গার্হস্থ্য
খানিকটা রস দিয়ে বশে আনা ভালো
তবু বিচিত্র রং ঘেটে বেদনায় এঁকেছ এই দেহ
ভালোবাসা —সে এক পৌরাণিক পরিহাস, পুরাতন প্রত্নকথা
নগদে কুশল কামনা করো —
যেন আমি শরবিদ্ধ হই;
তিল-তিসির গন্ধে ছুটে বেড়াই মাজার থেকে মাজারে।
সাঁওতাল থেকে শাবরীর ধারায় তোমাকে খুঁজি
ততদিনে বক্রনদী সরল গতিতে দাঁড়ায়
তোমার সকল স্নানে আমার গার্হস্থ্য ভেসে যায়
শরমে ধর্ম হারায়।
কার্তিকে খেত-খামার নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো
বাকিটা বাঁক অন্ধ বিড়ালের মতো নিঃশব্দে পেরিয়ে যাব
যখন একগুচ্ছ চাঁদ নিয়ে জেগে উঠবে বিতর্কিত রাত!
সড়ক
প্রতিটি সড়ক নির্মাণে সরকারী সাইন লাগে
ফাইল-ফোল্ডার— অঢেল আয়োজন
শ্রমলজ্জার সংহার, নির্মাণের কৃৎকৌশল।
পাগলও ভেটো দেয়, শেষ হয় ছেঁড়া কাগজের দিন
জোটকামী মানুষ হেসে হেসে হাটে যায়
বিচিত্র যন্ত্র আর ডিজাইনে চলে চালক
তিতকুটে কালো পিচের রাস্তায় ঠিকরে পড়ে চাঁদ
ভ্রমে—ল্যান্ড করতে গিয়ে,
ডানার সঞ্চার নিয়ে উড়ে যায় বালিহাঁস
সকলপ্রকার বাতাসে তোমার ওড়না সরে যায়।
বয়ঃসন্ধির সময়টাতে ছেলেরা যেমন বাবার বিরুদ্ধে
চোয়াল শক্ত করতে শেখে, তেমনি
দুর্ঘটনাকে জঠরে বন্দি করে বিশ্বকালীন মায়েরা
অদৃশ্যে প্রতিবাদের আগুন হয়ে থাকে।
মন থাকলেই অভিমান, রাগ থাকলেই রক্ত
মামারা বলে, সড়ক নির্মাণে পাথরের ফলক লাগে,
থেঁথলে-যাওয়া মুখের বিপরীতে
ভীত পায়রা ও উদ্বোধনের বিস্তারিত হাসি লাগে!
প্রতিশোধ
নিঃসঙ্গকে বাড়িতে রেখে বেড়াতে যায় মানুষ
সনাতন সঙ্গের দেখা পাবে বলে!
অনেক স্বপ্ন, স্বাস্থ্যের যোলোকলা পূর্ণ করতে
ছুটে যায় পাহাড়, সমুদ্র বা বনাঞ্চলে
দিন, পক্ষ, মাস চলে যায়…
প্রেমহীন অন্ধ অক্ষরের মতো
ধীরে ধীরে ভূতেলা হয়ে পড়ে বাড়ি
প্রিয় প্রেক্ষাপট ডুবে যায় পাপাশয়ে।
তাতে কী!
প্রকৃতি নগ্নেরও অতীত,
অদৃশ্যকে করে তোলে দৃশ্যপ্রতিম
একাকে একাকার করতে, সঙ্গীহীনকে সঙ্গত দিতে
গজিয়ে তুলছে কচিঘাস,
সমাপিকা ক্রিয়ার ইশারায়
ডেকে আনছে আতাগাছে আশ্রিত পাখি।
ধূমকেতু
চাঁদ ও পৃথিবীর পারস্পরিক দ্বন্দ্বে
তিলে তিলে কমে আসছে আমাদের প্রেমাত্মক টানগুলো।
দূরত্বের দাসখতে বারবার দুশ্চিন্তা এসে নাক গলাচ্ছে
পাখির মতো ওড়ার জটিলতা না থাকলেও
আচরণে আমরা বিষণ্ন ষাঁড়—ঘাসের ঘনত্ব ছেড়ে
সারাদিন শিশির খাই, ফলত মাথা নত
চলনে আবর্তনে হাজারও সূত্রের হাহাকার
যদিও নথিভুক্ত—
কেউ কেউ শৌখিন তারা কেউ-বা দৃষ্টিহীন
ভর কমে গেলে বড় মাপের গ্রহ
যেভাবে আত্মসাৎ করে ছোট ছোট ধূমকেতুকে
আমাদের প্রেমের আজ সেই দশা!
কোপারনিকাসের জন্ম আর গ্যালিলিওর মৃত্যু
এই দুই সত্যের ছেদবিন্দুতে উচ্চারণতুল্য হয়ে
তিরতির করে কাঁপছে—অলস, মূল্যহীন
পোকায়খাওয়া দাঁতের মতো নড়বড়ে, নীতিহীন।
সাইকেল
ছবি তোলা হলো, অনেক কায়দা করে
কুয়াশায় ভেজা সব পখির পালক
দু’ধারে চৈতালি শিমুল, দূরে সবিনয় সংসার
প্রেমের প্রসঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠের গান নিয়ে এল অনেক নৈবেদ্য
তোলা হলো অনেক নোঙর, গ্রীবার আস্ফালন।
দিন শেষে আলোচ্য সন্ধ্যায়—
ফিরে যাচ্ছি সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে;
চালাচ্ছে আস্ফাকুল।
অবলুপ্ত প্রাণীর মতো হঠাৎই বলে বসল—
বুঝলেন, গতরাতে স্বপ্নে দেখলাম কুমেরু অঞ্চল!
সেখানে বল্গা হরিণের দায়ে নিঃশেষিত তৃণভূমি।
আর কিছু মাথামোটা বিজ্ঞানী
সীল শশকের শিকারিরা ধাওয়া করল আমাকে
—জানেন তো বিড়াল কিন্তু বেধড়ক সুযোগ সন্ধানী!
কুচক্রে পড়ে যাচ্ছি কুপথে
এদিকে তসবি দানর মতো সাইকেলের চেইন পড়ছে টপাটপ
বকে যাচ্ছে আস্ফাকুল, শোনাচ্ছে দ্বীপের দৃষ্টান্ত
বোঝাচ্ছে, পৃথিবীতে সকল ত্রুটিরই ফল হয় সুদূরপ্রসারী।
কবি, প্রাবন্ধিক। জন্ম : ১১ জুন ১৯৬৯ বগুড়া, বাংলাদেশ। প্রকাশিত গ্রন্থ : ধানের রচনা দিলে পত্রে (কাব্যগ্রন্থ), ছন্দের নান্দনিক পাঠ (প্রবন্ধগ্রন্থ), নিষিদ্ধ পুষ্টির কোলাহল (কাব্যগ্রন্থ), সোনার কার্তুজ (কাব্যগ্রন্থ), রৌদ্রবঞ্চিত লোক (মুক্তগদ্য), ব্যবহারিক বিস্ময় (কাব্যগ্রন্থ), দুর্ভিক্ষের রাতে (কাব্যগ্রন্থ), কায়া ও কৌতুকী (কাব্যগ্রন্থ), ছন্দকথা (প্রবন্ধগ্রন্থ), লুপ্ত সভ্যতার দিকে (কাব্যগ্রন্থ)