে নিয়ে পুকুর ঘাটলার দিকে ছুট দেয়! ‘কি রে? কি রে! অই জুলা! এই কাটাকুটি লইয়া তুই ঘাটলার দিগে যাস ক্যান? কী অইছে?’ মায়ে এই কথা জিজ্ঞেস করে! ঘরের অন্য বড়োরা তো করেই!

‘পুষ্কুনীর মাছগিলিরে দিতে যাই গো মা! মাছেরা যুদি খায়!’

‘দেহো পাগলার কারবার! মাছের নাড়ি-মুড়ি বোলে পুষ্কুনীর মাছে খাইবো! খাইবো না খাইবো না!’ ঘরের সকলে এইমতে অনেক নিষেধ দিতে থাকে!

তাদের কোনো কথায় সাড়া না-দিয়ে, জুলহাসে পুকুরঘাটের দিকে তুরুত ছুট দিতে থাকে! আসল কথাটা কী আর বাড়ির বড়োরা জানে! না, সেটা তাদের বলা যাবে! সত্যটা শুনে একেকজনে তো ভয়-ডরে দাঁতি খাওয়া শুরু করবে! তারপর জ্ঞান ফিরে পেয়ে ধুম কান্নাকাটি শুরু করবে!


আরও পড়ুন : পানিডাঙা গ্রামে যাকিছু ঘটেছিলো-১ম পর্ব

 


‘হায় হায়! পোলারে এইটা কোন শনিয়ে পাইছে! হায় হায়! এইটা কী করতাছে জুলায়! হায় হায়!’ এমন এমন কান্নাকাটিই কী শুধু করবে তারা? আর কিছুই কী করবে না?

করবে! মাছের নাড়ি-কাঁটা নিয়ে আর তারা জুলহাসকে পুকুরপাড়ে যেতে দেবে না! চির জনমকার মতন তারা অই কাজটা করতে নিষেধ দিয়ে দেবে! জুলহাসে কী তখন তাদের কথা অমান্যি করতে পারবে? কিছুতেই পারবে না! এমনই যে হবে, সেইকথা জুলহাসে খুব জানে! তাহলে সে কেমন করে বড়োদের কাছে আসল কথাটা বলে!

তখন ঢোঁড়াটার কী হবে! সমস্তটা দিন তারে বেজার মুখে কেবল খাবার খুঁজে যেতে হবে! খাবার খুঁজে খুঁজে কাহিল হয়ে যেতে হবে! সেটা দেখে কী জুলহাসের কষ্ট হবে না? মায়া লাগে না নাকি তার? ঢোঁড়াটার জন্য তার অনেক মায়া লাগে!

এইমতেই তো এতোদিন ধরে চলে আসছিলো! ঘাটলার কিনাওে মাছের কাঁটা-কোটা রেখে জুলহাসে চলে এসেছে, তারপর কখন যেনো এসে ঢোঁড়া সাপে সেগুলো খেয়ে গেছে! প্রথম প্রথম কয়দিন ঘাটলার কাছে-কিনারে থেকে, ঢোঁড়াটার সাথে দুই-চারটা কথা চালাচালির চেষ্টা যে সে করেনি, তা নয়!

কিন্তু ঢোঁড়া সাপে কোনো একটা কথার কোনো উত্তর করেনি! এমনকী জুলহাসকে দাঁড়ানো দেখলে, সে পাড়েসুদ্ধ উঠে আসেনি! শুধু পানির ওপরে মাথাটা একটুখানি তোলা দিয়ে, চেয়ে থেকেছে জুলহাসের দিকে!

তাদের পুকুরের পানি কতো যে টলটলা! সেই ঝলবলা পানির নিচে ঢোঁড়ার শরীরটা কেমন যে ঝিলিবিলি ঝিলিবিলি করতে থাকে! কতো যে ঝলঝল ঝলঝল! যেনো ওটা কোনো ঢোঁড়া সাপের শরীর না! পানির তলে যেনো ওটা একটা ফড়িং! ভাদ্রমাসে যেই ফড়িংয়েরা উড়ে উড়ে আসে! পাকনা গোঁড়া-লেবুর মতন হলুদ হলুদ ফড়িং! অই ঢোঁড়া সাপটা তাদের মতন তাজা তাগড়া সবজে-হলুদ!

আজকে কিনা সে উঠে এসেছে জুলহাসদের উঠানে! একেবারে চলে এসেছে এই নিমগাছের গোড়ায়! কেনো?

‘কী! কী হইছে তোমার? এইনে আইছো ক্যান? মায় অহন তরি মাছ কুইট্টা শেষ করে নাই! আট্টু পরে তোমার খাওন দিয়া আমু! অহন জলদি কইরা যাও গা তুমি! কেউ তোমারে এইনে দেখলে ঢিল্লাইয়া মাইরা ফালাইবো রে! যাও গা, যাও গা!’ জুলহাস অতি নিচু আর নরম গলায় ঢোঁড়া সাপটাকে বুঝ দেওয়া শুরু করে!

‘কী কও এটি, জুলা! আমি খাওনের লেইগা আইছি? আইছি তো একখান গুপ্তি কতা কইতে! অক্ষণ হোনো কতাখান!’

‘কী অইছে! কী অইছে!’ জুলহাসের কলজা আতকার ওপরে ডরে ধুকধাক শুরু করে!

‘হোনো, কইতাছি! কঠিন এক বিপদের কথা!’ ঢোঁড়া সাপের স্বর আরো নিচু হয়ে যায়! হিস হিস হিস—সিপ সিপ সিপ; ‘হোনো জুলা! তোমার আপনা দোস্তের জান বুঝি যায় যায়! কে তারে অখনে বাঁচায়!’

‘আপনা দোস্ত! জুলহাসের আপনা দোস্ত? এক তার আপনা দোস্ত আছে, ভোলাইল গ্রামে! সে তার আপনা মামাতো ভাই! তার নি কোনো বিপদ হইছে! সেয় ছাড়া জুলার আরেক দোস্ত তো— এই ঢোঁড়া সাপে! ঢোঁড়ার বুঝি কোনো বিপদ ঘটছে! জুলায় থাকতে বুঝি তার দোস্তয়ে বিপদে পড়বো! জুলায় সেইটা হইতে দিবো?’ মনের ভেতরে এই-তাই ভাবনা নিয়ে জুলহাসে বলে, ‘এট্টুও চিন্তা কইরো না ঢোঁড়া! তুমি এট্টুও ডরাইয়ো না! আমি অক্ষণ নাইম্মা আইতাছি!’

‘ইয়া গায়েবের মালিক!’ আফসোসে যেনো ঢোঁড়াসাপের শরীরটা গুটলি পাকায়ে যেতে থাকে! ‘ও হো রে জুলা! আমার বিপদ হয় নাইক্কা! বিপদ অইছে তোমার দোস্ত ডাউকের! অর ডিমগিলি খাওনের লেইগা—অই যে গোক্ষুর সাপে— ডাউকের বাসার দিগে মেলা দিছে! আহা আহা!’

পুকুরের দক্ষিণ কিনারে আছে ভোমভোমা এক বেতঝোঁপ! এখন তার ডালে ডালে থোপা থোপা বেত্তুন। সেই বেত্তুন কবে পাকবে! পাকবে চৈত্র মাসে! কাঁচা-কড়া বেত্তুনের থোপার দিকে তাকায়ে থাকতে থাকতেই ডাহুকের সাথে চিনপরিচয়টা হয়েছে জুলহাসের। বেতঝোপের নিচে পুকুরের যেখানটাতে কচুরিপানার ঝাড়গুলো খুব আটামাটা জমাটি বাঁধা, সেখানে ডাহুকে থাকে।

যখন তার ইচ্ছা হয় নিজ বাসার গহীন থেকে বেরিয়ে এসে লম্বা লম্বা পা ফেলে ফেলে কচুরিপানার ঝাড়ে ঝাড়ে ঘুরে বেড়ায়। যখন ইচ্ছে হয়, বেতঝোপের কোন নিরালায় ঢুকে যায়! নাইলে নিজের বাসায় বসে থেকে থেকে জুলহাসকে ডাক পাড়তে থাকে! কুপ কুপ কুপ কুপ! কুপ কুপ! জুলা জুল জুলা জুল!

আজকে কদিন হয় বাসা ছেড়ে বেরুবার উপায়টা তার বড়ো কম! ডিমগুলাকে ফোটানোর কাজ সারতে হচ্ছে তাকে! দিন রাত তা’ দেওয়া ছাড়া অন্য কিছু করা যাবে না! তাই কয়দিন হয়, জুলার সাথে ডাহুকের দেখাসাক্ষাৎ নেই! তাতে কী! তাদের কথাবার্তা তো একটুও বন্ধ নেই!

অই তো আজকে ভোর সকালে পুকুরঘাটে গিয়ে জুলহাসে ঠিকই আওয়াজ দিয়েছে: ‘কুপ কুপ কুপ ডাউক ডাউক ডাউক! কই কই কই!’ আর ওদিকে ডাহুক দোস্তেও গলা উঁচাতে ভুল করেনি! ‘আছি দোস্ত! এই যে ভালা! এই যে আণ্ডা নিয়াই আছি! চিন্তা নাইক্কা! এই যে সগলই সুহাল! কুপ কুপ!’

‘সেই দোস্তের অখন এমুন বিপদ! গোখরার ঘরের গোখরা! তরে আউজক আণ্ডা খাওনের মজা দেহাইতাছি! আউজকা গোখরা! তর একদিন কী জুলহাসের একদিন!’ হুড়মুড় পড়িমরি করে নিমগাছ থেকে নামে সে! মায়ের জন্য নিমপাতা কী আর পরে পেড়ে দেওয়া যাবে না!

ঘাটলার পাশে মাটির ঢেলার অভাব নেই! বাঁশের লম্বা লগিটাও জুলহাসের হাতের নাগালেই আছে! হামাগুড়ি দিয়ে বেতঝোপের ভেতরে ঢোকা কী আর তেমন কোনো কঠিন কাজ! হতে পারে, তখন পিঠ বা হাতের এদিক সেদিক একটু খানিক ছড়েই যেতে পারে! কিন্তু সেটাকে ডরালে কী চলবে! চলবে না যে!

জুলহাসে ঠিক পৌঁছে যায়, ডাহুকের বাসার কাছে! তারপর লগি দিয়ে আশপাশে বেধুম বাড়ি দিতে থাকে! কাছেদূরে ঢিল ছোঁড়া তো চলতে থাকেই! কে না জানে, অমন চোট্টামী করতে আসা গোক্ষুর সাপের কলজায়— সাহসের কোনো নামনিশানাও থাকে না! কায়দা মতো রুখে উঠতে পারলেই তখন চোর গোখরায় জান নিয়ে পালাতে থাকে!

এইবারও একদম সেটাই হয়! কাছের দূরের কচুরিপানাগুলাতে ঢিল পড়া যেই শুরু হয়, তার সাথে সাথে যখন দমাদ্দম লগির বাড়ি পড়তে থাকে; গোখরা সাপে তখন আর ওত পেতে থাকার ভরসা পায় না! ‘কোন বাড়ি এসে তার ওপর পড়বে! আর, তগনগদ তারে কিনা মউতা বানায়ে দেবে! সেটার তো কোনো ঠিকঠিকানা নেই! কিন্তুক সমস্তটা বিত্তান্ত— এগো বাড়ির অই বিটলা পোলায় জানলো কেমনে!’ সুড়ুৎ মুরুৎ করে ছুটতে ছুটতে এই কথা কিন্তু খুব মনে আসে গোখরার! তবে, অই বিষয়টার ফায়সালা করার কোনো রাস্তা তার নেই!

‘কুপ কুপ কুপ! ডাউক দোস্ত! কুপ কুপ! ডরাইয়ো না গো! এই যে আমি এইনে আছি! কুপ কুপ!’ জুলহাস নানাপ্রকারে তার দোস্তকে সাহস দিতে থাকে!

‘ও মাগ্গো মা! অখন দোস্তে দোস্তে কতো মায়া-মহব্বত চালাচালি অইতাছে! আমার কতা তো আর এক্ষণে স্মরণে আইবো না! নাকি গো?’ কোন দূর আড়াল থেকে জানি হিসহুস ফ্যাস ফ্যাস গলাটা উড়ে উড়ে আসতে থাকে! সেটা যে ঢোঁড়া সাপের গলা, এটা এখন জুলহাসের বুঝতে আর ভুল হয় না!

‘ও মাগ্গো মা! অখন দোস্তে দোস্তে কতো মায়া-মহব্বত চালাচালি অইতাছে! আমার কতা তো আর এক্ষণে স্মরণে আইবো না! নাকি গো?’ কোন দূর আড়াল থেকে জানি হিসহুস ফ্যাস ফ্যাস গলাটা উড়ে উড়ে আসতে থাকে! সেটা যে ঢোঁড়া সাপের গলা, এটা এখন জুলহাসের বুঝতে আর ভুল হয় না! ‘তোমাগো লগে যে আমিও সামিল আছি, হেই কতা তো একবারও মোনে করলা না! আইচ্ছা! আমি বহুত দুক্ষু পাইলাম!’

সেদিন সমস্তটা দিন পুকুরপাড়ে ঢোঁড়া সাপের জন্য রেখে দেওয়া খাবার পড়ে থাকলো তো থাকলোই! সে ভুলেও একবার এসে জুলহাসকে দেখা দিলো না! জুলায় যে তার জন্য কেমন অপেক্ষা করলো, কতো কতোবার যে সে ঘাটলার দিকে গেলো আর ঘাটলার পাড়ে বসে থাকলো! কিন্তু কোনোদিকে ঢোঁড়া সাপের কোনো চিহ্ন নেই!

‘দোস্তের লগে নি দোস্তে এমুন করে! জুলার দোস্তগিলি এমুন চেত কইরা থাকতে পারে কেমনে! জুলায় তো পারে না!’ এমন কতো কথা জুলহাসের মনে আসে! কিন্তু সেইসব শোনানোর কেউ নেই তার!

আস্তেসুস্থে ফাল্গুন মাস আসে! সেই মাস আর সুভালাভালি যায় না! ফাল্গুন মাসে তাদের বাড়ির সকলের একদিন মনে পড়ে যে, একটা ভীষণ জরুরী কাজ করে ফেলার কথা কিনা তাদের একটুও মনে আসেনি! ‘মাবুদ! কেমনে এমুন ভুলুন্তীতে পইড়া আছি সগলতে! পোলায় এতো ডাঙর হইয়া গেছে গা! পুরা অয়ে আষ্ট বছরে পাও দিয়া ফালাইছে! অহনও অরে অক্ষর চিনান্তীর বেবস্তা করি নাইক্কা! শেষে তো আর অর শইল্লে বিদ্যা ঢোকবো না! হায় হায়! অরে অক্ষণ-তক্ষণ ইস্কুলে দিতে হইবো! আর দেরী করোন যায় না!’ বাড়ির মুরুব্বিদের এমন চিল্লাপাল্লার ধাক্কা পেতে পেতে জুলহাস ইস্কুলে ভর্তি হতে যায়!

তাকে যেই স্কুলে পড়তে যেতে হয়, সেটার নাম বেপারীপাড়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে! সাত গ্রামের মধ্যে আছে শুধু ওই একটা স্কুল! সেইখানের ক্লাশের শুরু হয়, একেবারে অতি সকালের সময়ে! বেপারীপাড়া গ্রামটা পানিডাঙার কাছের কোনো গ্রাম না! আবার পানিডাঙা থেকে ওখানের অই স্কুলে যাবার কোনো সিধা রাস্তাও নেই!

পানিডাঙা গ্রামের কোনোদিকেই, আদপেই, কোনো রাস্তা নেই! শুকনোর দিনে এখানে পায়ে হাঁটাই সম্বল! তখন লোকে পায়ে হেঁটে হেঁটে দূরের টাউনের দিকে যায়! বা, ইষ্টিকুটুমের বাড়িতে আনা-যানা করে। তবে বর্ষাকালে অন্য ব্যবস্থা! তখন পানিডাঙার আশেপাশের পুরোটা তল্লাট বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকে! সকল বাড়ির লোকে তখন নিজেদের কোষা নাও দিয়ে দিয়ে চলাচলতির ঠেকাটা মেটায়!

তো, সেদিনও সকালে প্রায় ঘুম-চোখেই জুলহাসে স্কুলে যাচ্ছে! হেঁটে হেঁটে কতোটা যে পথ! সেই রাস্তার যেনো শেষ নেই! এর বাড়ি তার বাড়ির কোণা-কাঞ্চি দিয়ে দিয়ে যেতে থাকো থাকো; তারপরে পানিডাঙা গ্রামের শেষমাথার পুকুরটাকে পাওয়া যাবে! পুকুরটা বিশাল! তার পশ্চিম পাড় ধরে ধরে অনেকখানি যাও—যাও। তারও পরে আছে অনেক অনেকখানি ফসলীমাঠ। সেইসব ক্ষেতের আল ধরে ধরে, আরো খানিকটা গেলেই, নিজের প্রাইমারী স্কুলটাকে পাওয়া যায়! সেটাই বেপারীপাড়া গ্রাম!

পুরো ফাল্গুন মাস ভরে আসা-যাওয়া চালাতে চালাতে, অই সমস্তটা পথের খানাখন্দ পর্যন্ত যেনো জুলহাসের চেনা হয়ে গেছে! সকলের চেয়ে বেশী চেনা হয়ে গেছে অই পুকুর পাড়ের পথটুকু! এতোটাই চেনা যে, এখন যেনো চোখ খোলা না-রেখেও পুকুরের এই পাড় ধরে ধরে, হেঁটে যেতে পারবে সে! একেবারে গমগমিয়েই আগায়ে যেতে পারবে জুলহাস!

এই যে তার এমনটা মনে হয়, সেই মনে হওয়াটা কী ভুল? নাকি ভুল না? এই বিষয়টা পরখ করে দেখা দরকার না? জুলহাসের খুব ইচ্ছা করে, একদম চোখ বন্ধ করে রেখে, এই পুকুরপাড়ের পথটুকু একবার অন্তত হেঁটে চলে যাওয়ার চেষ্টাটা নেয় সে! একবার অন্তত সে পরখ করে দেখে, অমনটা করতে সে পারে! নাকি পারে না! কিন্তু মনে মনে তার কাচুমাচু লাগতে থাকে! ‘কী জানি! যদি আতকার উপরে উষ্টা খায় সে তখন! তারবাদে যদি সে গড়ায়ে গড়ায়ে পুকুরে পইড়া যায়! মাগ্গো মা! এত্তা বড়ো এক আজদাহা পুষ্কুনী! এইটাতে একলা নামোনের সাহস অখনও অয় নাইক্কা অর!’

কিন্তু দেশগ্রামের এটা কেমন অবস্থা! তার সাথে সাথে স্কুলে যায়, এমন একটা কোনো পোলাপানই তো তাদের পানিডাঙায় নেই! তার বয়সী কেউই তো বেঁচে নেই এইখানে! আহা! একজন কেউও যদি থাকতো! তার সমান বয়সী একটা কেউ! তাহলে একসাথে যেতে যেতে কতো আহ্লাদই না হতো! তারে সাক্ষী করে করে, জুলহাসেও তো, চোখ বন্ধ করে রেখে হেঁটে যাওয়ার কাজটা চালায়ে যেতে পারতো! একদম খুশিহালে চালায়ে যেতে পারতো!

কিন্তু এখন কী করতে হয়? এখন করতে হয় কী, চোখ বন্ধ করে নিয়ে একটুখানি যায় সে, তারপর পট্টাস করে চোখ খুলে নিতে হয়! রোজ এমন করতে করতেই একদিন সে, চোখ বন্ধ রেখে পুরোটা পুকুর-পাড় পাড়ি দেওয়ার, ভাওটা বুঝে যাবে! তখন আর কিসের ডর!

এই তো মাত্র এটা হচ্ছে তার স্কুলে যাওয়ার দ্বিতীয় মাস! এখনই সে অনেকক্ষণ বন্ধচোখে আগায়ে যেতে পারে! দিনে দিনে কী আর আরো বেশী পারবে না? পারবে!

এদিকে, এই চৈত্রমাসের দিনে, পানিডাঙার পক্ষীগুলোর যেনো মাথা বেদিশা হয়ে গেছে! একেকবাড়ির গাছে গাছে বসে, এই সকালের কালেই কেমন ডাকাডাকি যে শুরু করেছে! একেকটা পক্ষী একেক রকমের কথা বলে বলে চিল্লানী দিচ্ছে! দিয়েই চলেছে! একটায় বলে কিনা, ‘চোখ গেলো চোখ গেলো চোখ গেলো!’ আরেকটায় কী বলছে দেখো! ‘কাঠাল পাকো কাঠাল পাকো কাঠাল পাকো!’

‘কাঠাল কী বড়ো হইছে, যে অখনই পাকবো! বেক্কল পক্ষীটায় কেমুন না-বুঝ!’ তক্ষণ তক্ষণই আরেকটা পাখী কী বলে! বলে, ‘কুটুম আও কুটুম আও কুটুম আও!’

‘আরে! কুটুম আইলে আইবো! হেই কতা জুলারে কওনের কিছু নাইক্কা তো! সেয় যাইতাছে ইস্কুলে! তাইলে কুটুম আওনের কতা জুলারে জানান্তী দিয়া কী অইবো! বাইত যে কুটুম আইবো, হেইটা গিয়া মায়েরে কও গা? তয় সেনা মায় রান্ধনের জোগাড় করবো!’ মনে মনে অই কথা, বেবুঝ পাখীটাকে বহুবার বলে জুলহাস! কিন্তু আজকা যেনো কোনো বুঝের কথাই সেই পাখী তার কানে তুলবে না! সে যেনো আজকের সকালে শুধু জুলহাসের পেছনে পেছনে উড়ে উড়ে চলবে! আর জুলহাসকেই জানান্তী দিয়ে যাবে; ‘কুটুম আও কুটুম আও! কুটুম আও!’

‘আইচ্ছা! তুমি তাইলে আমগো বাইত গিয়া মায়েরে এই কতা কইবাই না? খালি আমারেই জ্বালাইবা! হুদামিছি জ্বালাইবা! খাড়াও, আমি তোমারে কেমনে জ্বালান্তী দেই, দেহো!’ হাঁটতে হাঁটতে জুলহাস তখন ঝুপ করে চোখ বুজে নেয়, তারপর সেও আওয়াজ দিতে থাকে, ‘টুউ টুউ টুউ! কুটুম আও! কুটুম আও!’

জুলহাসে ডাক শুরু করার সাথে সাথেই যেনো পক্ষীটায় শরম পেয়ে যায়! সে আর আওয়াজ তোলে না! তাহলে জুলহাসেই বা আর ডাক চালাবে কেনো! কেনোই বা আর চোখ বুজে থাকবে সে! তার না ইস্কুলের দেরী অইয়া যাইতাছে গা! বাবা গো!

জুলহাসে ডাক শুরু করার সাথে সাথেই যেনো পক্ষীটায় শরম পেয়ে যায়! সে আর আওয়াজ তোলে না! তাহলে জুলহাসেই বা আর ডাক চালাবে কেনো! কেনোই বা আর চোখ বুজে থাকবে সে! তার না ইস্কুলের দেরী অইয়া যাইতাছে গা! বাবা গো!

হুড়মুড় চোখ খোলে জুলহাস!

কিন্তু সামনে এখন কী দেখে জুলহাস! তার সামনে, অই যে কে একজন! জুলহাসের আগে আগে, অই দেখো, কে একজন জানি হেঁটে হেঁটে যায়!

পুকুরের এই পাড় জুড়ে একটা কোনো গাছগরান নেই। শুধু দুর্বাছাওয়া মাটি-বাঁধানো পাড়টা সারাদিন নিরিবিলি পড়ে থাকে! তার ওপরে থাকে খোলা ধু ধু আকাশটা।

সেই পথে এই তো কেবল হাঁটা শুরু করেছে জুলহাস! একা। এই না সে দেখলো, সামনের অই পথ সুমসুমা ফাঁকা? এই না দেখলো তার সামনেও কেউ নেই, পেছনেও কেউ নেই! তারমধ্যে এক্ষণ এক্ষণ, সামনের অই মানুষটা কেমনে এলো? এই একটু আগে, চোখ বন্ধ করার সময়েও, তো তাকে দেখতে পায়নি জুলহাস!

মানুষটাকে পেছন থেকে দেখেই জুলহাসে বুঝতে পারছে, ওটা কে! ওটা কোনো একটা সন্ন্যাসী বাবা! এক টুকরা লাল কাপড় সে কোমরে প্যাঁচায়ে রেখেছে! তার মাথার চুলগুলো আর চুল নেই! সেগুলা হয়ে আছে তাগড়া-পোগড়া জট! তারা পিঠের ওপর লেপটে পড়ে আছে! সন্ন্যাসী বাবার একহাতে সেই লোহার লাঠিটা! অই যে তিনমাথাঅলা লোহার লাঠি! কী জানি নাম সেইটার! কী জানি একটা কঠিন নাম! নামটা তার স্মরণে আসে না!

সন্ন্যাসী বাবার অন্য হাতে একটা ঘটি! কাঁসার ঘটি! খাওনের পানি রাখোনের এই ছোট্ট ঘটি, পানিডাঙার সকল বাড়িতেই আছে!

‘কিন্তু গ্রামের কোনো একটা বাড়িতে না-গিয়া, সন্ন্যাসী বাবায়, নিরালা নিরালা রাস্তায় এমুন হাঁটোন দিতাছে যে? হেরে কী ভিক্ষা পাওন লাগবো না আজকা?’ জুলহাসের এই কথার জবাব কে দেবে!

যেনো জুলহাসের মনের অই কথাটা যেনো ঠিকই শুনতে পেয়ে যায় সন্ন্যাসী বাবায়! চলতে চলতে হঠাৎই সে, দুম করে থেমে যায়! পুকুরপাড়ের শেষমাথায় যেখানে বউন্না গাছটা আছে, ঠিক সেইখানে থামে সে! তারপর জুলহাসের দিকে মুখ করে বলে, ‘এইটা লাঠি না! এইটারে কয় ত্রিশূল!’

‘হ! হ! এইটার নাম তো তিরিশুলই! জুলহাসে জানে সেইটা! খালি এতখোন নামটা পেটে আছিলো, কিন্তুক মনে আইতাছিলো না!’ মনে মনে নিজের সঙ্গে এই কথা সারে জুলহাস! কিন্তু মুখে সে বলে অন্যকথা! বলে, ‘সন্ন্যাসী বাবা! আমাগো বাইত যান! মায় আপনেরে সোয়া সের চাইল দিবো, দেখবেন! মায়ে আপনেগো লেইগা জমাইয়া থুইছে!’

‘ না রে বাজান! আমারে মেলা পন্থ পাড়ি দেওন লাগবো! যামু বহুত দূর!’

‘কই যাইবেন, বাবা?’

‘যেই দেশে দেবদারু বিরিক্ষিরা আসমানের মেঘেরে ছুঁইয়া ফালাইতে পারে! যামু হেই পাহাড়ী দেশে!’

‘দেবদারু গাছেরা, মেঘেগো ধইরা ফালাইতে পারে! এতো উঁচা দ্যাশ! মাগ্গো মা!’

‘সেইনে পাহাড়ের ঢালে ঢালে, বেদানা গাছের ডালে ডালে, লাল লাল ফুল! গাছে গাছে বেদানা পাইক্কা পাইক্কা, সেইনে ফাইট্টা ফাইট্টা থাকে! বাতাসে বাতাসে সেইনে খালি পাকনা বেদানার মিঠা ঘেরান! ভাসে ভাসে! কলার থোড়ের মতন খয়েরা খয়েরা, হাসিখুশি মেঘরা সেইনে ঝিরঝিরা বিষ্টি হইয়া নাইম্মা আহে! যহন তহন! গাছে গাছে কতো ছেফ ফল! পক্ষীরা খাইয়া কুলাইতে পারে না!’

‘ছেফ ফল! গাছে গাছে ছেফ ফল! ইস! জুলহাসে সেইনে যাইতে পারলে, কতো ছেফ ফল যে পাইড়া আনবো! হেইর লগে লগে বেদানাও লইবো! বুজি না খালি ছেফ ফল খাওনের লেইগা বায়না করে! বাবার হাতে টেকা থাকলে, কোনো সোম সেয় কিন্না আনে! কোনো সোম এট্টুও আনতে পারে না! সেয় তহন, খালি হাতে বাইত আহে! বুজিয়ে বেজার মোখে বাবার দিকে চাইয়া থাকে! কিচ্ছু কয় না! সেইটা দেইক্ষা জুলহাসের কী পরান টনটনায় না? টনটনায়! তাইলে অখন যুদি সেয় সন্ন্যাসী বাবার লগে যায় গা, তাইলেই তো হয়! গাট্টি বাইন্ধা ছেফ ফল লইয়া সেয় জলদি কইরা, বাইত আইয়া পড়বো নে? সন্ন্যাসী বাবা, আপনে আমারে লগে নিবেন?’

‘লও তাইলে! দোনোজোনে মেলা দেই!’

কোথাও কোনো একটা পক্ষীর আওয়াজও নেই! সব সিমসাম সিমসাম! তার মধ্যে একটা শুধু হালকা আওয়াজ এই শোনা যায়, এই শোনা যায় না! সন্ন্যাসী বাবার হাতের ত্রিশূলটা, এই একবার মাটিতে গেঁথে যাচ্ছে— এই একবার উঠে আসছে! অইটুকু শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই!

সন্ন্যাসী বাবা আগে আগে হাঁটে, তার পেছনে পেছনে জুলহাসে চলতে থাকে! যেতে যেতে যেতে কতো দূর! সামনে পেছনে কোথাও একটা কোনো জনমনিষ্যির চিহ্নও দেখা যায় না! কোথাও কোনো একটা পক্ষীর আওয়াজও নেই! সব সিমসাম সিমসাম! তার মধ্যে একটা শুধু হালকা আওয়াজ এই শোনা যায়, এই শোনা যায় না! সন্ন্যাসী বাবার হাতের ত্রিশূলটা, এই একবার মাটিতে গেঁথে যাচ্ছে— এই একবার উঠে আসছে! অইটুকু শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই! কোনোদিকে নেই!

সেই খসর-পসর শব্দটা কানে পেতে পেতে, আচমকাই জুলহাসের মনে পড়ে; ‘মায়ে না মাথার কিরা দিয়া কইছে, তারে না-কইয়া য্যান কোনোদিগেই না যায় জুলায়! মায়েরে না-কইয়া তো তাইলে সেয়, এমনে মেলা দিতে পারে না! মায়ে না কানবো!’

‘সন্ন্যাসী বাবা!’ জুলহাসে বহুত জোরেই সন্ন্যাসী বাবাকে ডাক দেয়, কিন্তু তার ডাক সন্ন্যাসী বাবা শুনতেই পায় না! জুলহাসে আবার ডাকে, ‘সন্ন্যাসী বাবা! হোনেন! আমি তো মায়েরে কইয়া আহি নাই! আমি এক লৌড়ে বাইত গিয়া, মায়েরে কইয়া আহি গা? আপনে এট্টু এইনে বইবেন? আমি যামু, আর আইয়া পড়মু! ও সন্ন্যাসী বাবা!’

বাড়ির লোকে জুলহাসকে যখন খুঁজে পায়, তখন একেবারে সন্ধ্যা হয় হয় সময়! ইস্কুলে যাওয়ার রাস্তা থেকে কতো দূরে, এই বটগাছঅলা মাঠ! সেইখানে কিনা ঘুমে নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছে জুলায়! হায় হায়! কী সব্বনাশ রে! আর তো তাহলে জুলহাসকে একা একা ইস্কুলে যেতে দেওয়া যাবে না! কিছুতেই না!

স্থির হয় যে; বাবার যেদিন ফুরসত থাকবে, সেদিনই শুধু জুলহাসে ইস্কুলে যাবে! নাইলে না-ই! একলা আর ছেলে ইস্কুলের পথে পা দিতে যাবে না!


*ছেফ ফল : এই গল্পে ‘ছেপ ফল’ বলে একটা ফলের কথা আছে। আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকার গ্রামে নাসপাতিকে ছেফ ফল নামে ডাকে।

[লেখকের নিজস্ব বানানরীতি অনুসরণ করা হয়েছে।]

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

বাংলা ভাষার একজন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও গল্পকার। আকিমুন রহমানের গ্রন্থসমূহ হলো : ‘আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ (১৯২০-৫০)’, ‘সোনার খড়কুটো’, ‘বিবি থেকে বেগম’, ‘পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে’, ‘রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি’, ‘এইসব নিভৃত কুহক’, ‘জীবনের রৌদ্রে উড়েছিলো কয়েকটি ধূলিকণা’, ‘পাশে শুধু ছায়া ছিলো’, ‘জীবনের পুরোনো বৃত্তান্ত’, ‘নিরন্তর পুরুষভাবনা’, ‘যখন ঘাসেরা আমার চেয়ে বড়ো’, ‘পৌরাণিক পুরুষ’, ‘বাংলা সাহিত্যে বাস্তবতার দলিল (১৩১৮-১৩৫০ বঙ্গাব্দ)’, ‘অচিন আলোকুমার ও নগণ্য মানবী’, ‘একদিন একটি বুনোপ্রেম ফুটেছিলো’, ‘জলের সংসারের এই ভুল বুদবুদ’, এবং ‘নিরুদ্দেশের লুপ্তগন্ধা নদী’।

আকিমুন রহমান ভালোবাসেন গন্ধরাজ আর বেলীফুল আর হিজলের ওড়াভাসা! আর তত্ত্বের পথ পরিক্রমণ! আর ফিকশন! ঊনবিংশ শতকের ইউরোপের সকল এলাকার গল্পগাঁথা আর এমিল জোলার কথা-বৈভব! দূর পুরান-দুনিয়ায় বসতের সাথে সাথে তিনি আছেন রোজকার ধূলি ও দংশনে; আশা ও নিরাশায়!

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।