কবি ঘুমাচ্ছে এমন বেলায়
কবি ঘুমাচ্ছে এমন বেলায়; শ্রান্ত দুপুরে বিষাক্ত লালার গুঁইসাপটি যেভাবে নামে, চিরকাল সেভাবে নেমেছে একদল মনুষ্য চেহারার প্রাণিরা, তাদের বিষাক্ত মিথ্যা শব্দগুলো সারাদিন মুখে নিয়ে তারা ঘুরছে, আশপাশে যাকে পাচ্ছে তাঁর উপরই ছুঁড়ছে, সুদিন বুঝে অজস্র ডিম ফুটিয়ে উঁই পোকার মতো সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে, কালো ধোঁয়া বা গুজব যেভাবে ছড়ায়, সংক্রমিত হচ্ছে, করোনা যেমন হয়েছে শত শরীরে শরীরে, মনে ভ্রান্তিরা বাসা বাঁধে প্রেতাত্মার মতো
কবি ঘুমাচ্ছে এমন বেলায়, এমন অনেক ঘটনাই ঘটে দুনিয়ায়
তোমার কাছেই
তোমার কাছেই যতো রাগ আমার রাখছি;
আশা এই যে, প্রেমের মতনই তা আড়াল রেখো
এক জীবনে জানি তা উপচে যাবেই একদিন; মাটিতে পড়লে ঘাসগুলো কুষ্ঠ-রোগীর চামড়ার মতো হয়ে যাবে, বাতাসে জুড়লে গাছেরা, পাখিরা ফ্যাকাসে মুখে ঝরে যাবে, সাগরে গড়ালে গোপন সমস্ত প্রাণ মরে ভেসে উঠবে
একমাত্র মানুষের ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না
তাঁদের ঘটনা খুব আলাদা আলাদা; কেউ কেউ তাঁরা বিষ খেয়ে দিব্যি হজম করে বাঁচতে পারে, অন্ধকারে বিড়াল কুকুর যেমনটা না পারে, তাঁর চেয়েও সুবিধায় চলতে পারে, প্রয়োজনে স্বজাতি আরেকজনকে মেরে খেতে পারে
তোমার কাছেই যতো রাগ আমার ক্লেদ আমার রাখছি; এবং তুমিও একটা মানুষ, ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই করতে পার; চাইলে আড়ালে আদরভরা বুক খুলে লেপ্টে রাখতে পার, চাইলে প্রকাশ্যে সদলবলে কেটে কুটি কুটি করে উড়িয়ে দিতে পার কবুতরের পাখার মতো
কাঠঠোকরা
একটা কাঠঠোকরাকে দেখি, কাঠফাটা রোদে গাছের দেহ ঠুকে যাচ্ছে, প্রতিদিন একটা রুটিনে
তাঁর পাখায় বিবষ-রং, ঝিরিঝিরি এক অরণ্য, তার ঠোঁটে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম মুক্তি
সমস্ত দুপুর ঠোকরে ঠোকরে এক সংগীত ছড়িয়ে দেয় সে কানে কানে, মনেও পৌঁছে দেয় থুম; যেন সে শেখাতে আসে কিভাবে কোন ক্ষয়িষ্ণু শরীরকে ছাপিয়ে ডিঙাতে হয় সমূহ শারীরবৃত্তিয় শোক
রোদ ও নীরবতা বাজিয়ে সে চলে যায়, পৃথিবীকে পুনরায় পৃথিবীতে রেখে
রাস্তায় বিড়ালের লাশের মতো
রাস্তায় বিড়ালের লাশের মতো, আমাদের বিবেক ও প্রেম পড়ে থাকে, বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, রোদ্রে শুকায়, বাকিটা খেয়ে ফেলে চাকার টায়ার
তাকে কল্পনা করে কোনো শিশু, যার সাথে সম্পর্ক ছিল এক গভীর মায়ার
সে মায়াটা ধুয়ে আর কেউ খায় না তো জল
তাই মানুষের লাশও যদি থাকে, ডাস্টবিনে লিক হওয়া ফুটবলের মতো; তাকে টোকাই টোকায়, কিছু কুকুর যেমন খুশি হয়, নর্দমা ঘেঁটে যদি পায় কাঙ্ক্ষিত খাবার যতো
কাক ডাকে
কাক ডাকে, নুয়ে পড়া মান্দার ডালে
মনে আসে হিজিবিজি কুয়াশায় কোনো এক ছোট্ট শহর, আর বিমুখ বিজন
রোমন্থনেও এরকম অনেক রয়েছে মৃদু মান্দার-ডাল
সেখানেও কাক ডাকে, শব্দ হয়, ভীড়ের মধ্যে সেই ডাক পড়ে থাকে, মাফলারে লেগে থাকা বিড়ির গন্ধের মতো; বিড়িখোরের নাক কোনোদিন বোঝে না যাকে
তোমার স্মৃতিটাও একদিন, এমনই একটা কোনো কাক হয়ে ডাকে, নুয়ে পড়া সময়ে, শুয়ে পড়া গাছের ডালে, যা কোথাও লেখা থাকে না
জন্ম ৩ অক্টোবর, ১৯৮৩। ‘ব্রহ্মপুত্রের কবি’ নামে বাংলা সাহিত্যে অভিহিত নীহার লিখনের জন্ম শেরপুর জেলায় হলেও কবি জীবনের উন্মেষ পর্যায় থেকেই বসবাস করছেন ময়মনসিংহে। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রণ্থ ‘ব্রহ্মপুত্র’ যেখানে মহাকাব্যিক একটা ধাঁচে ব্রহ্মপুত্রকে তিনি কাব্যে এনেছেন সার্থক ভাবেই। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রণ্থগুলো হচ্ছে : ‘আমি আপেল নীরবতা বুঝি’, ‘ব্ল্যাকহোল ও পড়শিবাড়ি’, ‘পিনাকী ধনুক’, ‘মনসিজ বাগানের শ্বেত’, ‘নতুন পৃথিবীর প্রথম বনমোরগ’ ও ‘স্কিৎজোফ্রেনিয়ার পেয়ালা’। এছাড়া ২০২২ একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২-এ ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘চে ও হীরামন পাখি’। কবিতা ও কথাশিল্পের পাশাপাশি নীহার লিখন অনুবাদ আর প্রবন্ধ নিয়েও কাজ করেন। পেশা জীবনে অধ্যাপনা করেন ময়মনসিংহ শহরেই একটি বেসরকারি কলেজ।