১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে মাদক গ্রহণের দায়ে ফিফা কর্তৃক আর্জোন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনার বহিষ্কারের প্রেক্ষিতে হুমায়ূন আহমেদের একটি সুচিন্তিত মতামত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রথমে এটি দৈনিক জনকণ্ঠের ১৩ জুলাই ১৯৯৪-সংখ্যায় এবং পরে আগস্ট ১৯৯৪-এ ঢাকার প্রত্যয় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বিভুরঞ্জন সরকার সম্পাদিত ‘নন্দিত নিন্দিত ম্যারাডোনা’ বইয়ে সংকলিত হয়। লেখাটি কবি পিয়াস মজিদের সৌজন্যে প্রাপ্ত। তাঁর কাছে আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা।
ম্যারাডোনাকে নিয়ে বাংলাদেশে এতো মাতামাতি হচ্ছে কেন, তার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না। কারণ, ম্যারাডোনা যত ভালো খেলোয়াড়ই হন না কেনো, তাকে বহিস্কারের ঘটনা যত বেদনাদায়কই হোক, ফিফার সিদ্ধান্তকে সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ বলেই মেনে নেওয়া উচিত। আমার সবচেয়ে বেশি দুঃখ লেগেছে, আর্জেন্টিনাতে যখন ম্যারাডোনার নিন্দা করেছেন অনেকেই তখন আমাদের দেশে তার পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে। অথচ নিজের দেশের যখন সাফ গেমসের ফুটবলে ভরাভুরি হলো, কই তখন তো কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে পথে নামেননি। সেদিন যদি পরাজয়ের বেদনায় কাঁদতে কাঁদতে আমরা পথে নামতে পারতাম তাহলে হয়তো বা পরাজয়ের বেদনা কিছুটা বুঝতেন আমাদের ফুটবলাররা। কারণ আমার মনে হয় নিজের পরাজয়কেও আমরা আর বেদনাদায়ক বলে এখন আর মনে করি না।
ম্যারাডোনার মতো এতো বড় একজন ফুটবলার কেন ড্রাগ নিবেন। একবার নয় বারবার কেন নিবেন। তার নিজেরও দেশের সম্মান কি এতে বাড়লো? সারা পৃথিবীর কতো মানুষের প্রিয় ছিলেন তিনি। তাদের কথা, তার দেশের কথা একবারও তিনি ভাবেননি। একজন আদর্শ ফুটবলারের প্রতীক হতে পারতেন তিনি। তাকে অনুসরণ করতে পরবর্তীরা। কিন্তু নিজেই তা হতে দেননি। এখন যদি তার অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হয় তবে সেটা হবে আরেক অপরাধ। কারণ পরে কোনো স্টার খেলোয়াড় মাদক গ্রহণ করলে ম্যারাডোনার উদাহরণ দিয়ে তিনিও ক্ষমা প্রার্থনা করবেন এবং এভাবেই এটা নিয়মে পরিণত হয়ে যাবে। খেলাধুলার জগতে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা তখন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
লেখক পরিচিতি
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ূন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লিতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
…