বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

পাখিরোষ-এ আমি না পাওয়া কথাগুলোকে পূণর্ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছি : আশরাফ জুয়েল

0

পাখিরোষ-এ নবত্ব আছে, আছে মৌন দ্রোহ, যা যেকোনো সময় হতে পারে মুক্তির কাঙ্ক্ষিত আরক। মানুষ মাত্রই স্বাধীনতাপ্রিয়। কিন্তু চাইলেই কী স্বাধীনতা অর্জন করা যায়? যদিও বা আকাঙ্ক্ষা—শ্রম-ঘ্রাণ—স্বপ্ন—জীবনের বিনিময়ে তা অর্জন করাও যায়, অর্জিত সেই স্বাধীনতা রক্ষা করা খুবই কঠিন। না, এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ড বা মানচিত্রের কাটাছেঁড়া করে রাষ্ট্র নামক যে কাঠামো আমরা তৈরি করি আমি সেই স্বাধীনতার কথা বলছি না।


Pakhirosh

পাখিরোষ | আফরাফ জুয়েল | প্রকরণ : ছোটোগল্প | প্রচ্ছদ : তাইফ আদনান | প্রকাশক : ঐতিহ্য | মূল্য: ১৮০ টাকা | বইটি কিনতে এখানে ক্লিক করুন


আমি বলছি, আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার কথা, আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সাথে আমার নিরাপত্তার কথা! পাখিরোষ-এ আমি সেইসব না পাওয়া কথাগুলোকে পুনর্ব্যাখ্যা বা পূণর্ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছি। এমনটা নয় যে ‘পাখিরোষ’ ব্যতীত আমাদের আকাঙ্ক্ষার কথা, আমাদের বঞ্চনার কথা বা ওগুলো থেকে উত্তরণের কথা আগে কেউ বলেনি বা বলবে না, বলেছে এবং বলবে। কিন্তু এই যে এতোক্ষণ আমরা/আমাদের বললাম, সেই আমরা/আমাদের মধ্যে আমিও একজন, হতে পারি আমি তথাকথিত শিক্ষিত, হতে পারি সমাজের উঁচু স্তরের কেউ একজন— কিন্তু নীচুরাই তো উচ্চতাকে আরও উচ্চতা দেয়। আমি সমাজের সেই নীচুদেরই একজন, অনেকেই হয়তো ভাবেন, আশরাফ তো চিকিৎসক, তার তো অনেক টাকা, আরামে থাকলে এসব বড়োবড়ো বুলি বলাই যায়, বিশ্বাস করুন যেমন ভাবছেন আমি তেমন কেউ না, আমার ঘুম আসে না, সত্যি আমার ঘুম আসে না। দীর্ঘদিন আমি ঘুমাই না।

ঘুম আসে না কথা বলতে না পারার কারণে, ঘুম আসে না তাকাতে না পারার কারণে, ঘুম আসে না হাঁটতে না পারার কারণে, ঘুম আসে না ঠিকমতো শ্বাস নিতে না পারার কারণে। যা হোক, কথা বলতে চেয়েছিলাম, ‘পাখিরোষ’ নিয়ে। পাখিরোষ-এ আছে দশটা গল্প। গল্পগুলো গত চার বছরে বিভিন্ন সময়ে লেখা।

ঘুম আসে না কথা বলতে না পারার কারণে, ঘুম আসে না তাকাতে না পারার কারণে, ঘুম আসে না হাঁটতে না পারার কারণে, ঘুম আসে না ঠিকমতো শ্বাস নিতে না পারার কারণে। যা হোক, কথা বলতে চেয়েছিলাম, ‘পাখিরোষ’ নিয়ে। পাখিরোষ-এ আছে দশটা গল্প। গল্পগুলো গত চার বছরে বিভিন্ন সময়ে লেখা। উল্লেখ আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘রাষ্ট্রধারণার বিরুদ্ধে মামলা ও বিবিধ গল্প’ প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৮ সালে। পরের বছরগুলোতে আমি মাত্র ১২-১৩ টি গল্প লিখেছি, সেখান থেকে ১০ টি গল্প নির্বাচন করে গ্রন্থভূক্ত করেছি। ‘ছায়াসন্দেহ’ গল্পটির ভাবনা খুব অল্প সময়ের, অনেকটা কবিতার মতো— হঠাৎ এসেছে, ঘোরের মধ্যে লিখে ফেলেছি। নিঃসন্দেহে ‘ছায়াসন্দেহ’ আমার পছন্দের একটা গল্প এই গল্পের চরিত্রগুলোর কারোরই প্রাণ নেই অথচ তারা দিব্যি কথা বলে, বলে এই সমসাময়িক কালের দুঃখবিবর্তনের কথা।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আমার পছন্দের লেখক। তাঁকে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই পড়াশোনা করছিলাম। পড়তে পড়তে খুবই একাকীত্ব উপভোগ করা একজন মানুষ হিসেবে খুঁজে পাই তাঁকে। 

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আমার পছন্দের লেখক। তাঁকে নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই পড়াশোনা করছিলাম। পড়তে পড়তে খুবই একাকীত্ব উপভোগ করা একজন মানুষ হিসেবে খুঁজে পাই তাঁকে। ‘সুখনিদ্রা পরিত্যাজে, জাগো মৃগরাজতেজে’ গল্পে আমি সেই কথাগুলোই বলতে চেয়েছি। ‘একটা নোংরামূল্যের গল্প’ আমাদের আশপাশে কতোকিছুই ঘটে চলে, আমরা দেখেও না দেখার ভান করি। বুঝেও না বোঝার ভান করি৷ লেখক হিসেবে আমি সেই ‘না-দেখা’ জিনিসগুলোকে দেখতে চেয়েছি, চেয়েছি এসব ‘না-দেখা’ ঘটনার ময়নাতদন্ত করতে। ‘গর্ভনাশ’ আমার পেশাগত জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার গল্পায়ন। এই গল্পটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না৷ কারণ এই গল্পটিকে খুব করে ভুলে থাকতে চাই আমি। ‘ঘন বাতাসের সুলেখা’, এত নিশ্চন্ত হইয়া মানুষ নিজেরে ক্যামনে খায়, অপ্রকাশিত ভাবনার কাফকা গল্পগুলোয় পাঠক সময়ের বীভৎস চেহারাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবেন বলেই আশা করি আমি। ‘বিজ্ঞাপিত সুখ’, ‘পাখিরোষ’, ‘হত্যাখামার’ গল্পগুলো পাঠকের ভাবনা-স্তরে এক অনায্য অনুরণন তৈরি করবে— একথা বলার সাহস আপনারা ইতোমধ্যেই জুগিয়েছেন। সকলকে ভালোবাসা।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম : ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ালেখা শেষে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। লেখালেখি করেন প্রাণ থেকে। প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: ‘যুদ্ধ ছাড়া শুদ্ধতা অসম্ভব’, ‘অতীতা, দুঃখরা পাখি হয়ে গেল’, ‘বাংলাদেশে হৃদয় মেশে’, অনুজ্জ্বল চোখের রাত (কবিতা)। গল্পগ্রন্থ: ‘রাষ্ট্রধারণার বিরুদ্ধে মামলা ও বিবিধ গল্প’। এই পাণ্ডুলিপির জন্য তিনি জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা থেকে ইতিকথা মৈত্রী সাহিত্য সম্মাননা-২০১৭ লাভ করেছেন।।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।