শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২২

বায়ু-তলোয়ার ও অন্যান্য কবিতা : শৈবাল নূর

0

বায়ু-তলোয়ার


শীত চলে গেলে
আসে কী কোকিলের সঙ্গমকাল?

নতুন গজানো পাতা
মনের যে তীক্ষ্ণতায় ঘন করে তুলছে বসন্ত
তা আমাদের আতশী-কাচের ফাঁদ!

ভিন্ন গন্তব্যের বাস-হেল্পার
ধূর্ত কোকিল ডেকেই যাচ্ছে—

পুরোনো সিঁড়ির ধাপে ধাপে
টেনিস-বল নামে

তোমার চলে যাওয়া…

আর একটা দুপুর—
শুকিয়ে আসা বিলের বেদনা
কিছুতেই আড়াল করতে পারছে না!

কানাবগি এসেছে মাছ শিকারে
তীক্ষ্ণ চঞ্চুতে নিয়ে খুনি বসন্তের গান—


কাজুবাদামের ঘোর


বহু শীত, গ্রীষ্ম পেরিয়ে মরে গেছে বাড়ির
কাজুবাদাম গাছটি

মরাগাছের ছায়া থেকে এ বাড়ির কর্ত্রী
মহীয়ষী সুফিয়া বেওয়ার কথা মনে আসে ম্লান—

মনে আসে, আমাদের অঞ্চলে একদা
জাদুকরীফল হয়ে ঝুলত দুল দুল কাজু

যার বীজ বাইরের দিকে
একভিড় বাংলা ৫’র মতো!

বিগত মায়ের স্মৃতি যেন বিমূর্ত আলেয়া হ্রদ!

মৃতগাছের গায়ে বর্তমান মায়ের
পানগাছ লতিয়ে উঠেছে চিত্তাকর্ষক—

হাড়কাঁপুনি ঘন-পৌষে— পানের সবুজপাতা
দমিত পিতার কামনার মতো ভৌতিক দোল খায় রাতে


মনোহরদী


নির্মাণাধীন এই পথ পড়ি দিতে দিতে মনে হলো
বাস নয়, আস্ত বুনোশুয়োরের পিঠে আছি
নিচু মাথায় ঘোৎ ঘোৎ করছে বিকট ধূলিগুল্মে—

চারপাশে রোদ ও বাতাসের মতো অনার্যের মহীতল

কৃষ্ণ অনুরাগীদের নিমগ্ন গীত ভেসে আসছে
দূর ‘উয়ারী’ পরবর্তী কাল থেকে—

আমি কি দিকভোলা হবো— হে কানাই?

হাওয়া বিবর্তনে বইতে থাকে চিরদিনকাল—

আজ এখানে আজানের ভেতর সূর্য ওঠে
আজানে ডুবে যায়—


সিলেট


অহেতুক এই ভোরে
আমাদের নিয়ে ঝুম
যে-ট্রেনটি ঢাকা ফেরে
তার চোখ ঘুম, ঘুম

গাজী কালুর দরগা
ফেলে আসা চা-বাগান
ফুলে ফুলে দাঁতরাঙা
ছায়ায় চাঁদের গান—

শা-জালালি কৈতর
বাক-বাক কুম-কুম
সবই প্রতীকী গজার
যেন মেঘের কুসুম

হাওড়ে সবুজ মাঠে
গান গায় লালফুল
নাইন্দার ঘোলা জলে
ভাসে মায়ার শিমুল

মেঠোসুর রাখে ধরে
বিমানের সরগম
রোদ্দুর খুব করে
হাওয়ায় লিখছে প্রেম

আমাদের ফিরে আসা
স্মৃতি হাওয়া গুমগুম
যে-ট্রেনটি এলো ঢাকা
তার চোখ ঘুম, ঘুম—


মেয়ে-মাঝি


দেহনদী ভেদ করে চলছে তরণী
আমারই দ্বিধার পাকে রাতের গহনে
শীতলক্ষ্যার শরীর চাঁদে চাঁদে কালো
খননের পাক ওঠে বিষাদের গানে—

তোমার হাসির ঢেউ নদীর গরিমা
সেতুর নিচের ঘাস জলের সহায়
শিস বাজানোর ছলে গোধূলি ছড়িয়ে
রাতের মাঝির মতো করো নিরুপায়—

পাটাতনে বসে আছি হাল ধরো মেয়ে
উজানে যাবার পথ তোমার শরীর
নদীপট এঁকে দেই, বেদেনী কলায়
ফণা তোলো, দেখি রুপ— কামে তিরতির!

ঘর-নদী, নদী-মন, নদীর হৃদয়
আমাকে ডোবাও মাঝি, বাঁচা বড়ো ভয়!

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবিতা লেখেন মূলত; পাশাপাশি গদ্য লিখতে চেষ্টা করেন। প্রকাশিত বই: যামিনী ও মরমী ধনুক ( কবিতা)।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।