ভূমিকা
নোবেলজয়ী মিশরীয় লেখক নাগিব মাহফুজ (পুরো নাম নাগিব মাহফুজ আবদেল আজিজ ইব্রাহিম আহমেদ আল-বাশা) আরবি সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁকে আধুনিক আরবি সাহিত্যের প্রাণপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্প লেখক, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচয়িতা এবং নাট্যকার। সুদীর্ঘ সত্তর বছরের সাহিত্যিক জীবনে তিনি ৩৫টি উপন্যাস, পাঁচটি নাটক, ২৫টি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এবং প্রায় ৩৫০টি ছোটোগল্প রচনা করেন, যা ষোলটি ছোটোগল্প সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। তবে ‘কায়রো ট্রিয়োলজি’র জন্য তিনি দেশ-বিদেশের পাঠকের কাছে সুপরিচিত। তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
নাগিব মাহফুজের মৃত্যু হয় ২০০৬ সালের ৩০ আগষ্ট, কায়রোতে। তাঁর মৃত্যুর বারো বছর পরে, অর্থাৎ ২০১৮ সালে, লেখকের স্বহস্তে লেখা গল্পের পাণ্ডুলিপি ড্রয়ারের ভেতর খুঁজে পাওয়া যায়। পাণ্ডুলিপি সুতোয় বাঁধা ছিল এবং সংযুক্ত লেবেলে লেখা ছিল ‘১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হবে।’ সেখানে ১৮টি গল্প ছিল এবং প্রতিটি গল্প লেখকের স্মৃতি বিজড়িত কায়রোর বিখ্যাত গামালিয়া মহল্লার বাসিন্দাদের ঘিরে রচিত হয়েছে। উল্লেখ্য, লেখকের অন্যান্য গল্প থেকে আয়তনে ছোটো। গল্পগুলো একই বছর আরবিতে প্রকাশিত হয় এবং পরের বছর (২০১৯ সালে) নাগিব মাহফুজের অন্যতম অনুবাদক রজার অ্যালেনের ইংরেজি অনুবাদে ‘দ্য কোয়ার্টার: স্টোরিজ বাই নাগিব মাহফুজ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থে ১৮টি গল্প ছাড়াও লেখকের স্বহস্তে লেখা মূল আরবি গল্পের স্ক্যান করা কপি এবং ১৯৮৮ সালের নোবেল পুরস্কার গ্রহণের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নিচে ‘দ্য কোয়ার্টার: স্টোরিজ বাই নাগিব মাহফুজ’ গল্প সংকলন থেকে তিনটি খুদে গল্প প্রকাশিত হলো। বলাবাহুল্য, গল্পগুলো আগে বাংলায় অনূদিত হয়নি। ইংরেজিতে গল্প তিনটি যথাক্রমে ‘আওয়ার ফাদার ইগওয়া’, ‘লেইট নাইট সিক্রেট’ এবং ‘তৌহিদা’ গল্পের অনুবাদ।
আমাদের পিতা ইগওয়া
তাঁর এই দীর্ঘ জীবনে বন্ধু-বান্ধব এবং সহকর্মী সবাই মারা গেছেন; তিনি বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মী ছাড়া বেঁচে আছেন। তার নাম ইগওয়া এবং তিনি বর্শা প্রস্তুতকারী। তাঁর ছেলেরাও মারা গেছে, শুধু আনওয়ার ছাড়া। আনওয়ারের বয়স আশি বছরের ওপর। তারা দুজন পুরোনো এক বাড়িতে ভাগাভাগি করে থাকেন। বাড়িটি ভূগর্ভস্থ জায়গা থেকে খুব দূরে নয়।
যাহোক, একই বাড়িতে বসবাস করার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে একটি শব্দও আদান-প্রদান করেননি; তাঁরা শুধু একজন আরেক জনের দিকে আগুন্তুকের মতো দৃষ্টি বিনিময় করতেন।
ইগওয়ার ছেলের পায়ে সমস্যা ছিল। কয়েক দিন পরপর তার হাঁটার প্রয়োজন হতো এবং তখন তিনি ভর দিয়ে হাঁটার জন্য কারোর শরণাপন্ন হতেন। সুতরাং ইগওয়া গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসতেন, তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেন এবং হাঁটার জন্য ভূগর্ভস্থ জায়গা থেকে তাঁকে ঝরনার কাছে নিয়ে যেতেন। সব সময় লোকজন বিস্ফারিত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে দেখত।
জীবনের দীর্ঘ সময় ইগওয়ার শরীরের মাংস, চর্বি, দাঁত, চোখের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির তিন-চতুর্থাংশ গ্রাস করতে সক্ষম হয়। তিনি এখনো খেতে পারেন, খাবার চিবুতে সক্ষম এবং লোকজনের চোখেমুখে হাসি ফোটাতে পারেন। এমনকি মাঝে মধ্যে লোকজনকে প্রচণ্ড রাগান্বিত ও ক্ষুব্ধ করতে পারেন।
‘তিনি এমন একজন, যিনি এত দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার মাধ্যমে যৌবনের সমস্ত সময়সীমা অতিক্রম করে নিজের মতো চলতে পারেন!’
পৈত্রিক সূত্র পাওয়া ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য নিলামের দিনটি তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।
শুরু হয়েছিল অসুস্থতার মধ্য দিয়ে, যা তাঁর ছেলে আনওয়ারকে বিছানায় বন্দি করে রেখেছিল।
নিলামে উপস্থিত হওয়া লোকজন আশ্চার্য্যান্বিত হয়েছিল যখন তারা দেখতে পেয়েছে ইগওয়া, বর্শা প্রস্তুতকারী, হাতে একটা ছোট্ট স্যুটকেস নিয়ে হাজির হয়েছেন।
মহল্লার প্রধান, যিনি জমির জন্য নিলামে দাম হাঁকাচ্ছিলেন, বিস্মিত দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে সংযত রাখতে পারেননি।
‘বিষয়টা কি ভালো হতো না,’ তিনি ইগওয়াকে বললেন, ‘যদি আপনি অসুস্থ ছেলের পাশে থাকতেন?’
‘আমি তাকে এমন একজনের কাছে রেখে এসেছি, যার অন্য কোনো কাজ নেই,’ ইগওয়ার বলিষ্ট কণ্ঠের জবাব।
‘আপনি কেন অন্য কারোর কাছে জমির দায়িত্ব দেননি?’ মহল্লার প্রধান রাগান্বিত স্বরে বললেন। ‘তাহলে সে এবং অন্য লোকজন লাভবান হতে পারত।’
‘আগামীকাল আমি একজন বাড়ি নির্মাণকারী ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করব,’ ইগওয়া বললেন। ‘আগামী এক বছর শেষ হওয়ার আগে, জমি থেকে লাভ করব এবং অন্য লোকজনও তাই করবে।’
শেষ রাতের গোপনীয়তা
সে ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে মহল্লায় ফিরে আসে। তখন মহল্লা নিঃশব্দে ঘুমিয়ে ছিল এবং লোকজনের চোখের পাতা শক্ত করে বন্ধ ছিল। সেই সময়ে রাতের অন্ধকারে যা কিছু দৃশ্যমান ছিল, তার মধ্যে একমাত্র তার দোলায়িত ছায়া দেখা গিয়েছে। সে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছিল যতক্ষণ না পর্যন্ত সে একটা খেতের মধ্যে প্রবেশ করে, যেখানে জাদুকরি সুগন্ধি ভেসে বেড়াচ্ছিল। কোথা থেকে সুবাস আসছিল? তার ইন্দ্রিয় তাকে প্রতিক্রিয়া জানাতে উত্তেজিত করেছে:
‘একজন মহিলার পথ অতিক্রম করার লক্ষণ, একদিক থেকে অন্য দিকে যাওয়ার সময় কোনো এক রমণীর রেখে যাওয়া চিহ্ন। রাতের এ সময়ে আমি কেন অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি? আমাকে শুধু আমার কম্পিত হৃদয় এবং অজানা ভাগ্য পরিচালিত করছে।’
তার হৃদয় পরিপূর্ণ করে ছিল সুগন্ধি। তাকে এতটাই রোমাঞ্চিত করেছিল যে, সেই ঘ্রাণে সে অভিভূত হয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য তার পা মাটিতে গেঁথে গিয়েছিল। কিন্তু একসময় সে শ্লথ গতিতে মহল্লার একদিক থেকে অন্য দিকে যাওয়া-আসা করছিল, যেন সে রাতের কোনো পাহারাদার। সে কি কয়েক মিনিট আগে এসেছে? সে হয়তো ভালো করে দেখেছে রাতের শেষ সময়ের বিরল দৃশ্য। হয়তো তার প্রাণবন্ত কল্পনা থেকে অনেক দূরের কোনো এক সাধারণ দৃশ্য।
তা সত্ত্বেও সে তখনো তার দুরন্ত চিন্তা অনুসরণ করার জন্য ঝুঁকে ছিল, যা সেই পরিবেশ থেকে দুঃসাহসিক কিছু একটা তৈরি করবে। সে আশা করেছিল যে, মহল্লায় কোনো গোপন কিছুর উদ্ঘাটন হবে এবং তা ধার্মিকতা ও ধার্মিকদের উপদেশে মোড়ানো থাকবে। সকাল অথবা সন্ধ্যায় যখনই কোনো মহিলা তার পাশ দিয়ে যায়, তখন সে মনে করে সুগন্ধির কথা এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর সে পুনরায় ঘ্রাণ শোঁকে।
তৌহিদা
আপনি যদি মূল চত্বর থেকে ডান দিকে আসেন, তাহলে শ্বেত বাড়িটি ভূগর্ভস্থ জায়গার দুই বাড়ির আগে অবস্থিত। বাড়ির নামটি গ্রহণ করা হয়েছিল, কারণ বাড়ির বাসিন্দাদের গায়ের চামড়ার রং ছিল সাদা।
তৌহিদা, আপনি ছিলেন শ্বেত বাড়ির মুকুট রত্ন। প্রশংসা একজনের, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সবচেয়ে সুন্দর অবয়ব দিয়েছেন। আপনার সৌন্দর্য ছিল অতুলনীয়, যদিও আমার কল্পনায় বেঁচে থাকা আপনার সৌন্দর্যের অবশিষ্টাংশ আমার আসল স্মৃতির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণবন্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা শুধু দূর থেকে শ্বেত বাড়ির পরিবারের সদস্যদের চিনতাম। তবে তৌহিদা ছিল সৃষ্টিকর্তার অনন্য সৃষ্টি। তিনি বিয়ের পরে আমাদের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমরা তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে চিনতে পেরেছি এবং তাঁর অনেক গুণাবলীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনেছি। যদিও তখন আমি ছিলাম খুবই ছোটো। আমি তাঁর গোলাপি গায়ের রং, কালো চুল এবং মিষ্টি-মধুর কণ্ঠস্বরের জন্য রীতিমতো নেশাগ্রস্ত ছিলাম। আমরা খুশি মনে তাঁকে অনুকরণ করতাম। প্রথমে আমরা সতর্কভাবে শ্রদ্ধার সঙ্গে আচরণ করেছি, কিন্তু শীঘ্রই আমাদের জন্য পথ সহজ হয়ে যায়। তাঁর লজ্জাবতী গালে যেন এক ধরণের আভা ছড়িয়ে পড়ত। আসলে তাঁর ছিল সত্যিকারের সরলতা। তিনি ছিলেন মনোরমা, দয়ালু এবং সুখী। আমাদের মধ্যে কেউ কখনো ভুলিনি যে, প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে একটা গাড়ি এসে তাঁকে ইউরোপিয়ান স্কুলে নিয়ে যেত। সেই সময়ে মহল্লার প্রত্যেকেই বলাবলি করত যে, তিনি ইউরোপীয়, এমন কিছু যা মহল্লায় ছিল নতুন, রোমাঞ্চকর এবং উত্তেজক—নিঃসন্দেহে দম্ভ করার মতো কিছু ছিল। যাহোক, তিনি এখন আমাদের সঙ্গে বাস করেন, ইংরেজি এবং ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলেন এবং অত্যাধুনিক ফ্যাশনের পোশাক পরিধান করেন। তিনি দেকার্ত¹-এর ধারণাগুলো বলে দিতে পারতেন, বোদলেয়ার²-এর কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং স্মৃতি থেকে বিটোভেন³-এর সুরে পিয়ানো বাজাতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু তাঁর এসব গুণাবলী আমাদের ঈর্ষান্বিত করেনি, কারণ তিনি ছিলেন শ্বাসরুদ্ধকর অতি সুন্দরী, সব সময় হাসি-খুশি থাকতেন এবং যখন-তখন আমাদের গল্প শোনানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এ সবকিছু ছাড়াও তিনি তাঁর আকর্ষণীয় বিভিন্ন দিক আমাদের সম্মুখে তুলে ধরেছেন: সুন্দরী তৌহিদা ছিলেন মুনিরা, আবদ আল-হাই এবং সাইয়্যেদ দারবিশের সুললিত কণ্ঠের ভক্ত। তিনি ‘মুনলাইট সোনাটা’ বাজাতে পারতেন, এমনকি ‘তিনি জেগে উঠেছেন এবং তার আলো কত সুন্দর!’ গানটি গাইতেও পারতেন। তিনি সাকী এবং হাফিজের কবিতার কিছু অংশ মনে রাখতে পারতেন। তবে তারচেয়েও উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল তিনি নামাজ কায়েম করা ও রমজান মাসে রোজা রাখার প্রতি অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন এবং বিখ্যাত আবৃত্তিকারদের, যেমন আলি মাহমুদ এবং নাদা, শোনার জন্য আগ্রহী ছিলেন। তবে আরও বিস্ময়কর বিষয় ছিল যে, তিনি উম্ম রুকাইয়ার কাজে সহযোগিতা করতেন।
‘আমাকে বলো, আমাদের কাছে কোন কোন দিন গোপন থাকে,’ তিনি জানতে চাইতেন।
মহল্লায় কাটানো অতীত দিনের স্মৃতি বিজড়িত বিটোভেন, দেকার্ত কিংবা বোদলেয়ার তাঁর হৃদয় থেকে কেড়ে নিতে পারেননি। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন আগরবাতির ঘ্রাণ ও ভবিষ্যদ্বাণী বলার লোকদের এবং আমাদের মহল্লার ভূগর্ভস্থ জায়গার ওপরে স্থাপিত পুরোনো দূর্গে শয়তানের অস্তিত্ব।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিবার বিভিন্ন অংশে আলাদা হয়ে যায় এবং আমরা চলে গেছি এমন জায়গায়, যা আমাদের জন্য উপযুক্ত ছিল। তিনি জামালেক এলাকায় চলে যান। পরে তিনি কিছু সময় বিদেশে ছিলেন এবং এক সময় ফিরে আসেন। তিনি মা হয়েছেন এবং তারপর দাদী-নানী হয়েছেন। অনেক বছর আমি তাঁকে দেখিনি। যাহোক, আমার সঙ্গে তাঁর যৌবনকালের স্মৃতিগুলো আমি ধরে রেখেছি, যখন সুখ ও আনন্দ, সৌন্দর্য এবং মন কাড়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো এক সঙ্গে তাঁর মধ্যে বিরাজ করেছিল।
আমি হোটেল আঁরনোর পাশের গলিতে বসেছিলাম এবং দূর-পানে ভূমধ্য সাগরের পাশের রাস্তার দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার সম্মুখে এসে একটা গাড়ি থামে এবং চালকের পাশে বসা একজন বৃদ্ধ মহিলাকে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়ান। আমি তাকে চিনতে পারিনি। তার মুখমণ্ডল এমন ছিল, যা বার্ধক্যের চিহ্ন হতে পারে: গাঢ়, ফ্যাকাশে, পাতলা এবং বলিরেখাযুক্ত। তাঁর চোখে ছিল কালো চশমা।
‘আমাকে চিনতে পারো না?’ তিনি জিজ্ঞেস করেন, যখন তিনি দেখলেন যে আমি বিস্মিত এবং হতবাক।
আমি আবার সেই মধুর কণ্ঠ শুনতে পেলাম এবং তখনই আমার কাছে সুগন্ধি বোতল মাটিতে পড়ার মতো দ্রুত অতীত ফিরে আসে।
আমি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবে ফিরে আসি। আমি বিস্মিত এবং স্মৃতিকাতর। আমরা কুশলাদি বিনিময় করি এবং আমি সবচেয়ে দূরবর্তী স্মৃতির গভীরে তলিয়ে যাই।
‘যদি তুমি আমাকে চিনতে না পারো,’ তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘তাহলে সেটা কিন্তু আমার দোষ নয়।’
পাদটীকা [মূল গল্পে নেই, তবে পাঠকদের সুবিধার্থে দেওয়া হলো—অনুবাদক]
১. রেনে দেকার্ত (১৫৯৬-১৬৫০) ছিলেন একজন ফরাসি গণিতবিদ, বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক, যিনি ব্যাপকভাবে আধুনিক দর্শন ও বিজ্ঞানের উত্থানে একটি মৌলিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন।
২. শার্ল-পিয়্যের বোদলেয়ার (১৮২১-১৮৬৭) ছিলেন ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম কবি ও অনুবাদক। তিনি প্রাবন্ধিক ও শিল্প-সমালোচক হিসেবেও যথেষ্ঠ পরিচিত। তার অন্যতম বিখ্যাত কবিতা ‘ক্লেদাক্ত কুসুম’(‘লে ফ্ল্যর দু মাল’), যা বাংলায় অনুবাদ করেছেন বুদ্ধদেব বসু।
৩. লুডভিগ ভ্যান বিটোভেন (১৭৭০-১৮২৭) ছিলেন একজন জার্মান সুরকার এবং পিয়ানোবাদক। তিনি পাশ্চাত্য সংগীতের ইতিহাসে সর্বাধিক প্রশংসিত সুরকারদের মধ্যে একজন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, সংগীত বিনোদন নয়, বরং শিল্প এবং এর মাধ্যমে ভাবনা ও অনুভূতির প্রকাশ ঘটানো যায়।
গল্পকার, ছড়াকার এবং অনুবাদক। লেখালেখির শুরু সত্তরের মাঝামাঝি। ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতায়, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তার মৌলিক এবং অনুবাদ গল্প। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে দুটি গল্পের সংকলন, চন্দ্রপুকুর (২০০৮) ও কতটা পথ পেরোলে তবে (২০১০)। এছাড়া, তার অনুবাদে আফগানিস্তানের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০১৩), নির্বাচিত নোবেল বিজয়ীদের সেরা গল্প (২০১৩), ইরানের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০১৪), চীনের শ্রেষ্ঠ গল্প ও নির্বাচিত ম্যান বুকার বিজয়ীদের সেরা গল্প ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে।