১.
নিবিড় রাত্রি ফুটে আছে। ডুবে যাওয়া সূর্য, এবার
তোমার ঘুম নিরবচ্ছিন্ন হোক। এবার তোমার যত
থকথকে প্রদাহ ঘা শ্রান্তি লাভ করুক। এবার তুমি,
তোমার যত কেচ্ছা কাহিনি বাতাসের দেশে মুক্ত
হয়ে উড়ে বেড়াও কার্পাস ফুলের নিরাপদ শুভ্রতায়।
এবার তোমার দৃষ্টিহীন চোখে ফুটে উঠুক শত সহস্র
নাক্ষত্রিক তপোবন। এবার তুমি ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী;
জিজ্ঞেস করো—সকল কিছুর যোগফল শূন্য কেন?
২.
এই পথজুড়ে ধ্বংসাবশেষ; কবে কোথায় ধানখেত
ছুঁয়েছিল দুচোখ, সরোবরের টানে বিঁধেছিল মায়া!
ভুলে গেছি। যেমন সানন্দে ভুলে গেছি মাকে ছেড়ে
পথহীন এই পথে প্রথম বেড়িয়ে পড়ার ধু ধু স্মৃতি।
আরো ভুলে যেতে চাই; অবলীলায় ভুলে যেতে চাই
সমস্ত লাগামছাড়া ক্ষুধা, কুয়োর জলে ভেসে উঠা
ছিন্নমূল শৈশবের ব্যথা। ভুলে যেতে চাই তোমাকে
ভুলে থাকার মন্ত্র ও রাক্ষুসে পৃথিবীর সমস্ত ছল।
৩.
প্রতিটি শীতরাত্রির নিরবতা চেয়ে দেখার মতো।
যেন পৃথিবী একটি পালকের থেকেও ক্ষীণ বস্তু।
তোমার ইশারায় উড়ে যাবে নাক্ষত্রিক সব লীলা।
যদি তুমি ভুলে যাও সমস্ত পতনের ভৌতিক গল্প
আর মুছে ফেলতে পারো সব ব্যর্থ চুম্বনের স্মৃতি
তবে চেয়ে দেখো এইসব শীতরাত্রির ভিতর দিয়ে
জেগে উঠছে তোমার হারানো জাহাজ, মাস্তুলের
অগ্রভাগে বসে আছে চাঁদ; যার বক্ষবন্ধনী জুড়ে
লেগে আছে তোমার বিস্মৃত হাতের সজীব স্পর্শ।
৪.
অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। পারদের ছড়িয়ে পড়া রোদের
সকালে আমরা প্রতিভাত হলাম—সমুদ্রের কাছে
অনেকটা অপাংক্তেয় এবং যাচ্ছেতাইভাবে। কত
লোনা ঢেউ—কত অচেনা দৈব হেমমুকুলিকাসন্ধ্যা
কত শ্লেষপটু হাঙর আমাদের টেনে নিয়ে চলল
সমুদ্রের পেটের ভেতরে! আমরা বারবার হারিয়ে
যেতে চেয়ে বিঁধে রইলাম দাঁতালো-সুন্দর অথচ
ঈশ্বরের মতো মূক এমন এক নিষ্ঠুরতম সন্ধ্যার
কাছে! যেখানে এলাম, সেখানে মা নেই; নিরন্তর
ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়া দুপুরগুলোকে কেউ
ভর্ৎসনার সুরে আদর করে বেঁধে দেবে, মিলিয়ে
দেবে হিসেব মেলাতে অক্ষম গণিতের ছুটে চলা
বেহাত হয়ে যাওয়া রাশিমালাকে—সংখ্যাতত্ত্বের
এই মহাপৃথিবী এত উদার হয়ে উঠেনি এখনো!
৫.
ফুল, কী এক ধ্যানমগ্ন বিভা তোমার স্পর্শে! আর
নিশানাবিহীন চক্ষুগোলক থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ধারায়
বিচ্ছুরিত তরঙ্গায়িত এক অনাবিষ্কৃত দ্বীপের ঢেউ—
সবকিছুকে অর্থহীন করে তোলে। মুখরিত এই শব্দ
প্রেতলোকে বহু কর্কশ স্তবের ভিতর দিয়ে আজও
তোমার বিরামহীন নিরবতার অমোঘ জাল সতত
আমাকে জড়িয়ে রাখে। তন্দ্রাঘোরে মাতাল পৃথিবী!
ঘুমে নয়; আরো একবার ডেকো—চঞ্চল জাগরণে।
জন্ম ১৯৯২ সালের ৮ আগষ্ট। পৈতৃক নিবাস ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার মুন্সিনগর গ্রামে। কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার ওয়ারী ও নবাবপুরে। প্রকাশিত কবিতার বই ‘বেপথু এই পথে’। এটি তাঁর প্রথম কবিতার বই। বাংলা কবিতার পাশাপাশি ফরাসি সাহিত্য নিয়ে আগ্রহী। বর্তমানে ফ্রান্সের La Régie autonome des transports parisiens(RATP)তে কর্মরত।