সোমবার, নভেম্বর ২৫

জেব্রা-দেবতা ও অন্যান্য কবিতা : পার্থজিৎ চন্দ

0

Motif-01

জেব্রা-দেবতা


প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। তবু মনে হয় দুর্গে বর্শার অপেক্ষা আছে; অনুকূল তামস-প্রহরে— কেন ভাব জার্মিনেট আলোর লেফাফা— সেই ভীরু অন্নদা’র পত্র আসবে। প্রথম বর্ণের পর যার হাত কেঁপে গেছে, সারারাত সে শুধু লিখেছে ভুষোকালি-মাখা বিন্দুবৎ নাদ। অনতিক্রম টিলার ওপর রহস্যের হাজারদুয়ারি। যাকে নিরক্ষর ভেবে ম্যালিগন্যান্ট-ওয়ার্ড পার হয়ে গেছ… দেখেছ ডাক্তারের উজ্জ্বল কব্জি, রোম, ঘুরে চলা কাঁটার সন্ত্রাস… বহুদিন আগে সে ললাটলিখন পাঠ সমাপ্ত করেছে। তবু বৃষ্টিদুপুরে দুর্গে নিয়তির ঘুম নেমে আসে… আঙুলে আঙুল জড়িয়ে থাকো সন্তানের মতো, নির্ভরতা চাও। দেখ ঘোড়া ছোটে প্রান্তরে, আজারবাইজানে। ক্ষিপ্র জার্ক। আমাকে ঘুমের মধ্যে রেখে যে স্বপ্ন দেখেছ সেখান জেব্রা-ক্রসিং… মুণ্ডকাটা বিশ্বস্ত প্রহরী ফটকে পাহারারত… স্কুল ছুটি হলো। তার বাচ্চা হাসিমুখে রাস্তা পেরোয়। জেব্রা-দেবতার মতো নিষিদ্ধ ঈশ্বর দেখে থমকে দাঁড়ায়…


ভাস্কর


নিজেকে বিলুপ্ত ভাস্কর ভেবেছি, ভোরবেলা দেহ ফিরে পাই; ফিরে আসি পাথর পার্বতীর কাছে। কয়লাকুঠির দেশে, দূরে, মাটি ফুঁড়ে আগুন আকাশের দিকে জিভ মেলে আছে। তৃষাতুর। পাথরের পেট কেটে (রক্ত-রস মাখা) তাকে রৌদ্রে রেখেছিলাম। কেউ দেখুক, না-দেখুক, আমি জানি সে পেটের হাঁ-মুখ জুড়বে না কোনো দিন। ভিতরে শায়িত থাকবে শূন্যতার পাথর-পার্বতী। কোনো কোনো বৃষ্টিদুপুরে নীলকণ্ঠ স্তনবৃন্ত ঠুকরে চলবে; শূন্যের ভেতর থেকে ছড়িয়ে পড়বে যে আর্তনাদ, তাও পাথরের


অর্ধনারীশ্বর


শান্তি দিয়েছিল, হকুসাই। প্রিন্টেড টি-শার্ট। ইউনিসেক্স; হ্যাঙ্গারে ঝোলানো। ওই পেরেক ও ড্রিল-মেশিনের সঙ্গে একাত্ম করি ড্রাগন-মুখের অপার রহস্য। মুঠো করে ধরি স্বর্ণসিন্দূর। মেঝেতে যে রোদ, চূর্ণ দিব্যরস… ওই টি-শার্ট পরেছে আজ অর্ধনারীশ্বর


মায়ারক্ত


আজ খুলে দেব সব। গণকবরের পাশে মাটি যেভাবে ভেজাতে আসে স্প্রিংকলার
বহু বছরের পর মাদার তেরেসার মতো রোদ কেঁপে ওঠে।
বাঁশি বাজিয়েছে যে ঠোঁটের লাল-বর্ণ বিশাল দুপুর, খুলে দিয়েছিল
নরম তিতির, মাউন্ট ফুজির থেকে দূরে সরীসৃপ ঢেউ
পানকৌড়ি বসে স্বচ্ছ জলের মায়ায়। তার নাভি
আজ লক্ষ করি, লক্ষ করি প্রবল অতৃপ্ত কেউ
বারবার নেমে যাচ্ছে জলের ভেতর। যে আহার
আড়ালে সম্পন্ন, যে আহার মাংসের থেকে স্নেহ
পৃথক করবার, তাকে নমস্কার করি সমস্ত শরীর দিয়ে
আর উঠে দেখি জলের ছায়ায় (খুব আলতো খুলে দেবো ভেবে), তবু
আমার দু’খানা ডানা কাঁচারক্তে মায়ারক্তে তীব্র ভেসে যায়


বিকেল


তেজস্ক্রিয় খেতে প্রথম রোমশ, তুলতুলে… তাকে আহত কোরো না। চের্নোবিল। তুমি আর আমি জানি পুস্তক মুখ্যত শিশ্নপায়ুমুখময় জটিল মেশিন। সহস্র আরব্যরজনীর থেকেও বেশি ছড়িয়ে রয়েছে স্তব্ধতার সন্ত্রাস। একটি বিকেল তবু বিকেলের মতো হয়ে উঠতে চায়, গায়ে তার জড়ানো তারের কাঁটা… ছাদকে শূন্য করে ফিরে গেছে জামাকাপড়ের সার। পল ক্লি’র পাখিগুলি সে তারে বসছে এসে, চিৎকারে ভরিয়ে দিচ্ছে। বাড়ি ভুল করে ঝাঁকড়াচুলের ছেলে একবার ঢুকে গেট বন্ধ করে ফিরে গেল একা। তাকে তুমি ভাত মেখে খাইয়ে দিচ্ছ, হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছো…

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ শূন্য দশকের প্রথম দিকে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ছদ্মনকশা ও প্রসাদের গান’ প্রকাশিত হয়েছিল ‘কৃত্তিবাস’ থেকে। তারপর একাদিক্রমে প্রকাশিত হয়েছে ‘মেষপালকের ডায়েরি’, ‘বালিঝড় ও কেবিন বয়’, ‘ধান্যলক্ষ্মী’, ‘ক্যাসিনোয় লেখা কবিতা’, ‘বাংলা, পর্ণশবরী’, ‘দূরগামী আলোর শরীর’, ‘মেফিস্টফেলিস ও নরসুন্দর’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে গল্প গ্রন্থ ‘আটলান্টিক ও অক্টোপাস’। প্রকাশিত প্রবন্ধ-গ্রন্থের সংখ্যা দুই। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। প্রিয় বিনোদন গান শোনা ও ছবি দেখা।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।