১৯৫৮ সালে দ্য প্যারিস রিভিউর ১৮তম সংখ্যার জন্য কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আরেক কথাসাহিত্যিক জর্জ প্লিমটন। কথায় কথায় তিন হেমিংওয়েকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি একজন লেখক হবেন ঠিক কোন মুহূর্তে আপনি এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন? হেমিংওয়ের উত্তর ছিল, ‘না, তেমন কোনো মুহূর্তের কথা আমি ঠিক জানি না। তবে আমি শুধু জানতাম আমি একজন লেখকই হব।’
পরবর্তী জীবনে হেমিংওয়ে একজন লেখকই হয়েছিলেন। এমন একজন লেখক হয়েছিলেন যাঁকে বলা হয় বিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া একজন অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ লেখক। তাঁর লেখালেখির বিশেষ ধরন আর কায়দাকানুন ছিল আলাদা। আর সেই আলাদা ও ব্যতিক্রমধর্মী লেখালেখি দিয়ে হেমিংওয়ে হয়ে ওঠেন আমেরিকা তো বটেই গোটা পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ ১৯৫৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পায়। সাহিত্যে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৫৪ সালে তাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
লেখালেখিতে তাঁর ছিল এক বৈচিত্র্যময় জীবন। তাঁর সমসাময়িক অন্য লেখকদের মতো আর্নেস্ট হেমিংওয়ে শুধুমাত্র লিখেই নিজেকে ব্যস্ত রাখেননি। বরং তিনি তাঁর লেখালেখির অভিজ্ঞতাটি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব, সাহিত্য-সমালোচক, প্রকাশক ও বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য পত্রিকায় শেয়ার করেছেন। লেখালেখির চড়াই-উতরাই পথের নানারকম বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন আবার উদ্বুদ্ধও করেছেন। যাঁরা শিল্পসাহিত্য জগতে হাত পাকাতে চান, লেখকসত্তার বন্ধনে নিজেদের দেখতে চান, হেমিংওয়ে তাদের জন্য রেখে গেছেন লেখক হওয়ার নানারকম গুরুত্বপূর্ণ কলাকৌশল। তিনি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে চিঠিতে বা তাঁর গ্রন্থে খোলামেলাভাবেই লেখালেখি নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন একজন লেখকের লেখকসত্তা কেমন হওয়া উচিত, একজন লেখক কেমন করে ধীরে ধীরে সত্যিকারের লেখক হয়ে উঠতে পারেন।
অতএব নির্দ্বিধায় বলা যায়, হেমিংওয়ের লেখালেখি সংক্রান্ত নানা ধরনের উপদেশ ও পরামর্শগুলো আত্মস্থ করে একজন নবীন লেখক খুব সহজেই তার নিজের লেখালেখির পথটি খুঁজে পেতে পারেন এবং একই সাথে আবিষ্কার করতে পারেন কীভাবে তাঁর নিজের শ্রমসাধ্য সৃষ্টিকে একটি যথাযথ পরিপূর্ণ শিল্পে রূপ দেওয়া যায়। হেমিংওয়ের লেখালেখি সংক্রান্ত চিঠিপত্র পড়ে একজন নবীন লেখক খুব সহজেই তার নিজের শিল্পসত্তাকে রাঙিয়ে তুলতে পারেন। একজন ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্ট্রা লেখকের জন্য হেমিংওয়ে একজন বিশ্বস্ত অভিবাবক, একজন পথ প্রদর্শক ও একজন শিক্ষক।
এবার লেখালেখি নিয়ে হেমিংওয়ের ভাবনাগুলোর ভেতর প্রবেশ করা যাক। কী ভাবছেন হেমিংওয়ে? তিনি কি সত্যি একজন নবীন লেখকের মনের অবস্থা নিজের আত্মায় ধারণ করতে পেরেছিলেন? নিজের লেখালেখির অভিজ্ঞতার আলোকে দিব্যগুণে তিনি নবীন লেখকদের মনের অবস্থা দেখতে পেয়েছিলেন?
হেমিংওয়ে জানিয়েছেন একজন লেখকের লেখকসত্তা তৈরি হওয়ার পেছনের গল্প, লেখালেখিতে লেখক কীভাবে তাঁর নিজের সত্তাটিকে বিলিয়ে দেবেন সেই রহস্যের কথা এবং লেখালেখিতে লেখকের ত্যাগ কত গভীর হবে সে কথাটাও।
হেমিংওয়ে নিজের লেখালেখি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতেন না। জীবনের প্রথম দিকে তিনি বিশ্বাসও করতেন না একজন লেখকের খুব বেশি কথা বলা উচিত। কিন্তু জীবনের শেষ দিকে এসে তাঁর সে ধারণার পরিবর্তন ঘটে। তিনি তাঁর উপন্যাসে, গল্পে, বন্ধুদের কাছে লেখা চিঠিপত্রে এবং নানা সময়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লেখালেখি প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন, এই নিয়ে উপদেশ দিয়েছেন এবং কখনো কখনো নানা বিষয়ে সাবধানও করেছেন। হেমিংওয়ে জানিয়েছেন একজন লেখকের লেখকসত্তা তৈরি হওয়ার পেছনের গল্প, লেখালেখিতে লেখক কীভাবে তাঁর নিজের সত্তাটিকে বিলিয়ে দেবেন সেই রহস্যের কথা এবং লেখালেখিতে লেখকের ত্যাগ কত গভীর হবে সে কথাটাও। তিনি তাঁর দীর্ঘ লেখক জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখালেখির সৌন্দর্য আর ব্যাকরণ নিয়েও অনেক কথা অকপটে জানিয়েছেন।
লেখালেখির শুরুতে একজন লেখকের প্রস্তুতিটা কেমন হওয়া উচিত? কীভাবে তিনি লেখালেখি শুরু করবেন এবং এর শুরুটাই-বা কেমন হবে এই প্রশ্ন নিয়ে নবীন লেখকদের সবসময়ই একটি ভাবনা কাজ করে। এই নিয়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৯৩৩ সালে তাঁর লেখক বন্ধুকে লেখা এক চিঠিতে এই বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাটি জানিয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়—
‘প্রথমেই যতটুকু সম্ভব আমি কল্পনায় আমার দেখা পৃথিবীর একটি ছবি আঁকি। তারপর ধীরে ধীরে তা আত্মস্থ করি এবং সামনের দিকে এগুতে থাকি।’
হেমিংওয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকেই এই কথাগুলো বলেছিলেন। সন্দেহ নেই, যেকোনো লেখকের জন্য এই কয়টি বাক্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইদানীং একটি বিষয় লক্ষ করা যায় অনেক লেখক অনেক বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করেন কিন্তু দেখা যায় সেই বিষয়টির ওপর লেখকের যদি ভালো দক্ষতা বা জ্ঞান না থাকে তখন সেটি আর ভালো লেখা হিসেবে দাঁড়ায় না। একজন লেখক যদি কল্পনায় তার নিজের পৃথিবীটাকে না-ই দেখতে পান তাহলে তার পাঠক সেই পৃথিবীটাকে দেখবেন কোন উপায়ে? লেখক যখন লিখবেন পাঠক সেটি পড়ে সেখানে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে বৈকি! হেমিংওয়ে এক চিঠিতে লিখেছেন—
‘প্রতিটি ভালো বই দেখতে একই রকম। কারণ বইগুলো সত্যের চেয়েও বাস্তব। পড়ার পর মনে হবে নিজের জীবনের সাথেই বুঝি এমনটা ঘটেছিল। তারপর মনে হবে বইটির প্রতিটা শব্দই বুঝি আমার জীবনের গল্প। আমার জীবনের ভালো, মন্দ, পারিপার্শ্বিক অবস্থান এমনকি পরিবেশ— সব কিছুই তখন মনে হবে বইটিতে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে।’
হেমিংওয়ে তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিতেও বিষয়টি নিয়ে আরও বিশদভাবে আলোকপাত করেছেন। অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপিটি বর্তমানে কেনেডি লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করা আছে। তিনি লিখেছেন—
‘আপনি যখন একটি গল্প লেখা শুরু করবেন এবং উত্তম পুরুষে সেটি যখন বয়ান করবেন তখন গল্পটি এমন বাস্তবভাবে বলবেন যাতে পাঠক সেটি তার নিজের গল্প বলেই মনে করেন। মনে হবে যেন গল্পের ঘটনাগুলো বুঝি পাঠকের সঙ্গেই ঘটছে। এটি খুব সাধারণ কারণ আপনি যখন গল্প লিখবেন তখন আপনাকে সেই বাস্তবতা এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে যেটি পড়ে একজন পাঠক সেই ঘটনা নিজের মনে করতে পারেন। আপনি যদি গল্পে এই কাজটি খুব সার্থকভাবে করতে পারেন তাহলে পাঠকও খুব সার্থকভাবে ভাবতে পারবেন যে আপনি বুঝি তার জীবনের গল্পটাই লিখেছেন। আপনি যদি সেটি করতে পারেন তাহলে পাঠক তার স্মৃতি খুঁড়ে খুঁড়ে নিজেকেই সেই গল্পের একটি অংশ হিসেবে দাঁড় করাবে। যখন তিনি গল্পটি পড়বেন তখন মনের অজান্তেই তিনি সেই গল্পের একটি চরিত্র হয়ে যাবেন। এই কাজটি করা এত সহজ নয়।’
(অপ্রকাশিত একটি পাণ্ডুলিপি থেকে। পাণ্ডুলিপিটি কেনেডি লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত, সংগ্রহ নাম্বার ১৯, টি ১৭৮)
এটি খুব সাধারণ কারণ আপনি যখন গল্প লিখবেন তখন আপনাকে সেই বাস্তবতা এমনভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে যেটি পড়ে একজন পাঠক সেই ঘটনা নিজের মনে করতে পারেন।
একই বিষয়ের ওপর হেমিংওয়ের আরেকটি চিঠির ওপর চোখ রাখা যাক।
‘আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে আমি আমার গল্পগুলোতে কল্পনায় দেখা জীবনের চেয়ে বাস্তব জীবনের গল্প বেশি বুনে দিতে চেষ্টা করি। গল্পগুলো পড়লে পাঠক নিজেকে সেই গল্পের একটি অংশ মনে করবেন। মনে হবে গল্পের চরিত্রগুলো খুব জীবন্ত। অর্থাৎ আপনি যখন আমার কোনো গল্প পড়বেন তখন আপনি সেই বাস্তব জীবনের স্বাদটিই খুঁজে পাবেন।
আপনি তাই লিখুন যা আপনি জানেন। আপনি যাই জানুন তা অকপটে সৎ সাহস নিয়ে লিখুন। এবং পাঠককে আপনার চরিত্রগুলোর সঙ্গে একটি সংযোগ ঘটিয়ে দিন। একটি গ্রন্থ হবে সেই গ্রন্থ যেখানে আপনার গভীরভাবে চেনা কিছু মানুষের লেখা থাকবে। যে চরিত্রগুলোকে আপনি ভালোবাসেন আবার ঘৃণাও করেন। আপনার সঙ্গে জানাশোনা নেই, ওঠাবসা নেই, নিশ্চয়ই এমন কোনো চরিত্র একটি গ্রন্থে ঠাঁই করে নিবে না।
আমার লেখালেখিতে যৎসামান্য যে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছি এর কারণ হলো সেই গ্রন্থগুলোর চরিত্রগুলো ছিল আমার চেনা। তাদের সঙ্গে আমার লেখকসত্তা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।’
যাঁরা হেমিংওয়ের সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত আছেন তাঁরা জানেন যে হেমিংওয়ে তাঁর লেখায় প্রতীকী শব্দ বা মেটাফর খুব কমই ব্যবহার করতেন। এটিই তাঁর লেখার অন্যতম কৌশল। তিনি এমনভাবে ঘটনাকে বর্ণনা করতেন যাতে পাঠক তার সেই ঘটনার সাক্ষী হয়ে ওঠেন, সেই ঘটনার অন্যতম কুশীলবে পরিণত হন। এক বন্ধুকে এই নিয়ে চিঠিতে হেমিংওয়ে লিখছেন—
‘এবং আরেকটি গোপন কথা আপনাকে বলছি। সেটি হলো প্রতীকী শব্দ বা ভাষা বলতে কিছু নেই। সমুদ্র হলো সমুদ্র্র, বৃদ্ধ মানুষটা বৃদ্ধই, একটি ছেলে হলো একটি ছেলে এবং মাছ হলো মাছই। একটি হাঙর হলো একটি হাঙর। সেই হাঙরটি ঠিক যেমন দেখতে লেখাতেও ঠিক তেমনই। কোনো ভালো হাঙর না, আবার খারাপ হাঙরও না। এই যে মানুষ প্রতীকী কথাবার্তা বলে এসব হলো ফালতু। যা তুমি দেখতে পাও তাই বাস্তব আর কিছু নয়।’
তবে সবার আগে একটি লেখা আগে সত্যিকারের লেখা হতে হবে। যেকোনো লেখার নিজস্ব একটি শিল্পসম্মত রূপ আছে, একটি নিজস্ব সুর আছে। সেই সুরটিকে পাঠকের আবিষ্কার করতে হয়। কখনো কখনো সেটি আবিষ্কার করতে গিয়ে পাঠককে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়, অনেক যুদ্ধ করতে হয়, রক্তাক্ত হতে হয়। কারণ প্রতিটি লেখার পেছনেই আছে একটি রহস্য। সেই রহস্যের চাদর ভেদ করে পাঠক সামনের দিকে এগিয়ে যান। হেমিংওয়ে এই নিয়ে ১৯৫২ সালে তাঁর লেখকবন্ধু হার্বাট ব্রেইটকে একটি চিঠি লেখেন। তিনি বলেন—
‘একটি ভালো লেখা যতবারই আপনি পাঠ করবেন না কেন লেখাটি সত্যিকারের ভালো লেখা হলো কেন সেই সত্যটি আপনি জানতে পারেন না। এর কারণ হলো প্রতিটা মহৎ লেখার একটি নিজস্ব রহস্য আছে। এবং রহস্য কখনোই উন্মোচিত হয় না। রহস্য সবসময় চলমান এবং সেটি সবসময় বৈধ রূপেই প্রকাশিত। সে কারণেই আপনি যতবার লেখাটি পড়বেন ততবারই সেই লেখাটিতে নতুনত্বের স্বাদ খুঁজে পাবেন।’
সে তো গেল পাঠকের দিক থেকে। আর লেখকের দিক থেকে সেই কমিটমেন্ট রক্ষা করা আরও কঠিন। কারণ রহস্য তৈরি করা লেখকের কাজ নয়। লেখকের কাজ শব্দ দিয়ে একটি শিল্পকে নির্মাণ করা। আর সেটি নির্মাণ করতে লেখককে নানারকম আশ্রয় নিতে হয় বৈকি! ১৯৪৫ সালে হেমিংওয়ে তাঁর দীর্ঘসময়ের বন্ধু মেরি ওয়েলসকে লেখা একটি চিঠিতে লেখেন—
‘আমি যখন লিখি তখন আমার লেখার প্রতিটি শব্দই আমার কাছে নতুন মনে হয়। আজীবন শব্দগুলো ব্যবহার করার পরও প্রতিটি শব্দই আমার কাছে নতুন করে ধরা দেয়।’
অনেকে আবার শব্দের বহুবিধ ব্যবহার কাকে বলে সেই ধারণাটাও নেই। অনেকটা ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’। হেমিংওয়ে সে কারণে তাঁর চিঠিপত্রে বিভিন্ন সময়ে একজন লেখকের মেধা ও যোগ্যতা নিয়েও চিঠি লিখতেন, উপদেশ দিতেন এবং সাক্ষাৎকারে সেই কথা বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য পত্রিকায় লিখেছেনও।
তবে কথাটি হেমিংওয়ে তাঁর নিজের সম্পর্কে যত সহজে বলতে পারেন অন্য কোনো লেখকের পক্ষে সেটি এত সহজ নয়। একজন লেখককে লেখালেখি দিয়েই সেই যোগ্যতাটি অর্জন করতে হয়। সব লেখক শব্দ নিয়ে খেলতে পারেন না। অনেকে আবার শব্দের বহুবিধ ব্যবহার কাকে বলে সেই ধারণাটাও নেই। অনেকটা ‘ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার’। হেমিংওয়ে সে কারণে তাঁর চিঠিপত্রে বিভিন্ন সময়ে একজন লেখকের মেধা ও যোগ্যতা নিয়েও চিঠি লিখতেন, উপদেশ দিতেন এবং সাক্ষাৎকারে সেই কথা বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য পত্রিকায় লিখেছেনও। তাঁর বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনি’গ্রিনহিল অব আফ্রিকা’ থেকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
‘প্রথমত একজন লেখককে অবশ্যই মেধাবী হতে হবে, অনেক মেধাবী। কিপলিং-এর যেমন মেধা ঠিক তেমন। তারপর তাকে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। ঠিক ফ্লাউবার্ট যেমন শৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন ঠিক তেমন। মিথ্যাসত্তাকে প্রতিরোধ করতে প্যারিসের কঠিন তুলাদণ্ডের মতো একজন লেখকের একটি পরম বিবেক থাকতে হবে। লেখককে হতে হবে নির্মোহ। এই সব গুণাবলি একজন লেখক ধারণ করেন তখন তিনি তার লেখকসত্তাকে উজ্জীবিত করেন। সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো, যেহেতু সময় খুব অল্প তাই এই সব গুণগুলোকে এক সঙ্গে কাজে লাগানো এবং কাজটি শেষ করে ফেলা।’
আরেকটি সাক্ষাৎকারে হেমিংওয়ে বলেন—
‘লেখালেখির জন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রয়োজন। প্রথমত লেখককে তাঁর লেখালোখিকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। আর দ্বিতীয়ত, লেখক যে বিষয় নিয়ে লিখছেন সে বিষয়ে তার সুস্পষ্ট জ্ঞান বা মেধা থাকতে হবে।’
হেমিংওয়ে এই বিষয় নিয়ে নিজের প্রতি যতটা না সৎ ছিলেন তারচেয়ে বেশি তিনি এই নিয়ে সচেতন ছিলেন। হেমিংওয়ের জীবন অনেকটাই ছন্নছাড়া সন্দেহ নেই কিন্তু লেখালেখির প্রশ্নে তিনি অন্য জগতের এক লোক হয়ে যেতেন। তখন তিনি লেখকসত্তার বাইরে অন্য কোনো পরিচয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যেত না। ১৯৫৮ সালে প্যারিস রিভিউ ১৮ সংখ্যায় লেখক ও সাংবাদিক জর্জ প্লিমটনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হেমিংওয়ের মন্তব্যটির দিকে চোখ রাখলে লেখালেখি নিয়ে তাঁর নিজস্ব ভাবনার খোঁজটি পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন—
‘একজন ভালো লেখকের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপহার হলো নিজেকে তৈরি করা, যেকোনো বিপদে অবিচল থাকা এবং নোংরামোকে জয় করারা ক্ষমতা অর্জন করা। এই বিষয়গুলো হলো একজন লেখকের নিজের জন্য পরিচালনা শক্তি। লেখকের এই গুণগুলো অর্জন করতে হয়।’
কথা হলো শুধুমাত্র লেখালেখিতে মগ্ন হয়ে থাকাই কি একজন ভালো লেখকের কাজ? নাকি একজন লেখক যখন একটি লেখায় মগ্ন থাকেন, লেখাটি তৈরি করেন তখন তাঁকে আরও অনেক বিষয়ের দিকেও চোখ রাখতে হয়। ১৯৫০ সালে লেখকবন্ধু আর্থার মাইজেনারকে লেখা একটি চিঠিতে হেমিংওয়ে সেসব বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত দেন।
‘আমি মনে করি আপনি মূলত লেখেন দুটো সত্তাকে খুশি করার জন্য। প্রথম সত্তাটি হলো আপনি অর্থাৎ লেখক নিজেই। একটি খাঁটি লেখা তৈরি করে নিজেকেই আপনি নিবেদন করেন। আর দ্বিতীয় হলো আপনি লেখেন যে পাঠকগোষ্ঠীকে আপনি টার্গেট করেছেন তাদের জন্য। লেখালেখি এমন একটি বিষয় যে আপনি যা চাইবেন তা শতভাগ সন্তুষ্ট মনে আপনি করতে পারবেন না। এটি একটি চিরায়ত সত্য কথা ও চ্যালেঞ্জও। লেখালেখি আমার জীবনের অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে কঠিন। কিন্তু তারপরেও আমি সেই কাজটিই করছি। কারণ এই কাজটি করতে আমাকে আনন্দ দেয়।’
হেমিংওয়ে লেখালেখির এই সুখ বা আনন্দকে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। লেখালেখিতে এই আনন্দ খুঁজে পাওয়া বা খুঁজে বের করা একজন লেখকের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর বর্তমান সময়ের লেখকদের জন্য তো বটেই। কারণ একজন নবীন লেখক খুব অল্প সময়েই রাতারাতি জনপ্রিয় লেখকে পরিণত হতে চান। যদিও শিল্পসাহিত্য শুধু নয় কোনো মাধ্যমেই ‘শর্টকাট’ বলতে কিছু নয়। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যদের বলতেন, ‘ফাঁকি দিয়ে মহৎ কাজ হয় না।’ হেমিংওয়েও মনে করেন মহৎ সাহিত্য রচনা করতে হলে সেখানে থাকতে হয় সাধনা, একাগ্রতা আর ঈপ্সিত লক্ষ্য। হেমিংওয়ের ভাষায়—
‘আমি মনে করি লেখালেখি নিয়ে আমাদের খুব বেশি হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। আপনি যা লিখবেন সেটাই আপনার একমাত্র পুরস্কার। এবং এই পুরস্কারটি শুধুমাত্র নিজের কাছেই সীমাবদ্ধ। মনে রাখবেন, লেখালেখি নিয়ে প্রচারণা, প্রশংসার স্তুতি এসব কোনো সুফল বয়ে নিয়ে আসে না।
তিনি আরও বলেছেন—
‘নিজেকে আনন্দ আর সুখ দেওয়ার জন্যই এই লেখালেখি। লেখালেখি করে কী পেলাম আর কী পেলাম না সেটি লেখকের চিন্তা হতে পারে না। লেখালেখি করে অর্থলাভ কতটা হলো সেটিও লেখকের বিবেচ্য কোনো বিষয় হতে পারে না। কারণ লেখালেখি হলো একটি জন্মগত রোগ। এই রোগের কোনো ওষুধ নেই। একজন লেখক জন্মগতভাবেই এই রোগ নিয়ে জন্মান।’
কিন্তু জন্মগতভাবে এই রোগ নিয়ে জন্মালেও একজন লেখককে বুঝতে হবে কখন কোথায় তাকে থামতে হবে। লেখককে জানতে হবে লেখালেখির উপযুক্ত ক্ষণ বা সময়কে কীভাবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগানো যায়। একজন লেখক একজন রক্ত মাংসের মানুষ। লেখালেখি নিয়ে তার মাঝেও নানারকম হতাশা কাজ করতে পারে। এবং সেটিও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু লেখককে বুঝতে হবে সেই হতাশাকে কীভাবে জয় করা যায়। কীভাবে একজন লেখক হতাশাকে সঠিক পথে কাজে লাগাতে পারবেন। হেমিংওয়ে এক বন্ধুকে সেই কথাটিই লিখেছেন।
‘কখনো কখনো আমি যখন নতুন কোনো গল্প লেখার ফাঁদ তৈরি করি এবং লিখতে চেষ্টা করার পরও লেখাটি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে না পারি তখন আমি লেখাটি থামিয়ে দেই। তখন আমি প্যারিসের আকাশের দিকে তাকাই এবং নিজেকেই বলি, এত ভাবনার কী আছে? আপনি আগেও লিখেছেন এবং এখন আবারও লিখবেন। যা করতে হবে সেটি হলো প্রতিটি বাক্য হবে সত্য। আপনার জানা মতে সবচেয়ে বাস্তব আর সত্য বাক্যটিই আপনি আপনার লেখায় তুলে আনবেন। অতএব শেষ পর্যন্ত আমি আবার কলম হাতে নিয়ে জীবনের বাস্তব আর সত্য বাক্যটি খুঁজে বেড় করে লেখা শুরু করতে চেষ্টা করি। এভাবে লিখলেই সহজ। কারণ আপনি জানেন আপনার জীবনের সবসময়ই কোনো নো কোনো সত্য ঘটনা আছে। তাহলে শুরু করে দিন সেই সত্য ঘটনাকে সামনে নিয়েই।’
পাশাপাশি একজন লেখককে তাঁর লেখা সম্পাদনার বিষয়টিও আমলে আনতে হবে। হেমিংওয়ে তাঁর লেখা বারবার সম্পাদনা করতেন। প্রতিটি শব্দ ঠিক মনঃপূত না হলে তিনি সেটি পরিবর্তন করতেন এবং সেখানে তিনি নতুন শব্দ বসাতেন। এর জন্য তার মধ্যে কোনো তাড়াহুড়ো কাজ করত না। গ্রন্থ প্রকাশে তিনি ছিলেন অন্য লেখকদের তুলনায় সবচেয়ে ধীর ও স্থীর। তাঁর এক পাঠক ভক্তকে লেখা চিঠিতে হেমিংওয়ের এই চিঠিটির দিকে চোখ রাখা যাক।
‘যদি একজন গল্পলেখক জানেন তিনি কী লিখছেন ও কোন অংশ তাকে বাদ দিতে হবে এবং পাশাপাশি কোন অংশ পাঠকের জন্য উপযুক্ত তখন লেখককে সেই কাজটিই করতে হবে। একজন লেখক তার লেখায় মনেপ্রাণে যা সত্য বলে তিনি মনে করেন সেই সত্যকেই তিনি তার লেখায় তুলে আনবেন। যেসব বিষয় লেখককে তাঁর লেখায় অজানা একটি গর্তে ফেলে দিতে পারে লেখকের উচিত সেইসব অংশকে কেটে বাদ দেওয়া। একটি গদ্য হলো গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের মতোই অপরিপর্তনশীল, বিজ্ঞানসম্মত বিষয়।’
একবার এক সাংবাদিক হেমিংওয়েকে প্রশ্ন করলেন—
‘একটি গল্প লেখার সময় আপনি কি আগে থেকেই জানেন গল্পটিতে কি ঘটতে যাচ্ছে?’ হেমিংওয়ের উত্তর ছিল, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই না। আমি শুরু করি এবং গল্পের প্রয়োজনে যা হবার তাই ঘটে।’
তখন সেই লেখকের মধ্যে হতাশা পেয়ে বসে। কিন্তু হেমিংওয়ে এই শব্দ সংখ্যাকে দেখেন ঠিক অন্য রকম ভাবে। তিনি মনে করেন শব্দ সংখ্যার চেয়ে লেখাটির কোয়ালিটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সেদিক ইঙ্গিত দিয়েই এক বন্ধুকে এই নোটটি লিখেছিলেন।
অনেক লেখক আবার শব্দ সংখ্যা নিয়েও মানসিক পিড়ায় ভুগেন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ শব্দ না লিখতে পারলে তিনি মনে করেন লেখালেখিতে তিনি বুঝি পিছিয়ে আছেন। তখন সেই লেখকের মধ্যে হতাশা পেয়ে বসে। কিন্তু হেমিংওয়ে এই শব্দ সংখ্যাকে দেখেন ঠিক অন্য রকম ভাবে। তিনি মনে করেন শব্দ সংখ্যার চেয়ে লেখাটির কোয়ালিটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সেদিক ইঙ্গিত দিয়েই এক বন্ধুকে এই নোটটি লিখেছিলেন।
‘আমি লিখতে ভালোবাসি এবং অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে এই কাজটি করতে আনন্দ পাই। প্রতিদিন ১২০০ অথবা ২৭০০ শব্দ লিখলে হয়তো আপনি বেশি খুশি হতে পারবেন। কিন্তু যখন আমি দেখলাম প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ শব্দ লেখাটা আরও বেশি ভালো তখন সেখানে আমি একটি আনন্দ খুঁজে পাই। কিন্তু যদি শব্দ সংখ্যাটা ৩২০ হয় তাতেও আমি অসুখী নই।’
লেখালেখিতে মৌলিকতাকে হেমিংওয়ে সবসময়ই বেশি সতর্ক থাকতেন। তিনি মনে করতেন প্রতিটি লেখকেরই একটি নিজস্ব যোগ্যতা ও শক্তি আছে। সেই শক্তিটি লেখকের লেখায় ফুটে উঠুক তিনি তা মনপ্রাণ দিয়ে চাইতেন। হেমিংওয়ে নিজে যে কাজটি করতেন তিনি ঠিক সেই কাজটি তার লেখকবন্ধুদেরকেও করতে বলতেন। যেমন এক চিঠিতে হেমিংওয়ে জানাচ্ছেন—
‘আমি মনে করি আপনি নিজেই প্রতিদিনই আপনার লেখালেখি থেকে একটি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। ভোরে লেখার আগে আমি কখনোই সাধারণত সেই বিষয় নিয়ে অন্য কোনো কিছু পড়ি না। কারণ, আমি চাই না আমার লেখায় অন্য কোনো রকম প্রভাব থাকুক। আমার লেখাটি যখন শেষ হয় তারপর আমি সেই বিষয়টি নিয়ে পড়ি।’
লেখালেখি কখনোই সহজ কোনো কাজ ছিল না, এখনো নয়। সবসময়ই এটি খুব শ্রমসাধ্য বিষয়। লেখকসত্তা তৈরি করাও একটি শ্রমাসাধ্য কাজ। ব্যক্তিগত লোভ, শৌখিন জীবনের হাতছানি, এসব বিষয়কে লেখককে জয় করতে হয়। জয় করতে পারলেই সুখ। সেই সুখ একজন লেখক তখন তাঁর কঠিন সাধনায় ঠিক চিহ্নিত করতে পারেন। ১৯৫৮ সালে লেখক ম্যাক্সওয়েল পার্কিনসকে লেখা একটি ছোটো নোটে হেমিংওয়ে সেই কথাটিই বলেছিলেন।
‘আজ আবার উপন্যাসটি নিয়ে কাজে হাত দিব। লেখালেখি একটি কঠিন শ্রমসাধ্য কাজ ম্যাক্স। অন্য কিছুতে এই শ্রম দিয়ে সুখ পাবে না।’
শেষ কথা হলো লেখালেখি একটি আবিষ্কার। সেই আবিষ্কারটি লেখক শুধু একাই করেন না। সেই আনন্দময় কাজটি লেখক করেন পাঠককে সঙ্গে নিয়েই। যখন একজন লেখক এই কাজটি তাঁর লেখায় সার্থকভাবে ঘটাতে পারবেন তখন সেই লেখাটি একটি ভালো পাঠকপ্রিয় লেখা হতে বাধ্য। অর্থাৎ মূল কথা হলো পাঠককে লেখাটির সঙ্গে গেঁথে রাখা। একজন লেখক সে কাজটি যতটা যোগ্যতার সাথে করতে পারবেন ততই তাঁর লেখাটি পাঠকের অন্তরাত্মায় একটি জায়গা করে নিতে পারবেন। ১৯৩৪ সালে কথাসাহিত্যিক স্কট ফিজগেরাল্ডকে লেখা একটি ছোট্ট নোটে হেমিংওয়ে সেই নিগূঢ় রহস্যটিই জানাতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন—
‘লেখালেখি একটা আবিষ্কার। এটি এমন এক বিষয় যেখানে লেখক নিজের জানা সত্য পথ থেকে নতুন আরেক পথকে আবিষ্কার করেন এবং পাঠক সেই নতুন আবিষ্কৃত পথের সাথে পরিচিত লাভ করেন।’
আর্নেস্ট হেমিংওয়ের গোটা লেখক জীবন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল, তা বলা চলে না। লেখালেখিকে জীবনের একমাত্র আরাধনা করতে গিয়ে তাঁকে নানারকম বিপত্তি সহ্য করতে হয়েছিল। তারপরও তিনি মনে করতেন, ‘প্রজাপতির রঙিন ডানা আর ঈগলের বাহারি পালক তখনই সুন্দর যখন সেগুলো আপনি দেখতে পারেন এবং সেই নিয়ে কথা বলতে পারেন।’ কিন্তু এই বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি তাই করেছিলেন যা তাঁকে আনন্দ দিয়েছে। তাঁর গল্প, উপন্যাস, চিঠিপত্র, বন্ধু-বান্ধব, প্রকাশক এমনকি তাঁর তির্যক সমালোচকদেরকে তিনি তাঁর সেই বিশ্বাসের কথাটি অকপটে জানিয়েছেন। লেখালেখি নিয়ে তাঁর নিজের জীবনের যুদ্ধ, আঁকাবাঁকা পথটি তিনি তাঁদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। বিশ্বসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ খুব কম লেখকই এই কাজটি করে থাকবেন বা করেছিলেন। সেদিক থেকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে অন্য আর দশজন লেখকদের থেকে ব্যতিক্রম এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এই ছোটোখাটো চিরকুট আর চিঠিগুলো একজন লেখকের জীবনে যদি ন্যূনতমও কোনো কাজে লাগে তাহলেই হেমিংওয়ের প্রচেষ্টা সার্থক।
প্রাবন্ধিক, গল্পকার এবং অনুবাদক। ঢাকায় জন্ম। পড়াশুনা করেছেন বাংলাদেশ এবং উত্তর আমেরিকায়। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্ক অভিবাসী। নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা, নিউ ইয়র্ক ফিল্ম সেন্টার, নিউ ইয়র্ক বাউরি পোয়েট্রি ক্লাবসহ নানা রকম শিল্প-সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত। পেশায় আর্থিক বিশ্লেষক এবং পরামর্শক। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে উত্তর আমেরিকায় বাঙালির অভিবাসী হওয়ার বিস্ময়কর ইতিহাস আর কৌতূহলোদ্দীপক জীবন নিয়ে তাঁর গবেষনাধর্মী গ্রন্থ ‘শিপ জাম্পার: বাঙালির আমেরিকা যাত্রা’, ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতী নারীদের বিচিত্র জীবন নিয়ে গবেষনা গ্রন্থ ‘ঔপনিবেশিক ভারতে বিলাতি নারীরা’ এবং পলাশী যুদ্ধের অন্যতম খলনায়ক রবার্ট ক্লাইভের অজানা কিছু কাহিনি নিয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘জানা অজানা রবার্ট ক্লাইভ’। কবি শহীদ কাদরীর জীবন ও সাহিত্য নিয়ে গ্রন্থ ‘চেনা অচেনা শহীদ কাদরী’ এবং ‘শহীদ কাদরী বাড়ি নেই’। আমেরিকার বাঙালি অভিবাসীদের মন ও তাঁদের জীবনের চমকপ্রদ গল্প নিয়ে তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘অ্যাকুরিয়ামের মাছ ও হলুদ প্রজাপতির গল্প’, এবং ‘আমেরিকানামা’। দুঃসহ করেনাকালের ছাপ নিয়ে লেখা তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘করোনা ও একটি অলকানন্দা ফুল’। ভ্রমণ, বই পড়া এবং সিনেমা দেখা তাঁর নেশা।