বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

কালিকাপুরের গানবাড়ি ও অন্যান্য কবিতা : সুভান

0

Utsob-Songkha_Motif

গানের বাগানবাড়ি ও বিরহদালান


সিঁড়িভাঙা অঙ্কের খেলায় আমি বরাবরই কাঁচা
তবু কেন যে একটার পর একটা ভাঙা সিঁড়ি ধরে
উঠে যাচ্ছি ওপরে…

যেখানে আকাশ শূন্যে ভাসে; আমি চুপ করে থাকি।
নিজেদের স্মৃতিকলহতে, কোলাহলে…
যেখানে হাওয়া আরও জোরে জোরে বুকে এসে লাগে
এমন কোথাও, আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি।

কালিকাপুরের কাছে একটা বিরহ দালান ঝুলে থাকে।
মাঝে মাঝে নিজেদের না বলাটুকু বলে ওঠে মেঘমল্লার।
যেন সামনের খালে ভেসে ওঠে নিজেদের লাশ।

এই তো বলার ছিল কিংবা বলিনি আর।


কালো জলে তোমার ডুবল সনাতন


সরু একটা খালের পাশেই গানবাড়ি, তোমার কণ্ঠবীথি
আমার খমকজন্ম এমন গাছের কাছে এসে দাঁড়ালে
শ্রুতি অসাড় হয়ে যায়…

একটাই তারে বাজে আমার জীবন।
যেন একতারা। তুমি।
দূরে নগরজীবন, নোনা সমুদ্রপাড় স্থির হয়ে বসে থাকে।

অপেক্ষায় দিন কাটে, রাত কাটে উপেক্ষায়।
যে শীত ফেলে এসেছি তার কথা মনে পড়ে।
শনশন হাওয়ার প্রলেপ।

আঙুলের কথা লিখিনি বহুদিন,
আগুনের কথাও লিখিনি বলো?
তবু কেন যে বুকের ভেতরে ছাইচাপা মীড় বেজে ওঠে…

তোমার কাছে আজীবনের সাদা হতে চেয়েছি শুধু।
জল আর রোদের গল্প, কথার শরীর থেকে পাখি আর নীড়
দোতারায় হাত রাখি আমি, দোতারায় শরীর হারাই।
কত কী যে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়,
কত কী যে অক্ষরে অক্ষরে বোঝাতে পারি না।

এভাবেই গান হও তুমি।
গান হয়ে ঝরে পড়ো আমার শরীরে।

ছায়ায় কী মাটি লেগে থাকে?
মাটিতে বিকেল?

দ্যাখো সরু খাল বেয়ে নামে হাঁটা পথ
জোড়াব্রীজ পার হই আমরা।
আরও নিচু হয়ে নেমে আসে আনন্দবিন্দুর জল।

সেই কালো জলে কুচলা তলে
তোমার ডুবল সনাতন।


জলপাইরঙের জলাশয়


বদ্ধ জলাশয়ের রং ঈষৎ জলপাই রঙের হয়
বদ্ধ জীবনেরও রং তাই।

রুদ্রবীণায় বিষাদ বাজে।
নিজের শ্রুতির কাছে নিজেই ক্রমশ একটা
অপরাগ কোমলরাগ হয়ে উঠি।
সুর লাগে না সপ্তকে।

দূরে পাথরের উঁচু উঁচু বাড়ি আর সাঁকো
হলুদ আলোর কাছে এসে সম্পর্কের ছায়ারা হারায়।

একটা বাস যাতায়াতের রাস্তা
একটা খাদে পড়া উড়ালপুল
একটা পাড় বাঁধানো জলাশয়
একটা সন্ধেবেলার বাসস্ট্যান্ড
থমকে আছে এখনও…


মৃত্যুপাখির ভোর


জানলায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা জানে
আর বেশিদিন তার এই শোক বেঁচে থাকবে না।
আজ নয়তো কাল সমস্ত শোকের মৃত্যু হবেই।

একটা সম্পর্ক থেকে অন্য সম্পর্কে যেতে
একশো আশি দিন লাগে, তারপরে পুনরায় শোকের জন্য
জানলা খোলা রেখে ঘুমাতে যেতে হয়।

ভোরের পাখির গান মৃত্যুর মতো সুন্দর।
যেন ডেকে নিয়ে যেতে চায় এই অসাড় জীবন থেকে।
কিন্তু যাওয়ারই বা পথ কই? যেদিকে তাকাই শুধু জীবন।

গানের ভেতরে ঢুকে পড়ে সেই জীবন।
নাচের ভেতর নাচে।
মেয়েটি জানে না সমস্ত শোক একদিন
নাচে গানে কী ভীষণ ম্লান হয়ে যায়।


কলিজা কাঁদে


ফিকির কী আলেয়া?
তোমার খোয়াবের ভেতরে এত আলো এত সুখ ছিল।
একদিন তোমাকে দক্ষিণ হাওড়ের পানি করে দেবো।
ভেসো তুমি। আমার উঠান জুড়ে ভেসে থেকো।
শালুক ফুল নামে তোমাকে ডাকা হলো না।

আমাকে একটা গান দেবে তোমার?
শহরের মায়া আমি ছেড়ে এসেছি।
আমাকে বাউল করে দাও।

কলিজা কাঁদে…

 

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শিলিগুড়ি শহরের কবি। প্রথম লেখা প্রকাশ ২০০৬ সালে। তারপরে দীর্ঘ সময় ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন। এযাবৎ দশটি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম বই ‘ঈশ্বরহীন স্তবক ও এথিওর কবিতাগুচ্ছ’ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৫ সালে। ‘কাচের সংলাপ’ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন রাঢ়বনতলি রোদ্দুর সম্মান। একালের কণ্ঠ যুব কবি পুরস্কার এবং চুনী কোটাল স্মৃতি সম্মান। কবিতা লেখার পাশাপাশি একজন চিত্রশিল্পী ও প্রচ্ছদশিল্পী।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।