১০
একটি নক্ষত্র জেগে উঠে, ধুলোকাদায় ফিরে আসে। আর দূরের সন্ধ্যাটিকে ঢেকে দিয়ে যায় ঘণ্টাধ্বনি। এখন, আবছা অন্ধকারে, মিলিয়ে গিয়েছে তটরেখা। পুরনো কোঠাবাড়ি থেকে আলো জাগছে।
কোথাও পানাভরা পুকুরের মতো বিষণ্ণতায় ডাকছে কি একটা নাম না জানা পাখি। আমি শুধু দু’হাত মেলে বসে আছি। এক ফোঁটা বৃষ্টি, তাঁর শঙ্খলতা শাঁখা চুইয়ে নেমে আসছে।
১১
একটা খঞ্জনা পাখির গান, ছায়া গাঁথা ঝোপের অন্ধকার ছেয়ে নেমে আসছে। তুমি— কোন সুদূরের পথ চেয়ে বসে আছো। শান্ত, নিবিড় রাত্রি। আর, গাছ ভরা জোনাকির চুমকি বোনা।
কোথাও এক ফোঁটা জল, বন-চালতার শাখা থেকে ঝরে পড়লো— নৈঃশব্দের গহন থেকে জাগছে সুর!
১২
অন্ধকারের পারে আলো জাগছে, কার অঞ্জলি ভরে; কত দিন— কত দীর্ঘ হাহাকার— মাঠের ওপার থেকে সরে যায় দুটি ছায়া— ঘৃতকুমারির—
তথাপি, ঐ নিশাছন্ন হরিনাম— ঐ গাছের বাঁকল থেকে খসে পড়া মর্মরধ্বনি— গড়ে তোলে যে সুর— সমস্ত সন্ধ্যা ভরে, নিচু গলায়— তুমি, একবার তার পাশে বসো— দুখের প্রদীপখানি জ্বেলে দিয়ে যাও।
১৩
বিকেলের দিকে রোদ্দুর গড়িয়ে নামে এইখানে। কোথাও হাওয়ায় কাঁপে জল ভরা দীঘি। ঘন মেঘান্ধকার স্তব্ধ আকাশের তলে, আমি শেষ বেলার সিঁদুরে আলোর আভাসটুকু পাই—
মরা বাতাস। বেণুবীথি ঘুমিয়ে পড়েছে—আকাশপিদিম জ্বেলে। কি একটা গাছের শ্যাম ছায়া, অতি ধীরে, এখন আন্দোলিত।
১৪
এইসব মুছে যাবে জানি। ঝুরি নামা পথের ওপর বাঁকা রোদ্দুর লেগে আছে। হয়তো কিছু পরে, মাটির প্রদীপ হাতে কেউ এসে দাঁড়াবে তুলসী তলায়— মা’র কথা মনে পড়ে!—
বড়ো পাকুড় গাছটার কাছে, কবেকার ফেলে যাওয়া বাসনকোসন— ছেঁড়া দেবতার ছবি— আর কোথাও কেউ নেই— এক ফোঁটা অশ্রু, কবেই ঝরে, শুকিয়ে গিয়েছে দূর্বাঘাসের দলে!
জন্ম ৮ ডিসেম্বর ১৯৮৮; কৃষ্ণনগর, খুলনা। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। পেশায় শিক্ষক।
প্রকাশিত বই : ডাকিনীলোক [কবিতা, চৈতন্য, ২০১৬], অহম ও অশ্রুমঞ্জরি [কবিতা, অগ্রদূত, ২০১৮], নিঃসঙ্গ কেতকীর মতো [কবিতা, বিদুর, ২০২১]
ই-মেইল : anupamsoc@gmail.com