নিঃসঙ্গতার পশ্চিমে শিখা
নিঃসঙ্গতার পশ্চিমে শিখা… বাস্তবেও তাই৷
কথাবস্তু কপিলাবস্তুর মতো গ্রাম, নিষ্কম্প প্রদীপ…
বিসর্গহীন স্বর্গ রক্ষা করে বৌদ্ধিক মনন৷
শুদ্ধতার দিকে যাত্রা৷ সহায়তা প্রেম নয়?
শুধু একবার মেঘভার বক্ষে নিয়ে
তোমাকে বিজনে দেবো দৃষ্টি
অতর্কিতে বৃষ্টি হও৷
সেই হোক সত্য আলোলিকা৷
ভালোবাসা এই— নিঃসঙ্গতার পশ্চিমে শিখা…
চৈত্রের ম্যুরাল
সকাল থেকেই শুরু মেঘে-মেঘে বহ্নিমান শিখা৷
চৈত্রমাস, গাজনাদি, সোমবারে বোমভোলা মন৷
বার-ব্রত, অতশত আমি কি বুঝেছি নিবেদন?
যে-তুমি ধ্যানের মতো, কপালে গাথার জয়টিকা৷
অন্ধকারে, দীপালোকে নির্নিমেষ জেগে আছে আয়ু৷
তোমার দুচোখে আঁখি পাখিগান, বিমুগ্ধ উড়াল…
ডানায় রৌদ্রের গন্ধ, ঝিকিমিকি, অলচিকি স্নায়ু
অরণ্যের অধিবাসে বাস্তবিক চৈত্রের ম্যুরাল৷
অথচ মৌরির ঘ্রাণে হরিদ্রাভ সেই তুমি তুক
কৌতুকে কাহিল করো, করুণ-শঙ্খের মতো, ধ্রুব৷
প্রথম আল্পনা, স্মৃতি— সে এক অচিন্ত্যনীয় সুখ
সারল্যে বিভোর, শান্ত, ফলে-ফুলে বাসন্তিক, শুভ৷
চৈত্রের চাতালে বসে উন্মাতাল ঝড়ে-জলে একা
বজ্রের নির্ঘোষ শুনি, মেঘে-মেঘে ভেসে যায় লেখা…
খুশি, খুশি…
খুশি, খুশি— তুমি যে মুহূর্তে শিখা সহজেই বুঝি৷
দীর্ঘ অদর্শনে শীতলতা— এই শীত নিয়ে এলো খুব৷
তোমাকে কল্পনা করে কিছু লেখা— সাধ্যাতীত পুঁজি
আমার যে নেই, জানো, বাগিচায় গোলাপের রূপ
শিশিরের মুগ্ধতায় উদ্ভাসিত— কাঁটার প্রণয়…
রৌদ্র জানে, ছায়া জানে— আর সেই শিহরিত হাওয়া
তাপের প্রবাহে আজও উজ্জ্বীবিত— তা ভোলার নয়
শৈত্য-বৈপরিত্য ভুলে, সুরোত্তম—এই চাওয়া-পাওয়া৷
খুশি, খুশি— আসলে সে-অভিপ্রায়, ব্যথার নিবিড়
দীপের সামনে স্থির— আলোকিত মূক-উচ্চারণ
শিখায় আনত, ওই অন্ধকার, তারাদের ভিড়
ইশারায় ডাকে, ঈশা— স্পর্শাতুর শতভিষা-মন
এখনও হারায়— শৈত্যে, দ্বৈতা-ভাবে, দয়িতা-আঁধারে…
তুমি কি আসবে এই পাতা-ঝরা বৃক্ষটির দ্বারে?
অত্যাশ্চর্য প্রেমে…
শিখা কি খুশির মতো অফুরান পলাশের ঘোর?
চৈত্র-সম্বলিত চিত্রে তাকে যে বাঁধবো স্মৃতি-ফ্রেমে
তেমন দুরূহ-ইচ্ছা প্রীতি কই? মন বেসামাল৷
কতবার ছুটে গিয়ে অধরার কাছে হাতজোড়…
তথাপি ভাঙেনি মান৷ বিরহ, কুসুম-কারাগার৷
আহত-বেদনা বোধে কেঁদে ওঠে রোদের নূপুর…
কেউ তো জানে না— এই স্তব্ধনীলনম্র পাড়া-গাঁ-র
হৃদয়ে তুমুল ঢেউ— বসে আছে কবিতাদুপুর৷
চৈত্র-সম্বলিত চিত্রে তাকে আজ পলাশের ফ্রেমে
আবদ্ধ করেছি৷ মন, এইভাবে অত্যাশ্চর্য প্রেমে…
শিখা
শিখা, একমাত্র ধ্যান৷ প্রজ্জ্বলিত, নিবিড় আঁধারে৷
মনে মনে অপূর্ব লালন৷ সুদূরে অযোধ্যানাথ,
যোদ্ধাবেশে আমি তার অস্তগামী পশ্চিমের দ্বারে
প্রশস্ত হৃদয়ে বসে আছি৷ মূর্ত, মুহূর্ত সাক্ষাৎ
সবই হলো কৃপাভরে৷ দস্তখত, আদেশনামার
শপথে রঙিন হলো ভালোবাসা— শ্বেত পারাবত…
এমন স্বপ্নের কাছে, প্রতিদিন হৃদয় আমার
শ্রদ্ধাবোধে বিকশিত, খুঁজে নেয় কবিতার পথ৷
শিখা, শিখি— অন্তরাল, মধ্যিখানে কী জানি ময়ূর
মেঘদেশে হানা দেয়, বজ্রগর্ভ, ধারা-বরষার…
এটুকু বিরহ মানি৷ রূপাতীত কঙ্কণ-কেয়ূর
রিনিঝিনি সুর তোলে, সুদক্ষিণা, আশা-ভরসার
দীপের সারথি, শিখা, খুশি হয়ে অন্ধকারে ঝরে৷
কম্পমান বুকে তুমি ঝড় তুলে এতদিন পরে…
জন্ম ১৮ অক্টোবর ১৯৬৩। পেশায় শিক্ষক৷ সম্পাদিত কবিতাপত্র: সাদা পালক। শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে পেয়েছেন ‘নয়ন’ পুরস্কার৷ প্রকাশিত কবিতার বই: ‘সাদা পাতার শোলোক’, ‘আত্মার সাক্ষাৎকার’, ‘অনন্তের গান’ ইত্যাদি৷