‘তো কবি প্রেমিক পুরুষটির প্রেম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর প্রেমিকা নারীটি ভয়াবহ রকম লাবণ্য হারাতে শুরু করল। সে দেখল আয়নায় আর তার প্রতিবিম্ব দেখা যায় না’— আন্দ্রেই এইভাবেই তার গল্পটি শুরু করেছিলেন। আর বলছিলেন, গল্পটি শেষ হবে শিম ফুলের রঙে। বিশেষত শিম ফুল ভালো লাগে। তাই পূর্ণ মনোযোগ দিয়েই তার গল্পটি শুনছিলাম। আন্দ্রেই বললেন, ‘শিম একটি দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। আর তার ফুল দেখতে যোনির মতো। সে ফুলে কালো ভোমরা বসতে পছন্দ করে।’ এই বলে আন্দ্রেই থামলেন। তখন দুপুর ফুরিয়ে যাচ্ছিল। নারকেল পাতার ফাঁক গলে সূর্যের আলো কোথাও কোথাও নকশা তুলছিল। সেই দিকে চোখ রেখে আন্দ্রেই জানতে চাইলেন, আমি আদতে এই গল্পটি শুনতে চাই কি না। তাকে নিশ্চিত করলাম, গল্পটি শোনার জন্যই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। মুহূর্তকাল তিনি চুপ করে রইলেন। যদিও মুহূর্ত বলতে দু দণ্ড অর্থাৎ ৪৮ মিনিট কিন্তু আমার মুহূর্ত ব্যবহার করি অল্প সময় বোঝাতে। যা হয় আর কি! মানুষের ব্যবহারে শব্দের অর্থ পাল্টে যেতে থাকে। যাই হোক, আন্দ্রেই বললেন, আসো আমরা গল্পে ফিরে যাই। এই বলে, তিনি আমাকে গল্পের দিকে টেনে নিলেন। তার শাদা আস্তিন থেকে আসছিল মিট্টি আতরের সুবাস।
তখন দুপুর ফুরিয়ে যাচ্ছিল। নারকেল পাতার ফাঁক গলে সূর্যের আলো কোথাও কোথাও নকশা তুলছিল। সেই দিকে চোখ রেখে আন্দ্রেই জানতে চাইলেন, আমি আদতে এই গল্পটি শুনতে চাই কি না।
২.
গল্পের নারীটি গল্পের সূচনাতেই একটা শাড়ি জড়িয়ে রেখেছিল অঙ্গে। আর ভীষণ বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিল সে। এই শুনে, জানতে চাইলাম, আমরা কি ভিজে শাড়ির নারীটিকে ভিজে রেখেই গল্পে বসবাস করতে থাকব, নাকি কোথাও নারীটিকে একটু আড়াল দিয়ে ভেজা শাড়িটা পাল্টে দেয়ার সুযোগ দেব? আন্দ্রে বললেন, নারীটি যখন একটা তোয়ালে জড়িয়ে তার দীঘল চুল মুছতে থাকবে, তখন তুমি কোথায় চোখ রাখতে চাও? ঠিক কোন অ্যাঙ্গেল থেকে তুমি তাকে দেখে ফেলতে চাও?
আন্দ্রেইয়ের এমন প্রশ্নে আমি দ্বিধান্বিত হই। ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, কোথা থেকে দাঁড়িয়ে আমি গল্পের নারীটির দিকে চোখ রাখব। একবার মনে হলো, একটা খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখব ঘরের ভেতর নারীটি তার ভেজা চুল মুছে নিচ্ছে। আর ঠিক তখনই মনে হলো, বাইরে তো বেজায় বৃষ্টি! বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার ভয়ে আমি জানালা ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালাম। আর মনে হলো, ধুর! নারীটির দীঘল চুল মোছার দৃশ্যটা দেখা হলো না। তারপর মনে হলো, থাক, এর চেয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে বিছানায় পা তুলে খাটে হেলান দিয়ে বসে দেখব, মেয়েটি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ডান দিকে ঈষৎ বেঁকে গিয়ে ভেজা দীঘল চুল মুছে নিচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে নারীটি বাহির দেখছে। পেছন থেকে দেখছিলাম, আর দারুণ আকর্ষণ আমাকে টেনে নিচ্ছিল নারীটির দিকে। সে চুল মুছতে মুছতে হঠাৎ সোজা হয়ে জানালা দিয়ে দৃষ্টি রেখে স্থির দাঁড়িয়ে গেল। আমি উঁকি দিয়ে দেখলাম, জানালার ওপাশে আন্দ্রেই ভারী বৃষ্টিতে ভিজে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে তাকিয়ে আছে মেয়েটির চোখে।
দৃশ্য মুছে আমি জানতে চাইলাম, এটা কী ঠিক হলো?
আন্দ্রেই পাল্টা প্রশ্ন করলেন, আমার কী দোষ?
আমি বললাম, হাহ! জানালা দিয়ে আপনি গোপনে এভাবে একটা মেয়ের চুল মোছার দৃশ্য দেখতে পারেন না।
আন্দ্রেই বললেন, আমি তো নারীটিকে ঘরেই তুলিনি কখনও। একটা অরণ্যে ভিজে যাচ্ছিল সে। তুমিই তো প্রথমে তাকে আড়ালে টানলে, তারপর ঘরে তুলে ফেললে। আমি তো অরণ্যেই ছিলাম।
মেয়েটি জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ডান দিকে ঈষৎ বেঁকে গিয়ে ভেজা দীঘল চুল মুছে নিচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে নারীটি বাহির দেখছে। পেছন থেকে দেখছিলাম, আর দারুণ আকর্ষণ আমাকে টেনে নিচ্ছিল নারীটির দিকে। সে চুল মুছতে মুছতে হঠাৎ সোজা হয়ে জানালা দিয়ে দৃষ্টি রেখে স্থির দাঁড়িয়ে গেল। আমি উঁকি দিয়ে দেখলাম, জানালার ওপাশে আন্দ্রেই ভারী বৃষ্টিতে ভিজে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে তাকিয়ে আছে মেয়েটির চোখে।
৩.
আমি জানতে চাইলাম গল্পের পুরুষ, যে কিনা কবি, তার কথা। আন্দ্রেই বললেন, কবিটি একটা কবিতার ভেতর ডুবে আছে। কবিতাটি রচিত হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। জানালা দিয়ে সবে এসে ঢুকেছে সকালের রোদ। একটা কফিমগ থেকে উবে যাচ্ছে বাষ্পের ধোঁয়া। এই বলে আন্দ্রেই জানতে চাইলেন, এখন আমি কোন ঋতু চাই। বললাম, একটা আরামদায়ক শীতকাল হলেই ভালো। ফলে আমি একটা চাদর গায়ে দিয়ে সে দৃশ্যের ভেতর ঢুকে গেলাম। টেবিলে রাখা একটা ঝুড়িতে বেশ কয়েকটি কমলালেবুর গায়ে রোদ পড়ে উজ্জ্বল হয়ে আছে। একটা কমলা নিয়ে যখন ছিলতে যাব, তখন আন্দ্রেই বললেন, নাহ! ভীষণ গ্রীষ্মের দিন। সকালেই খা খা রোদে পুড়ে যাচ্ছে চারপাশ। বিদ্যুৎ নেই। এই শুনে আমি ঘেমে উঠলাম। গা থেকে টান দিয়ে চাদর ফেলে দিলাম। এমন অসহ্য গরমে চাদর গায়ে দিয়ে হাশফাঁস লাগছিল। কফিমগটা দূরে ঠেলে দিলাম। গরমের সকালে কফি মোটেই ভালো লাগবে বলে মনে হচ্ছিল না। বললাম, আন্দ্রেই প্লিজ, বিদ্যুৎটা দিয়ে দেন। আন্দ্রেই বললেন, ‘ঠিক আছে বিদ্যুৎ দিয়ে দিলাম। কিন্তু ঘরে তো কোনো ফ্যান বা এসি নাই। এই দিনদুপুরে শুধু শুধু এতো পাওয়ারের লাইট জ্বালিয়ে রেখেছ কেন?’ সত্যিই ভীষণ অসহ্যের এক সকালের ভেতর আটকে গিয়ে দমবন্ধ লাগছে। আমি বললাম, আন্দ্রেই প্লিজ আপনি আমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যান। আন্দ্রেই বললেন, ‘পুরুষটি একটা কবিতার ভেতর ডুবে আছে।’ আর আমি একটা শীতল জলের পুকুরে ক্রমেই ডুবে যেতে থাকলাম প্রশান্তিময় মৃত্যু জড়িয়ে জড়িয়ে।
৪.
আন্দ্রেই আমাকে টেনে তুললেন। কিছুক্ষণ গল্পটির পাশেই চুপচাপ শুয়ে থাকলাম। মিনিট দুই হবে। এরপর উঠে বসে আন্দ্রেইয়ের দিকে তাকালাম। তার স্থির দুটি চোখ। সেখানে কোনো ভাবাবেগ নেই। ভাষাহীন। আমি জানতে চাইলাম, আপনি এমন অনুভূতিহীন দুটি চোখ নিয়ে কীভাবে গল্প বলে যাচ্ছেন? আন্দ্রেই হাসলেন। ততক্ষণে দুপুর পড়ে গেছে। দীঘল হয়েছে নারকেল ছায়া। আমি আরও জানতে চাইলাম, ‘আপনি কী করে একজন নারীকে লাবণ্য হারিয়ে ফেলতে দিচ্ছেন? একজন কবির প্রেম থেকে বের হয়ে যাওয়ার অপরাধে আপনি তার সাথে আপনার ইচ্ছে মতো আচরণ করতে পারেন না। আপনি আসলে নারীকে সম্মান দিতেই জানেন না। আর কী করুণভাবে কবিতায় ডুবিয়ে আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছিলেন!’ এই শুনে আন্দ্রেই ফের আমাকে গল্পের দিকে টেনে নিলেন। বললেন, ‘তুমি আদতে তোমার বাইরে যেতে পারছো না। গল্পের খাতিরে তুমি একটু নিজের থেকে বের হয়ে আসো।’ আমি আমার থেকে বের হয়ে গেলাম। এমন শূন্য মনে হলো প্রথম! যেন ভেসে যাচ্ছি! সামলে নিলাম নিজেকে। দেখলাম গল্পের নারীটি একটি ভিড়ের ভেতর মিশে যাচ্ছে। আমিও ভিড় ঠেলে নারীটির কাছাকাছি যেতে চাইলাম। দেখলাম, সমস্ত পুরুষের ভিড় আদতে ওই নারীটিকে ঘিরেই। নারীটি দৌড়াচ্ছে আর হাসছে। যেখানেই পা ফেলছে সেখানেই ফুটে উঠছে লাল লাল পদ্ম। মনে হলো তার পা থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্তের মতো গাঢ় লাল আলতা। আন্দ্রেই আমাকে টেনে ভিড় থেকে নিয়ে আসলেন। ধমকের স্বরে বললেন, ‘সমস্যা কী তোমার?’ আমিও আশ্চর্য হলাম, সমস্যা কী? ‘বার বার কেন গল্প গলে তুমি নারীটির দিকে হেলে পড়ছো?’ জানতে চাইলেন আন্দ্রেই। গম্ভীর হয়ে বললাম, ‘শ্রোতা হিসেবে আমি যেকোনো দিকেই হেলে পড়তে পারি। এটা আমার স্বাধীনতা। আপনি এভাবে শাসন করতে পারেন না। একটা গল্প বলছেন ভেবে এতো বাহাদুরির কী আছে! আশ্চর্য!!’ আন্দ্রেই যা করেন, শুনে হাসলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি তাহলে নারীটিকে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছ? তুমি কি জানো, কবিটি আত্মহত্যা করেছে?’ বললাম, ‘কবির আত্মহত্যায় নারীটির কিছুই যায় আসে না। বরং সে এখন স্বাধীনতা অনুভব করছে।’
দেখলাম গল্পের নারীটি একটি ভিড়ের ভেতর মিশে যাচ্ছে। আমিও ভিড় ঠেলে নারীটির কাছাকাছি যেতে চাইলাম। দেখলাম, সমস্ত পুরুষের ভিড় আদতে ওই নারীটিকে ঘিরেই। নারীটি দৌড়াচ্ছে আর হাসছে। যেখানেই পা ফেলছে সেখানেই ফুটে উঠছে লাল লাল পদ্ম।
‘নিশ্চয়ই যায় আসে, যদি না আসতে যেত তাহলে সে স্বাধীনতা অনুভব করতে পারত না’– বললেন আন্দ্রেই। আমি দেখলাম– কথা ঠিক। বললাম, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনিই ঠিক।’ গল্পে ফিরে গেলাম ফের। কবিটি আত্মহত্যার পর নারীটি আর কাউকে প্রেম করতে পারছিল না। একজন গানওয়ালা, একজন চিত্রশিল্পী, একজন গল্পকথক আর একজন ভাঁড়ের সাথে একটা ক্যাফেতে বসে থাকতে দেখলাম তাকে। গানওয়ালার হাতে স্প্যানিশ গিটার, সে টুংটাং আওয়াজ তুলছিল। চিত্রশিল্পী ভাবলেশ ভঙ্গিতে তাকিয়ে ছিল মেয়েটির দিকে। ভাঁড় যা করে– মেয়েটিকে আকৃষ্ট করতে নিজেকে উজার করে দিচ্ছিল। চুপচাপ বসে ছিলেন, গল্পকথক। কোনো গল্পই বলছিল না। তার শাদা আস্তিন থেকে আসছিল মিট্টি আতরের সুবাস।
এবার আমি ক্ষেপে গেলাম। ‘আমাকে গল্প থেকে বের করে দিয়ে দিব্যি নিজেই গল্পের কেন্দ্রে বসে আছেন! এ কেমনতর কথা!’ চিৎকার করে জানতে চাইলাম আন্দ্রেইয়ের কাছে। আন্দ্রেই অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হেহ! তুমি নিজেই তো আমাকে টেনে গল্পের ভেতর নিয়ে এলে। তুমি কেন সেখানে গিয়ে বসতে পারছো না!’ বললাম, ‘আগে আপনি ঠিক হোন। একটু আগেই তো আপনি আমাকে গল্প থেকে বের করে দিলেন!’
আন্দ্রেই কোনো কথা না বলে গল্পে ঢুকে গেলেন। আমি পর্দার আড়াল থেকে চোখ রাখছিলাম। নারীটি একটা রাবার ব্যান্ড দিয়ে নিজের অবাধ্য চুলগুলোকে বেঁধে নিলো। তারপর পায়ের উপর পা তুলে কফির কাপটা ঠোঁটে লাগাল। চিত্রকরটি তাকিয়েই থাকল। চোখের পাতিও ফেলল না মুহূর্তের জন্য। লক্ষ্য করলাম আন্দ্রেই শুধু নারীটির দিকেই নয়, প্রতিটি চরিত্রের দিকেই চোখ রাখছেন। এমনকি পর্দার আড়ালে থাকা আমার চোখেও বেশ কয়েকবার চোখ পড়ল তার। মেয়েটির হৃদয় নিশ্চয়ই ভারী হয়ে আছে কবিটির জন্য– ভাবছিলাম আমি। একটা কবিতা লিখে বাতাসে তার সুঘ্রাণ ছড়িয়ে দেব কি না ভাবলাম আমি। ঠিক তখনই লক্ষ্য করলাম মেয়েটি গিটারের তালে তালে পা দোলাচ্ছে। আমি আন্দ্রেইকে গল্প থেকে বের করে নিয়ে আসলাম চুপচাপ। জিজ্ঞেস করলাম, কবিটিকে আপনি মেরে ফেললেন কেন? লাবণ্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করার পর নারীটি হয়তো তার ভুল বুঝতে পারত, সে হয়তো কবিটির কাছে ফিরে আসতে পারত। আপনি শুধু শুধু মাতবরি করে কবিটিকে মেরে ফেললেন! আন্দ্রেই বললেন, ‘নারীটির কাছ থেকে কবির জন্য তুমি কী আশা করছো? একবার রমনের পর কবি কি আর ফিরে তাকাবে? পৃথিবীর কোনো কিছুই কি আদতে কবিকে আকৃষ্ট করে?’ বললাম, কিন্তু আমি নারীটির প্রতি প্রেম অনুভব করছি। তার বিষণ্নতার পাশে আমাকে চুপচাপ বসে থাকতে দিন। তিনি আমাকে নারীটির কাছে নিয়ে গেলেন। দৃশ্য থেকে মুছে গেল ক্যাফে, ভাঁড়, চিত্রকর ও গানওয়ালা। অরণ্যে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিল। নারীটি শরীরে শাড়ি জড়িয়ে ভিজে যাচ্ছিল। আমি তার লাল চোখের কাছে চুপচাপ বসলাম। নারীটি ভিজে যেতে যেতে বলল, কবির প্রেমের সাথে আমার লাবণ্য কেন জড়িয়ে দিলে তোমরা? কেন তোমরা ভাবছ, কবির প্রেম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমি লাবণ্য হারাচ্ছি? কবিটিই কি লাবণ্যের বাইরে এসে আমাকে দেখতে না পেয়ে প্রেম হারিয়ে ফেলল না? আর শেষে বুঝতে পারল, সে কবি হিসেবে ব্যর্থ, সে আদতে কোথাও পৌঁছাতে পারছে না। চারপাশের সুন্দর কেড়ে নিয়ে থরে থরে সাজাচ্ছিল বটে, সে নিজেই তো সুন্দর হয়ে উঠতে পারল না!’ দেখলাম একটা গাছের আড়াল থেকে আন্দ্রেই তাকিয়ে আছেন।
৫.
এমন এক অস্বস্তিকর গল্পে আটকে গিয়ে খুব মন খারাপ লাগছিল। আন্দ্রেইয়ের প্রতি আমার সমস্ত শ্রদ্ধা উবে গেল। গল্প বলার ছলে একটি নারীকে ঘিরে আমার কবি সত্তাকে প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলে দিলেন তিনি। বললাম, এই কারণেই গল্পকারদের আমি বিশ্বাস করি না। ওরা গল্পের প্যাঁচে ফেলে যে কাউকেই দমবন্ধ করে মেরে ফেলতে পারে! আন্দ্রেই হাসলেন। বললেন, ‘তুমি সংশয়গ্রস্ত। এতো দ্বিধা তোমার ভেতর!’ এই শুনে প্রচণ্ড রেগে গেলাম আমি। চিৎকার করে বললাম, ‘ফাজিলের বাচ্চা। তুই জানোস কবি কী জিনিস! তেরো জনম লাগবে কবি হয়ে জন্মাতে! একটা ধিঙ্গি মাগীরে নিয়ে আসছোস আমার কাছে! তুই জানোস, আমি কাউকেই চুদি না!’
জন্ম বাংলাদেশে। প্রকাশিত গল্পের বই ‘আনোহাবৃক্ষের জ্যামিতি’।