দরোজার ওপাশে
জলবায়ু বিপর্যয়ে পরিত্যক্ত শহরে প্রাচীন এক সিংহদরোজা— ব্যাঙের ছাতা, শ্যাওলা, ফার্নে মগ্ন। হাজার বছর পুরাতন এই দরোজা সর্বদা ভেতর থেকে বন্ধ থাকে। খিল মারা। বারবার করাঘাত করার পরও কেউ সাড়া দেয় না। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ডিনামাইট ফাটিয়েও একে উড়িয়ে দিতে পারেনি। এমনই শক্ত এর নির্মাণ। অবশেষে নিউক্লিয়ার পাওয়ার রিয়েক্টরে প্রাপ্ত শক্তি দিয়ে পাল্লা দুটো খুলে দেয়া গেল। আর তারপর দরোজার ওপাশে গ্যাসীয় গ্রহ, ঘন কুয়াশার স্তরে লুকায়িত স্কাইজেটের স্টেশন, নক্ষত্রের মৃত্যুদৃশ্য চোখে পড়ে। বাণিজ্য স্টারশিপগুলো স্পেসগ্রোথ শাকসবজি, ক্লোনপ্রাণী নিয়ে অচেনা ব্রহ্মাণ্ডে ইতস্তত ঘূর্ণায়মান…
খাঁচায় শিকারি পাখি
সারা দিন বুনো গান গাই উঁচু কড়ইয়ের ডালে, মেহগনি গাছে।
গেয়ে গেয়ে পাখিদের ঘর বার করে আনি। সব কাজ ফেলে
তারা এই প্রাণনাথের কাছে ছুটে আসে। বস্তুত গলায় গান ও পাখায়
রং দিয়ে তাদের ভূলিয়ে ফেলি। কিন্তু কখনোই
আমরা দুটিতে মিলে ঘর তৈরি করতে পারি না। জীবনে যত প্রেম করি,
ভালোবাসা করি সব বিয়োগাত্মক, ট্রাজেডি হয়ে যায়।
কত বড়ো শিকারি পাখি আমি, তাও আমার সব সাধ আহ্লাদ, কামনা,
কসরত, খাঁচায় মাথা ঠুকে মরে।
অদৃষ্ট পর্যটক
শখ ভ্রমণ বলেই আমি কোয়ান্টাম ঝাঁপ দিয়ে পৌঁছে যাই উচ্চ শক্তিস্তরে, স্পেস স্টেশনে
কুইপার বেল্টের কাছে অবস্থিত ছোটো ছোটো উপগ্রহে, নাইট্রোজেন বরফের পর,
অচেনা বাতাবরণে আমার শরীর বিচ্ছিন্ন অ্যাটম উড়ে বেড়ায়।
একটি ভূতুড়ে স্পেসশিপ নষ্ট হয়ে উপগ্রহে পরিণত এলিয়েন জ্যোতিষ্কের।
কোয়ান্টাম ঝাঁপ যেন টেলিপোর্ট প্রকোষ্ঠ কোনো,
আমাকে মুহূর্তে বরফ শীতল পাথুরে জগতে নিয়ে যায়।
হয়তোবা একদিন ডিভাইসের চার্জ দিয়ে লিখে উঠব
অতিপারমাণবিক, ফোর্থ ডাইমেনশনে ভ্রমণকাহিনি—
অথবা কেউ কখনো যেতে পারবে না এমন সব ট্রেঞ্চে
একটি মায়ালেন্স চোখে পরে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা।
আমার চেতনা এখন সৌরজগতের শেষ সীমা ত্যাগ করে যায় ডিসকভার নামক সোলার নায়ে।
চোরাই বিদ্যুৎ মাঠে খেলাবিরতি
মেলো হাওয়ায় ভেসে কুয়াশামেঘ ঢুকে পড়ে ঝঞ্ঝাময় ক্রীড়াঙ্গনে। ফলে ধূলামত্ত খেলোয়াড়েরা চোখে মুখে মাশরুম আঁধার দেখে। চারখানা সৌরবাল্ব জ্বলতে থাকলেও ইস্পাতকঠিন মাকড়শার জাল হাতে আটকে যায়। যেন খেলতে দেবে না কিছুতে শিশিরপ্রেমিক মাঠ পাথরশক্ত হয়ে ওঠে অত্যন্ত রাগী প্লেয়ারের পদাঘাতে।
সে প্রো প্লেয়ার, দৌড়ে খেলেই বুড়ো শীতকে হারিয়েছে। তার ঘামে ভেজা উষ্ণ দেহ অবলোহিত আলোকে দেখতে পাওয়া পাখি, কালকেউটে চিনে রাখে।
পৌষের জমিনে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা বাঁশে কার পরিত্যক্ত হুডি, বছরের শেষ পূর্ণচন্দ্রের আলোয় ঘরে যাবার আগে নিয়ে যেতে ভুলো না।
কালো নেব্রা ও অপি শট নিতে সমর্থ সকলে চলে এসো অনুর্বর, ক্রীড়াঙ্গনে চাষ করে কৃষিসমাজের শস্য বুনে দিতে হবে।
জন্ম ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭। পড়াশোনা: বিজ্ঞান, মানবিক , ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য। প্রকাশিত কবিতার বই : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিসঅর্ডার [চৈতন্য , বইমেলা ২০২১]।