পায়ের কাছে পথ
যখন দেখি পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে পথ
ছুটে যাচ্ছে পথের ধুলো, ঘন্টা হলে ছুটির
যাচ্ছে বাড়ি ঘরমুখো সব জ্বর
ভীষণই তাপ, কপাল জুড়ে দোড়ুচ্ছে বিছুটি
ঝরঝর করে ঝরে যাচ্ছে স্বপ্নে পাওয়া নথ
নাক খালি তাই হতে গিয়েও হওয়া হলো না
তোমার নতুন প্রেম, নতুন একটা চুমু—
ঘুমিয়ে গেলে! তোমার ব্যথার সাম্রাজ্যে
সেজে উঠছে রথ।
ভীষণ জ্বর করেছে তোমার
আমি ওষুধ হবো বসে আছি পাচ্ছিনা তো পথ।
আমার রাস্তা ঢাকা, নিয়র পথে জীবন্ত যৌবন
তুমি খাদক, বসে আছো খেয়ে আমার মন
মেকাপ করি আয়না দেখি ডানার অপেক্ষা
ঘন্টা বাজে, যাবার পথটা পেরোতে পারছি না।
ছায়াদানকারী এক বৃক্ষ
প্রাচীন হলে হৃদয়ও সবুজ হয়। যেমন পলেস্তারা খসা দেয়াল শ্যাওলায় হতে থাকে প্রাচীন। শক্ত কথার ভেতর সেই সব গাছ জন্মায়, শৈশবে যা কেবলই ছিল মায়ের কথার ভেতর। আমার বাবা কষ্ট পেতেন। আমি ঘুমুতে পারতাম না।
ভোরের আলো ফোটার আগেই বাবা গলে যেতেন গরম চায়ে।
বাবার গলে যাওয়া হৃদয়ের কাছে বসে থাকতে আমার ভালো লাগে। মনে হয় আমি ধীরে ধীরে সেই প্রাচীন দেয়ালের উপর হয়ে উঠছি ছায়াদানকারী এক বৃক্ষ।
অরণ্যস্মৃতি
এইসব সন্ধ্যার হাওয়া মৌমাছির মতো ঢুকে আমাকে কামড়ায়। মাথার ভেতর বিষের ভেতর কেবলই মনে হয় ভুলে গেছি। ভুলে যাই কিছু ছেঁড়া টিস্যু পড়ে ছিল ফুলের মতো আমাদের টেবিলে, দু একবার খাবারের বদলে আমাদের নাকে এসে পড়ছিল বাসি ফুলের ঘ্রাণ! এই সন্ধ্যায় একটি নিঃসঙ্গ চিলের মতো সেসব ঘ্রাণ কোথা থেকে এত নিষ্ঠার সাথে ঘরে ঢুকছে। যেন ওরা পেয়েছে মগজের সাথে কোনো অরণ্য স্মৃতিকে!
আত্মা
সারারাত আমার আত্মা বন্দি ছিল ষোলো বাই বিশ এর শৈশবে।
যত স্বপ্নই দেখি না কেন সেই জানালা খুলতে আমার ভয় হয়। পর্দা নড়ে গেলে আতঙ্কে জমে যাই। আব্বা বাড়ি নেই। কলেজের কাজে ঢাকা গিয়েছে। আমি পড়ার বই এর ভেতর লুকিয়ে রেখেছি দস্যু বনহুর। হঠাৎ দুটো আঙুলকে দেখি আব্বার শার্টটাকে ধীরে ধীরে টেনে নিচ্ছে জানালার বাইরে। আমার ভ্রম হয়। আমার মনে হয় জানালা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আব্বার শরীর। আব্বার মুখ। চমন বাহারের গন্ধ। আমি তো বুকে ঢুকেছি কত কত বার সেই গন্ধের লোভে। আমি জমে যেতে যেতে টের পাই কত সহজে বড়ো হয়ে গেছি। আব্বা আমাদের মাঝে রাখে এখন লম্বা একটা পাশবালিশ!
অথচ আমি তো জানতাম,
যে স্বপ্নই দেখে না তার থাকে না দুঃস্বপ্নের ভয়।
আলোড়ন
যেতে চাইছ? যাও।
আমার দরজার উইন্ড চাইমটা বাজছে।
তুমি ঘরে এসে ঢুকছ।
বাতাসের আলোড়ন। তুমি এমন—
তুমি এমন।
দিন রাত পৃথিবীর সবগুলো দরজা
ভালোবেসে সহসা
খোলে কি? খোলে না
বহুদিন আমি দেখিনি রাত,
জোনাকি—
বহুদিন দেখিনি তার নিজস্ব আলো।
শুধু এক নিস্তারনিহীন কবরের মতো
উত্তপ্ত দিনের শুরুতে
তোমার আসা যাওয়ার পথে আমি ঝরাতে পারি
হাস্যপরিহাসমুখর ঝর ঝর পারিজাত।
কবি। জন্ম ২৯ ডিসেম্বর ১৯৮৭। প্রকাশিত কবিতার বই ‘চন্দ্রহারা মানবীর চুল থেকে জল ঝরে’ (২০১২), ‘সে এক আশ্চর্য জলপ্রপাত’ (২০১২), ‘সবুজ বোতাম এবং অন্যান্য’ (২০১৩), ‘ম্যাচবাকসো’ (২০১৫), ‘মরিওঁম’ (২০১৯), ‘ক্যামোফ্লেজ’ (২০২২)। প্রকাশিত গল্পের বই ‘পিতলের প্রজাপতি’ (২০১৭)।